আদম ও গন্দম (সূফীতত্ত্ব)

আদম ও গন্দম (সূফীতত্ত্ব)

আল্লাহ তায়ালা এই বিশ্ব সংসার সাজিয়েছেন মানুষের মাধ্যমেই। আর এই মানব জাতির সৃষ্টি করেছেন তিনি দুইজন মানুষ দ্বারা। একজন পুরুষ (আদম) ও অপরজন নারী (হাওয়া)। আদম (আ) যখন বেহেস্তখানায় একাকীত্ব অনুভব করলেন তখন আল্লাহ হাওয়া (আ) কে তাঁর জীবন সঙ্গীনি করে দিলেন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জন্য অবশ্যই একজন নারী প্রয়োজন। নারীহীন পুরুষ কখনো পূর্নতা পায় না। তাই দুনিয়ার এই জীবনেও একজন পুরুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন নারীর প্রয়োজন হয়। প্রথম পর্যায় তার জননী ও একপর্যায়ে প্রয়োজন হয় স্ত্রীরূপি নারীকে। আদম ও হাওয়া (আ) আল্লাহ বেহেস্তের সব কিছু ভক্ষন করার ও যা খুশী তাহা করার অনুমতি দিলেন একমাত্র গন্দম ফল ভক্ষন ও ঐ বৃক্ষের নিকট যেতে নিষেধ করলেন। আবার গন্দমকে হুকুম করলেন যেন তাদের পিছু সে না ছাড়ে।

মূলত হাওয়া (আ) ই ছিলেন গন্দম বৃক্ষ। তবে আল্লাহ তায়ালা আদম ও হাওয়া উভয়কেই বৃক্ষের নিকট যেতে মানা করছিল। এখান থেকে বুঝা যায় যে, একজন নারী সব সময়ই গন্দম বৃক্ষ নয়। কারন হাওয়া (আ) সব সময় আদম (আ) এর পাশে ছিল। তাই বলা যায় একজন নারী সেই সময় টুকুর জন্যই গন্দম বৃক্ষ, যখন তার মাঝে কামভাবের উদয় হয়। আর গন্দম সেটাই, নারী ও পুরুষ উভয়েই কামভাব উদয়ের সময় প্রেমালীঙ্গনে যৌবনের যে স্বাদ আস্বাধন করে। সেই বিচারে নারীর যৌবনই গন্দম। আর যুবতী একজন নারীই হলো গন্দম বৃক্ষ।

তাই বলা হইছে যে, আদম যে গন্দম খেয়ে গোনাহগার হয়েছিলেন, আজও মানুষ সেই গন্দম আহার করতেছে। যদি আদম গন্দম না আহার করত তাহলে এই ধরায় আর কোনো মানুষের জন্ম হতো না। দুনিয়াকে সাজানোর জন্যই সাঁই এই লীলাখেলা করেছিলেন আদমের সাথে। এটা মূলত তাহারই ইচ্ছা ও হুকুমে হয়েছে তাঁর এই বিশ্ববাগান সাজানোর জন্য।

মানুষকেই কুরআন বলা হয়েছে, যাকে মানুষ কুরআন বলা হয়। নারী পুরুষের মিলনের মাধ্যমেই অপর একজন মানুষ কুরআনের জন্ম হয়। আর মক্কা তায়েফের ঘরেই আদম (আ) কে ছানাপিনা করা হয়েছিল, আজও ঠিক সেভাবেই মক্কা তায়েফের ঘরে মানুষকে ছানাপিনা করা হয়।

হাওয়া (আ) যখন গন্দম ফল ছিরেন অর্থাৎ আদম (আ) এর সাথে সেই প্রেমরস আস্বাদন করেন, তখন তিন ফোটা রক্ত ঝরে। এক ফোটা দিয়ে এই মানব কূল তৈরি হয়। অর্থাৎ নারীর মাসিক ঋতুস্রাব তখন থেকেই শুরু হয়েছিল। তাই আজও প্রতিটা নারীর হয়। আর সন্তান গর্ভে আসলে এই রক্ত সন্তানের নাভীমূল দ্বারা দেহে প্রবেশ করে ও এভাবেই একটি মানব শিশুর জন্ম হয় এই রক্ত দিয়ে।

গন্দমের ব্যাখ্যা সংক্ষেপে শেষ। তবে সাধু মহৎ ও আত্মজ্ঞান পিপাসুদের কাছে কয়েকটা বিষয় উপস্থাপন করতে চাই। আদম (আ) কে যেভাবে মক্কা তায়েফের ঘরে ছানাপিনা করা হইছিল আজও প্রতিটা মানুষকে মক্কা তায়েফের ঘরে সেভাবেই ছানা পিনা করা হয়। মানুষের ছানাপিনার বিষয় টা আমার পোস্টে ইশেরায় বলে দিয়েছি। কিন্তু আদম (আ) কে কোন মক্কাতায়েফের ঘরে এইভাবে ছানা পিনা করা হলো যেভাবে আমাদের করা হয়? উনিই ত প্রথম মানুষ। উনার ছানাপিনা আর আমাদের ছানাপিনা কিভাবে এক হল? আর আদম রহস্য অনেকেই বুঝলো, কিন্তু হাওয়া রহস্য কি? তাকে কোথায় ছানাপিনা করা হলো? আদম ও হাওয়ার অযুদ ত একই। সুতরাং সৃষ্টি পদ্ধতিও একই। কিন্তু সেটা কিভাবে?

প্রশ্ন গুলো রেখা গেলাম। চৈতন্যময় মন যাদের, তারা ইহা না জানলেও আজ হয়তো ভাবার দেশে ডুব দিবে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজার জন্য। আর অজ্ঞানীরা ভাববে ভিন্ন বিষয়। মূলত ইহাই মারফত। যাহা প্রকাশ করা যায়না কারো কাছে।

আর এবিষয়ে একটি মূল্যবান গান-

এ বিশ্ব বাগানে সাঁই নিরাঞ্জনে
মানুষ দিয়া ফুটাইল ফুল।
আদমকে নিষেধ করে গন্দম খেওনা,
গন্দমকে হুকুম দিল পিছু ছেড়না।
বুঝিতে আজ তাঁর বাহানা
সংসারে এই গন্ডগোল।।

যে গন্দম খেয়ে আদম হইল গোনাগার,
আজ পর্যন্ত আমরা তাহা করতেছি আহার।
হজরত আদম হাওয়া সেই গন্দম
এই হলো সেই কথার মূল।।

হাওয়া গন্দম ছিঁড়ে যখন বেহেস্তেখানায়,
তিন ফোঁটা খুনজারি তখন হইয়া যায়।
এক ফোঁটা দিয়া মানুষ গড়িয়া
ভরেছেন সাঁই দুনিয়ার কূল।।

গন্দমের আঁঠা দিয়া বানাইয়া লালে কালি,
ছাপাখানার ঘরে কোরান দিতেছে তালি।
আসল কথা যদি বলি
মুন্সী মোল্লায় বলবে বাতুল।।

গন্দমের বাহানা করে পাঠায় সংসারে,
মানুষ দিয়া মানুষ বানায় মানুষের ঘরে।
কুরআন ছাপায় কোরআন ধরে
লাগছে বিষম হলস্থল।।

জালাল ভাবতে ভাবতে হয়ে পেরেশান,
গন্দম গাছের তলে গেল পাইয়া ময়দান।
গিয়া সেথায় পরিয়া ঘুমায়,
নেশার ঝোঁকে ভাঙেনা ভুল।।
এ বিশ্ব বাগানে সাঁই নিরাঞ্জনে।
মানুষ দিয়া ফুটাইল ফুল।।

– জালাল উদ্দিন খাঁন

টীকা।

(ছানাপিনা মানে হচ্ছে মিশানো, মাখানো, পানি দিয়ে মাখানো, (Impasto, Mix)। অনেক বাচ্চারা মাটির সাথে পানি মিলিয়ে যেভাবে মাখামাখি করে দুই হাত দ্বারা, বা আটা বা ময়দার সাথে পানি মিলিয়ে যেভাবে মাখানো হয়, তাকেই ছাপাপিনা বলে)

– লেখাঃ দেওয়ান রাহাত (DM Rahat)
– জামালচর ছায়েদিয়া পাক দরবার শরীফ