উট বাড়ীর ছাদে (ইব্রাহিম আদহামের ঘটনা)।
আমরা যার কথা বলছি তিনি ছিলেন, হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দির একজন নামকরা সাধক ও আল্লাহর অলী হযরত ইব্রাহিম আদহাম। তিনি যৌবনকালে পূর্ব খোরাসানের ‘বলখ’ রাজ্যের শাসনকর্তা ছিলেন। সেসময় তার শান-শওকত ও মর্যাদার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি এ জগতের সকল কিছু ছেড়ে দরবেশের পথ ধরেন।
তার এই পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে শেখ ফরিদউদ্দিন আত্তার নিশাবুরী একজন তার ‘তাজিরাতুল আউলিয়া’ নামক গ্রন্থে দু’টি ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
একটি হলো—
বাদশাহীর আমলে এক রাতে ইব্রাহিম বিন আদহাম পালংঙ্কে বিশ্রাম নিচ্ছেন। হঠাৎ তার প্রাসাদের ছাদের উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। দ্রুত বিছানা ছেড়ে প্রাসাদের ছাদে চলে গেলেন। ছাদে গিয়ে তিনি অবাক হয়ে গেলেন। তিনি দেখলেন একজন সাধা-সিধে মধ্যবয়সী লোক তার ছাদে পায়চারী করছে।
ইব্রাহীম আদহাম জিজ্ঞেস করেন: “তুমি কে?”
লোকটি উত্তর দিল: “জাহাঁপনা! আমার উটটি হারিয়ে গেছে, এখানে খুঁজতে এসেছি।”
ইব্রাহীম বললেন: “ওহে নির্বোধ! কেউ কখনো ছাদের উপরে উট খোঁজে নাকি? উটের কি পাখা আছে যে, তা উড়ে এসে আমার ছাদে বসে থাকবে? উট এখানে কি করে আসবে?”
লোকটি উত্তরে বলল: “হ্যাঁ, জাহাঁপনা! ছাদের উপর উটের খোঁজ নেয়া একটি আশ্চর্য ও বোকামিপূর্ণ ব্যাপারই বটে। তবে, আর তাঁর চেয়ে অনেক বেশী বিস্ময়কর হচ্ছে আপনার কাজ। আপনি কি করে সোনালী সিংহাসনে বসে ও চকচকে রেশমী পোশাক পরে আল্লাহর সন্ধান করছেন?”
ছাদ থেকে ভেসে আসা এ কথাগুলো শুনে হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম বুঝে ফেললেন, মূলত লোকটি কোনো উটের মালিক নয় বরং উটের মালিকের বেশ ধরে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতা। তাঁকে মহান আল্লাহ আরো বেশী আপন করার জন্য পথপ্রদর্শনের জন্য পাঠিয়েছেন।
বাদশাহ ইবরাহিম আদহাম ভাবলেন, আজ আমাকে যে কথা শোনানো হলো তাতো ঠিকই। কারণ মহান আল্লাহকে পেতে হলে কঠোর সাধনা ও আত্মত্যাগের প্রয়োজন। কিন্তু আমি তো এখনো বাদশাহী আয়েশী জীবন পরিত্যাগ করতে পারিনি। রাজকীয় সুখ-সম্ভোগে লিপ্ত থেকে কি আর আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন হওয়া যায়?
এসব চিন্তা-ভাবনা করার পর তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে বসলেন। তাঁর সমস্ত শরীরে এক নব বিপ্লবের স্পন্দন অনুভব করলেন। নিমিষেই সমস্ত শরীর ঘেমে গেল। তিনি আর বসে থাকতে পারলেন না। সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালেন। তারপর চিরদিনের জন্য তিনি রাজসিংহাসনের মায়া ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়লেন পরম করুণাময় আল্লাহপাকের সন্ধানে। কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি তার একজন দাসের সাক্ষাৎ পেলেন। তখন তার দাস তারই ভেড়ার পাল দেখাশোনা করছিল। তিনি সেখানেই তার অতি সুন্দর ও মহামূল্যবান পোশাক দাসকে দিয়ে নিজে দাসের গায়ের রাখালি পোশাক পড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
[ বিখ্যাত এ মনীষী পরবর্তীতে আহলে বাইতের ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর বিচারবুদ্ধি ও যুক্তি ও চিন্তাধারা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন]।
তথ্যসূত্রঃ ‘তাজিরাতুল আউলিয়া’