খাজা এনায়েতপুরী (রহঃ) কে খেলাফত দানের ঘটনা।
খাজা শাহ এনায়েতপূরী (রহঃ) পুরো নাম শাহ মোহাম্মদ ইউনূছ আলী (রহঃ)। তিনি বাংলা ১২৯৩ সনের ২১ কার্তিক (হিজরী ১৩০৩ সনের ১১ জিলহজ্ব) শনিবার, ভোর রাতে তৎকালীন পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার এনায়েত পুরে (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা) পিতৃ গৃহে জন্ম গ্রহণ করেন।
একদিন কুতুবুল আলম সুফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী ওয়াইসি মেহেদীবাগি (রা.) সাহেবের দরবার মুরিদদের আগমণে সরগরম। মুরিদগণ ধূমধামের সাথে পীরের খেদমত করছেন। কয়েকজন মুরিদ সৈয়দ সাহেবকে গিয়ে বল্লেন, হুজুর আমাদের খিলাফত দিন! সৈয়দ সাহেব তখন মুরিদগণকে হুজরা শরীফে ডেকে বল্লেন “বাবা, পীরের নিকট খিলাফত চাইতে নেই। মুরিদের যোগ্যতা দেখে পীর নিজেই খিলাফত দান করেন। পীরের নিকট খেলাফত চাওয়া বেয়াদবী।” এরুপ বয়ান করতে গিয়ে হঠাৎ তিনি ভাবে বিভোর হয়ে পড়লেন। এরপর যাকে সামনে পেলেন তাকেই লাঠি দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন। মুরিদগন সকলেই ভয়ে পালিয়ে গেলো। কিন্তু কিশোর বয়সী খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপূরী (রা.) তখনো বসে রইলেন। সৈয়দ সাহেব তাঁকে একের পর এক লাঠি দিয়ে আঘাত করতে লাগলেন। সে কি আঘাত, চলছে তো চলছেই। তা দেখে সৈয়দ সাহেবের দু পুত্র এগিয়ে এলেন।
সৈয়দ সাহেব তখন লাঠি ফেলে দিয়ে বল্লেন সে কি মানুষ না কাঠ! আমি তাকে এত মেরেছি সে একটুও আহ! উহ! শব্দ করলোনা। এরপর পলাতক মুরিদদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, পীরের লাঠির সামান্য আঘাত যারা সহ্য করতে পারেনা তারা আবার খিলাফত দাবি করে! সেদিন সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী (রা.) খাজা এনায়েতপূরীর পিরভক্তি দেখে চিন্তা করলেন একেই খেলাফতের দান করা উচিত! এর কিছুদিন পরেই সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রা.) সমস্ত মুরিদদের মধ্যে ঘোষনা দিয়ে দিলেন কয়েকজনকে খেলাফত দিবেন। সকলেই অধির আগ্রহে রইলো কারা খেলাফত প্রাপ্ত হয় তা দেখার জন্য। সকলের মধ্যেই খুশির আমেজ। সৈয়দ সাহেব বাজার থেকে খাদেমের মাধ্যমে পঞ্চাশ টা পাগড়ি কিনে আনালেন।
মহাসমারোহে পঞ্চাশ জন খলিফাকে এই পাগড়িগুলো পড়িয়ে দিলেন। এবার সৈয়দ সাহেব খাদেমকে হুকুম দিলেন “ইউনুস আলীকে ডাকো” কিন্তু তন্ন তন্ন করে খুজে দরবারের কোথাও খাজা এনায়েতপুরী (রা.) কে পাওয়া গেল না। এই শুভক্ষণে খাজা এনায়েতপুরী (রা.) এর অনুপস্থিতিতে অন্যসব মুরিদরা বলতে লাগলো এটা খাজা এনায়েতপুরী (রা.) এর দুর্ভাগ্যের কথা। দরবারময় প্রচার হলো ইউনুস আলী কে পাওয়া যাচ্ছে না। সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগি (রা.) আধ্যাতিক ক্ষমতাবলে খাজা এনায়েতপুরী (রা) এর অবস্থান জানতে পেরে দরবারেরই একটি খড়ের গাদার ভেতর থেকে ক্রন্দনরত খাজা এনায়েতপুরী কে টেনে বের করলেন।
সৈয়দ সাহেব দেখলেন খাজা এনায়েতপুরী (রা.) এর চেহারা মলিন, দেখলেই বুঝা যায় রাতে হয়তো ঘুমাননি, সারাক্ষন অনেক কেঁদেছেন। সৈয়দ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন “বাবা কাঁদছো কেন”? খাজা এনায়েতপুরী (রা.) উত্তর দিলেন “আপনি যেদিন ঘোষনা দিলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কিছু লোককে খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করবো’ তখনই আমি বুঝেছি আপনি হয়তো আর বেশিদিন দুনিয়াতে থাকবেন না! আপনার থেকে জুদা হয়ে যাবো, এই বিরহেই কাঁদছি! সৈয়দ সাহেবও মুরিদের এহেন মহাব্বত দেখে খাজা এনায়েতপুরীকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন।
অতপর তাকে মঞ্চে নিয়ে গেলেন। সৈয়দ সাহেব বললেন- “বাবা ইউনুস, তুমি তো দরবারে কখনো জুতা পরিধান করো না! তোমার পায়ে তো অনেক মাটি লেগে আছে!” এই বলে খাদেমকে আদেশ দিলেন গামলায় করে পানি আনতে। পানি আনা হলে উক্ত পানি দ্বারা খাজা এনায়েতপুরী (রা.) এর পা ধৌত করলেন। এরপর খাজা এনায়েতপুরী (রা.) কে উদ্দেশ্য করে বললেন “বাবা ইউনুস তুমি গরিব মানুষ, আমিও গরিব মানুষ। দরবারে তুমি আলুথালু বেশে থাকো, দরবারের খেদমত করো, তুমি বরং আমার এই পুরোনো খেরকা আর পাগড়ীটাই নাও!” এই বলে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রা.) নিজের শরির থেকে খেরকা ও পাগড়ি খুলে খাজা এনায়েতপুরী (রা.) কে পড়িয়ে দিলেন। খাজা এনায়েতপুরী (রা.) হয়ে গেলেন পীরের ২৪ লক্ষ মুরিদের মধ্যে পাগড়ি ও খেরকাপ্রাপ্ত একমাত্র খলিফা। উপস্থিত সকলেই এই মহা শুভক্ষণে ফায়েজে বেকারার হয়ে গেলেন।
ঐ মুহুর্তে ফায়েজে বেকারার হয়ে জনৈক এক মাজ্জুব ব্যাক্তি মঞ্চে উঠে গামলা থেকে খাজা এনায়েতপুরী (রা.) এর পা ধোয়া পানি পান করে ও শরিরে ঢেলে দিয়ে নাচতে নাচতে লোকচক্ষুর অন্তরালে চরে যান, পরবর্তীতে তাকে আর কোথাও দেখা যায়নি! সৈয়দ সাহেব প্রায়ই খাজা এনায়েতপুরী সম্পর্কে বলতেন “নার্গিস চামেলী ফুল এমনিতেই ফোটে, কিন্তু গোলাপ তা পারেনা। গোলাপ শত বাধা পেরিয়ে কাঁটার ভিতরেই ফোটে।” সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রা.) এর বাগানের সেই গোলাপ ফুল খাজা এনায়েতপুরী (রা.) দীর্ঘ ১২ বছর সাধনা ও খেদমত করে পীরের কাছ থেকে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করে ফিরে আসেন নিজ জন্মভূমিতে।
যমুনার পুর্বপারে দরিদ্র কৃষক, নিরন্ন মজুর, উপেক্ষিত তাতি, জেলে, কর্মকার, কুম্ভকার প্রভৃতি নিঃশ মানুষের মাঝে তরিকা প্রচারে নিয়োজিত হন। খাজা এনায়েতপুরী (রা.) কোনদিনই কাউকে তুই বলা তো দুরে থাক তুমি বলেও সম্মোধন করতেন না বরং ছোট বড় সবাইকে ‘বাবা আপনি’ বলে সম্মোধন করতেন। অচিরেই এই তরিকা সাধারন লোকসকলের কাছে ব্যাপক প্রচারিত হতে লাগলো। খাজা এনায়েতপুরী (রা.) প্রায়ই বলতেন “আমি গরিব মানুষ, আমার মুরিদ সন্তানেরাও গরিব, কিন্তু আমার একজন মুরিদ সাতজন রাজা-বাদশাহদের থেকেও দামী।”
খাজা এনায়েতপুরী (রা.) আপন মুর্শিদের আধ্যাতিক শিক্ষিকা দোররে মাকনুন সৈয়্যিদা জোহরা খাতুন (আ.) এর মতোই নিজেও নিজের শান-মান সর্বদা গোপন রাখতেন। আঙুলের ইশারায় লক্ষ কোটি মুর্দা দেল জিন্দা করনেওয়ালা এই মহান ওলির মর্যাদা আল্লাহ তায়ালা নিজেই মানুষের মধ্যে প্রকাশ করে দিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ ছাড়াও বহু দেশের আনাচে কানাচে গাউসুল আযম খাজাবাবা শাহ এনায়েতপুরী (রা.) এর প্রচারিত তরিকায়ে “নকশবন্দিয়া-মোজাদ্দেদিয়া”” পৌঁছে গেছে।
[কুতুবুল আলম সুফী সৈয়দ ওয়াজেদ আলী মেহেদীবাগী (রহ.), এই মহান ওলী-আল্লাহ সম্পর্কে আমি মুর্খ মানুষ ততোটা জানি না, তাই পুরাতন একটা লেখা দিলাম। সাথে আশেকানে তরিকত, গোলামে খাজাবাবা শাহ এনায়েতপুরী (রহ.) ভাইয়েরা পোস্টাকে বেশি বেশি প্রচার করুন]
সূত্র: অনাবিল সংবাদ