হোমপেজ ইসলামের ভ্রান্ত ধারণা রাসুল সাঃ সম্পর্কে প্রচলিত অপপ্রচারগুলোর জবাব।

রাসুল সাঃ সম্পর্কে প্রচলিত অপপ্রচারগুলোর জবাব।

540

রাসুল সাঃ সম্পর্কে প্রচলিত অপপ্রচারগুলোর জবাব।

অপপ্রচার: ১.
সমাজে প্রচার করা হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) জীর্ণ কুটিরে জন্মগ্রহণ করেছেন।

জবাব-
রাসুল (সাঃ) শাহী প্রসাদে জন্মগ্রহণ করেন। সেই জামানার প্রাসাদ হিসাবে যে দো-তালা বিল্ডিংয়ে রাসুল (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বর্তমানে সেই বিল্ডিংটিকে সৌদি সরকার কুরআনের লাইব্রেরী বানিয়ে রেখেছে।

অপপ্রচার: ২.
সমাজে প্রচার করা হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) চরম দরিদ্র ছিলেন।

জবাব-
রাসুল (সাঃ)-এর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা। তাঁর পিতা ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। মক্কার বাদশাহ নাতি এবং একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীর সন্তান কখনও গরীব হতে পারে না।

অপপ্রচার: ৩.
সমাজে প্রচার করা হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) মেষ চড়াতেন অর্থাৎ তিনি একজন রাখাল।

জবাব-
রাসুল (সাঃ)-এর পিতা ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। রাসুল (সাঃ)-এর মাতাও ছিলেন তায়েফ অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ সম্পদশালী বংশের মেয়ে। যাঁর পিতা মক্কার সম্পদশালী এবং নানার বংশও সম্পদশালী। দাদা ও নানা উভয়দিক দিয়েই সম্পদশালী বংশের নাতি কিসের অভাবে রাখালের কাজ করবেন?

অপপ্রচার: ৪.
সমাজে প্রচার আছে যে, দরিদ্রতার কারণে রাসুল (সাঃ) সত্তর তালিওয়ালা জামা পরিধান করছেন।

জবাব-
রাসুল (সাঃ) কখনই সত্তর তালিওয়ালা জামা পরিধান করেননি। কারণ সত্তর তালি দেওয়া জামা কেউ পরিধান করে না। যত দরিদ্রই হোক, কোন সুস্থ মানুষকে সত্তর তালিওয়ালা জামা পরিধান করতে কখনও দেখা যায় না। আর রাসুল (সাঃ) যদি অভাবের কারণে সত্তর তালিওয়ালা জামা পরিধান করেন, তাহলে তাঁর ১১/১২ জন স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব কিভাবে পালন করেছেন? এছাড়াও তুরস্কের তোপকাপি যাদুঘরে সংরক্ষিত রাসুল (সাঃ)-এর স্বর্ণ-খোচিত জামা মোবারকই প্রমাণ করে, তিনি কেমন পোশাক পরিধান করেছেন।

অপপ্রচার: ৫.
রাসুল (সাঃ) ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বেঁধেছেন।

জবাব-
ক্ষুধা লাগলে পেটে পাথর বেঁধে ক্ষুধা হতে বাঁচা যায় না। বরং পাথরের ওজন শরীর বহন করায় শরীর আরো ক্লান্ত হয়ে পরে। খন্দকের যুদ্ধে কাফেররা মুসলমানদেরকে চারদিকে ঘিরে অবরুদ্ধ করে রাখে। এভাবে প্রায় একমাস মুসলমানরা অবরুদ্ধ হয়েছিল। নিরস্ত্র মুসলমানদের সামনে হঠাৎ করে যদি শত্রুরা চলে আসে কিংবা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে করতে যদি হাতের অস্ত্র ভেঙে যায়। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় হিসাবে রাসুল (সাঃ) সকল সাহাবীগণকে নিজেদের কোমরে পাথরের টুকরো লুকিয়ে থাকতে পরামর্শ দেন। যেন অস্ত্র ভেঙে গেলে বা নিরস্ত্র অবস্থায় শত্রুরা সামনে পরলে কোমরে রাখা পাথর নিক্ষেপ করে আত্মরক্ষা করা যায়। কালের পরিক্রমায় এমন ঘটনাকেই হয় তো ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বাঁধার গল্প তৈরি করা হয়েছে, যা সত্য নয়।

অপপ্রচার: ৬.
রাসুল (সাঃ)-এর সম্মানিত পিতামাতা নাকি মুশরিক ছিলেন এবং মুশরিক হওয়ায় তাঁরা জাহান্নামি (নাউজুবিল্লাহ)।

জবাব-
মূর্তিপূজকদেরকে আল্লাহ কুরআনে অপবিত্র বলেছেন। আর যারা অপবিত্র আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর কাছে তারা কখনোই উত্তম হবেন না। কিন্তু রাসুল (সাঃ) নিজেই বলেছেন, তিনি উত্তম বংশে জন্মগ্রহণ করেছেন (বোখারী শরীফ)। যাঁদেরকে রাসুল (সাঃ) উত্তম বলেছেন তারা কোনভাবেই মূর্তিপূজক ছিলেন না। বরং তারা হানাফী ধর্মের অনুসারী ছিলেন এবং পুতপবিত্র চরিত্রের অধিকারী ছিলেন।

অপপ্রচার: ৭.
রাসুল (সাঃ)-এর সম্মানিত পিতামাতার নাম বলার সময় মুসলমানরা চরম বেয়াদবি করে বলে আব্দুল্লাহ আর আমিনা। কিন্তু ঈসা (আঃ)-এর মায়ের নাম বলার সময় বলি, হযরত মরিয়ম (আঃ) কিংবা মা মরিয়ম (আঃ)।

জবাব-
সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি রাসুল (সাঃ) হলেন আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়। আর আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় হাবীব যাদের মাধ্যমে জগতে আগমন করলেন, অর্থাৎ রাসুল (সাঃ)-এর পিতামাতা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, তারাও সমস্ত সৃষ্টির কাছে সম্মানিত। তাই রাসুল (সাঃ)-এর সম্মানিত পিতামাতার নাম বলার সময় আদবের সাথে বলতে হবে, হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) ও হযরত আমিনা (আঃ)।

অপপ্রচার: ৮.
রাসুল (সাঃ) কয়েকটি খেজুরের বিনিময়ে ইহুদির বাগানে কুপ হতে বালতি দিয়ে পানি তুলতেন। একদিন কুপ হতে পানি তুলতে গিয়ে দড়ি ছিঁড়ে বালতি কুপের মধ্যে পরে যায়। এমন ঘটনায় ইহুদি (রাঃ)-এর গালে থাপ্পড় মারে (নাউজুবিল্লাহ)। এই ঘটনাটি মাদ্রাসায় পড়ানো হয়।

জবাব-
আগেই বলা হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ)-এর দাদা ছিলেন মক্কার শাসনকর্তা। দাদার অবর্তমানে চাচা হযরত আবু তালিব মক্কার শাসনকর্তা হন। এই চাচার তত্বাবধানে রাসুল (সাঃ) লালিতপালিত হন। তাহলে কোন কারণে একজন শাসনকর্তার ভাতিজা কয়েকটি খেজুরের জন্য ইহুদির বাগানে কুপ হতে পানি তুলতে যাবেন? এছাড়া ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, সেই সময়ে মক্কায় খৃষ্টানরা বসবাস করলেও, কোন ইহুদি মক্কায় বসবাস করতো না। ইহুদিদের বসবাস ছিল মদিনায়। রাসুল (সাঃ) হিজরত করে মদিনায় গিয়ে তো মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। মদিনায় তো তিনি রাষ্ট্র প্রধান। আর একজন রাষ্ট্র প্রধান কি কয়েকটি খেজুরের বিনিময়ে ইহুদির বাগানে কুপ হতে পানি তুলতে যাবেন? কখনই তা সম্ভব নয়। যাঁকে ভালবেসে মক্কার সাহাবীগণ নিজেদের পরিবার আপনজন ঘরবাড়ি ধনসম্পদ সব ফেলে মদিনায় এসেছেন এবং মদিনার সাহাবীগণ যাঁকে ভালবেসে নিজেদের সম্পদ হতে হিজরতকারী সাহাবীদের সম্পদ ভাগ করে দিয়েছেন। এমন সাহাবীগণ কি রাসুল (সাঃ)-কে ইহুদির বাগানে কয়েকটি খেজুরের বিনিময়ে কুপ হতে বালতি দিয়ে তুলতে দিবেন? রাসুল (সাঃ) সত্তর তালিওয়ালা জামা পরিধান করলে কি সাহাবীগণ তা সহ্য করতে পারতেন? দিনের পর দিন রাসুল (সাঃ)-এর চুলা না জ্বলে রাসুল (সাঃ)-কে অনাহারে রেখে কি সাহাবীগণের পক্ষে খাবার খাওয়া সম্ভব? আসলে এগুলো গল্প রাসুল (সাঃ)-কে হেয় করার জন্য তৈরি করে মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা কখনোই সত্য ছিল না, সব ডাহামিথ্যে কথা।

অপপ্রচার: ৯.
রাসুল (সাঃ) আমাদের মতই একজন মানুষ।

জবাব-
রাসুল (সাঃ) দেখতে আমাদের মত মানুষ হলেও, তিনি কখনোই আমাদের মত মানুষ নয়। তিনি শুধু সমগ্র মানবজাতির জন্যই নন, আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি রহমত (রাহমাতাল্লিল আলামিন, অর্থ সমস্ত সৃষ্টি জাহানের রহমত)।

অপপ্রচার: ১০.
রাসুল (সাঃ)-এর শানে মিলাদ পাঠ বেদাত।

জবাব-
রাসুল (সাঃ)-এর শানে মিলাদ পাঠ ফরজ। অতীতে সকল নবী রাসুলগণ রাসুল (সা)-এর শানে মিলাদ পাঠ করেছেন। আউলিয়াকেরামগণ রাসুল (সাঃ)-এর শানে মিলাদ পাঠ করেছেন। আল্লাহর রহমত বরকত লাভের মাধ্যম হলো রাসুল (সাঃ)-এর শানে মিলাদ পাঠ।

অপপ্রচার: ১১.
ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) পালন করা হারাম। জন্মদিন, মৃত্যুদিন পালন করা বেদাত।

জবাব-
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি যত নেয়ামত দান করেছেন। সকল নেয়ামতের চেয়ে সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো রাসুল (সাঃ)। অন্য সকল নেয়ামতের জন্য আমরা আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করি। কিন্তু একটি নেয়ামতের জন্য আল্লাহ মুমিনদেরকে আনন্দ প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৮)। আর যখন কোন উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করা হয়, তা উৎসবে পরিণত হয়। আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে হতে কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হলে আমরা শুকরিয়া আদায় করি,৷ কিন্তু আনন্দ প্রকাশ করিনা। কিন্তু আল্লাহ যখন তাঁর নেয়ামত প্রাপ্তিতে শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ না দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে নির্দেশ দেন। তাখন বুঝতে হবে আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত দয়াল রাসুল (সাঃ)-এর আগমনের দিনটি হলো সকলের জন্য নেয়ামত প্রাপ্তির দিন। আর এই দিনে আনন্দ প্রকাশের অর্থই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন। তেমনিভাবে কুরআনে ঈসা (আঃ) হযরত ইয়াহিয়া (আঃ)-এর জন্মদিন, মৃত্যুদিনে সালাম জানিয়েছেন এবং ঈসা (আঃ) স্বয়ং তাঁর জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থান দিবসকে সালম জানিয়েছেন। আর এই কথা আল্লাহ কুরআনে বর্ণনা করে বান্দাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন (সূরা মরিয়ম, আয়াত-১৫ ও ৩৩)। কারণ একজন নবী বা রাসুল হয়ে আরেকজন নবীর জন্ম ও মৃত্যুর দিনকে সালাম দেওয়া এবং নিজে একজন রাসুল হয়ে নিজের জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থান দিবসকে সালাম দেওয়া সাধারণ কোন ঘটনা নয়, যখন আল্লাহ স্বয়ং ঘটনাটি কুরআনে বর্ণনা করেন। আর তাই অলিআল্লাহগণ কুরআন হতেই জন্মদিন অর্থাৎ ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) ও মৃত্যুর দিন বা বার্ষিকী পালনের শিক্ষা দিয়েছেন। মূলত অলিআল্লাহগণের কোন শিক্ষাই কুরআনের বাইরে নয়।

অপপ্রচার: ১২.
রাসুল (সাঃ) গায়েব জানেন না।

জবাব-
সত্যটা হলো রাসুল (সাঃ) গায়েব জানতেন। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশের বাইরে তিনি কোনকিছু করতেনও না বলতেনও না। কুরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, তিনি যাকিছু বলেন এবং করেন, তার সবই আমার ওহী। ওহী ব্যতীত তিনি কিছুই বলেন না ও করেন না। এছাড়াও বোখারী শরীফের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেন, আমি সামনে ও পিছনে এবং ডানে ও বামে সমানভাবে দেখতে পাই। এমনকি তোমরা কতটুকু মনোযোগ দিয়ে সেজদা করো তাও আমি জানি। সূরা জিনের ২৬ ও ২৭নং আয়াতে আল্লাহ পরিষ্কার বলেছেন যে, তাঁর রাসুল (সাঃ) গায়েব জানেন।

অপপ্রচার: ১৩
রাসুল (সাঃ) মরে মাটির সাথে মিশে গেছেন। রাসুল (সাঃ)-এর কোন ক্ষমতা নেই তাঁর উম্মতকে সাহায্য করার। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির কোন ক্ষমতা নেই সাহায্য করার।

জবাব-
আজও রাসুল (সাঃ) তাঁর আশেকদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। যদি তা না হত, তাহলে অলিআল্লাহগণ বিভিন্ন সময় রাসুল (সাঃ)-কে স্বপ্নে দেখে দিকনির্দেশনা পেতে পারতেন না। সাধারণ মানুষের আত্মাই তো মরে না। মরলে কি আর আমরা আমাদের মৃত দাদা-দাদী, নানা-নানি, পিতামাতাকে স্বপ্নে দেখতে পেতাম? আপনার জমির মামলা নিয়ে আপনি ভিষণ চিন্তিত। একটি দরকারি দলিল খুজে পাচ্ছেন না। চিন্তা করতে করতে রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলেন যে, আপনার পিতা স্বপ্নে এসে বলছেন যে, অমুক দলিলটা অমুক জায়গায় আছে। স্বপ্ন ভেঙে গেলে কিংবা সকালে আপনি স্বপ্নে বলা জায়গায় খোঁজ করে দলিলটা পেয়ে গেলেন। এমন ঘটনা কিন্তু ঘটে। তাহলে মারা যাওয়া পিতা যদি চিন্তিত সন্তানকে দলিলের খোঁজ দিয়ে সাহায্য করতে পারে, তাহলে যাঁর নুর হতে সকল মানুষ সৃষ্টি, তিনি তাঁর উম্মতদেরকে সাহায্য করতে পারবেন না। এমন বিশ্বাস যারা করেন এবং এমন বিশ্বাসকে মানুষের মনে যারা ছড়িয়ে দেন, তারা কোন ক্লাসের মুসলমান?

অপপ্রচার: ১৪.
রাসুল (সাঃ)-এর হাজির নাজির হওয়ার ক্ষমতা নেই। হাজির নাজিরের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।

জবাব-
আল্লাহ যদি রাসুল (সাঃ)-কে হাজির নাজিরের ক্ষমতা দেন, বান্দা হয়ে কি আমরা তা অস্বীকার করতে পারি? কুরআনে আল্লাহ বলেন, সমগ্র মানবজাতির জন্য রাসুল (সাঃ) সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী ও সাক্ষীদাতা। চাক্ষুষ না দেখে কি সাক্ষী দেওয়া যায়? রাসুল (সাঃ) তাঁর ৬৩ বছরের হায়াতে জিন্দেগীতে যতজনকে দেখেছেন ততজনের না হয় তিনি সাক্ষী দিতে পারবেন। কিন্তু পৃথিবীর অন্য জায়গার মানুষেরা যারা তাঁকে এবং তিনিও তাদের কখনো দেখেননি, তাদের কর্মের সাক্ষী তিনি কিভাবে দিবেন? রাসুল (সাঃ)-এর ওফাত লাভের পর কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে এবং রাসুল (সাঃ)-এর জন্মের আগে যত মানুষ এসেছে তাদের কর্মের সাক্ষী রাসুল (সাঃ) কিভাবে দিবেন, যদি তিনি হাজির নাজির হয়ে তাদের কর্ম না দেখেন? আসলে রাসুল (সাঃ) সর্বকালের সর্বযুগেই ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এমন কোন যুগ এমন কোন সময় নেই যে, যেসময় রাসুল (সাঃ) ছিলেন না। এইজন্যই আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন, সমস্ত সৃষ্টির পালনকর্তা তিনি (সূরা ফাতেহা, আয়াত-১)। আর তাঁর প্রিয় হাবীবের সম্পর্কে বলেন, সমস্ত সৃষ্টির রহমত হলেন রাসুল (সাঃ) (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-১০৭)। কথাটা অন্যভাবে বললে এভাবেও বলা যায় যে, আল্লাহর সৃষ্টির সীমানা যতদুর ঠিক ততদুর সৃষ্টির জন্যই রাসুল (সাঃ) রহমত। এইজন্যই আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, হে রাসুল (সাঃ)! আপনি কি দেখেননি আমি আদ ও সামুদ জাতিকে ধ্বংস করেছি? আপনি দেখেননি আমি ফেরাউনকে কিভাবে নীল দরিয়ায় ডুবিয়ে মেরেছি? আপনি কি দেখেননি আমি আবরাহর হস্তী বাহিনীর সাথে কিরূপ আচরণ করেছি? এরকমভাবে বেশকিছু আয়াত নাযিল করেছেন। যে ঘটনার কথা আল্লাহ রাসুল (সাঃ)-কে প্রশ্ন করে বলছেন যে, আপনি কি দেখেননি, এর কোন কোন ঘটনা রাসুল (সাঃ)-এর জন্মের কয়েক হাজার বছর আগের। অথচ আল্লাহ তার রাসুল (সাঃ)-কে মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন আপনি কি দেখেননি। এর অর্থ হলো ঘটনাগুলো রাসুল (সাঃ) দেখেছেন এবং তা আল্লাহ তা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তা না হলে কি আল্লাহ তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর সাথে মশকরা করেছেন নাকি?

অপপ্রচার: ১৫.
হাশরের মাঠে রাসুল (সাঃ) নিজের কর্ম নিয়েই পেরেশান থাকবেন (নাউজুবিল্লাহ)।

জবাব-
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) হাশরের মাঠে নিজেই বিচারকের অংশ থাকবেন। আর বিচারক কখনও বিচারে কি হবে আর কি হবে না তা নিয়ে চিন্তিত হন না। কারণ রাসুল (সাঃ) হাশরের মাঠে সাক্ষীদাতা হয়ে বিচার কার্যে সাহায্য করে বিচারকের অংশ হবেন। এছাড়াও তিনি সুপারিশকারী হবেন। রাসুল (সাঃ) যদি নিজের কর্ম নিয়েই পেরেশান থাকেন, তাহলে তিনি গুনাগার উম্মতের সুপারিশ করবেন কিভাবে? এছাড়াও আল্লাহ কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন যে, রাসুল (সাঃ)-এর অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের ত্রুটি মার্জনা করে দেওয়া হয়েছে। হাওজে কাওছার দান করা হয়েছে। এরপরও যারা বলেন, হাশরের মাঠে রাসুল (সাঃ) নিজের কর্ম নিয়ে পেরেশান থাকবেন, এরা না মানে কুরআন না মানে রাসুল (সাঃ)-কে। নয় তো এরাই বলে, অমুক অমুক কাজ করলে কিংবা দোয়া এতবার করে পাঠ করলে বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। বাহঃ কি চমৎকার এদের কথা! উম্মত হয়ে কর্মের কারণে কোন কোন উম্মত বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। আর যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে, তাদের আদর্শ রাসুল, (সাঃ)-কে বিনা হিসাবে জান্নাতি ঘোষণা না করে তাঁর হিসাব নেওয়া হবে, যে কারণে তিনি হাশরের মাঠে পেরেশান থাকবেন (নাউজুবিল্লাহ)। যদি এমনটি বলা হত যে, হাশরের মাঠে রাসুল (সাঃ) তাঁর গুনাহগার উম্মতের জন্য পেরেশান থাকবেন, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তারা এটা বলে না, বলে রাসুল (সাঃ) নিজের কর্ম নিয়েই পেরেশান থাকবে।

এমন অসংখ্য বিষয় আছে যা রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে অপপ্রচার করা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। সব আলোচনা না করে কিছু তুলে ধরলাম। এতেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে আমাদেরকে কিভাবে ভুল শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

নিবেদক: এ.কে.এম মনিরুজ্জামান