হোমপেজ ইসলামের ভ্রান্ত ধারণা পর্দা বলতে আমরা কি বুঝি? পর্দার আসল হাকিকত।

পর্দা বলতে আমরা কি বুঝি? পর্দার আসল হাকিকত।

পর্দা বলতে আমরা কি বুঝি? পর্দার আসল হাকিকত।

পর্দা করা অবশ্যই প্রত্যেক নর-নারীর জন্য আবশ্যক। এর কোন বিকল্প পথ নেই।

আমাদের সমাজের মৌলভীরা বলে নারী পর্দা করলে কখনো ধর্ষনের শিকার হবে না এবং পুরুষ মানুষ পাপের হাত থেকে বেঁচে যাবে। এবং পর্দানশীল নারী পাপ কাজ থেকে বাচেঁ। এটা কি আসলে বাস্তব সম্মত চিন্তা ধারা নাকি গভীর ষড়যন্ত্রের ফাঁদ। বিস্তারিত আলোচনা করার আগে একটু চোখ বুলিয়ে নিই সমাজের বাস্তব চিত্রের দিকে। অনেক সময় দেখা যায় বোরখা নারী ধর্ষনের শিকার হয় এবং স্বেচ্ছায় প্রেমিকার সাথে আবাসিক হোটেলে যৌন মেলামেশা করে।

আবার অসংখ্য বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত দেখা যায়। আবার এই বোরখা পড়া নারী মসজিদ ও মাদ্রাসায় মৌলভীর দ্বারা ধর্ষনের শিকার হয়। শুধু কি তাই, মাদ্রাসায় ভিতরে ছোট ছোট ছেলে বাচ্চারা পর্যন্ত বলাৎকারের শিকার হয়। এই সমস্ত ঘটনাগুলো আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে। তারমানে বুঝা যাচ্ছে যে,এই সমস্ত লোক দেখানো পর্দা আমাদের মোটেও সুরক্ষা দিচ্ছে না। নচেৎ মাদ্রাসায় ভিতরে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই কিভাবে ধর্ষনের শিকার হয়।

আর এই ধর্ষনের শিকার হয়, যারা পর্দার ব্যাপারে বড় বড় ফতোয়া দেয় তাদের দ্বারাই। কি আশ্চর্য আমাদের সমাজ ব্যবস্হা এবং ধর্মীয় জ্ঞান। অথচ এই নারীরা রাসূল পাক সঃ এর সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহায্য সহযোগিতা করত। তাদের কিন্তু আপনাদের মতো এমন লোক দেখানো পর্দা ছিল না। কিন্তু কখনো তারা ধর্ষনের শিকার হননি আমাদের মতো। তাঁদের কেমন পর্দা ছিল জানেন? আসুন সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

প্রতিটি মানুষের ভিতরে জীবআত্না এবং পরমআত্না বিরাজমান। জীবআত্না অর্থাৎ নফস ষড়রিপু দ্বারা ঘটিত। যেমন কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্জ। মানুষ মূলত এই ছয়টি রিপুর প্ররোচনায় পড়েই খারাপ কাজে ধাবিত হয়। এদের মাঝে আবার সর্দার রিপু হলো কাম। যা প্রতিটি নরনারীকে অধঃপতনের দিকে ধাবিত করে। তাই তো রাসূল পাক সঃ এই নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে সবচেয়ে বড় জেহাদ ঘোষণা করছে।

মূলত এই ষড়রিপুকে দমন করার নামই হলো পর্দা। এটা শুধু মেয়ে নয় বরং ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। মূলত পর্দা বলতে বুঝায় পাপ কাজকে ঢেকে রাখা। পর্দা করতে হবে প্রতিটি অঙ্গ পতঙ্গের। যেমন- মাথার মস্তিষ্ক দ্বারা কখনো খারাপ চিন্তা ভাবনা করা যাবে না। শুধুমাত্র মানব কল্যানে মস্তিষ্ক ব্যয় করতে হবে, মানব অকল্যান থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। চোখ দ্বারা কখনো খারাপ কিছু দেখা যাবে না এবং পথ চলতে হবে মাটির দিকে তাকিয়ে, যেনো কোন অবস্থায় আপনার দ্বারা অকারণে একটি পিঁপড়াও মারা না যায়।

অর্থাৎ চোখকে সম্পূর্ণ পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। কান দ্বারা খারাপ কিছু শোনা যাবে না। মুখ দ্বার মিথ্যা কথা এবং গালাগালি করা যাবে না। আপনার জবান দ্বারা কোন মানব হৃদয় যেনো কষ্ট না পায় এবং মুখকে সত্যে রুপান্তরিত করতে হবে। হাত দ্বারা কখনো কাউকে আঘাত করা যাবে না এবং সকল পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। গোপন অঙ্গ দ্বারা কখনো পাপ কাজ করা যাবে না এবং গোপন অঙ্গ হেফাজত রাখতে হবে। পা দ্বারা খারাপ কাজে ধাবিত হওয়া যাবে না। এভাবেই প্রতিটি অঙ্গ পতঙ্গকে সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে ঢেকে দেওয়ার নামই পর্দা। এটার নামই হলো জীবন্ত মরা। এই মরা যে মরতে পারছে, সেই জগতে সফলকাম হয়েছে।

এবার হাকিকতে পর্দা করা যাবে না বরং পর্দা উন্মোচন করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের ক্বালবের সপ্তম স্তর নাফসীর মাকামে লুকিয়ে আছে। যা ৭০ হাজার পর্দা দ্বারা ঘেরা। এই ৭০ হাজার পর্দা উন্মোচন করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা প্রতিটি মানুষের জন্য ফরজ। আমরা পাপ কাজ করতে করতে আমাদের ক্বালব ময়লার স্তবে ঢাকা পড়ে গেছে। যার জন্য আমরা মহান আল্লাহকে দেখতে পাই না।

এই পর্দা তখনই উন্মোচন হবে, যখন আমরা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ পতঙ্গকে পর্দা করতে সক্ষম হব। অর্থাৎ যখন আমরা সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারব, তখন আমাদের এই রহস্যময় পর্দা একে একে উন্মোচন হতে থাকবে এবং অবশেষে আল্লাহর দীদার নসীব হবে। মোটকথা শরীয়তের পর্দা ঢাকতে পারলেই হাকিকতের রহস্যময় পর্দা উন্মোচন হবে। অর্থাৎ শরীয়তে পর্দা করতে হয় এবং হাকিকতে পর্দা উন্মোচন করতে হয়।

আচ্ছা প্রতিটি মানুষ যদি তার প্রত্যেকটি অঙ্গ পতঙ্গকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে, তখন কি আর লোক দেখানো বোরখার প্রয়োজন পড়ে। মানুষ তখন উলঙ্গ হয়ে থাকলেও কেউ ধর্ষনের শিকার হবে না এবং কেউ ধর্ষন করবে না। গভীর জঙ্গলে যারা বসবাস করে, তারা তো সবাই উলঙ্গ থাকে, তাহলে তারা কিভাবে বোরখা পড়বে। কারণ তাদের তো পোশাক সমন্ধে নূন্যতম ধারণাই নাই। নাকি আল্লাহ তাদের জন্য পর্দা করতে বলে নাই। মৌলভীদের মুখে ধর্মের অবাস্তব কল্প কাহিনি আর কত শুনব, আমার জানা নাই।

যারা বোরখা পড়াকে পর্দা হিসাবে চালিয়ে দিতে চায়, তাদেরকে আমি অজ্ঞ এবং জ্ঞানপাপী ছাড়া ভিন্ন কিছু ভাবি না। এরা মূলত আমাদের নারী সমাজকে ঘরের মধ্যে বন্দী রেখে ফায়দা লুটতে চায়। বোরখা যদি পর্দা হতো, তাহলে সৌদি আরবে এতো ধর্ষন হয় কিভাবে? যা পৃথিবীর কোন দেশ তো দুরের কথা, কোন উলঙ্গ দেশেও হয় না। তার বাস্তব প্রমান বাংলাদেশের গৃহকর্মীরা। অথচ সৌদি আরবে কোন মেয়ের মুখ তো দুরের কথা, পায়ের পাতা পর্যন্ত দেখা যায় না। তাহলে কোথায় গেলো আপনাদের বোরখা নামের পর্দার ছলচাতুরী।

মুসলিম জাতিকে অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখার জন্যই বিধর্মীদের চক্রান্তের ফসল এই তথাকথিত পর্দা। যাতে মুসলিম জাতি কখনো উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে না পারে। আর বিধর্মীদের প্রধান হাতিয়ার হলো আমাদের মোল্লাতন্রের সমাজ ব্যবস্হা ও ফতোয়া। রাসূলে পাক সঃ শিক্ষা দিল কি আর আমরা শিক্ষা পেলাম কি? হায়রে সেলুকাস মুসলিম জাতি! কবে যে বিবেকের দ্বার উন্মোচন হবে, তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ভালো জানে।

বোরখা যদি পর্দা হতো, তাহলে রাসূল পাক সঃ কখনো নারীকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে আসতে দিত না। বরং ঘরের কোনায় বন্দী করে রাখত। তার মানে এই নয় যে, আমি উলঙ্গ পোশাক পড়তে উৎসাহিত করছি। বরং শালীনতা বজায় রেখে পোশাক পড়া সভ্যতার একটি অংশ। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে বোরখা কখনোই পর্দা হতে পারে না। কারণ পর্দা করা প্রত্যেক নরনারীর জন্য অপরিহার্য।

আপনি কি জানেন, বাবা আদম আঃ এবং মা হাওয়া আঃ বেহেশতে উলঙ্গ অবস্থায় ছিল। তাহলে তাদের পর্দা কোথায় ছিল? অবশ্যই তাঁদের পর্দা ছিল মনের এবং পর্দার যেদিন বিধিলংগন হয়েছে, সেদিনই বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছে।

সাধু সাবধান, পর্দা বিহনে মানব জীবনের মুক্তি নাই। আর কিছু বললাম না, আশা করছি বুঝতে পারছেন অনেক কিছু। অধমের লেখায় কারোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে, নিজগুণে ক্ষমা করবেন।

নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।