যে নামাজের মধ্যে প্রভুর সাক্ষাৎ ঘটে।

যে নামাজের মধ্যে প্রভুর সাক্ষাৎ ঘটে।

নামাজ হল ফার্সি শব্দ, আরবী শব্দ হল সালাত এবং বাংলা অর্থ- স্মরণ এবং সংযোগ স্হাপন করা। পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা সালাত কায়েম করতে বলছে। কায়েম অর্থ প্রতিষ্ঠিত করা। সালাত প্রতিষ্ঠাতা করা বুঝায়- আল্লাহর স্মরণ ও সংযোগকে চিরস্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।

হযরত রাসূল পাক সঃ যখন ৫৩ বছর বয়সে আল্লাহর সাথে দেখা করতে মেরাজে যান, তখন থেকে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নামাজ ফরজ হয়। এর আগে নামাজ ছিল না। রাসূল পাক সঃ যখন একটানা ২৭ বছর আল্লাহর সাথে মধুর প্রেমালাপ ও দেখা সাক্ষাৎ করে বিদায় নিবে, তখন দয়াল রাসূল সঃ আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করলেন, হে আমার আল্লাহ আমি তো তোমাকে দেখলাম কিন্তু আমার পাপী উম্মত তোমাকে কিভাবে দেখবে। তখন আল্লাহ এই নামাজ দিয়ে বললেন, যাও আমার পেয়ারা হাবিব তোমার মুমিন উম্মত নামাজে সেজদা দেওয়ার সাথে সাথে আমার আমাকে দেখতে পাবে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে।

পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“অবশ্যই মুমিনগণ সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র, যারা অনর্থক বিষয় থেকে দূরে থাকে।” (সূরা আল মুমিনূন, আয়াত নং ১-৩)।

“নামাজ কায়েম করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণই শ্রেষ্ঠতর।” (সূরা আল আনকুবূত, আয়াত নং ৪৫)।

“নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে আত্মশুদ্ধি লাভ করে, এবং সে স্বীয় প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ আদয় করে।” (সূরা আল আলা, আয়াত নং ১৪ ও ১৫)।

“ঐ সমস্ত নামাজীদের জন্য ওয়াইল দোযখ যারা স্বীয় নামাজে অমনোযোগী।” (সূরা মাউন, আয়াত নং ৪ ও ৫)।

“তোমরা যখন নামাজ সমাপ্ত করেছ, অতঃপর দাঁড়ানো, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর।” (সূরা নিসা, আয়াত নং ১০৩)।

রাসূল পাক সঃ বলেন,

“নামাজ হল মুমিন বান্দার নিকট মেরাজস্বরুপ।” (মেশকাত শরীফ)।

“নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি যখন নামাজে উপবিষ্ট হয়, তখন সে তার প্রভুর সাথে কথোপকথন করে থাকে।” (আল হাদিস)

নামাজের বাংলা শব্দ-স্মরণ ও সংযোগ স্হাপন করা। আপনি যখন কারোর কথা মনে করেন, তখন সেটাকে স্মরণ বল। আর যখন সেই ব্যক্তির ছবি আপনার মনের ভিতর ভেসে ওঠে, সেটাকে সংযোগ স্হাপন বলা হয়। ঠিক তেমনিভাবে আপনি যখন আল্লাহর কথা মনে করেন সেটা হলো স্মরণ এবং যখন আল্লাহর চেহারা মোবারক ভেসে ওঠবে, তখন সেটাকে সংযোগ স্হাপন বলা হয়। আর এই স্মরণ ও সংযোগ চিরস্থায়ীভাবে ২৪ ঘন্টায় জন্য প্রতিষ্ঠার নামই সালাত কায়েম।

তাই তো রাসূল পাক সঃ যথার্থ বলছেন, “নামাজ হল মুমিন বান্দার নিকট মেরাজ স্বরুপ।” মেরাজ মানে দেখা সাক্ষাৎ ও কথোপকথনকে বলা হয়। মুমিন বান্দা নামাজে সেজদা দেওয়ার সাথে সাথে আল্লাহকে দেখে তার নূরময় কদমে সেজদা দেয়।

পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

“যাদের দিল আল্লাহর জ্বিকির হতে গাফেল হয়েছে তারা প্রকাশ্য গোমরাহীর মধ্যে আছে।” (সূরা যুমার, আয়াত নং ২২)।

পবিত্র কুরআন শরীফে নামাজ নিয়ে ৮২টি আয়াত নাজিল হয়েছে এবং ক্বালব নিয়ে ১৩২টি আয়াত নাজিল হয়েছে। অথচ সমাজে কিছু মোল্লাদের কাছ থেকে কখনো এই ক্বালব নিয়ে কোন কথা শুনতে পাই না। এর অন্যতম কারণ হলো এরা ক্বালব সমন্ধে অজ্ঞ।

আপনার ক্বালবে যখন আল্লাহ নামের জ্বিকির চালু হয়ে যাবে, তখন এটা ২৪ ঘন্টা আল্লাহ আল্লাহ নামের মধুর জ্বিকির করতে থাকবে। এটা আপনাকে মুখে করতে হবে না, আপনি শুধু ক্বালবের ভিতর কান পেতে স্পষ্ট করে শুনতে পাবেন আল্লাহ নামের মধুর জ্বিকির। তখন আপনার আল্লাহর স্মরণ সর্বসময়ের জন্য হয়ে যাবে। এভাবে আল্লাহ নামের মধুর জ্বিকির চালু হলে আস্তে আস্তে করে মনের সকল পাপ ঝরে যাবে এবং হৃদয়টা আল্লাহর নুরের আলোতে আলোকিত হবে। তখন মহান প্রভু দয়া করে আপনার সামনে দেখা দিবে এবং কথা বলবে। অর্থাৎ নামাজের মাধ্যমে আহমদী চরিত্র অর্জিত হলে আপনার সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে হৃদয়ের কপাট খুলে যাবে। তখন আপনি একে একে ক্বালবের বিভিন্ন স্তর সুদুর,নশর, শামছি, নূরী, কুর্ব, মকিম এর স্তর অতিক্রম করে নাফছির মোকামে উপনীত হলে আল্লাহর সাথে দিদার হয়ে যাবে।

তাইতো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন,
“আমি ( আল্লাহ ) তোমাদের দিলে ( ক্বালবের ৭ম স্তর নাফসীর মাকামে ) অবস্থান করি, তোমরা কি দেখ না?” (সূরা আয যারিয়াত, আয়াত নং ২১)।

“যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন উত্তম কাজ করে।” (সূরা আল কাহফ, আয়াত নং ১১০)।

“হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত সাধনা করতে থাক, অতঃপর তুমি তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে।” (সূরা আল ইনশিকাক, আয়াত নং ৬)।

“আল্লাহর সাক্ষাৎ যারা অস্বীকার করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিল না।” (সূরা ইউনুস, আয়াত নং ৪৫)।

তাই হাকিকতে সালাত আদায় করে আমরা যখন নূরে মোহাম্মদীর চরিত্রে চরিত্রবান হতে সক্ষম হবো, তখন আমাদের মাঝে মোহাম্মদী চরিত্রের বিকাশ ঘটবে এবং আমরা যাবতীয় পাপ কার্য হতে বিরত থেকে আল্লাহর দিদার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবো। যেমন ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠে নামাজে দাঁড়িয়ে ক্বালবে খেয়াল করে যখন হুজুরীর সাথে নামাজ পড়া শুরু করবেন, তখন ছুদুরের মোকামটা খুলে যাবে। তারপর ক্বালবের ভিতর থেকে এক প্রকার নূর বিচ্ছূরিত হবে। আরো গভীরে যান,দেখবেন অনেক দূর থেকে একটা আলো আসছে। হৃদয়ের আরো গভীরে যান, একটা সময় আসবে দেখবেন, আল্লাহ সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তখন একটা পরম শান্তির মাঝে প্রেম সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকবেন।

পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে সকল প্রকার মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। কিন্তু সমাজের দিকে তাকালে এর বাস্তবতা মোটেও খুঁজে পাই না। কেউ ২০ বছর কেউ ৩০ বছর আবার কেউ ৪০ বছর ধরে নিয়মিত নামাজ পড়ছে কিন্তু নামাজ শেষেই আবার সেই মিথ্যা কথা, চুরি, রাহাজানি, বাটপারি, লোক ঠকানো, অন্যের হক নষ্ট করা, ধর্ষণ ইত্যাদি খারাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আমাদের অনেক মাদ্রাসায় দেখা যায় যে, মাদ্রাসার শিক্ষক ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে বলাৎকার এবং ধর্ষণ করে। অথচ সে কোরআনের হাফেজ, মাওলানা, মুফতি ও মোহাদ্দেস। শুধু তাই নয়, সে মসজিদ ও মাদ্রাসার হাজার হাজার মানুষের ইমামতি করে। যদি তাদের এই অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মুসল্লীদের অবস্থা কি হবে একবার চিন্তা করুন। আপনি এমন একজন নামাজি খুঁজুন যিনি সকল পাপ কাজ থেকে মুক্ত হতে পারছেন। তাহলে আল্লাহ বললেন, নামাজ মানুষের সকল পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। তাহলে আল্লাহ কি মিথ্যা কথা বলছেন (নাউজুবিল্লাহ) নাকি আমাদের নামাজ মিথ্যা। দুটি কখনো একসাথে সত্য হতে পারে না।যেকোনো একটি সত্য। এবার আপনি বিবেক দিয়ে বিচার করুন কোনটি মহাসত্য। আল্লাহ নাকি নামদারী নামাজি। কেউ যদি আল্লাহকে দেখে নামাজ পড়তে পারে, তাহলে তার দ্বারা কখনো বিন্দুমাত্র খারাপ কাজ সংঘটিত হওয়া সম্ভব নয়। এই জন্য আল্লাহ বলেছেন, নামাজ মানুষকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।

আবার আল্লাহ তায়ালা বলেন, ঐসব নামাজির জন্য সর্বনিকৃষ্ট দোজখ, যারা নামাজে অমনোযোগী। অথচ নামাজ পড়ার সময় আমাদের নানা ধরনের চিন্তা মাথায় আসে। তাহলে আল্লাহর ভাষ্যমতে বুঝা যায়, এইসব নামাজ আরো দোজখের অন্যতম কারণ। কারণ নামাজ তো একমাত্র শুধু আল্লাহর জন্য। অথচ নামাজের মধ্যে বিভিন্ন কিছু চিন্তা করে, আরো আল্লাহর সাথে শরিক করছি। এটাকেই শিরকি গুনাহ বলা হয়। এবার আপনি চিন্তা করুন, আপনি কেমন নামাজ পড়ছেন।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে মুমিন বান্দাকে উদ্দেশ্য করে নামাজ পড়তে বলছেন। অথচ আমরা মুমিন কি জিনিস তা কখনো বুঝতেই চেষ্টা করলাম না। নামাজ পড়তে পড়তে কখনো মুমিন হওয়া যায় না। বরং মুমিন হয়ে নামাজ পড়তে হয়।

তাই তো রাসূল পাক সঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি নিজের পিতামাতা, সন্তানসন্ততি ও অন্যান্য সকল মানুষ অপেক্ষা আমাকে বেশি ভালো না বাসবে, সে মুমিন হতে পারবে না।” (বোখারী শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৭ এবং মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৪৯)।

নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel