খাজাবাবা ফরিদপুরীর জবান থেকে শুনা একটি শিক্ষনীয় কাহিনী
দিল্লী জামে মসজিদের ইমাম সাহেব যখন নামাজ পড়াইতে যেতেন তখন কোথা হতে যেন এক পাগল এসে তার সামনে বাধা হয়ে দাড়াত। এবং তাকে মসজিদে যেতে দিতে চাইত না। এরকম প্রতিদিন হওয়ায় একদিন ইমাম সাহেব রাগান্বিত হয়ে পাগলকে গালি-গালাজ করতে লাগলো এবং এক পর্যায়ে পাগলকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দিল।
তখন পাগল বলল- আপনি আমায় ধাক্কা দিলেন সেহেতু আমি ও আপনাকে ধাক্কা দিবো। এই বলে পাগল ইমাম সাহেব কে একটা ধাক্কা দিলেন। ফলে ইমাম সাহেব জামে মসজিদের সিঁড়ির সামনে পড়ে গেলেন এবং অজ্ঞান হয়ে গেলন। যখন জ্ঞান ফিরে পেলেন তখন ইমাম সাহেব দেখলেন যে তিনি এক বিশাল পাহাড়িয়া এলাকায় আছেন। তখন তিনি ভাবলেন আমি এখানে কেন?
আমি তো দিল্লি জামে মসজিদে ছিলাম, এখানে আসলাম কি করে। তিনি চারিদিকে দেখেন শুধু হিংস্র জন্তু-জানোয়ার। তখন ইমাম সাহেবের মনে মৃত্যু ভয় দেখা দিল এবং সে মরা কান্না শুরু করলো। এমনি কান্না যে তার সারা দেহের পানি তার চোখ দিয়া বের হয়ে দেহ শুকিয়ে গেল। এমন সময় তিনি দেখেন ৮০ বছরেরও বেশি এক বৃদ্ধ লোক দেখা যায় তার দিকে আসছে। তখন ইমাম সাহেব ঐ বৃদ্ধা লোক কে বললো বাবা এটা কোন জায়গা? বৃদ্ধ লোকটি বলল বাবা এটা কোহেকাফ। পৃথিবী কে বেষ্টনী করে রাখছে যে পাহাড়, এটাই সেই কোহেকাফ পাহাড়। আপনার বাড়ি কোথায়?
- -হুজুর দিল্লি
- -দিল্লি, খুবই আশ্চর্য কথা আপনি কোহেকাফ পাহাড়ে কিভাবে আসলেন?
- -হুজুর কিভাবে যে আসছি নিজেই জানিনা।
- -কেন? (বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলো)
- -এক পাগল ছিল প্রতিদিন আমার নামাজে যাওয়ার পথে বাধা দিত। আমি একদিন গোস্বা হয়ে পাগলকে ধাক্কা দিলাম, পাগলও আমায় ধাক্কা দিল আমি সিঁড়ির নিচে পড়ে যাই অজ্ঞান হয়ে, হুশ হয়ে দেখি আমি এই পাহাড়ে।
- -বাবা সর্বনাশ করছেন, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছেন।আপনার ক্ষমতা নাই নিজের দেশে ফিরে যাওয়ার। বাবা দিল্লি শহড় আমি চিনি আমি জানি,আমি আমার জীবনে ৭০ বার আমি দিল্লি গেছি।
- -তাইলে হুজুর আমারে পথ দেখান আমি দিল্লি চলে যাই।
- -বাবা অসম্ভব আপনি যদি ৭০ হাজার বার হায়াত পান ৭০ হাজার বার হেটে গেলেও দিল্লি যেতে পারবেন না।
এখন আপনার মৃত্যু অনিবার্য তখন ইমাম সাহেব ঐ বৃদ্ধ লোকটি কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তখন ঐ বৃদ্ধ লোকটি বললো বাবা আমি মাগরিবের নামাজের সময় আসবো দেখি আপনাকে দিল্লি পাঠানো যায় কিনা এরপর ইমাম সাহেব আবার অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন বাঁচার জন্য আল্লাহপাকের কাছে দয়া চাইলেন। মাগরিবের সময় বৃদ্ধ লোকটি আসলেন,নামাজ পড়ে বললেন বাবা আপনাকে দিল্লি পৌঁছে দেয়া হবে কিন্তু আপনি রাস্তাটা দেখতে পারবেন না। আপনার চোখ বাঁধা থাকবে।
ইমাম সাহেব রাজি হলেন। তখন তার চোখ বেধে দেয়া হল কয়েক কদম যাওয়ার পর বৃদ্ধ লোকটি বললেন চোখ খুলে দেখেন তো এটাই কি দিল্লি শহর কিনা! ইমাম সাহেব চোখ খুলে দেখেন দিল্লি জামে মসজিদের সামনে তারা দাঁড়ানো। তখন ইমাম সাহেব বললেন বাবা আপনি কে?আপনার পরিচয় না দেয়া পর্যন্ত আমি আপনায় ছাড়বো না। তখন বৃদ্ধ লোকটি বললেন, আমিই সেই পাগল যার একটা ধাক্কায় আপনি কোহেকাফ পাহাড়ে চলে গিয়েছিলেন, যদি আর একটু জোরে ধাক্কা দিতাম তাহলে আপনি পৃথিবীর অন্য প্রান্তে গিয়া পড়তেন।
আমি আপনাকে নামাজে যেতে বাঁধা দিতাম কারন আপনার দিল মুর্দা, আপনি নামাজের সময় দুনিয়াবি চিন্তা করেন।যার কারনে আপনার পিছনে যারা নামাজ পড়ছে তাদেরকে কে পথভ্রষ্ট করছেন।তাই আমি আপনার পথের বাধা হতাম।
উল্লেখ্য যে, এই পাগল ছিলেন জিন্দা দেলওয়ালা এক আল্লাহর ওলী। আল্লাহর ওলীর জ্ঞানের কাছে মুর্দাদেলওয়ালা জাহেরা আলেম, মুফতি, মুহাদ্দেস, ক্বারীর জ্ঞানের কোন মুল্যই নাই। সুতরাং এই ঘটনা হতে এটা বুঝা যায় আল্লাহপাকের ইবাদত শিখার জন্য ওলী-আল্লাহর নেক তাওয়াজ্জু ও ছোহবত দরকার। ওলী-আল্লাহগণের নেক ফয়েজই কেবল পারে মুর্দা দিল জিন্দা করতে।