জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ) এর ১টি কারামত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গুলির মুখ হইতে জীবন রক্ষাঃ
ঘটনাটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার। আব্দুস সালাম নামের জনৈক ভদ্রলোক হযরত সুরেশ্বরী ক্বিবলা (রাঃ) কা’বার আশেক এবং হযরত জালাল নূরী ক্বিবলা কা’বার (রাঃ) মুরিদ ছিলেন। প্রতিবছর মহান উরস মাহ্ফিলের সময় তিনি সমস্ত কাজ কর্ম বন্ধ রাখিয়া দরবারে হাজির হইতেন।
তিনি বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন এবং কর্ম জীবনে রাজধানী ঢাকার হোটেল আনাম (আবাসিক) এর ম্যানেজার ছিলেন। ১৯৭১ সালে একবার পাক হানাদার বাহিনী সালাম সাহেবদের গ্রাম জ্বালাইয়া দিয়া গ্রামের যুবক বয়সের প্রায় প্রত্যেককেই ঘর হইতে ধরিয়া লইয়া একমাঠে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করাইয়া রাখিল। অতঃপর হানাদার বাহিনীর অফিসারের নির্দেশ হইল সারিবদ্ধ অবস্থায় প্রত্যেককে ফাঁয়ার করিয়া মারিয়া ফেলিবার জন্য।
নির্দেশমত গুলি শুরু হইল একে একে সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িল। সবাইকে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করানোর সময় সালাম সাহেব চোখ বন্ধ করিয়া দয়াল বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বাকে স্মরণ করিলেন। তখন দেখিলেন তাহার সম্মখে দরবার শরীফের গম্বুজ ভাসিয়া উঠিল এবং সেইখান হইতে একটা কুদরতি আলোক রশ্মির সহিত একটি গোলাপ ফুল আমার সামনে ঝুলিয়া রহিয়াছে। ইহার মধ্যে গুলি শুরু হইলে আমার সালাম সাহেব এর দিকে ধেয়ে আসা প্রথম গুলিটি সালাম সাহেব এর গায়ে না লাগিয়া গোলাপের গায়ে লাগিল এবং গোলাপটি ঘুরিয়া গেল।
দ্বিতীয় বারের গুলিটিও গোলাপের গায়ে লাগিল এবং সালাম সাহেব প্রাণে রক্ষা পেলেন। তৃতীয় বার যখন গুলি করিল তখন গুলিটি গোলাপের গায়ে লাগিয়া আমার হাটুতে বিদ্ধ হইল। তিনি মৃত্যুর ভয়ে চিৎকার দিয়া অজ্ঞান হইয়া পড়েন। এইভাবে সকলের মৃত্যু নিশ্চিত করিয়া হানাদার বাহিনী চলিয়া গেল। ইহার পরে গ্রামে এমন কোন মানুষ ছিলনা যে আসিয়া কেহ কাহারো খবর লয়।
সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিল। মৃত মানুষ গুলোর রক্তের গন্ধে শত শত শৃগাল হাজির হইল। সালাম সাহেবের শরীর হইতে তখন অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরনে এতই কাহিল হইয়া পড়িয়াছিল যে, ন্যূনতম নড়াচড়া করার মতও শক্তি গায়ে ছিলনা। ইতিমধ্যে মরা দেহ গুলি লইয়া শিয়ালের তান্ডব শুরু হইয়া গেল। মনে মনে সালাম সাহেব বিপদের কান্ডারী বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীকে স্মরণ করিলেন। হঠাৎ দেখিলেন যে, বেশ বড় সড় বাঘের মত দুইটি কুকুর তাহার মাথা এবং পায়ের অনতিদূরে দাড়াইয়া তাহাকে শিয়ালের হাত হইতে পাহারা দিতেছে।
যখনই শৃগালগুলো লাশ মনে করিয়া তাহার দিকে আসে তখনই কুকুর দুটি গর্জন করিয়া শৃগাল গুলোকে তাড়াইয়া দেয়। এইভাবে রাত্রি প্রায় শেষ হইয়া আসিল। ইত্যবসরে সালাম সাহেব ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করিতে লাগিলেন এবং ভাবিলেন এইখানে এই ভাবেই বোধহয় না খাইয়া মরিয়া যাইতে হইবে। হঠাৎ গায়েবী আওয়াজ শুনিতে পাইলেন কে যেন বলিতেছে, তোমার পাশে দুইটি রুটি রহিয়াছে উহা খাইয়া লও। হঠাৎই তাহার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল।
চাহিয়া দেখিলেন সত্যিই কাগজে মোড়ানো শুকনা রুটি তাহার শরীরের ডাহিন পার্শ্বে পড়িয়া রহিয়াছে। তিনি তাহার মুর্শিদ ক্বিবলা এবং বাবা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর চরণে লক্ষ কোটি ভক্তি জানাইয়া রুটি খাইয়া শরীরে কিছুটা শক্তি ফিরিয়া পাইলেন। পরদিন খুব সকালে লোকজন আসিয়া সালাম সাহেবকে উদ্ধার করিল।
১৯৭১ সালের সেই মর্মান্তিক স্মৃতির কথা এবং দয়াল বাবা সুরেশ্বরী ক্বিবলা কা’বার দয়ার কথা স্মরণ করিয়া সালাম সাহেব এই ঘটনা বলার সময় হাউ মাউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিল।
সূত্রঃ সুরেশ্বর দরবারের এক ভক্তের ফেসবুক আইডি হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।