আহলে বায়েত কারা? তাঁদের অনুসরণ করা প্রয়োজন কেন?
আহলে বায়েত কারা? তাঁদের অনুসরণ করা প্রয়োজন কেন? পাক পান্জাতন ছাড়া ধর্ম মিথ্যা কেনো।
‘আহাল’ শব্দের অর্থ মালিক! যোগ্য ও পরিবার-পরিজন এবং ‘বায়েত’ অর্থ গৃহ৷ ‘আহলে বায়েত’ বলতে রাসুল (সাঃ) -এর পরিবার – পরিজনকে বুঝায়৷ প্রচলিত অর্থে – হযরত রাসুল (সাঃ) -এর পরিবার -পরিজনকে আহলে বায়েত বলা হয় ৷
হযরত রাসুল (সাঃ) মাওলা আলী প্রসঙ্গে বলেন, উচ্চারণ: “মান সাব্বা আলীয়্যান ফাক্বাদ সাব্বানি৷”
অর্থাৎ: “যে আলীকে গালি দিল, সে যেন আমাকে গালি দিল৷” (মেশকাত শরীফ: পৃষ্ঠা নং -৫৬৫)
তিনি আরো বলেন, উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা মান কুনতু মাওলাহু ফাআলীয়্যুন মাওলাহু আল্লাহুম্মা ওয়ালি মাও ওয়ালাহু ওয়াআদি মান আদাহু৷”
অর্থাৎ: “হে আল্লাহ! আমি যার বন্ধু আলীও তাঁর বন্ধু৷ হে আল্লাহ! যে আলীকে ভালোবাসবে তুমিও তাহাকে ভালবাসিও, যে আলীর শত্রু হবে তুমি তাঁর শত্রু হইও৷” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং -৫৬৫)
হযরত রাসুল (সাঃ) আরো বলেন, উচ্চারণ: “লা ইউহিব্বু আলীয়্যান মুনাফিক্বান ওয়াল ইউবগিদ্বুহু মু’মিন৷”
অর্থাৎ: “মোনাফেক ব্যক্তিই আলীকে ভালবাসে না এবং মু’মেন আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেনা।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং – ৫৬৪)
মাওলা আলী প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সাঃ) আরো এরশাদ করেন, উচ্চারণ: “আনা মাদিনাতুল ইলমি ওয়া আলিয়্যুন বাবুহা৷”
অর্থৎ: “আমি এলম বা জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা৷” (শরহে ফিকহে আকবর, পৃষ্ঠা – ১১২)৷
“আমি যার মাওলা আলী তার মাওলা।” (বোখারী শরীফ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৮০)।
“আমি আলী হতে এবং আলী আমা হতে।” (কানজুল উম্মাল)।
“ধর্ম, সত্য ও কোরআন আলীর সাথে এবং আলী ধর্ম, সত্য ও কোরআনের সাথে। আলী যেদিকে মোড় নেয় ধর্ম, সত্য ও কোরআন সেইদিকে মোড় নেয়।” (কানজুল উম্মাল)।
“আমি আর আলী একই নুরের দুটি খন্ড।” (কানজুল উম্মাল)।
হযরত মা ফাতেমা (আঃ) সম্বন্ধে হযরত রাসুল (সাঃ) বলেন, উচ্চারণ: “ফাতিমাতু বিদআতাম মিন্নি ফামান আগদ্বাবাহা আগদ্বিবানি৷”
অর্থাৎ: “ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা, যে তাঁকে (বিরক্ত করে) রাগান্বিত করবে, সে বস্তত: আমাকে রাগান্বিত করবে৷” (বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং – ৫৬৮)
মাওলা ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন সম্পর্কে হযরত রাসুল (সাঃ) বলেছেন, উচ্চারণ: “হুমা রাইহানাইয়্যা মিনাদ্দুনইয়া৷”
অর্থাৎ: “দুনিয়ায় ধন – সম্পদের মধ্যে আমার জন্য এই দুইটি (হাসান ও হোসাইন) স্বর্গীয় ফুলস্বরূপ৷” (বোখারী শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা – ৫৬৯)
“আমি ইমাম হোসাইন হতে এবং হোসাইন আমার হতে।” (মেশকাত শরিফ)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, উচ্চারণ: “দাআ রাসুলুল্লাহি (সাঃ) আলিয়্যান ওয়া ফাতিমাতা ওয়া হাসানান ওয়া হুসাইনান ফাক্বালা আল্লাহুম্মা হাউলায়ি বাইতি৷”
অর্থাৎ: “হযরত রাসুল (সাঃ) – হযরত ফাতেমা (রাঃ), হযরত হাসান ও হুসাইন (রাঃ), এবং হযরত আলী (রাঃ) কে নিজ পরিবার বলে আল্লাহ তায়ালার নিকট চিহ্নিত করেছেন৷” (মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা – ৫৬৮)
উপরোক্ত হাদিসসমূহ থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, হযরত রাসুল (সাঃ) তার পরিবার-পরিজনের মধ্যে হযরত মা ফাতেমা (আঃ), মাওলা ইমাম হাসান (আঃ), ইমাম হোসাইন (আঃ), ও মাওলা আলী (আঃ)- এই ৪ জনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন৷ কারণ, তাঁর অবর্তমানে তাঁদের বংশধরদের মাধ্যমে রাসুলের আদর্শ দুনিয়াতে কায়েম থাকবে৷ মানুষ যতোদিন তাঁর আদর্শ বহনকারী বংশধরগণের অনুসরণ করবে, ততদিন তাঁরা সত্য পথ হতে বিচ্যুৎ হবে না৷
আর মানুষ যখন রাসুল (সাঃ) এর আহলে বায়েতের অনুসরণ পরিত্যাগ করবে তখনকার অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাওলা আলী বলেন যে, হযরত রাসুল (সাঃ) ফরমানঃ
উচ্চারণ: “ইউশিকু আইয়্যাতিহি আলান্নাসি ঝামানুন লা ইয়াবক্বা মনাল ইছলামি ইল্লা ইসমুহু ওয়ালা ইয়াবক্বা মিনাল কুরআনি ইল্লা রাসমুহু মাসাজিদুহুম আমিরাতুন ওয়াহিয়া খারাবুম মিনাল হুদা ওয়ালাউহুম শাররু মিন তাহতি আদিমিস সামায়ি মিন ইনদিহিম তাখরুজুল ফিতনাতু ওয়া ফিহিম তাউদ৷”
অর্থাৎ: “শীঘ্রই মানুষের জন্য এমন এক জামানা আসবে, যখন নাম ব্যতিত ইসলামের কিছুই বাকি থাকবে না৷ অক্ষর ব্যতিত কোরআনেও কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না৷ তাঁদের মসজিদ সূমহ হবে ইমারত অথচ (উহার ভিতর) হবে হেদায়েত শূণ্য , তাদের আলেমরা হবে আকাশের নীচে সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক, তাঁদের নিকট হতে ফেতনা প্রকাশ পাবে, অতঃপর সে ফেতনা তাঁদের প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে৷” (বায়হাকী শরীফ, মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং- ৩৮)
বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের অবস্থা উক্ত হাদিসের সাথে মিলিয়ে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, আমরা রাসুল (সাঃ) এর আহলে বায়েতের প্রকৃত অনুসরণ ছেড়ে দিয়েছি এবং কেবল জাহেরি বিদ্যা শিক্ষা করে কিতাব সর্বস্ব হয়ে পড়েছি৷ অথচ রাসুল (সাঃ) আহলে বায়েতকে অনুসরণ করার জন্য যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছেন৷ তাঁদেরকে অনুসরণ করার মাধ্যমে আমাদের পক্ষে বিশুদ্ধ আচরণের অধিকারী হওয়া সম্ভব৷
মাওলা আলী (আঃ) বলেনঃ
“আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, ইমাম মাহাদী (আঃ) আমার আহলে বায়াত হতে আগমন করবেন। আল্লাহ তায়ালা এক রাতে (পূনিমার চাঁদের) ভিতর তার সত্যতা প্রমাণ করে দিবেন।”৷ (মুসনাদে আহমদ ১খঃ পৃ:-৪৪৪)
আহলে বায়েত কারা? সে সম্পর্কে কতিপয় ইসলামী গবেষক যে মত প্রকাশ করেছেন, তা সূফিদের মতের অনুরূপ৷ সূফিগণ মনে করেন যে, আল্লাহর সৃষ্টির মূল রহস্য হলো – পাক পাঞ্জাতন৷ অর্থাৎ – হযরত রাসুল (সাঃ), হযরত মা ফাতেমা (আঃ), মাওলা ইমাম হাসান ও মাওলা ইমাম হোসাইন এবং মাওলা ইমাম আলী এই পাঁচ জনকে পাক পাঞ্জাতন বলা হয়৷
সৃষ্টির শুরুতে আকাশে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র বিরাজমান ছিলো৷ তার ভেতরে লক্ষ্য করলে দেখা যেত এক রমণীকে৷ তাঁর মাথার মুকুট, গলায় হার, এবং দুই কানে দু’টি দুল ছিল৷ এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাঁরা বলেন যে, নক্ষত্রের ভিতরে ঐ রমণী ছিলেন হযরত মা ফাতেমা (আঃ), তাঁর মাথার মুকুট ছিলেন হযরত রাসুল (সাঃ), গলার হার ছিলেন মাওলা আলী, এবং দুই কানের দু’টি দুল ছিলো মাওলা ইমাম হাসান ও মাওলা ইমাম হোসাইন৷
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, আহলে বায়েত বলতে হযরত রাসুল (সাঃ) এর পরিবারবর্গকে বুঝায়৷ আর নায়েবে রাসুল বলতে ক্বলবের বিদ্যায় বিদ্বান হযরত রাসুল (সাঃ) এর সীরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী আওলিয়ায়ে কেরামকে বোঝায়৷”
গ্রন্থসূত্র: আল্লাহ কোন পথে?
নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।