কোরানিক দর্শনে আল্লাহর রহমত কোথায় সংরক্ষিত রয়েছে
কোরানিক দর্শন আলোকে আমরা জেনে নিই আল্লাহর রহমত কোথায় সংরক্ষিত রয়েছে।
কোরানের ৫৭ নং সুরা আল হাদিদের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন- “সেই সময় আমানুগণকে মুনাফেকি নর-নারীগণ বলিবেঃ আমাদের দিকে একটু দেখ যাহাতে তোমাদের (নূর), আলো হইতে আমরা গ্রহণ করিতে পারি। বলা হইবে, ফিরিয়া যাও তোমাদের পিছনে, তারপর (নূর) আলো সন্ধান কর (সেখান হইতে)। তারপর তাহাদের মধ্যে আঘাত হানা হইবে একটি দেয়াল দ্বারা যাহাতে থাকিবে একটি দরজা। উহার বাতেনের মধ্যে থাকিবে রহমত এবং উহার জাহের, উহার সবদিক হইতে আজাব প্রকশ পাইবে।” (অনুবাদ: সুফি সদরউদ্দিন আহমেদ চিশতী)।
মুক্তেসার তাফসীরঃ
যেদিন মুনাফিক নর ও নারীগণ আমানুদের তথা ঈমানদারদের তথা গুরুর দাসদের লক্ষ্য করে বলিবে- “আমাদের প্রতি একবার নজর দিন তথা কৃপাদৃষ্টি দানকরুন। আমরা তো তোমাদের সাথের সাথিই ছিলাম, কিন্তু আমাদের মৌখিক আর অন্তের স্বীকৃতি এক ছিল না! এবং আমরা আপন রবের উপর সন্দিহান ও মিথ্যা আরোপকারী হয়েছি। আমাদের মধ্যে কোনো শান্তি নাই, নাই মানসিক তথা আত্মিক পরিতৃপ্তি। আমাদের মধ্যে তোমাদের ন্যায় আপন রবের প্রভাব তথা নূর নাই।
আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছি। আর তোমরা আমাদের সাথের সাথী হয়েও নূরময়তার মধ্যে রয়েছ। আমানুগণকে অনুতাপশীল মুনাফেকিগণ বলিবে- “আমরা কিভাবে, কি উপায়ে তোমাদের ন্যায় নূর অর্জন করব। সেই সিরাত তথা সেই শাজারা তথা সেই সঠিক পথটির সন্ধান আমাদের দান করুন।” তখন আমানুগণ বলিবে- “তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও তথা তোমাদের রসুলের নিকট তথা অলিয়্যাম মুর্শিদের নিকট যাও। এবং রসুল তথা মুর্শিদের গোলামির তথা অনুসরণের মাধ্যমে সেই রহমত তথা সত্যনূর, নূরে হক অর্জন কর।”
তারা তথা অনুতাপশীল মুনাফেকিগণ তাদের রসুলের আশ্রয়ে ফিরে যাবে। তখনই রসুল তথা মুর্শিদ পরীক্ষা স্বরূপ তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর তথা দেয়াল দার করিয়ে দিবে তথা মোরাকাবা মোশাহেদা তথা ধ্যানসাধনার কঠিন কর্মটি করার জন্য পরামর্শ দিবে। আপন রবের নূর তথা রহমত লব্ধ করার একটিমাত্র দরজা রয়েছে। সেই একটিমাত্র দরজা হল কাহাফের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহবান তথা আপন রসুলের চেহারা মোবারককে নিরিখে,বর্জকে, তাসাব্বুরে রাখতে হবে দুইভ্রুর মাঝখানে মাকামে মাহমুদায়। এই ধ্যানের একপর্যায়ে আপন রসুল দয়া বিগলিত রহিমরূপ ধারণ করে দাসের দিকে রহমতের নজর দান করেন।এবং রহস্যময় জগতের রহস্যময় রেজেক রহমতস্বরূপ বান্দা তার রব থেকে লাভ করে।
তবে শর্ত হল নির্জনে আপন মুর্শিদ তথা অলিদের পদ্ধতিতে কিছু সময় ধ্যানন্থ থাকতে হবে। এই ধ্যানসাধনা ব্যতীত আল্লাহর বাতেনী রাজ্যে প্রবেশ লাভ সম্ভপর নয়। আপন মুর্শিদের ধ্যান যারা করেন না তারা জাহিরে তথা প্রকাশ্যে আজাবের কুন্ডলীতে অবস্থান করেন। তারাই সাকারা, হাবিয়া ও হুতামা মতো প্রজ্বলিত অনলে জ্বলতেছেন। কারণ তারা জাহের পরাস্ত।
আমরা কোরানিক দর্শন আলোকে কিভাবে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায় তার একটি ঘটনা কোরান থেকে তুলে ধরবো। কোরানের ১৮ নং সুরার ৯ নং আয়াত হতে ১৭ নং আয়াত পর্যন্ত তুলে ধরবোঃ
- “আপনি কি মনে করিয়াছেন যে কাহাফের অধিবাসীরা এবং খোদিত লিপি ছিল আমাদের আয়াতসমূহ হইতে আশ্চর্যজনক? (১৮:০৯)”
- “যখন আশ্রয় লইলেন কয়েকজন যুবক কাহাফের (গুহার) দিকে, সুতরাং তাহারা বলিলেন- হে আমাদের রব, আমাদের দাও তোমার পক্ষ হইতে রহমত এবং ঠিক করো আমাদের জন্য আমাদের কাজ হইতে নির্ভুলতা। (১৮:১০)”
- “সুতরাং আমরা আঘাত করিয়াছি তাদের কানগুলির উপর কাহাফের মধ্যে কয়েক বছর। (১৮:১১)”
- “তারপর আমরা তাহাদেরকে জাগরিত করিয়াছি জানিবার জন্য, দুই দলের মধ্যে কোনটি নির্নয় করিতে পারিয়াছে, যে সময়কাল তাহারা অবস্থান করিয়াছিল। (১৮:১২)”
- “আমরা বর্ণনা করিতেছি আপনার উপর তাহাদের খবর সত্যের সহিত, নিশ্চয়ই তাহারা যুবক ঈমান আনয়নকারী তাহাদের রবের সহিত, আমরা তাহাদের বাড়ািয়া দিয়াছি হেদায়েত। (১৮:১৩)”
- “এবং আমরা (আল্লাহ) শক্তি দিয়াছি তাহাদের কলবের উপর, যখন তাহারা দাড়াইলেন সুতরাং তাহারা বলিলেন, আমাদের রব আকাশসমূহের এবং জমিনের রব, আমরা ডাকিব না তিনি ছাড়া ইলাহ কে, (ডাকিলে) নিশ্চয়ই আমরা বলিব তখন অসত্য। (১৮:১৪)”
- “আমাদের সম্প্রদায়ের ওই সকল মানুষেরা মানিয়া লইয়াছে তাহাকে ছাড়াও ইলাহ। কেন তাহারা আনয়ন করে না তাহাদের উপর স্পষ্ট প্রমাণ? সুতরাং কে বেশি জালেম (সে ছাড়া) যে আরোপ করে আল্লাহর উপর মিথ্যা। (১৮:১৫)”
- “এবং যখন তোমরা আলাদা হইয়া গেলে তাহাদের (হইতে) এবং যাহারা ইবাদত করে আল্লাহ ছাড়া সুতরাং আশ্রয় গ্রহণ করো গুহার দিকে। খুলিয়া দিবেন তোমাদের জন্য তোমাদের রব তাহার রহমত এবং জীবন্ত করিয়া দিবেন তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্ম (ও) সহজ। (১৮:১৬).
- “এবং আপনি দেখিবেন সূর্যকে যখন উদিত হয়, সরিয়া যায় তাহাদের গুহার ডান পাশ দিয়া এবং যখন অস্ত যায়, তাহা অতিক্রম করে তাহাদেরকে বাম পাশ দিয়া এবং তাহারা খোলা জায়গার মধ্যে, উহার মধ্যে। ওইটাই আল্লাহর আয়াতসমূহের মধ্য হইতে। যাহাকে আল্লাহ পথ দেখান, সুতরাং সেই সঠিক পথপ্রাপ্ত। এবং যাহাকে পথহারা করেন সুতরাং কখনোই না তুমি পাইবে তাহার জন্য কোনো ওলি, কোনো মুর্শিদ। (১৮:১৭)”
(অনুবাদ: কালান্দার জাহাঙ্গীর আঃ)
আমরা এই রহমত লাভ করার বিষয়টি আরো জানতে পারি, কোরানের ৭৬ নং সুরা আল দাহারের ২৫-৩১ নং আয়াত হতে। সুতরাং আল্লাহর রহমত পেতে হলে অলি বা মুর্শিদের মাধ্যম লাগবে। মুর্শিদের দয়া ছাড়া রহমত লাভ সম্ভপর নয়।
– আর এফ রাসেল আহমেদ