অহংকারের অন্ধকার।
অন্ধকারের কোন নিজস্ব অবস্থান নেই, আলো প্রবেশ করলে অন্ধকার এম্নেই দূর হয়ে যায়,ঠিক আলোর ক্ষেত্রে-ও তাই অন্ধকার প্রবেশ করলে আলোর জায়গা হয় না। ক্রোধ আর অহংকারের বসত বিঠে কেমন করে শান্তির জায়গা হবে!
অহংকার সম্পূর্ণ বাসনা এবং মোহের জানান দেয় যা সত্যকে আড়ালে রাখে। অহংকার নিজেকে বিদ্যা,মেধাবী, সৌন্দর্য, ক্ষমতা,ইবাদত ইত্যাদি ইত্যাদি যে কোন বিষয়ে অন্যের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা।সকল অহংকার-ই শয়তান। মনে রাখা উচিৎ শয়তান কখনো বাহিরে থাকে না শয়তান মানুষের ভিতর থেকে শয়তানি করে থাকে।
অহংকার সম্পর্কে আল্লাহতালা বলেন:
“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না”।(সূরা লোকমান ৩৪:১৮)
“তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই অহংকারবশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”।(সুরা মুমিন ৪০:৬০)
কেউ একজন বৌদ্ধকে এসে বল্লেন “আমি সুখী হতে চাই”।বৌদ্ধ বল্লেন প্রথমে “আমি বা আমিত্ব” মুছে ফেলো, যাহা অহংকার তারপর “চাই” শব্দটি মুছে ফেলো যাহা প্রত্যাশা, পরে অবশিষ্ট যাহা থাকে সেটা-ই “সুখ”।
“সরিষার দানা সমপরিমাণ অহংকারও (সামান্যতম) যার অন্তরে আছে সে জান্নাতে যেতে পারবে না”।(তিরমিজি হাদিস নং ১৯৯৮)
এই রকম ভাবে শুধু মুসলমান ধর্মে নয় সকল ধর্মেই অহংকার এবং অহংকারীকে সতর্ক কিংবা সাবধান করা হয়েছে। অহংকারী কখনোই সত্যের পথ দেখাতে পারে না। আমাদের সমাজে এমনও হয় পোষাক পড়ে নিজেকে এমন প্রকাশ করছে যেন ওনার চেয়ে উত্তম ধার্মিক কর্মী পৃথিবীতে দ্বিতীয় একজন নেই।মোট কথা একজন নামাজি বলছে “আমি” নামজ,কোরআন পরছি রোজা রাখছি ইত্যাদি তুমি কি পড়ছ বা কেন পড়ছ না অথবা নামাজ পরনি কেন এলে আমার নিকট!ইহা অহংকার নয় কি? এমন করে সকল ধর্মের-ই আনুষ্ঠানিক চর্চা বিদেরা আনুষ্ঠানিক দাম্ভিকতা প্রকাশ করে থাকে। আর সাধু বলছেন “আমি বা আমিত্ব” ব্যাবহার করা যাবে না।
“অহংকার হল মানুষ এবং ইশ্বরের মধ্যে পর্দা”। (মাওলানা রুমি রঃ)
“যখনি অহংকারের মৃত্যু ঘটে, তখনই “আত্মা” জাগ্রত হয়ে উঠে”।(লাউৎসু)
অহংকার সবসময় নিজেকে বড় এবং বিজয়ী দেখতে চাই। নিজ যত টুকুন নন তারচেয়ে অধিক প্রচার করতে চায়। আত্মা জাগ্রত করার জন্য আনুষ্ঠানিক চর্চা হতে অধিক নির্জন হতে হয়।যে যত নির্জন তার অহংকার তত দূরে ও শুন্যে।
“আমাকে কেউ কখনো হারাতে পারবে না, কেননা আমি-তো প্রথম থেকেই হার মেনে বসে আছি”। (লাউৎসু)
জিতে থাকার প্রবণতা অহংকারীর। অহংকার কখনো জিততে পারে না।সামাজিক দৃষ্টিতে সবার সামনে জিততে দেখা গেলেও অহংকারীর ভিতরে ভিতরে অন্ধকারের ভয় তাকে অতিশয় করে তুলে। জ্ঞানী সবসময় নিজেকে হার মানিয়ে রাখেন এখানেই জ্ঞানীর জ্ঞানের প্রকাশ। প্রতিযোগিতা হয় অহংকারের জ্ঞানের নয়।
“দুঃখ এবং আনন্দের দুটি শর্ত হল,অহংকার আছে দুঃখ আছে। অহংকার নেই আনন্দ আছে”।(লাউৎস)
কোন কিছু চেষ্টা করে দূর করা যায় না, যতক্ষণ না তার উৎপত্তিস্থল পর্যন্ত না পৌঁছানো যায়। ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত অন্ধকারকে বাদ দেওয়া যাচ্ছে না যতক্ষণ পর্যন্ত আলোকে প্রবেশ করানো গেল। সূর্য কখনো তার আলো আড়াল করে না, সূর্যের আলো একই অবস্থায় থাকে এবং আছে। অবস্থান পরিবর্তন করছে কেবল সূর্যকে ঘিরে যে ছোট গ্রহ এবং উপ গ্রহের ঘুর্নায়মান প্রক্রিয়া।যার জন্য আলো এবং অন্ধকারের ঘুর্নায়মান চক্র চলছে।যদি গ্রহ সূর্যর আলোর সম্মুখে স্থীর হয়ে যায় আলো তার থেকে দূর হবে না।
প্রকৃতপক্ষে “আত্মজ্ঞানের” অনুপস্থিতি-ই অহংকার বা অন্ধকার “আত্মজ্ঞান” লাভ করা হল, আলোয় আলোকময় হওয়া। আলোকে সঞ্চার করতে হলে বা ধারণ করতে হলে দীর্ঘ কাল ধৈর্যকে পুঁজি করে ধ্যানের মাধ্যমে আলোর সন্ধানী হতে হবে।যদিও কথাটি ছোট তার তাত্পর্য কত কঠিন তাহা কেবল পথের সন্ধানী-ই বলতে পারবে।যাহা শুদ্ধ গুরু ব্যতিত অর্জন করা মোটেও সম্ভব হবে না।
“যে তার জ্ঞান দিয়ে মনের খারাপ ইচ্ছে গুলোকে জয় করতে পারে,সে স্বর্গের ফেরেস্তাদের থেকে-ও বেশি সম্মানিত বলে বিবেচিত হয়”। (মাওলানা রুমি রঃ)
স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে “জ্ঞান বা আত্মজ্ঞান” সকল কলুষতাকে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়।সকল অপশক্তির মূল অজ্ঞানতা যা অহংকারীর ভিতরে সুপ্ত ভাবে ধারণ করে। সমাজে এমনও দেখা যায়, মানুষ বলে “আমি অহংকারী নয়”!আশ্চর্য তুমি অহংকারী নও বলতে হবে কেন! তুমি এইটা বোঝাচ্ছ অহংকারে তোমার ভিতর পূর্ণ। “আমি নয়”কথাটি কি আমিত্ব নয়?আমি নয়, এই শব্দটি কি ইংগিত করছে! আমি আমার সাক্ষী দিচ্ছি ভালো সাজতে। তাই নয় কি?
“কেশের আড়ে পাহাড় লোকায়”। (মহাত্মা লালন সাই)
পুরো একটি পাহার লুকিয় থাকে একটি চুলের আড়ালে। চুল খুব চিকন এবং লঘু, একটি চুল’ও যদি দৃষ্টির সামনে পরে দৃষ্টি তখন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। একজন প্রকৃত সত্য ধারণকারী, সত্য সন্ধানী কখনো দাম্ভিক কিংবা অহংকারী হতে পারে না।চুল পরিমাণ অহংকার দিয়ে সত্যের সিদ্ধিলাভ হবে না।সত্যের চুড়ান্ত রূপ দর্শন হবে না।সর্বপরি প্রতিটি ইনসান তথা মানুষকে “অহংকারের অন্ধকার” হতে মুক্ত হতে হবে।
-সাদিকুল ইসলাম।