পীর-মুর্শিদ ধরতে হবে এই প্রশঙ্গে কোরআনের অসংখ্য দলিল।
পীর-মুর্শিদ বা ওলী ধরতে হবে, এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআন নির্দেশ বা ইংগিত।
আরবিতে ওলি/আউলিয়া/মুর্শিদ, ফার্সিতে পীর, বাংলায় পথ প্রদর্শক।
পীর শব্দটি পবিত্র কোরআন পাকে নেই। কারন পীর শব্দটি ফার্সি ভাষা হতে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। যেমনঃ নামাজ, রোজা, ফিরিস্তা, খোদা, ইত্যাদি শব্দগুলো কোরআন শরীফে-এ নেই। কারন উহা ফার্সি শব্দ, তবে এর প্রতিটি ফার্সি শব্দেরই প্রতিশব্দ কোরআন শরীফে আছে, যেমনঃ নামাজ-সালাত, রোজা-সাওম, ফিরিশ্তা-মালাকুন ইত্যাদি।
আবার সালাত আরবি শব্দটি স্থান বিশেষ বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অনুরূপ ভাবে পীর ফার্সি শব্দের প্রতিশব্দ পবিত্র কোরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন শব্দে প্রকাশ করেছেন, যথাঃ ‘অলি’ বহুবচনে আউলিয়া, মুর্শিদ, ইমাম, বহুবচনে আইম্মা, হাদি, ছিদ্দিকিন, ইত্যাদি।
পবিত্র কোরআন শরিফের কিছু আয়াত অর্থসহ পেশ করা হলঃ-
(১) হে মুমিনগণ! তোমরা অনুস্মরণ কর, আল্লাহ্ পাক এর, তাঁর রাসুল পাক (সাঃ) এর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর রয়েছে তাদের। [সুরা ৪ নিসা: ৫৯]।
(উলিল আমর এর মানে হল ন্যায় বিচারক/ধর্মীয় নেতা/ওলি-আউলিয়া/পীর-মুর্শিদ ইত্যাদি শব্দ ধরা যেতে পারে)
(২) স্মরণ কর! সেই দিনকে যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাঁদের (ইমাম) ধর্মীয় নেতা সহ আহ্বান করব। [সুরা ১৭ বনী-ইসরাঈল: ৭১]
যারা তোমাদের ধর্ম মতে চলবে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। আর এসব কিছু এজন্যে যে, তোমরা যা লাভ করেছিলে তা অন্য কেউ কেন প্রাপ্ত হবে, কিংবা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে দিন, মর্যাদা আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা।
(৩) নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। [সুরা ৩ ইমরান: ৭৩-৭৪] ।
(৪) অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত। [সুরা ৩৬ ইয়া-সীন: ২১]।
(এখানে রাসুলের কথা বলা হয়েছে রাসুলুল্লাহ (সা) এর দ্বীন প্রচারের সিলসিলা কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে আল্লাহর ওলীগন এ দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছেন যেমন ইন্দুস্থানে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতী আজমিরি (রহ) ৯০ লক্ষ মুসলমান করেছিল। বাংলাদেশে কোন নবী আসে নি সাহাবীও না ওলীগন দ্বারা কোটি কোটি মুসলমান হয়েছে। তাদের কাছে মুসলমানগন বায়াত গ্রহন করেছিল মুরিদ হয়েছিল।)
(৫) যে বিশুদ্ধ চিত্তে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো। [সুরা ৩১ লুকমান: ১৫]।
(এখানে কামেল পীরের কাছে বায়াত গ্রহন করার ইংগীত হয়েছে শরীয়ত বিরোধী কোন নামধারী পীর এর কাছে নয়।)
(৬) অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা জানেন তাদের নিকট হতে জেনে নাও। [সুরা ২১ আম্বিয়া: ৭]।
কিয়ামতের আগে মানুষ মুর্খতা বশত জ্ঞানহীন মানুষ এর কাছ থেকে ফতোয়া জিজ্ঞেস করবে যারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে। (আল-হাদিস)
তাই এমন কারো কাছ থেকে ইসলামকে জানার জন্য শিখার জন্য আল্লাহর হুকুম বা ইংগীত যাদের কাছে ইলমে লাদ্দুনি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে খাটি জ্ঞান রয়েছে আর ওলী তাদেরকেই বলা হয় যারা আল্লাহর বন্ধু যাদের নিকট ইলমে লাদ্দুনি রয়েছে তাদেরকে না যারা নাকি শরীয়ত বিরোধী মুর্খ তাই এখানে বর্তমানে কামেল ওলীর চাইতে উত্তম আর কে হতে পারে যার কাছে সঠিক জ্ঞান পাবে কারন নবী-রাসুল- সাহাবাগন তো এখন নেই)
(৭) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং (ছাদেকিন) সত্যবাদীগণের সঙ্গী হয়ে যাও। [সুরা তাওবা: ১১৯]।
(কামেল পীর বা ওলী বুজুর্গ হওয়ার ১ম শর্ত সত্যবাদী বলা যায় আব্দুল কাদির জিলানী (রা) ছোট বেলায় ডাকাতের হামলার শিকার হয়েও মায়ের কথামত ওনার কাছে লুকানো স্বর্নের কথা গোপন করে নি ওনার সেই সত্য প্রকাশ করার পর ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসে ভাল হয়ে ইমানদার হয়ে গেছিল। অন্য কারো এমন কারামত পাবেন না এটা পাওয়ার জন্য পীর-ফকির/ ওলী-দরবেশের কাছেই যেতে হবে)
(৮) নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাকের রহমত (মুহসিনিন) আউলিয়া কিরামগনের নিকটবর্তী। [সুরা ৭ আরাফ: ৫৬]।
(৯) আল্লাহ্ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথ প্রাপ্ত হয় এবং তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তাঁর জন্য কোন পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। [সুরা কা’হফ: ১৭]।
(সিদ্ধান্ত আপনার কাছে আল্লাহর কোন হেদায়াতপ্রাপ্ত ওলীর কাছে যাবেন তাদের অনুগত থাকবেন নাকি জালিমের কাছে যাবেন)
(১০) সাবধান! নিশ্চয় আল্লাহর অলিগণের কোন ভয় নেই এবং তারা কোন বিষয় এ চিন্তিতও নহেন। তাঁদের জন্য আছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখেরাতে, আল্লাহর কথার কোন পরিবর্তন বা হের-ফের হয় না, উহাই মহা সাফল্য। [সুরা ১০ ইউনুস: ৬২-৬৪]।
(১১) হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম বা ওসিলা তালাশ কর। [সুরা ৫ মায়েদা: ৩৫]।
(উক্ত আয়াতে কারিমায় মুক্তি লাভের চারটি রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। যথাঃ ১) ঈমান গ্রহণ কর, ২) খোদা ভীতি অবলম্বন কর, ৩) ওসিলা তালাস কর, এবং ৪) আল্লাহর পথে মাধ্যম পাওয়ার জন্য সাধনা কর।)
(১২) আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক (মুর্শিদ) নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন। [সূরা আল আরাফ, আয়াত: ১৮৬]।
পীর-মুর্শিদ প্রশঙ্গে আরো কিছু দলিল ভিত্তিক পোস্ট নিচে দেয়া হলো:
* মহিলাদের বায়াত হওয়ার দলিল
* খোদা প্রাপ্তির জন্য মুর্শিদ শর্ত
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* কোরআনে কি পীর ধরার কথা উল্লেখ আছে? দলিল সহ তুলে ধরা হলো।
* ফানার জন্য পীরের প্রয়ােজন : সংক্ষিপ্ত আলোচনা
* পীর ওলিগণ শাফায়াত করিতে পারিবেন কিনা? তাহার দলিল।
* রাবেতার যােগ্য পীরের পরিচয়ঃ
* ফানা ও বাকা সিদ্ধ ওলীই প্রকৃত কামেল পীরঃ
* কামেল পীর চেনার উপায়! দলিল ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
* হুজুরী কালব বা কালবের একাগ্রতা অর্জনে মুর্শিদে কামেলের ভুমিকা