খাজা এনায়েতপুরীর সাথে খিজির (আ.) এর স্বাক্ষাৎ লাভের ঘটনা
খাজায়ে খাজেগা হযরত খাজা এনায়েতপুরী (কুঃছেঃআ) এর সাথে হযরত খাজা খিজির (আ.) এর স্বাক্ষাৎ লাভের ঘটনা এবং বিপদ থেকে উত্বরন লাভ করা।
তখন খাজা হুজুর সবেমাত্র কিশাের। তাঁর মুর্শিদ কেবলার নিকট কিছুকাল হলাে বায়াত হয়েছেন। সেই সময় একবার তিনি ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে তাঁর কিছু পাওনা টাকা আদায়ের লক্ষ্যে বাড়ী হতে হাতিয়ার (রাজশাহী) পথে রওনা হলেন। দএকেতাে বিদেশ বিভূঁই, তার উপর তিনি সম্পূর্ণ একা! পথের-সঙ্গী বলতে আল্লাহ ছাড়া আর কেহই ছিলনা। রাস্তা-ঘাট, জনপদ সবই ছিল অপরিচিত! এমনই অসহায় অবস্থায় কিশাের খাজা হঠাৎ পথ হারিয়ে ভুল রাস্তায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হতে লাগলেন। ভুল রাস্তাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। পথ চলতে চলতে জঙ্গলের দুর্গমতা আরও বৃদ্ধি পেতে লাগল।
শেষে তিনি এমন এক গহীন জঙ্গলে উপনীত হলেন, যেখানে দিনের বেলাতেও সূর্যের আলাে প্রায় অদৃশ্য! এহেন বিপদকালে তিনি কী করবেন? সম্মুখে এগিয়ে যাবেন, নাকি পিছনে ফিরে আসবেন? এরূপ চিন্তা-ভাবনায় কোন কূল-কিনারা করতে না পেরে কিশাের খাজা দিশাহারা অবস্থায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। এমন সময় হঠাৎ গহীন জঙ্গল হতে ভয়ালাকৃতির একদল জন ডাকাত ধারালো অশ্রসশ্র নিয়ে বের হয়ে হযরত খাজাকে ঘিরে ধরল।
দস্যুদল খাজা বাবার সমস্ত দেহ ও পােটলা-পাটলী ’তল্লাসি করে কিছু টাকার সন্ধান পেল এবং তাদের নর-পিপাসু দলপতি কিশাের খাজার সুকোমল হাত সজোরে চেপে ধরে আরও গভীর জঙ্গলের দিকে নিয়ে চললাে।উদ্দেশ্য-খাজার সর্বস্ব লুট করে তাঁকে হত্যা করা! এহেন অবস্থায় দস্যুর হাতে যে মৃত্যু আসন্ন এবং অনিবার্য একথা বুঝতে খাজার বাকী থাকল না। জীবন-মৃত্যুর এমন সন্ধিক্ষনে খাজা একাগ্রচিত্তে মহান আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলেন।
এমন মহা বিপদের সময় হঠাৎ তাদের রাস্তার অপর প্রান্তে একজন শুভ্র সমুজ্জল চেহারার দুর্দান্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গলায় পৈতা জড়ানাে অসংখ্য দেহরক্ষীর বরহর নিয়ে এক ব্রাহ্মণ জমিদার আবির্ভূত হয়ে ভয়ংকর এক প্রাণ-কাঁপানাে হুংকারে বলে উঠলেন : “এখানে কি হচ্ছে?” ঘটনার আকস্মিকতায় হযরত খাজা যেমন হতভম্ব হয়ে গেলেন তেমনি দস্যু দলও যমদুত দেখার মত ভয় পেয়ে বিদ্যুৎবেগে খাজাকে ফেলে গভীর জঙ্গলের দিকে উর্ধ্বশ্বাসে দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো।
হতভম্ব খাজার নিকট এই আগন্তক ব্রাহ্মণ জমিদারের ব্যবহার আরও আশ্চর্য মনে হলাে। কিশাের খাজাকে তিনি বলতে লাগলেন: সাহেব! নিশ্চয়ই আপনার পূর্বপুরুষদের বহু পূণ্য আছে। যার সুবাদে আপনি আজ এই ভয়ঙ্কর দস্যুদের হাত হতে রক্ষা পেলেন! ওদের কবল হতে আজ পর্যন্ত কেউ বাঁচে নাই! একটু সম্মুখে অগ্রসর হলেই দেখতে পাবেন যে, কত হতভাগা পথিকের হাড়গােড় সেখানে পড়ে আছে!
এই কথা বলে ব্রাহ্মণ অতি বিনয়ের সহিত কোমল কণ্ঠে খাজাকে জিজ্ঞাসা করলেন: সাহেব! আপনার বাড়ী কোথায়? কোথায় যাচ্ছিলেন এবং কেমন করেই বা এইন ভয়ংকর জায়গায় উপস্থিত হয়েছেন? উত্তরে হযরত খাজা বললেন: “আমি হাতিয়ায় যাবাে। পথ ভুল করে এই স্থানে এসেছি।”
সদাশয়-ব্রাহ্মণ বললেন: “হাতিয়া? সে তাে আপনি বহু পিছনে ফেলে এসেছেন! আমার সাথে আসেন।” এমন সাদর সম্ভাষণপূর্বক পরােপকারী ব্রাহ্মণ জমিদার হযরত খাজাকে সঙ্গে নিয়ে আগে আগে পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন। অতঃপর সেই ব্রাহ্মণ জমিদার খাজা বাবাকে গভীর জঙ্গলের বাহরে নিয়ে এসে খাজার গন্তব্যের দিকনির্দেশনা দিয়ে সঠিক রাস্তার সন্ধান দিলেন। কিশাের খাজা রাস্তার সঠিক বর্ণনা পেয়ে সামান্য কিছুদূর অগ্রসর হবার পরমুহূর্তেই কিছুটা হতভম্ব হয়ে সম্ভিত ফিরে পেলেন। ভাবতে লাগলেন যে, এমন নিশ্চিত মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত হতে আকস্মিকভাবে কে তাঁকে রক্ষা করলেন? বয়সে প্রবীণ হওয়া সত্ত্বেও কিশাের বয়সী বালককে এতাে সদয় ব্যবহারের দ্বারা আপনি বলে সম্বােধন করলেন! তিনি কে? তাঁর পরিচয়ই বা কি? তাকেতাে কোন কৃতজ্ঞতা জানালাম না।
কিছুইতাে জানা হলো না! নানা চিন্তা করে খাজা হুজুর মনে মনে ভাবলেন: নাহ! তিনি ভুল করেছেন! এই মহাত্মার (ব্রাহ্মণে জমিদারের) পরিচয় তাকে জানতেই হবে! এইরূপ চিন্তা করে হযরত খাজা যখন সেই ব্রাহ্মণ জমিদারকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য এবং তার পরিচয়ের আশায় পিছন ফিরে তাকালেন তখন অতি আশ্চর্য হয়ে দেখতে পেলেন যে, তাঁর সম্মুখে কেউ নাই! সামনে কেবল পায়ে হাঁটা পথটি কিছু দূর অগ্রসর হয়ে গভীর জঙ্গলের ভিতর মিশে গিয়েছে! তাই সামনে কাউকে না দেখে কিশাের-খাজা তখন জঙ্গলের রাস্তা ধরে কিছু দূর অগ্রসর হলেন। কিন্তু তার চোখে কোন জন-মানবই দৃষ্টিগােচর হলাে না বিধায় তিনি পুনরায় তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
পরবর্তী সময়ে জানা গেলো ব্রাহ্মণ জমিদার প্রকৃতার্থেই মানব ছিলেন না – তিনি ছিলেন মানবরূপী হযরত খাজা খিজির (আ.)! যিনি ঐ এলাকার স্থানীয় প্রতাপশালী এক হিন্দু ব্রাহ্মণ জমিদারের আকৃতিতে (ছদ্মবেশে) স্বশরীরে ঐশী ইচ্ছায় হাজির হয়ে আল্লাহর এই পুণ্যময় বান্দা হযরত খাজা হুজুরকে উনার (খাজার) কামেল মােকাম্মেল মুর্শিদের দো’আর বরকতে ডাকাতদলের হাত থেকে রক্ষা করেন।
তথ্যসুত্রঃ- আদর্শ মুর্শিদ