মুসলমানরা কেন হিযরী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করেন না?
মুহাররমের প্রথম দিন থেকেই হিযরী বর্ষ শুরু হবে কিন্তু রাসূল সা.-এর হিযরত মুহাররমের পরে রবিউল আউয়াল মাসের প্রথম রাত্রিতে হয়েছিল। যে রাত্রিটি ইসলামের ইতিহাসে ‘লাইলাতুল মাবিত’ নামে পরিচিত। সে রাত্রিতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী আলাইহিস সালামকে নিজ বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিলেন যেন মক্কার কাফেররা তাঁর অনুপস্থিতি বুঝতে সক্ষম না হয় এবং তিনি ১২ রবিউল আউয়াল মদীনায় পৌঁছেন।
বিশ্বের প্রচলিত প্রতিটি বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষ অনেক খুশি-আনন্দের সাথে উদযাপন করেন। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসের কোথাও হিযরী সনের প্রথম দিনটিতে আনন্দ-উৎসব করার বর্ণনা নেই। প্রিয় নবী সা. হিযরতকে কেন্দ্র করে যে সনের প্রবর্তন, সে সনের প্রথম দিনকে কেন মুসলমানরা জাঁকজমকের সাথে উদযাপন করেন না? তার কারণ হল- এ সনের প্রথম মাস ‘মুহাররম’। .যে মাসে প্রিয় নবীর দৌহিত্র, খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমার কলিজার টুকরা হযরত ইমাম হোসাইন আলাইহিস সালাম কারবালায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। অন্য সনগুলো আনন্দের বার্তা নিয়ে এলেও হিযরী সনের প্রথম মাস মুসলমানদের কাছে শোকের বার্তা নিয়েই হাযির হয়।
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক কাবা শরীফের পূণর্নিমাণ ও তাঁর সন্তান হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের সময় এবং আল্লাহর ঘরের যিয়ারত ও হজ্জ আদায়ের পর থেকেই আরব ও আরব উপদ্বীপের পার্শবর্তী গোত্রসমূহের মানুষ চন্দ্রবর্ষ অনুসারে নিজ কাজ-কর্ম সম্পন্ন করতেন। ১৬ অথবা ১৭ হিযরীতে দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমরের নির্দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার কাজ-কর্ম সম্পাদন সুবিধার্থে বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের জন্য কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্যরা পরামর্শ সভায় আবরাহার হাতির ঘটনা এবং রাসূল সা.-এর কাছে প্রথম অহী আসার দিন থেকে সন গণনা করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু হযরত আলী রাসূল সা.-এর হিযরতের দিন থেকে সন গণনার প্রস্তাব দেন এবং তাঁর প্রস্তাবটিই গৃহীত হয়।
রাসূল সা. যেহেতু রবিউল আউয়াল মাসে হিযরত করেছিলেন সেহেতু রবিউল আউয়াল মাস থেকেই হিযরী সন গণনা শুরু করা উচিত ছিল কিন্তু হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পর থেকেই আরবরা মহররমকে বছরের প্রথম মাস গণনা করে আসছে তাই হিযরতকে কেন্দ্র করে ইসলামী সন গণনা শুরু করা হলেও বছরের প্রথম মাস নির্বাচনে আরবদের প্রচলিত ঐতিহ্যকে গ্রহণ করা হয়। অন্য একটা কারণ, জিলহ্জ্জ মাসে মুসলমানরা হজ্জ সম্পন্ন করতেন আর তার পরের মাস মুহাররম।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমানদের মত আমাদের দেশের মানুষও মহররমকে শোকের মাস মনে করেন। দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, খানকা, মাযার, ইমামবাড়া-মোকামসহ বিভিন্ন সংগঠন-প্রতিষ্ঠান কারবালার ঘটনার বর্ণনা-শিক্ষা-তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও মর্সিয়া-মাতমও হয়। কিন্তু আরবে আলে সৌদ ক্ষমতা দখল করার পর থেকে রাসূল সা.-এর আহলে বাইত (নবী পরিবারের বিশেষ সদস্য) আলাইহিস সালামের সাথে শত্রুতা পোষণকারী নাসেবী-এজিদী সম্প্রদায়ের মানুষেরা মহররম মাসে আনন্দ-উৎসবের আয়োজন বাড়িয়ে দেয়। কোথাও কোথাও তারা এজিদের নামে প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত স্থাপন করে। মহররম মাস এলেই তারা টিভি চ্যানেলসহ অন্যান্য মিডিয়ায় এজিদকে নিরাপরাধ ও জান্নাতী বলে প্রচার-প্রচারণা চালায়। তাদের দেখাদেখি আমাদের দেশের নাসেবী-এজিদীরাও হিযরী নববর্ষ উদযাপন শুরু করে।
এজিদীরা মহররম মাসে আনন্দ-উৎসবের মাধ্যমে রাসূল সা.-এর আহলে বাইত আ.-এর সাথে শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের কোন কোন দরবার-সংগঠনও এখন ওহাবীদের দেখাদেখি আনন্দ-উৎসবের সাথে হিযরী নববর্ষ উদযাপন করা শুরু করেছে। মহররম মাস এলেই রাসূল সা.-এর আহলে বাইতের উপরে যুলুমের কথা স্মরণ হয়। স্মরণ হয় কারবালার করুণ ঘটনা। যে ইমাম হোসাইন আ. কে আল্লাহর রাসূল সা.-এতো ভালবাসতেন, যাঁর মর্যাদার কথা কুরআন-হাদীসের শত শত জায়গায় এসেছে, যাঁর শহাদাত-মুসিবতের কথা স্মরণে স্বয়ং রাসূলে খোদা সা. কেঁদেছেন, কোন মুসলমান কি সেই মহররমে আনন্দ-উৎসব করতে পারে?
লেখা: আবু সালেহ
তাং: ৪ অক্টোবর, ২০১৬