হোমপেজ ইসলামের ভ্রান্ত ধারণা দাড়ি-টুপিই কি রাসূল সাঃ এর সুন্নত নাকি মানবিক গুণাবলি উত্তম সুন্নত।

দাড়ি-টুপিই কি রাসূল সাঃ এর সুন্নত নাকি মানবিক গুণাবলি উত্তম সুন্নত।

দাড়ি-টুপিই কি রাসূল সাঃ এর সুন্নত নাকি মানবিক গুণাবলি উত্তম সুন্নত।

দাড়ি, জুব্বা ও টুপির নাম প্রকিত সুন্নত নয় বরং রাসূল পাক সাঃ এর মানবিক গুণাবলি চরিত্রের নাম উত্তম সুন্নত। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হলো।

সুন্নত অর্থ পথ বা রীতিনীতি।

“হে রাসূল আমি আপনাকে জগৎ সমূহের জন্য রহমত হিসাবে প্রেরণ করলাম।” (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ১০৭)।

হযরত রাসূল পাক (সঃ) বলেন,

“তোমরা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবাণ হও।” (আল হাদিস)।

“সে প্রকৃত মুসলমান যার মুখ ও হাতের সাহায্যে অন্য মানুষ নিরাপদে থাকে।” (বোখারী ও মুসলিম শরীফ)।

আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, দাড়ি, জুব্বা ও টুপি পড়। কারণ এটা রাসূল পাক সঃ এর সুন্নত। আসুন একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে সূক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করি। তৎকালীন আরব সমাজ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, বর্বর ও নিষ্ঠুর। সেখানে খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, মারামারি, লুটপাত ইত্যাদি অপরাধ ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। নারীদের নূন্যতম সামাজিক মর্যাদা ছিল না। একজন গর্ভবতী নারী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে আর দুইজন বন্ধু মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এক বন্ধু বলল এই মেয়ের পেটে ছেলে সন্তান হবে এবং অন্য বন্ধু বলল মেয়ে সন্তান হবে। তখন দুই বন্ধু মিলে মেয়েটির পেট কেটে পরীক্ষা করল ছেলে নাকি মেয়ে। এইরকম অরাজকতা ভয়াবহতা ছিল আরব সমাজে।

ঠিক তখনই মহান আল্লাহ তায়ালা তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হযরত রাসূল পাক সঃ কে সমস্ত সৃষ্টি জগতের রহমত হিসাবে আরব সমাজ প্রেরণ করলেন। যাতে এই অসভ্য আরব জাতিকে রহমত দিয়ে হেদায়েত অর্থাৎ সঠিক পথে আনতে পারে। রাসূল পাক সঃ ছিলেন আল্লাহর সমস্ত গুণে গুণাবলীতে পরিপূর্ণ বিকশিত।

রাসূল পাক সঃ তাঁর সমস্ত মানবিক গুনাবলী দিয়ে এই বর্বর আরব জাতিকে পরিবর্তন করার জন্য মনোনিবেশ করলেন। রাসূল পাক সঃ ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক। এই জন্য আরব সমাজের সবাই রাসূলকে আলামিন (সত্যবাদী) বলে ডাকতো। এভাবেই রাসূল পাক সঃ তাঁর মানবিক চরিত্র গুণাবলি দ্বারা আরবের অসভ্য বর্বর হিংস্র জাতিকে সুসভ্য মানবজাতিতে রুপান্তরিত করলেন।

তৎকালীন আরব সমাজের একটি মাত্র পোশাক ছিল ঢিলেঢালা জুব্বা। এটা ছিল তাদের শতশত বছরের জাতীয় পোশাক। তাই রাসূল পাক সঃ এসে সেই পোশাক পরিধান করলেন। এখন প্রশ্ন জাগে জুব্বা যদি সুন্নত হয়, তাহলে রাসূল পাক সঃ তৎকালীন ইহুদি, খ্রীষ্টান, পৌত্তলিক, নাসারা বিধর্মীদের পোশাক ব্যবহার করলেন কেনো। এই জুব্বা তো আবু জেহেল, আবু লাহাবসহ সকল মুশরিক বিধর্মীরা পরিধান করত। তাহলে রাসূল পাক সঃ কি বিধর্মীদের নিকট থেকে পোশাক ধার করে আমাদের মুসলিম সমাজে দিয়ে গেলেন নাকি। কারণ এই জুব্বা রাসূল পাক সঃ জন্মের আগে থেকেই বিধর্মীরা ব্যবহার করত। রাসূল পাক সঃ তো এসে পোশাক পরিবর্তন করেনি বরং সেই পোশাকে নিজেকে সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।

তৎকালীন আরব সমাজের সকল বিধর্মীরা দাড়ি রাখত। এটা ছিল আরব সমাজের পুরুষদের সামাজিক ঐতিহ্য। তাছাড়া তখন সেভ করার মতো আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি ছিল না। তখনকার প্রতিটি পুরুষের মুখে দাড়ি ছিলো। আবু জেহেল, আবু লাহাবসহ সকল বিধর্মীদের মুখে দাড়ি ছিলো। তাই রাসূল পাক সঃ সামাজিক পরিস্থিতির সম্মুখে নিজেও দাড়ি রাখত। এটা তো বিধর্মীদের সামাজিক ঐতিহ্য, তাই এটা কিভাবে সুন্নত হতে পারে।

মরুভূমি আরব সমাজে প্রচন্ড গরম ছিল। তাই তৎকালীন সকল বিধর্মীরা রোদ থেকে একটু বাঁচার জন্য পাগড়ী ব্যবহার করত। এখনো সৌদি আরবের দিকে লক্ষ্য করুন সেখানে প্রচন্ড গরম এবং প্রচন্ড শীত। তাই আবু জেহেল, আবু লাহাবসহ সকল বিধর্মীরা রোদ এবং শীত থেকে বাঁচার জন্য পাগড়ী ব্যবহার করতেন। তাহলে এটা কিভাবে মুসলিম সমাজের সুন্নত হতে পারে।

সর্বোপরী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ি ছিল তৎকালীন কাফের মুশরিকদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক পোশাক। যা শতশত বছর ধরে আরব সমাজে প্রচলন ছিল। রাসূল পাক সঃ যেহেতু আরব সমাজে জন্মগ্রহণ করেন, তাই সেই সমাজের পোশাকই পরিধান করতেন। রাসূল পাক সঃ কিন্তু একবারও বলেননি এগুলো কাফের মুশরিকদের পোশাক, তাই এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। রাসূল পাক সঃ তাঁর সাহাবিদেরকে কখনো বলেননি, জুব্বা ও পাগড়ি কাফের মুশরিকরা পরিধান করে তাই এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। আবার তাঁর সাহাবিদেরকে বলেননি, যেহেতু কাফের মুশরিকরা দাড়ি রাখে তাই তোমরা কেউ দাড়ি রাখবে না। বরং রাসূল পাক সঃ জন্মের আগে থেকেই তাঁর প্রিয় সাহাবীরা দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ি পরিধান করত। তাহলে কি রাসূল পাক সঃ কাফের মুশরিকদেরকে কাছ থেকে ধার করে মুসলিম সমাজের মাঝে সুন্নত পোশাক রেখে গেলেন। (নাউজুবিল্লাহ)। নিশ্চিয় তাই নয় বরং রাসূল পাক সঃ তাঁর মানবিক গুণাবলি চরিত্রকে মুসলিম সমাজের মধ্যে রেখে গেলেন। লেবাস কখনো ধর্মের প্রতীক হতে পারে না বরং রাসূল পাক সঃ চরিত্র হল ধর্মের মূর্ত প্রতীক। রাসূল পাক সঃ লেবাস দিয়ে আরব সমাজ পরিবর্তন করেনি বরং তাঁর মানবিক চরিত্র দিয়ে আরব সমাজকে আমূল পরিবর্তন করে গেছেন।

রাসূল পাক সঃ মুসলিম সমাজে যেগুলো রেখে গেছেন।

১/ কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না এবং কটু কথা বলো না। সবার সাথে সুন্দর এবং মিষ্টি ভাষায় কথা বলতে হবে।

২/ ব্রেইন দ্বারা কখনো খারাপ কু-চিন্তা করা যাবে না।

৩/ চোখ দ্বারা কখনো নোংরা কিছু দেখা যাবে না।

৪/ মুখ দ্বারা কখনো মিথ্যা কথা এবং গালাগালি করা যাবে না।

৫/ কান দ্বারা কখনো খারাপ কিছু শোনা যাবে না।

৬/ হাত ও পা দ্বারা কখনো অন্যায় করা যাবে না।

৭/ লিঙ্গ দ্বারা অবৈধ কোন কাজ করা যাবে না।

রাসূল পাক সঃ মানুষকে ষড়রিপু থেকে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হয়ে ইবাদত বন্দেগি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার শিক্ষা দিয়ে গেলেন। অর্থাৎ কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্জ থেকে মুক্ত হতে শিক্ষা দিলেন। হিংসা, অহংকার, পরশ্রীকাতর, মারামারি, রাহাজানি, ঘুষ, সুদ, ব্যভিচার,আমানতের খিয়াতন না করা এবং ওয়াদা ভঙ্গ না করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করে গেলেন। দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার করা যাবে না। অনহারকে পানাহার করাইতে হবে। আত্নীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না। মা বাবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে ইত্যাদি মানবিক গুণাবলি শিখিয়ে গেলেন।

এই জন্য রাসূল পাক সঃ বলেন, তোমরা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হও। রাসূল পাক সঃ কখনো বলেননি হে আমার উম্মতরা তোমরা দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ি পরিধান কর। তাহলে সেটা হাস্যকর দেখা যেতো। কারণ এগুলো আগে থেকেই কাফের মুশরিকরা পরিধান করত। বরং তিনি তাঁর উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হতে সবাইকে আহবান করলেন এবং সাহাবিদের সেই শিক্ষা দিয়ে উত্তম মানুষ হিসাবে গড়ে তুললেন। রাসূল পাক সঃ ৫৩ বছর পর্যন্ত সাহাবিদেরকে আত্মশুদ্ধির এই চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দিলেন। তারপর ৫৩ বছর পর যখন আল্লাহর কাছ থেকে নামাজ আনলেন, তখন সবাইকে নামাজের শিক্ষা দিলেন। যাতে নামাজের মধ্যে মুমিন বান্দা আল্লাহর দীদার লাভ করতে সক্ষম হয়। তৎকালীন আরব সমাজের মানুষ তাদের চরিত্র হারিয়ে বর্বর জাতিতে পরিণত হয়েছিল, তাই তারা আল্লাহকে ভুলে অপরাধ জগতে নিমজ্জিত থাকত।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন শরীফে কোথাও বলেনি, তোমরা দাড়ি রাখ, জুব্বা ও পাগড়ি পরিধান কর। কোথাও উল্লেখ নাই দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ি পরিধান না করলে আমি শাস্তুি দিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি মানুষের অন্তরসমূহ দেখি। আমি পাপ পূণ্যের হিসাব নিবো। দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ির হিসাব নেওয়া হবে বা এই লেবাস না পরলে গুনাহ হবে এমন কোন আয়াত কেউ দেখাইতে পারবেন?

সুন্নত যদি দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ি হয়, তাহলে হিজড়া ও মেয়েদের সুন্নত কোনটি। কারণ রাসূল পাক সঃ সুন্নত হতে হবে সার্বজনীন সকল মানুষের জন্য। সুতরাং লেবাস কিভাবে সুন্নত হতে পারে? বরং রাসূল পাক সঃ মানবিক গুণাবলি চরিত্রই হলো প্রকৃত সুন্নত।

সুন্নত অর্থ পথ। তাই পোশাক কখনো পথ বা সুন্নত হতে পারে না। বরং রাসূল পাক সঃ এর রেখে যাওয়া আদর্শ ও চরিত্রই হলোই উত্তম পথ বা সুন্নত। রাসূল পাক সঃ লেবাস দিয়ে নয় বরং তাঁর মানবিক গুণাবলি চরিত্র দিয়েই আরবের অসভ্য বর্বর জাতিকে সুসভ্য মানবজাতিতে রুপান্তরিত করে গেলেন।

যেহেতু রাসূল পাক সঃ দাড়ি রাখতেন এবং জুব্বা ও পাগড়ি পরিধান করতেন, তাই রাসূল পাক সঃ কে সম্মান ও ভালোবেসে দাড়ি, জুব্বা ও পাগড়ি পরিধান করা যেতে পারে। এতে ধর্মীয় কোন বিধিনিষেধ নেই আবার এগুলো পড়তে কাউকে জোর জবরদস্তি করা যাবে না। আমি লেবাসের বিপক্ষে নই বরং আমি রাসূল পাক সঃ এর মানবিক চরিত্রের পক্ষে। যা দ্বারা মুসলিম জাতির হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা যাবে, লেবাস দ্বারা নয়। আর যুগে যুগে নবী রাসূল ও অলী আল্লাহরা পথভোলা মানুষকে এই উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দেওয়ার জন্যই আল্লাহর কাছ থেকে জগতের বুকে প্রেরণ হয়েছেন। আজও অলী আল্লাহরা পথভোলা পাপী মানুষকে এই আত্মশুদ্ধি চরিত্রের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন।

পোস্ট বড় হওয়ার জন্য অনেক কথা রয়েই গেল।

নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।