নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কি আমাদের মত সাধারণ মানুষ?
মোহাম্মদ মোস্তফা সাঃ আর্বিভূত হয়েছেন মানবজাতির মুক্তির দিশা নিয়ে। আল্লাহ প্রদত্ত ঐশী বানীর মাধ্যমে তিনি মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি আল্লাহ নির্বাচিত বিশেষ বান্দা ও আল্লাহর রহস্যে রহস্যময় সত্তা। ওনার উপর ওহী নাজিল হয়েছে, সেই ওহীর উপর নির্ভর করে গোটা মানবজাতির মুক্তির পন্থা নির্ধারিত হয়েছে।যার উপর কোরানের মত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত অবতীর্ন হয়েছে তিনি আমার আপনার মত সাধারণ মানুষ হয় কি করে?কোরানে বলা হয়েছে রাহমাতাল্লিল আলামিন তথা সকল আলমের রহমত।
এখানে স্পষ্ট আল্লাহ ওনার মাকাম বর্ণনা করছেন। ওনি সুধু আমাদের পৃথিবীর জন্য নয় বরং গোটা সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। রহমত তথা দয়া। গোটা সৃষ্টি জগতের উপর দয়া হিসেবে আল্লাহ যাকে দান করেছেন ওনি আমার আপনার মত সাধারন মানুষ হয় কিভাবে? সুরা আল ইমরানের ১৮৫ নং আয়াতে বলা হচ্ছে প্রত্তেক নফস মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে, আবার সুরা বাকারার ১৫৩ নং আয়াতে বলা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় থেকে যারা মৃত্যুবরন করে তাদের মৃত বলা যাবে না, তারা রিযিক প্রাপ্ত।
আল্লাহর রাস্তায় মোজাহেদারত অবস্থায় যারা মৃত্যুবরণ করে তাদের আল্লাহর ওয়ালী বলা হয়। যেখানে আল্লাহ তার ওয়ালীদেরই মাজারে জিন্দা বলে ঘোষনা করেছেন সেখানে সুধু ওয়ালীদের ইমাম নয় ইমামুল আম্বিয়া নিঃসন্দেহে হায়াতুনন্নবী। তিনি তার রওজায়ে পাকে জিন্দা আছেন।আমি আপনি মরে গেলে পঁচে গলে শেষ। আর আল্লাহর ওয়ালীদের শরীর নষ্ট হয় না। হলে আল্লাহ রিযিক দেওয়ার কথা বলতেন না। মৃত্যুর পরবর্তী কার্যক্রম আমার আপনার থেকে ওনাদেরটা একেবারে ভিন্ন তাত স্পষ্ট। ত যেখানে ওয়ালিরাই আমার আপনার মত নয় সেখানে ইমামুল আম্বিয়া হুজুর পূরনুর মোহাম্মদ মোস্তফা সাঃ আমার আপনার মত হয় কেমনে?
এটাও বাত দেন, এই ঘটনা আমরা সবাই জানি ,আল্লাহকে দেখতে চেয়েছিলেন মুসা কালিমুল্লাহ। আল্লাহ মুসার কথায় রাজি হয়ে তাকে তুর পাহাড়ে আসতে বললেন। আরশে আজিম, লা মাকাম,সিদরাতুলমুনতাহা অনেক দূরে, মুসা তুরে দাড়িয়ে আল্লাহকে দেখবেন। আল্লাহ পর্দা হাটিয়ে তার নূরের সামান্যতম ঝলক দেখালেন। তুর জ্বলে গেল মুসা বেহুঁশ হয়ে গেলেন। মুসা কালিমুল্লাহ মত একজন বড় মাপের নবী আল্লার নূরের সামান্য ঝলকানির সামনে বেহুঁশ হয়ে গেছেন। আর হুজুর পূরনুর মোহাম্মদ মোস্তফা সাঃ আরশে আজিম, লা মাকাম, সিদরাতুলমুনতাহা পার করে আল্লাহর সাথে দেখা করে আসলেন মিরাজের রজনীতে। সুরা আন নাজমের ৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে তখন আল্লাহ ও তার হাবীবের মাঝে দুইটি ধনুক বা তারচেয়েও কম দূরুত্ব ছিল।
যেখানে তুর পাহাড়ে দাড়িয়ে আল্লাহর নুরের সামান্যতম ঝলক দেখে মুসা কালিমুল্লাহর মত নবী বেহুঁশ হয়ে যায়, তুর পাহাড় জ্বলে রাখ হয়ে যায় যা আমরা সুরমা হিসেবে ব্যাবহার করি সেখানে হুজুর পূরনুর মোহাম্মদ মোস্তফা সাঃ এত নিকট থেকে দিদার করে এলেন কিন্তু ওনার কিছুই হল না। এখন ভাবার বিষয় যেখানে মুসা আমার নবীর মত নয় সেখানে আমি আপনি কেমনে ওনার মত হয়ে গেলাম? কোরানে আল্লাহ বলছেন ওনি ফেরেশতাদের নিয়ে ওনার হাবিবের উপর দূরুদ পাঠ করেন এবং মুমিনরাও যেন তাই করে। আল্লাহ তার ফেরেশতাদের নিয়ে যার উপর দূরুদ পাঠ করে আমরা তাকে আমাদের মত সাধারণ মানুষ, আমাদের বড় ভাইয়ের মত বানিয়ে ফেলেছি! নাউজুবিল্লাহ!
আল্লামা জামী তার কাসিদায় বলেন, কি বলব আপনার শান আপনি খালিকের সৃষ্টি বটে কিন্তু সকল সৃষ্টির উপর আপনার কর্তিত্ব। সকল সৃষ্টির উপর যার কর্তিত্ব কে আছে যে তার শান মান গেয়ে শেষ করে আর কোন শান গাইলে এখানে বাড়াবাড়ি হয়ে যায়?আমার পক্ষে সম্ভব নয় বর্ননা করা। বরং কারোর পক্ষেই সম্ভব নয় মাকামে রিসালাত বর্ননা করা। মাকামে রিসালাত বই পড়েও উপলব্ধি করার বিষয় নয় বা সম্ভব নয়। হুজুর হাদিসে পাকের মধ্যে বলেন আমাকে কেও জানে না আল্লাহ এবং আলী ছাড়া। এই রহস্যময় সত্তার মাকামে না কেও কোনোদিন ছিল না কেও কোনোদিন পৌঁছাতে পারবে।
তামাম আওলিয়াগনও যেখানে মাকামে রিসালাতের কিছুই বুঝেননি বলে ঘোষণা করেছেন। সেখনে আমি আপনি কিভাবে ওনাকে আমাদের মত সাধারণ মানুষ বলে ঘোষণা করার মত গোস্তাকি করি! গঠনগত দিক দিয়ে ওনি আমাদের মত ছিলেন বলে কি ওনাকে একবারে বড় ভাইয়ের পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে? কোরানে বলা হয়েছে বলুন আমি তোমাদের মতই মানুষ সুধু আমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়। এখানেই আসল পার্থক্য, বায়োলজিকালি বা শরীরবৃত্তীক ভাবে ওনি আমাদের মত মানুষ। কিন্তু মাকাম তথা অভ্যান্তরিন জগতে ওনার মত কেও নেই, কেও হতে পারে না।
এর কারনও উক্ত আয়াতের শেষের অংশে বলে দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে সুধু আমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়। সাধারণ মানুষ আর ওনার মধ্যে এটাই আকাশ পাতালের পার্থক্য। আবার ওনার বাশারিয়াতও ত আমাদের মত ছিল না। ওনি সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। ওনার কথা বলার ধরন, চালচলন, বুদ্ধিমত্তা, দৃষ্টিভঙ্গি, দূরদর্শিতা তথা সবকিছু মিলিয়ে ওনার মত না পূর্বে কেও ছিল না ভবিষ্যতে কেও আসবে। এখন ভাবার বিষয় কোন দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের সামাজের কিছুসংখ্যক পন্ডিতগন হুজুর পূরনুর মোহাম্মদ মোস্তফা সাঃ কে আমাদের মত সাধারণ মানুষ বলে বিবেচনা করে?
লেখা: ইমরান হাসান ইমন।