সাধন-ভজন হোক সঠিক পথে।
সাধু সাবধান! সাধন-ভজন হোক সঠিক পথে। ত্রিবেণীর ঘাটে বসা বংশী বাদকের সহিত মিলিত হইবার বাসনায় বীর্য-রতি সাধনার নামে যাঁহারা অবৈধ দেহ ভোগের ভ্রান্ত খেলায় মাতিয়া থাকেন, কস্মিনকালেও তাঁহারা সেই মহা রহস্যময় বংশীবাদকের সন্ধান লাভ করিতে পারেন না। বংশীবাদকের সন্ধান পাওয়া তো দূরের কথা, ত্রিমোহিনীর ভরা গাঙের জোয়ার-ভাটায় উত্তাল ভরা গাঙই তাঁহারা অতিক্রম করিতে পারেন না। কারণ সেই মহা চতুর, মহা রহস্যময় বংশীবাদক তো এক মহা নূরময় অলৌকিক পরম স্বত্বা।
কেবলমাত্র সেই পরম নূর স্বত্বাটি চিনিতে না পারার কারণেই ভ্রান্ত পথের অসংখ্য সাধক/সাধিকা সীমাহীন সাধন-ভজন করিয়াও হা-হুতাশ করিতে করিতে ইহকাল পার করিয়া থাকেন। সুতরাং পরম আকাঙ্খিত সেই বংশীবাদকের চরণে পৌঁছাতে চাহিলে সর্বাগ্রে সেই মহা মহিমাময় ও মহা রহস্যময় নূর চিনিতে হইবে। নূরতত্ত্ব সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করিতে হইবে। আত্ম উপলব্ধির দ্বারা নিজের ভিতরের নূরতত্ত্বের আলোক স্বত্বাটি জাগ্রত করিয়া পরমতত্ত্বের সন্ধান লাভ করিতে হইবে।
নর-নারী দেহের সাধনা অনস্বীকার্য বটে। তবে প্রতিটি সাধক/সাধিকার ইহা মনে রাখা আবশ্যক যে, সাধন জীবনের কোন কোন স্তরে নানান পরীক্ষা স্বরূপ নিজ সংসার বহির্ভূত নর-নারীর প্রেম ও দেহভোগের নানান প্রকার সুযোগ সুবিধা আসিয়া পড়ে। কান্ডজ্ঞানহীন অন্ধ-বধিরের ন্যায় ঐসকল সুযোগ সুবিধার স্রোতে গা ভাসাইয়া দিলে, ঐ স্রোতই তাহাকে দিকভ্রান্ত করিয়া অন্তঃসার শূণ্য করিয়া ছাড়িবে। সকল প্রকার ইবাদত-উপাসনা বরবাদ হইয়া যাইবে।
সেই মহা রহস্যময় নূরসত্ত্বার ধারক-বাহক জিন্দা দিলের কোন কামেল অলী বা সম্যক গুরুর সোহবতে থাকিয়া দিবারাত্রি প্রবাহমান নানান প্রকারের প্রয়োজনীয় ফায়েজ হাসিলের মোরাকাবা দ্বারা তাঁহার একান্ত আশির্বাদ লাভ করিতে না পারিলে- জীবনভর সেই বংশীবাদকের সন্ধান ও সাধন-ভজন করিতে করিতে কোন এক সময় বিনা নোটিশের বিদায় ঘন্টা বাজিয়া মানব জনম ব্যর্থ হইয়া যাইবে।
সুতরাং হে সাধু, সাবধান! সাধন-ভজন হোক সঠিক পথে সঠিক নিয়মে।
-সূফীমত (সাধক কল্যাণে নিবেদিত)।