রাসূল (সাঃ) প্রতি যুগেই স্বশরিরে ছিলেন এবং আছেন।
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিশ্চয়ই আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি, যেন তারা আল্লাহর ইবাদত করে।” (সূরা আন নাহল, আয়াত নং ৩৬)।
“আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দেই না।” (সূরা বনী ইসরাইল১৭, আয়াত নং ১৫)।
“হে রাসূল! আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রুপে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আহযাব, আয়াত নং ৪৫)।
হযরত রাসূল পাক (সঃ) বলেন,
“আমি আদম সন্তানের প্রত্যেক যুগের উত্তম শ্রেণীতে যুগের পর যুগ প্রেরিত হয়েছি। শেষে এ যুগে জন্মগ্রহণ করি, যে যুগে আমি বর্তমান আছি।”
(তাফসীরে মাজহারী ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১৩৫ ও ১৩৬। বোখারী শরীফ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৫০৩, হাদিস নং ৩৪৩২। মেশকাত শরিফ পৃষ্ঠা নং ৫১১, হাদিস নং ৫৪৯৩। মুসনাদে আহমাদ ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৫ ও ১৯৬ )।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল প্রেরণ করি, যাতে তারা আমার রাসূলের নির্দেশিত মতো পথ চলে আমার সঠিক ইবাদত করতে পারে। এখানে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক জাতি উল্লেখ করেছে। এখন আমরা কি জাতি নই। তাহলে আমরা এখন কার নির্দেশমতো চলতেছি। আমাদের রাসূল কোথায়। এখানে কিন্তু বর্তমানের কথা বলা হয়েছে। অতীত নয়। আবার মহান আল্লাহ তায়ালা অন্যত্রে বলছেন, আমি রাসূল প্রেরণ না করে কোন বান্দাকে শাস্তি দিই না।
তাহলে আল্লাহ যে এখন করোনা ভাইরাস দিলো। এটা কি শাস্তি নই?নাকি এটাকে স্বাভাবিক বলবেন। প্রায় প্রতিটি মানুষই কিন্তু মহান আল্লাহ তায়ালার কিছু না কিছু শাস্তি ভোগ করে। তাহলে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, আমি রাসূল প্রেরণ না করে কাউকে শাস্তি দিই না। এটা কিন্তু সবসময়ের জন্য বর্তমান। কখনো অতীত নয়। এটাকে ইংরেজিতে বলা হয় Present continous tens। অর্থাৎ সবসময় চলনান প্রক্রিয়া।
প্রতিটি জাতি যখন মহান আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, তখন ঐ জাতির সামনে তাদের রাসূল ছিলেন। যেমন নুহ নবীর আমলে মহাপ্লাবন হয়েছিল, আবার লুত নবীর আমলে সমস্ত দেশ সাগরে পরিণত হয়েছিল। তা আজও লুত সাগর নামে পরিচিত। রাসূল ওফাত হওয়ার পর জাতি শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, এমন প্রমান পবিত্র কুরআনের কোথাও দেখাইতে পারবেন না। তাহলে আমরা কেনো বর্তমানে স্বশরিরে রাসূল ছাড়া শাস্তির সম্মুখীন হবো? তাহলে কি আল্লাহর ঘোষণা মিথ্যা হয়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ)।
তা কখনো হতে পারে না। শুধুমাত্র আমাদের বুঝার ভুল। এখন কিন্তু অবশ্যই নবুয়্যাত শেষ হয়ে গেছে। এটা কিন্তু আমি অস্বীকার করছি না। কারণ নবী আর রাসূল এক নয়। পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতও খুঁজে পাবেন না, যেখানে রাসূল আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
আচ্ছা বলুন তো সাক্ষী কি কখনো না দেখে দেওয়া যায়? স্বাক্ষী দিতে হলে আপনাকে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে দেখে স্বাক্ষী দিতে হয়। নচেৎ সেই স্বাক্ষী গ্রহণযোগ্য হয় না। আবার কাউকে সুসংবাদ ও সতর্ক করতে হলে স্বশরীরে গিয়ে সুসংবাদ এবং সতর্ক করতে হয়। গায়েবীভাবে কখনো সুসংবাদ ও সতর্ক করা যায় না।
যদি তাই হতো তাহলে, মহান আল্লাহ নবী রাসূল পাঠানোর কোন দরকার হতো না। সরাসরি আল্লাহ গায়েবীভাবে সুসংবাদ ও সতর্ক করে দিতো। এই আয়াতটি দ্বারা আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির শুরু থেকে সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত বুঝাইছে। এটা Present continue tens এর মতো ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।
রাসূল পাক সঃ উপরোক্ত তিনটি কোরআনের আয়াতের সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সে বলছে আমি প্রত্যেক যুগের উত্তম শ্রেণীতে যুগের পর যুগ অবতীর্ণ হয়েছি এবং বর্তমানে আছি। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর নুর দ্বারা প্রথম নুরে মোহাম্মদী সৃষ্টি করলেন। সেই নুরে মোহাম্মদী ধারণ করেই বাবা আদম আঃ নবী হয়েছেন। আবার সেই নুরে মোহাম্মদী ধারণ করেই মুসা, ইসা, নুহ, ইব্রাহিম আঃ নবী হয়েছেন। কেউ নুরে মোহাম্মদী ধারণ ব্যতীত নবী হতে পারেননি।
অবশেষে রাসূল পাক সঃ স্বমহিমায় সরাসরি আপন নামে মক্কার বুকে অবতীর্ণ হলেন। আবার এই নুরে মোহাম্মদী ধারণ করেই বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী (রঃ), খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রঃ), আবার মোজাদ্দেদ আলফেসানি, বাহাউদ্দীন নকশবন্দি ইত্যাদি অর্থাৎ প্রত্যেক অলী আল্লাহ মহান প্রভুর মহামনবে পরিণত হয়েছেন। নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহকরাই মহান আল্লাহর মনোনীত রাসূল। রাসূল অর্থ আল্লাহর কাছ থেকে সুসংবাদদাতা। অলী আল্লাহরা মহান প্রভুর সুসংবাদ জগতবাসীর নিকট পৌঁছে দেয়। কেউ মানে আবার কেউ মানে না। কোনকালেই কোন মহামানবকে জগতবাসী একবাক্যে স্বীকার করে নেয়নি।
অধিকাংশ লোকই তাদের বিরোধিতা করছে এবং এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। নুরে মোহাম্মদী ধারণ ব্যতীত কেউ কখনো নবী, রাসূল এবং অলী আল্লাহ হতে পারেনি এবং হওয়া সম্ভব নয়। এই নুরে মোহাম্মদীর ধারক বাহকরাই আল্লাহর পক্ষ হতে মানুষকে হেদায়েত করে যায়। এই জন্যই রাসূল পাক সঃ কে হায়াতুন নবী অর্থাৎ জিন্দা নবী বলা হয়। আর জিন্দা নবী হওয়ার প্রথম শর্ত দেহের প্রয়োজন। দেহ ব্যতীত জিন্দা হয় কিভাবে? এই নুরে মোহাম্মদী সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এই নুরে মোহাম্মদী যেদিন থাকবে না, সেদিন ধ্বংসপ্রাপ্ত, লয়, বিলীন অর্থাৎ মহা কিয়ামত ঘটবে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, একটি বাংলা লিংকের সিম কার্ড যখন নকিয়া মোবাইলে স্থানান্তর করা হয়, তখন তার নাম হয় নকিয়া মোবাইল। আবার যখন সামসাং, সিমফনি, আইফোন, সাওমি মোবাইলে স্হানান্তর করা হয়, তখন সেই মোবাইলের নাম ধারণ করে থাকে। মূলত বস্তু কিন্তু সেই একটিই বাংলা লিংক সিমকার্ড। শুধুমাত্র বডি পরিবর্তন হওয়ার কারণে একেক সময় একেক নাম ধারণ করে থাকে। তাই তো মোজাম্মেল পাগলা বলে, ভিন্ন নামে ভিন্ন রুপে সেই তুমি একই বস্তু দয়াল সাঁই। তোমাকে বুঝার সাধ্য এই অধম পাপীর নাই। দয়া করে তুমি নিজগুণে প্রকাশ হও জগতবাসীর নিকট। তবেই অধম পাপীরা তোমাকে চিনতে পারবে। নচেৎ সারাজীবন আমরা অন্ধকারেই থেকে যাবো।
সূত্র: আল্লাহ কোন পথে।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।