জুনায়েদ বাগদাদীর এক শিষ্যের সিদ্ধিলাভ লাভের ঘটনা
একবার হযরত জুনায়েদ বাগদাদীর এক শিষ্যের মনে হয়, সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে। অতএব, পীরের সান্নিধ্য সংস্পর্শের আর প্রয়োজন নেই। এখন নির্জনবাসই শ্রেয়। অতএব, শুরু হল তাঁর নির্জনবাস। আর প্রতি রাতে সে স্বপ্ন দেখতে লাগল, ফেরেশতারা সঙ্গে একটি উট এনে তাকে বলছেন, চল, তোমাকে আমরা জান্নাতে নিয়ে যাব। একদিন তো সে উটের ওপর চড়েই বসে। সত্যিই ফেরেশতারা অতি মনোরম একটি স্থানে তাকে নিয়ে যায়। সেখানে সুদর্শন লোকের সমাবেশ ও রকমারি উত্তম আহার্য। কাছেই স্বচ্ছ সুপেয় পানির ফোয়ারা। সে সেখানে নেমে পড়ল, দেখল সে তাঁর বাড়িতেই শুয়ে আছে।
বেশ কিছুদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকে আর সে নিজের মুখেই মানুষের কাছে তার স্বপ্নের বিবরণ দিয়ে বলতে থাকে যে, সে রোজ রাতে একবার করে জান্নাতে যায়। অবশেষে হযরত জুনায়েদ (রঃ)-এর কানেও কথাটা চলে আসে। তিনি একদিন চলে গেলেন তাঁর শিষ্যের বাড়িতে। দেখলেন বেশ কয়েকজন অনুচর নিয়ে জমকালোভাবে সে বসে আসে। তিনি তাঁর অবস্থার কথা জানতে চাইলে সে সবিস্তারে স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলল। তিনি তাকে বললেন, তুমি যদি আজও এরূপ স্বপ্ন দেখ, তাহলে তোমার জান্নাতে উপস্থিত হয়ে তুমি ‘লা হাওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ কালামটি তিনবার পাঠ করবে।
সেই রাতে আবার সেই স্বপ্ন। সেই ফেরেশতা, সেই জান্নাত। শিষ্য মুর্শিদের নির্দেশমতো জান্নাতে গিয়ে ঐ কালামটি পাঠ করল। আর সঙ্গে সঙ্গে তথাকথিত ফেরেশতাগণের আনন্দ-মহফিল ভেঙে গেল। তাঁরা তাকে একা ফেলে রেখে কে কোথায় ছুটে পালাল। এবার সে দেখল, সে একটি বিদ্ঘুটে ঘোড়ায় চড়ে অতি বিশ্রী একটা জায়গায় পৌছে গেছে। আর সেখানে পড়ে আছে মৃত পশুর দুর্গন্ধে ভরা কয়েকখানি হাড়। তখন সে তার ভুল বুঝতে পেরে অস্থির হয়ে উঠল। সকালে বিছানা থেকে উঠেই ছুটে গেল মুর্শিদের বাড়িতে। এখন সে উপলব্ধি করল, পীরকে পরিত্যাগ করে মুরীদের পক্ষে নির্জনবাস বড় বিপজ্জনক।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া