হোমপেজ আত্ম সচেতনতা সবকিছু জেনে ফেলাই জ্ঞান নয়!

সবকিছু জেনে ফেলাই জ্ঞান নয়!

375

সবকিছু জেনে ফেলাই জ্ঞান নয়!

আমি কিছুই জানিনাঃ

পৃথিবীতে যদি কোন বড় অহংকার থাকে সেই অহংকারটার নাম হল ‘আমি সবকিছু বুঝে গেছি, সবকিছু জেনে গেছি’।

আল্লাহ অসীম। সীমার দেয়ালে তিনি নেই। জ্ঞান অসীম। সীমার দেয়ালে জ্ঞান নেই। যদি জ্ঞানের এখানেই শেষ বলে ঘোষণা করা হয় তবে আল্লাহরও এক স্থানে এসে শেষ হয়ে যাবার প্রশ্নটি আসে। নতুন নতুন বস্তুর বিজ্ঞানের আবিষ্কার এই অসীমতার স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। বস্তুর বিজ্ঞানের যেখানে শেষ বলে কোন কথা আসে না, সেখানে আত্মার বিজ্ঞানের প্রশ্নটি তো আরো ব্যাপক এবং জটিল এবং ইহারও শেষ নেই। কোরান শরীফ আল্লাহর তথা অসীমের কথাসমষ্টি। অসীমের কথাও অসীম। মানুষ তাঁর সম্পূর্ণ অনুবাদ এবং ব্যাখ্যা কোনদিনও দিতে পারে না। কারণ, অসীমের গুনাবলির শেষ নেই এবং যেহেতু গুনাবলির অন্ত নেই, সেহেতু তার ব্যাখ্যারও শেষ নেই। (ডা. বাবা জাহাঙ্গীর রচিত ‘মারেফতের গোপন কথা’) নামক গ্রন্থ থেকে।

সুরা লোকমানের ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন:-

“পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি এবং ইহার সঙ্গে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বানী নি:শেষ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”

মন্তব্য:

কালান্দার জাহাঙ্গীর আঃ বলেন, আমি ৫৩ বছর কোরান রিচার্স করে, একটি বিরাট জ্ঞান অর্জন করছি, আর সেই জ্ঞানটি হল আমি কোরানের কিছুই বুঝি নাই। এবং আরো বলেন আমি খুটিয়ে খুটিয়ে বিশ্লেষণ করে হতাশ হয়ে যাই। আল্লাহ অসীম তার কালামও অসীম। আর জ্ঞান অর্জনের সর্বশেষ জ্ঞানটির নাম হল আমি কিছুই জানি না। এই বিষয়টি সুরা লোকমানের ২৭ নং আয়াতের দেদীপ্যমান প্রমাণ। যাহা পৃথিবীতে আর কোনো কোরানের তাফসীরকারক তথা মুফাসীর লিখে যান নি।কালান্দার জাহাঙ্গীর আ: বলেন অধম লিখক কোরানের উপর ৪৭ টির উপরের তফসীর পড়েও এই আয়াতের প্রকৃত অর্থটি লিখতে পারলাম না। তাই পাঠক বাবা মায়ের কাছে অকপটে বলে দিলাম ইহার অর্থ আমার জানা নাই। অধম লিখক আরো বলতে চাই গাঁয়ের জোড়ে গুন্ডা হওয়া যায় কিন্তু গুরু হওয়া যায় না।

এখানেই কালান্দার জাহাঙ্গীর আ: এর বিশেষত্ব। সবাই জেনে যায়, আর উনি জানেন না। কোরানের হুবহু অনুবাদ ও সামান্য ব্যাখ্যা আর তার রচিত ২৮টি বই পড়লেই বুঝা যায় কালান্দার জাহাঙ্গীর পৃথিবীর সর্বশেষ্ঠ ইসলাম গবেষক। চৌদ্দশত বছের ইতিহাসে কালান্দার জাহাঙ্গীর কোরানকে কোরানিক দর্শন আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। কোরানের সারমর্ম নফস আর রূহের পার্থক্যটি পরিষ্কার ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন। কিভাবে জীবন্ত কোরানকে স্পর্শ করা যায়, দায়েমি সালাতের প্রতিষ্ঠান তথা ধ্যানসাধনার স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেগেছেন যা পৃথিবীতে কেউ করেন নি।

আমি কোরানের কিছুই বুঝিনি এটা তার বিনয়ের ভাষা। আসলেই মহামানবদের ভাষা আমার মত সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় না। আমরা বিনয়ের ভাষাকে পুঁজি করে, আইন দিয়ে বিচারে কাঠগড়ায় দাড় করাই।বিনয় আর অভিমানের ভাষায় আইন দিয়ে বিচার করলেই ভুল হবে। এটা নিছক আদা তথা ডং। যেমন আল্লামা ইকবাল আল্লাহকে বলছিল “ওগো আল্লাহ তুমি দয়ালু নয়” এটা আল্লামা ইকবালের অভিমানের ভাষা, আর দার্শনিকদের দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশে বলছিল “ওগো আমার মৃত ঈশ্বর।” এটাও নিটশের অভিমানের ভাষা।

তাদের ভাষা আমার মত সাধারণ গরু মহিষের মগজ ওয়ালাদের মাথায় আটে না। তাই আল্লাহ পাক সুরা মূলকে জ্ঞানীদের উপদেশ দিয়ে বলেন- “তোমরা আমার সৃষ্টির দিকে তাকাও কোনো ভুল পাও কি না, তুমি বার বার তাকাও তথা গবেষণার মনোবৃত্তি নিয়ে তাকাও কোনো ভুল পাও কি না, ভুল তো তুমি পাবেই না, বরং তোমার চোখ বিস্ফারিত হয়ে তোমারই কাছে ফেরত আসবে।”

আসলেই আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো ভুল নেই, আমি যে ভুল দেখি, আমার মনে ভুল আছে বলেই আমি শুধু ভুল দেখি, এটা আমার ব্যক্তিগত সমস্যা, আমার অজ্ঞানতা, আমার দৃষ্টিবিভ্রম, আমার উপলব্ধিগত সমস্যা। তাই জ্ঞানীগণ আল্লাহর সৃষ্টিকে বিশ্লেষণ করে, বোবার মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, ভাষায় হারিয়ে বোবা হয়ে যায়, তখনই বলে বলে আমি কিছুই জানি না। তারা আল্লাহর অসীম মহানসত্তায় হারিয়ে যান। তাই বলা যায়, কথার পরিসমাপ্তি , দর্শনের শুরু,কথায় দর্শন থাকে না, আর দর্শনে কথা থাকে না। নির্বতাই প্রকৃতির ভাষা।

– আর এফ রাসেল আহমেদ