হোমপেজ ইলমে মারেফত আল্লাহ ৭ আসমানের উপরে -এ কথার ভেদতত্ব।

আল্লাহ ৭ আসমানের উপরে -এ কথার ভেদতত্ব।

Advertisement:
IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

আল্লাহ ৭ আসমানের উপরে -এ কথার ভেদতত্ব।

৭ আসমান ও ৭ জমিন কি? আল্লাহ ৭ আসমানের উপরে -এ কথার অর্থ কি? পবিত্র কোরআনের আলোকে তুলে ধরা হলোঃ

আসমান ও জমিন শব্দ দুটি ফার্সী। আসমান অর্থ আকাশ, মহাশূন্য ইত্যাদি। আর জমিন অর্থ ভূমি, ভূ-পৃষ্ঠ,পৃথিবী ইত্যাদি। প্রচলিত ধারণা মতে – আল্লাহ ৭ আসমানের উপরে অবস্থান করেন।

পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ বলেন,

“তোমরা কি লক্ষ্য করনি আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টি করেছেন ৭ স্তরে সাজানো আকাশ আর সেখানে চন্দ্রকে আলো হিসেবে সূর্যকে প্রদীপ হিসেবে স্হাপন করেছেন।” (সূরা নূহ, আয়াত নং ১৫ ও ১৬)।

IPL 2024: ফ্রিতেই IPL Live Cricket খেলা দেখুন Full HD তে

“জিজ্ঞেস করুন, সাত আকাশ ও আরশের প্রতিপালক কে? ওরা বলবে, আল্লাহ। হে রাসূল! বলে দিন, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?” (সূরা আল মুমিনুন, আয়াত নং ৮৬ ও ৮৭)।

“তিনি (আল্লাহ) স্তরে স্তরে সাজিয়ে ৭আকাশ সৃষ্টি করেছেন। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত দেখতে পাবে না।” (সূরা আল মূলক, আয়াত নং ৩)।

“আমি তোমাদের উর্ধ্বদেশে সুদৃঢ় সপ্তকাশ নির্মান করেছি।” (সূরা আন নাবা, আয়াত নং ১২)।

“আল্লাহ সেই মহান সৃষ্টিকর্তা, যিনি ৭ আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং জমিনও এ সংখ্যায় সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আত তালাক, আয়াত নং ১২)।

পবিত্র কুরআনের বর্ণনার পাশাপাশি তাসাউফের সাধনা করে আমি মানব জীবনে এর সাথে অপূর্ব মিল খুঁজে পাই। মানবদেহের স্হূল অংশ, যা পৃথিবীর উপাদান থেকে সৃষ্ট, তার স্তরসমূহে জমিনতুল্য। আর মানবের সূক্ষ্ম অংশ, যা আলমে আমরের উপাদানে সৃষ্ট, তার স্তরসমূহ আসমানতুল্য। এভাবে ৭ জমিন বলতে দেহের ৭টি স্তরকে বুঝায়। যথা –

১/ চামড়া
২/ চর্বিস্তর
৩/ মাংসপেশী
৪/ পর্দা
৫/ হাড়
৬/ হৃদরা
৭/ হৃদপিন্ড

হৃদপিন্ড বা ক্বালব মানবদেহের কেন্দ্রবিন্দু। এ হৃদপিন্ড থেকে উপরের দিকের, অর্থাৎ নিম্নলোকে বা আলমে খালকের স্তরসমূহকে জমিন বলে গণ্য করা হয়। উপরে বর্ণিত সূরা নূহের আয়াতে চন্দ্র সূর্যের যে বর্ণনা রয়েছে, মানব দেহের সাথে তার মিল খুঁজতে গিয়ে সূফী সাধকগন বলেন- চন্দ্র বলতে মানুষের নফস এবং সূর্য বলতে মানুষের রুহকে বুঝানো হয়েছে।

রাসূল পাক সঃ বলেন,

“ক্বালব একটি মাংস টুকরো, উহার ভিতরে পেট আছে, এমনকি উহার ভিতরে ৭টি পেট রয়েছে।” (নূরুল আসরার)।

ক্বালব যদিও স্হূল জগতের অন্তর্গত একটি মাংসের টুকরা, এর ভিতরে সূক্ষ্ম জগতের অংশ ৭টি স্তরে বিরাজ করে। যথা –

১/ ছুদুর
২/ নসর
৩/ সামছী
৪/ নূরী
৫/ কুরব
৬/ মকীম
৭/ নফসী

ক্বালবের সূক্ষ্ম এই ৭টি স্তর মর্যাদায় স্হূল দেহের চেয়ে উর্ধ্বে। এগুলির একে অন্যের মধ্যেও আবার মর্যাদার তারতম্য রয়েছে। যেমন – মর্যাদা অনুসারে ক্বালবের প্রথম স্তর ছুদুরের অবস্থান দেহের স্হূল অংশের চেয়ে অনেক উচ্চে। কিন্তু বাকী স্তরসমূহের তুলনায় এর মর্যাদা সর্বনিম্নে। অনুরূপভাবে ক্বালবের ২য় স্তর নসরের মর্যাদা ছুদূর অপেক্ষা অনেক উচ্চে কিন্তু ৩য় স্তর সামছীর তুলনায় অনেক নীচে। এভাবে ক্বালবের ৭ম স্তর নফসীর মর্যাদা সবার উর্ধ্বে।

ছুদুর থেকে মানুষ রিপু তাড়িত হয় বিধায় এটাকে শয়তানের বাসস্থান বলা হয়েছে। অপরদিকে নফসীর স্তরে আল্লাহ তায়ালার জাত পাকের নূর বিরাজ করে। আল্লাহকে পাওয়ার সাধনায় সাধককে ক্বালবের এই সূক্ষ্ম স্তরসমূহ একে একে অতিক্রম করে নফসীর মাকামে আল্লাহর সাথে মিলিত হতে হয়।

স্হূল জগতের সাথে সম্পর্কিত ক্বালবের প্রথম স্তর রিপুর তাড়নাযুক্ত থাকে। মহামানবের হৃদয় থেকে ফায়েজ হাসিল করে আপন হৃদয়ের রিপুসমূহ পরিশুদ্ধ করে, অর্থাৎ – এদের কু-খায়েশ বিদুরিত করে সাধক ক্বালবের ১ম স্তর ছুদুরের আধিপত্য লাভ করে। এভাবে সে তার জীবাত্মাকে পরমাত্মার সহায়তায় বিশ্ব আত্মার সাথে মিলন লাভের যোগ্যতা সম্পন্ন করে তোলে।

রিপু দমন করে ক্বালবের ১ম স্তর অতিক্রম করার পর তার জীবআত্না ক্বালবের ২য় স্তরের সূক্ষ্ণতর মর্যাদা অর্জনের সাধনায় লিপ্ত থাকে। এভাবে জীবআত্না ক্বালবের এক একটি স্তর অতিক্রম করে পরবর্তী উচ্চ স্তরের দিকে যাত্রার সাধনা অব্যাহত রাখলে শেষ পর্যন্ত নফসীর মাকামে -আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হয়। যে সাধকের জীবআত্না আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে পৌঁছাতে পারে, তাঁর স্হূল পঞ্চ ইন্দ্রিয় অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হয়।

আল্লাহর নূরে তাঁর দেহ আলোকিত হয়, অর্থাৎ আল্লাহর ছিফাত সমূহ তাঁর মাধ্যমে প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হয়ে যান। আল্লাহ প্রাপ্তির এরুপ সাধনার প্রতি ইঙ্গিত করে রাসূল সঃ এরশাদ করেছেন – “তোমরা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হও।” কোনো মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে এভাবে সাধনার মাধ্যমে ছুদূরের মাকামকে রিপুর তাড়নামুক্ত করে নফসীর স্তরে বিরাজমান আল্লাহর নূর পূর্ণভাবে বিকশিত করতে পারলে ঐ ক্বালবের আল্লাহর আরশে পরিণত হয়।

সূত্র: আল্লাহ কোন পথে।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।