জ্ঞানের অনন্ত গভীরতা

জ্ঞানের অনন্ত গভীরতা

জ্ঞান কখনো বাহ্যিক আড়াল নয়, বরং এটি অন্তরের গভীরতা। যেমন এক ফোটার পানির মাঝে মহাসাগরের প্রতিফলন ঘটতে পারে, তেমনি কোনো অন্তরের অগাধ গভীরে এক ইশারা কিংবা অনুভবের স্পর্শ, আকাশের তারার মতো প্রতিভাসিত হতে পারে। অথচ মানুষ কখনো অনুভব করে না এই জ্ঞানের অনন্ত বিস্তার।

যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য জ্ঞান চায়, তার কাছে তা কিছুই নয়, সেই জ্ঞান নেহাৎ একটি রক্ষক এবং ভক্ষক, যাকে সে উপভোগ করে বা গ্রহণ করে। কিন্তু যে ব্যক্তি জ্ঞানের জন্য জ্ঞান চায়, তার কাছে জ্ঞান নিজেই এক অসীম দিশারী, যা তাকে এক সীমানাহীন সমুদ্রের মতো সামনে নিয়ে চলে।

আমরা যে পৃথিবীকে দেখি, তা শুধুমাত্র একটি প্রতিফলন। এই পৃথিবী কোনো সীমানায় আবদ্ধ নয়। পৃথিবী মানুষের চোখের দৃষ্টি, কিন্তু পৃথিবী কখনোই চোখের কৌটোর মধ্যে থাকতে পারে না। চোখ তো শুধু উপলব্ধি করায় সহায়ক। পৃথিবী তো একটি অদৃশ্য বিস্তার, যা বস্তুর মত না, কিন্তু অনুভূতির অনবদ্য প্রমাণস্বরূপ।

যে ব্যক্তি উপলব্ধি করে যে, জ্ঞান তো এক গতিশীল তড়িৎ, একটি উত্তরণ প্রক্রিয়া, তার জন্য সবকিছুই জ্ঞানদ্বার হয়ে ওঠে। কোনো বস্তু কোনো দিক নয়, বরং এক অস্তিত্বের অতীতের এক অসীম পরিসর। বস্তু যেন সত্ত্বা, সত্ত্বা যেন পূর্ণতা এবং পূর্ণতা যেন, অর্গানিক রূপে এক প্রবাহ।

জ্ঞান তখনই পূর্ণতা লাভ করে, যখন কোনো ব্যক্তি একমাত্র নিজের অস্তিত্বকে বিবেচনা না করে, বরং সমস্ত সৃষ্টির অন্তর্নিহিত ধ্বনিকে শ্রবণ করে। কেবল তখনই সে জানবে, যে আলোর খোঁজে ছিল, তার আলো কোথাও বাইরের নয়, বরং সেই আলো তাকে তার ভেতরে প্রতিফলিত হয়ে আবির্ভূত হয়।

এভাবেই যে জ্ঞান নিজেকে বিলিন করে এবং কোনো প্রতিফলন বা আলো মনে তৈরি করতে পারলে, তখন বুঝতে হবে, সেখানে কোনো দিক, কোনো আকার নেই— কেবল অভ্যন্তরের দ্যুতি, যার মধ্যে জ্ঞানের অনন্ততার অনুভূতি ফুটে ওঠে।

এমনভাবে জ্ঞান হলো এক নিঃশব্দ সঙ্গীত, যা হঠাৎ কোন সুগন্ধের মতো দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং তখন সে জানে, সমস্ত সৃষ্টিই এক মহাযাত্রা, যেখানে প্রত্যেক পদক্ষেপই ঐশ্বরিক এবং শেষাবধি সেই পদক্ষেপের মধ্যে এক অদ্ভুত মিলন এবং অন্তর্নিহিত বিশ্বাসের পরিপূর্ণতা থাকে।

তাহলে, জ্ঞান শুধু পড়া বা শোনা নয়, বরং অনুভব, গ্রহণ এবং অবশেষে সম্পূর্ণভাবে একে নিজের জীবনের অংশ করে তোলা।

—ফরহাদ ইবনে রেহান

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel