একটি চাপিয়ে দেওয়া বেদনার কথা:
বিনয়ের শেষ সিড়িতে দাড়িয়ে, বিনয়ের একবিন্দু জল হয়ে, পরমপূজনীয় অনাগত কালের ভবিষ্যৎ প্রজম্মের আগন্তুক অতিমানবকে বলছি, এই অধম লিখকের বচনগুলি অনুগ্রহপূর্বক শ্রবণ করিবার নিমিত্তে বিনতচিত্তে, বিনয়ের মূর্তির অনুগামী হয়ে আকুল নিবেদন করছি।
একটি কবিতার লাইন দিয়ে আরম্ভ করিবার প্রয়াস পাচ্ছি-
“প্রেমের কলঙ্কের মধ্যেও আনন্দ আছে,
চাটুকারের পতাকার আড়ালে ধ্বংস লুকিয়ে থাকে।”
অহংকার কিংবা আঘাত করিবার মন মানসিকতা নিয়ে লিখছি না। চরম বাস্তবকে সামনে রাখিয়া অপ্রিয় ধ্রুব বচনগুলো লিখে চলছি। ভাব ও ভাষার গাম্ভীর্যে বিচ্যুতি থাকিলে ভ্রাতৃীস্নেহে মার্জনীয় ক্ষমা চাহিয়া গেলাম। আধুনিক সাইকোলজির একটি টার্ম রহিয়াছে:- knowing, felling and willing. আগে জানিবার চেষ্টা কর, অনুভব কর এবং তদানুসারে বিচার তথা মন্তব্য প্রকাশ কর। প্রত্যেকটি মানুষের কিছু ব্যতীক্রমি প্রকৃতি থাকে। ইহা মানুষের জেনেটিকগত ও সহজাত বৈশিষ্ট্য রহিয়াছে বলিয়া আমার সুদৃঢ় প্রত্যয়। চিন্তাশীলতা রুচিশীলতা, নান্দুনিকতা, চেতনায়, যোগপ্রবণতায়, সাংস্কৃতিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশে, প্রত্যেকটি মানুষের মানসিক বিকাশের গভীরতর ছাপ, ভিন্ন ভিন্ন স্বরূপে পরিলক্ষিত হইয়া থাকে।
বর্তমান বিশ্ব পুঁজিবাদী তথা মুক্তবাজার অর্থনীতি তথা ব্যক্তিসাতন্ত্রবাদ বিরাজিত। যুগের মাহেন্দ্রক্ষণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় কল্যানে মানুষ মহত্তোর ও উচ্চতর জীবনাবিকাশে অগ্রসর হচ্ছে। অবাধ তথ্য প্রবাহের প্রয়াসে মানুষ পাইয়াছে গবেষণা ও চিন্তার স্বাধীনতা। মানুষ সংকীর্ণতার গন্ডির বৃত্ত পার হয়ে মুক্তবিঙ্গের ন্যায় মুক্তভাবে মুক্তচিন্তায় ধাবিত হচ্ছে। ইহার প্রভাবে আসল ও মেকির রহস্য উন্মুচিত হইতেছে। উচ্চতর সংস্কৃতিবান ও রুচিশীল অভিজ্ঞান সমপন্ন মানুষগণ, জীবন ও জগৎকে গভীর অন্তর্ভেদী দৃষ্টির নিখিরে অণু অণু করিয়া পর্যবেক্ষণ ও দর্শন করিবার প্রয়াস পাইয়াছেন।
হে ভবিষ্যৎ প্রজম্ম অতিমানব আপনি অবগত থাকিবেন যে, সর্বজনীনতায় অবগাহোন না করিলে, জীবনের অর্ধাংশ অপূর্ণীয় থাকিয়া যায়। আর সেই সর্বজনীনতায় অবগাহোন করিবার পহেলা টেকনোলোজি উল্লিখিত, বিনয়ের সহিত স্বীয় সত্তাকে পরিশিলীত জ্ঞানানুসন্ধানে নিবিষ্ট করিয়া রাখা। সমীম থেকে অসীমের প্রানে প্রবাহিত হওয়া, বিমূর্ত থেকে মূর্ত, অজানা থেকে জানা, কারণ থেকে কার্যে, ভূত থেকে ভবিষ্যতে, প্রকাশ থেকে বিকাশে, স্থল দর্শন থেকে সূক্ষ্ণ দর্শনে, মর্ম থেকে মর্মে দ্বার উদঘাটন করা, আত্মদর্শনের মারফতে স্বীয় ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ছিন্নভিন্ন করিয়া স্বাধীনতার রস উপভোগ করা এবং পরিবর্তনকে মানিয়া নেওয়া ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বীয় নফসকে সংযত করিবার প্রয়াসই হইল বিশ্বজনীন হইবার প্রারম্ভিক সোপান।
এই নিরুপম রূপবৈচিত্রময় নান্দিনিকতা রূপের ছটায় অভিষিক্ত। পৃথিবী নামক গ্রহটা গোলাকৃতি, সরলরেখা বলিতে কোনো কিছুই নেই, যাহা কিছু রহিয়াছে সবই পরিবর্তনশীল। যাহা কিছু দর্শন করিয়া থাকি, তাহাই আপেক্ষিক সত্য। আপেক্ষিকতা সার্বিক সত্য নহে, সাময়িক সত্য। এই ক্ষুদ্র গ্রহে প্রায় আটশতকোটি মানুষের নিবাস। বিদ্যমান এই বিশ্বনামক যন্ত্রটা শ্রেণিচক্রের কষাঘাতে ত্রিমাত্রিক বলাৎকারে বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়ার উপসর্গের চিহ্ন স্পষ্ট। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রগতি সম্মুখপানে অগ্রসর হইতেছে।কিন্তু বিশেষ মহলের স্বার্থলোভী বকধার্মিক, ধর্মান্ধ জ্ঞানী বলিলে যাহা মানায় আর কি! সামপ্রদায়িকতার উগ্রমোহে স্লো-পয়জনের তাহারা জড়জড়িত, তাহাদের কৃত্রিম মতবাদের অমিল হইলেই সুন্দর একটি ফতোয়ানামক তকমা লাগিয়ে দেয় লাগ বেলকি লাগের মতো।
যেদিন বি অন সাইন্স এবং বি-প্যাক্টিক্যাল কোরানিক দর্শন বস্তুবিজ্ঞানের বৌদলতে রাগঢাক না রাখিয়া চিতৎকার করিয়া জানিয়ে দিবে, সেই দিন তাহাদের প্রাগৌতিহাসিক ভিত্তিহীন ফতোয়ার জারিজুরির হইবে চীর অবসান। ঐদিন মহানবীর নামে বাটপারি, মিথ্যা আরোপকারীরা পড়িবে অক্টোপাসের ন্যায় ইথারজালে। সময়ের ব্যবধান মাত্র। সেইদিন আর বেশি নাই। সামনে আসছে টেলিপ্যাথির যুগ। আমরা বাঙালী। জাতে ও ভাষায় আমরা সংকর। ধর্ম বাঙালির উদারচিত্তের আধারে অবস্থান করিয়া থাকে। ধর্মের কার্য হচ্ছে নিসকামী, সংযমী, পবিত্র, শান্তিকামী ও সূক্ষ্ণমানুষ রূপে গড়ে তোলা। ধর্মের সহিত কর্মের সমপর্ক অভিন্ন। কর্মের সহিত দেহ ও চিত্তের নিবিড় সমপর্ক বিদ্যমান। ইহা মানুষের অভ্যন্তরীনসত্তাকে নির্মল, প্রফুল্ল, প্রভাময়, পবিত্র ও কুলষমুক্ত করিবার নিমিত্তে উপলক্ষ্য স্বরূপে ধর্মের বিবিধ প্রকার আনুষ্ঠানিক বিধানের প্রায়োগিক আয়োজন।
আমি কোথায় ছিলাম, কোথায় এলাম, কোথায় যাব, কোথায় আমার স্থিতি হবে, কি আমার আপন সত্তার পরিচয় তাহার জ্ঞান গবেষণা করা কি জম্মই আমার আজম্ম আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ তাহা জানি নে! তবে অধিকাংশ মানুষ ভাত কাপড়ের জন্য বিদ্যা অর্জন করিয়া থাকে, এইটুকু অনুভব করিতে পারি বটে। জ্ঞান গবেষনা করিলে মিথ্যার ডিপো ইবলীশী দর্শন কায়েম করিবার সমাজ পরিবর্তনের তকমা নামক বিশেষতা দিয়া আলাদা করিয়া রাখে। হায় রে সমাজ দর্শনের সাম্য!
শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কি স্বর্গ লাভ আর নরকের ভয় থাকিয়া বাঁচা? নাকি অধিক বিদ্যার সনদডিগ্রী অর্জন করিয়া অর্থোপার্জন করা? নাকি মানুষকে অন্তমুখী, শান্তিকামী, পবিত্র, বিশুদ্ধচিত্তের প্রজ্ঞাবান ও দায়িত্বশীল হিসাবে গড়িয়া তোলা। একজন হিতসাধনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কর্মপন্থা ও অন্তর্নিহিত সত্তাকে প্রস্ফুটিত করিবার ইন্দনযেগান দিবেন। এ ব্যতীত শিক্ষার্থীর জন্য মহৎ ও উৎকৃষ্ট আর কি হইতে পারে। অনাগতকালের অতিমানব ভাই আমার, আমরা নাকি শিক্ষার্থীদের বি প্ল্যান দেই, শিক্ষার্থীদের ব্রেইনওয়াস করি, তাদের নাকি নাস্তিক হইবার ইন্দনযোগাই। আমরা নাকি খ্যাপা হইয়া গিয়াছি, আমরা নাকি আকিদাভ্রষ্ট হইয়া গিয়াছি, আমরা নাকি মুর্তাদ হইয়া গিয়াছি ইত্যাদি ইত্যাদি তাহাদের ভাষায় বর্ণাতীত, অকথ্য বিশ্রী কটুমন্তব্য শুনিলে শরীল রি রি করিয়া থাকে
এ মিথ্যা, বানোয়াট জগন্য অপবাদ দেওয়া কি মাথারজ্ঞানী বিদ্বানদের মানায়? প্রিয় অনাগতকালের অতিমানব ভাই, আমরা অধম বিনত,আমাদের জ্ঞান অতি নগন্য। আমাদের হইয়া আপনি তাহাদের লা জাওয়াব করিয়া দিবেন। এবং তাহাদের মুখে জাম্মা কষে দিবেন। কারণ তাহাদের বিদ্যার বেশি কচকচানি তাহার সহিত রহিয়াছে ব্যাকরণের মারপ্যাচ। তাহাদের বিরোদ্ধ কথা বলিবার চিন্তা করাও আমাদের মতো ব্যক্তির পাপ। বিদ্বানদের নিকট একটি প্রশ্ন রাখি, জ্ঞান অর্জনের সর্বশেষ জ্ঞানটির নাম কি বিদ্বানরা জানেন? তাহাদের প্রশ্ন থাকিলে আমাদের সম্মুখ পানে আসুক। আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতি থাকিলে আমরা অবনত মস্তকে আমাদের ভুলভ্রান্তিগুলো সংশোধন করিয়া নিব। তাই বলিয়া চরিত্রের উপর অপবাদ? জগতের কত মহাপুরুষদের না জানি তথাকথিত কলঙ্কমার্কা বিদ্বানরা অপমানিত করিয়াছেন। ইতিহাস হয়তো জানান দিয়া থাকিবেন। হা রে বিদ্যার কচকচানি। আমরা তাহাদের মাথায় হানিঘাত হানছি নাকি তাহাদের পাকা ধানে মই দিয়াছি।
যারা শিক্ষার্থীদের ভালবাসতে জানে না, সম্মান দিতে জানে, তাহারা কি করিয়া সম্মানিত হইবেন। কারণ প্রেম ভালবাসা তথাকথিত বিদ্বানদের বিধানশাস্ত্রে হারাম। এই বিদ্বানরা আল্লাহর অসীম জ্ঞান, এক নিঃশেষে প্রাণ করিয়া কুদরতে আল্লাহ পাওয়ার সোল এজেন্সী খোলিয়াছেন। এই অন্তাহ করা, চাপাপড়া অব্যক্ত কতাগুলা ভবিষ্যৎ প্রজম্মের অতিমানবের জন্য শেয়ার করিয়া গেলাম।
ইতি-
আর এফ রাসেল আহমেদ।