রাসূল পাক (সাঃ) নূরের তৈরি এবং নূর মুহাম্মাদের সৃষ্টি আদি কথা।
“হে রাসূল! আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা ও সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি” (সূরা আহযাব , আয়াত নং ৪৫)।
“স্মরণ কর, যখন আল্লাহ নবীদের অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত যা কিছু দিয়েছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরুপে যখন একজন রাসূল (মুহাম্মদ সঃ) আসবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তার প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বললেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে? এবং এ সম্পর্কে আমার অঙ্গীকার কি তোমরা গ্রহণ করলে? সকল নবী – রাসূল বললেন, ‘আমরা স্বীকার করলাম’। আল্লাহ বললেন , ‘তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাক্ষী থাকলাম।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৮১)।
“হে রাসূল সঃ! আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি”। (সূরা আল আম্বিয়া, আয়াত নং ১০৭)।
“আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনের নূর, তার নূরের উপমা যেমন – একটি তাক, যাতে একটি প্রদীপ আছে” (সূরা আন নূর, আয়াত নং ৩৫)।
অর্থাৎ – আল্লাহর উপমা একটি জ্বালানো বাতির মত। আর রাসূল পাক সঃ হলেন জ্বালানো বাতি।
“হে রাসূল! আপনি কি দেখেননি, আপনার প্রভু হস্তী বাহিনীর সাথে কি আচরণ করেছেন”। (সূরা আল ফীল, আয়াত নং ১)।
“হে রাসূল! আপনি কি দেখেননি, আপনার প্রভু আদ সম্প্রদায়ের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছেন? যারা সুউচ্চ প্রাসাদের অধিকারী ছিল। (সূরা আল ফজর, আয়াত নং ৬ ও ৭)।
রাসূল ( সঃ) বলেন,
“আমি আদম সন্তানের প্রত্যেক যুগের উত্তম শ্রেণীতে যুগের পর যুগ প্রেরিত হয়েছি। শেষে এ যুগে জন্মগ্রহণ করি, যে যুগে আমি বর্তমান আছি। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং ৩৪৩২, মেশকাত শরীফ, হাদিস নং ৫৪৯৩)
“আদম যখন পানি ও কাদার মধ্যে ছিলেন, তখনও আমি নবী ছিলাম। অর্থাৎ – যখন আদমের কোন অস্তিত্ব ছিল না, তখনও হযরত রাসূল (সঃ) নবী ছিলেন।” (মাকতুবাত শরীফ)।
“সর্ব প্রথম আল্লাহ নূরকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি এবং সকল বস্তু আমার নূর থেকে সৃষ্ট”। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ৩৭০)।
রাসূল পাক সঃ এর আপন চাচা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে,
“আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম ‘নুরে মোহাম্মদী’কে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর নুরে মোহামদীকে ৪ ভাগে বিভক্ত করা হয়।
প্রথম ভাগ দিয়ে আরশ, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে কলম, তৃতীয় ভাগ দিয়ে লওহে মাহফুজ তৈরি করেন। চতুর্থ ভাগকে আবার ৪ ভাগে বিভক্ত করা হয়।
এর প্রথম ভাগ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতা, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে কুরসি, তৃতীয় ভাগ দিয়ে অন্যান্য ফেরেশতা তৈরি করেন। চতুর্থ ভাগকে আবার ৪ ভাগে বিভক্ত করেন।
এর প্রথমভাগ দিয়ে নভোমন্ডল, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে ভূমন্ডল, তৃতীয় ভাগ দিয়ে বেহেশতে ও দোযখ তৈরি করেন।
চতুর্থ ভাগকে আবার ৪ ভাগে বিভক্ত করেন। এর প্রথম ভাগ দিয়ে মুমেনের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে মুমেনের অন্তরের জ্যোতি, তৃতীয় ভাগ দিয়ে তাওহীদের জ্যোতি সৃষ্টি করেন এবং চতুর্থ ভাগ দিয়ে অন্যান্য সব সৃষ্টিরাজি সৃজন করেছেন “।
সূত্র : (কাছাছুল আম্বিয়া)।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন,
একদিন শেষ রাতে আমি সেলাইয়ের কাজ করছিলাম, হঠাৎ আমার হাত থেকে সূচটি পড়ে গেল। আমি আর তা খুঁজে পেলাম না। এমন সময় রাসূল সঃ আমার নিকট আসলেন, তার চেহারার আলোতে আমার সূচটি প্রকাশ হয়ে পড়লো (অর্থাৎ পাওয়া গেল)। আমি একথা রাসূল সঃ কে জানালাম। তখন রাসূল সঃ বলেন, “হে প্রেয়সী। বড়ই পরিতাপ, বড়ই পরিতাপ, বড়ই পরিতাপ তাদের জন্য, যারা আমার চেহারার প্রতি মহব্বতের নজরে তাকালো না”। (দুররুল মুনাজ্জাম)।
“একবার রাসূল পাক সঃ জিব্রাইল আঃ কে বললেন , ভাই! আপনার বয়স কত? তিনি জবাব দিলেন, ইয়া রাসূল আল্লাহ! এটা আমি বলতে পারব না, তবে এতটুকু জানি আকাশে ৭০ হাজার বৎসর পর পর একটি তারকা উদিত হতো, ঐ তারকাটিকে আমি মোট ৭০ হাজার বার দেখেছি। হযরত মুহাম্মাদ সঃ বললেন, ভাই জিবরাঈল! ঐ তারকাটি আমি নিজেই ছিলাম।”
বিখ্যাত সাহাবী হযরত জাবের ( রাঃ) বলেন,
“আমি একদা আরজ করলাম, ইয়া রাসূল আল্লাহ! আমার পিতা – মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। সমস্ত বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা কোন বস্তু সৃষ্টি করেছেন? রাসূল সঃ বললেন, হে জাবের! আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বস্তুর পূর্বে সর্বপ্রথম স্বীয় নূর হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।”
হযরত কারামত আলী জৈনপুরী (রঃ) তার “নূরে মুহাম্মদী” নামক কিতাবে লিখেছেন,
“আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ এর পিঠে” নূরে মুহাম্মদী রাখলেন। এ নূরকে দু’নয়নে অবলোকন করার জন্য আদম আঃ এর পিছনে ফেরেশতাগন সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে গেলেন এবং নয়নভরে দয়াল রাসূলের নূর মোবারক দেখতে লাগলেন। তা দেখে আদম আঃ বললেন, হে আল্লাহ! এ ফেরেশতাদের কি হয়েছে, তারা কেন আমার পিছনে দাড়িয়ে রয়েছে? জবাবে আল্লাহ পাক বললেন, হে আদম! এ ফেরেশতারা আমার হাবীব পাকের নূর দেখছে! তা শুনে আদম আঃ পুনরায় বললেন, হে মা’বুদ! মেহেরবানি করে উক্ত নূরকে আমার মুখমন্ডলে এনে দিন। তখন আল্লাহ তায়ালা ঐ নূরকে এনে আদম আঃ এর কপালে রাখলেন। এবার ফেরেশতারা আদম আঃ এর সম্মুখে এসে সারিবদ্ধভাবে দাড়ালো। আদম আঃ ঐ নূরে মুহাম্মদীর আশেক হয়ে নিজে নূর দেখার অভিপ্রায়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে আরজ করলেন, হে আমার প্রতিপালক! এ নূরকে দয়া করে এমন স্তনে রাখুন, আমিও যেন সে নূর দেখে ধন্য হতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আদম আঃ এর তর্জনী নামীয় অঙ্গুলি মোবারকে রাখলেন।
আদম আঃ স্বচক্ষে নূর দেখে এর উপর ঈমান এনে বললেন,
“আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূল আল্লাহ (সঃ)।”
অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল।”
আসলে, রাহমাতাল্লিল আলামীন হযরত মুহম্মদ (সঃ) সর্বযুগেই বিরাজমান ছিলেন। এরই প্রমাণ পাওয়া যায়। উপরিল্লেখিত পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা থেকে আমাদের সমাজে ওহাবী এবং এজিদের দোসরেরা রাসূল পাক সঃ কে মাটির তৈরি বলার কারণ কি?
১/ তারা বলে রাসূল পাক সঃ কে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেন নাই। মাটিকে প্রথম তৈরি করেছেন।
২/ তারা বলে রাসূল পাক সঃ গায়েব জানে না।
৩/ তারা বলে রাসূল পাক সঃ জিন্দা নবী না। রাসূল পাক সঃ মৃত নবী। (নাউজুবিল্লাহ)।
রাসূল পাক সঃ কে নূরের তৈরি মানলে উপরের সবগুলো একটিও ধোপে টিকবে না। রাসূল পাক সঃ কে যদি মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়, তাহলে রাসূল পাক সঃ এর মর্যাদা মাটির চেয়ে অনেকগুন কম হয়ে যায়। (নাউজুবিল্লাহ)। কারণ রাসূল পাক সঃ যদি মাটির তৈরি হয়, তাহলে রাসূল পাক সঃ এর আগে মাটি তৈরি করা হয়েছে। তা না হলে তো রাসূল পাক সঃ কে তৈরি করা যেত না। তাহলে দেখা যায় যে, রাসূল পাক সঃ এর আগে মাটি তৈরি হয়েছে। আর যদি রাসূল পাক সঃ কে আল্লাহর নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে রাসূল পাক সঃ এর পরে মাটি তৈরি হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা প্রথম যাকে সৃষ্টি করেছেন, সেটিই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশী প্রিয় এবং মর্যদাবান। নচেৎ আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রথম সৃষ্টি করবেন না। যদি আপনি বলেন, রাসূল পাক সঃ কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে, তাহলে তখন মাটি আসল কোথায় থেকে।
এখন আপনার বিবেক কে প্রশ্ন করুন, রাসূল পাক সঃ এর চেয়ে মাটি কিভাবে বেশী মর্যদাবান হতে পারে। যারা রাসূল পাক সঃ কে মাটির তৈরি বলে, তারা কি রাসূল পাক সঃ কে চরমভাবে অপমান করল না। আর রাসূল পাক সঃ কে অপমান করে, কিয়ামত পর্যন্ত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত এবং যত প্রকারই ইবাদত করেন না কেন, কোন লাভ হবে না।
বরং আপনি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। রাসূল পাক সঃ কে অপমান করার জন্য ইহুদি, খ্রীষ্টান এবং এজিদের দোসরেরা সুকৌশলে মিথ্যা জাল হাদিস তৈরি করে, রাসূল পাক সঃ কে মাটির তৈরি বলে অপপ্রচার করেছে এবং কোরআনের অপব্যাখ্যা করে মানুষকে ভুল পথে ধাবিত করেছে। যেন মানুষকে রাসূল পাক সঃ এর প্রেম বিসর্জন দিয়ে ঈমান হারা করা যায়।
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।