অসন্তুষ্টির দ্বীপ

অসন্তুষ্টির দ্বীপ

অসন্তুষ্টি কি আসলে একটি বাহ্যিক অবস্থা, না কি মনের ভিতরে জন্মানো একটি ধ্বংসাত্মক প্রবৃত্তি? আমরা কি জানি, এই অসন্তুষ্টি কেবল একটি মানসিক অসুখ, যা আমাদের প্রকৃত শান্তির পথ থেকে আলাদা করে রাখে? আসলেই তো, আমরা সব সময় বলি, “আমার কিছুই নেই”, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের কাছে সবই আছে।

ধারণার ভ্রম: যে বলে “আমার কিছুই নেই”, সে আসলে নিজের ভেতরের অমঙ্গলকে প্রকাশ করছে। এমন ধারণা যে, “আমার কিছুই নেই”, এই ভাবনা প্রবাহিত হতে পারে তার ভেতরের একটি গভীর ভীতি থেকে—ভয়ের যে একমাত্র অর্থ, পূর্ণতা কখনো সম্ভব নয়। কিন্তু এই ভয়ের ভিত্তি কি প্রকৃত? বা, এই ধারণা কি আসলে কোনো প্রকার বিভ্রম? কেনই বা আমরা ভাবি, “আমার কিছু নেই”? সত্যিকারের অভাব কি আসলেই আছে, নাকি এটি কেবল মনের তৈরি এক কল্পনা?

পূর্ণতা এবং চাওয়ার মায়া: আমরা চাহিদাকে ধরা দিই, কখনও কখনও সেটি যেন এক অস্থিরতা তৈরি করে, মনে মনে ভেবে থাকি যে যদি “আরও কিছু” পেতাম, তবে শান্তি আসবে। কিন্তু যতই “আরও” পেতে থাকি, ততই কি আমরা পূর্ণতা লাভ করি? না, বরং আরও বড় এক দুঃখের জন্ম দিই—এই ভাবনা যে, “আমি এখনও সম্পূর্ণ নই”। চাওয়ার এই অসীম ধারাটি আসলে এক ধরনের মায়া—যতক্ষণ না আমরা জানি যে, চাওয়া বন্ধ হলেই পূর্ণতা এসে পৌঁছায়।

অপূৰ্ণতার ছায়া: একটি তীব্র বিভ্রম, “আমার কিছু নেই”, মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকে। এই ছায়া যা পূর্ণতা অনুভব করতে বাধা দেয়। চাওয়ার অভ্যন্তরীণ আসক্তি যখন নীরব হয়ে যায়, তখনই প্রথমবারের মতো আমরা উপলব্ধি করি—আমি পূর্ণ। চাওয়ার স্থায়ী অবসান ছাড়া পূর্ণতা সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা যখন খোঁজ পাই, তখন দেখি—পুরো বিশ্বটি আমাদের মধ্যে আছেই, এবং সেই পূর্ণতা কখনো হারায় না।

মানসিক কৃত্রিমতা ও সহজ সন্তুষ্টি: দুজন ব্যক্তি একটি ঘরেই বসে আছে। একজন জানে, সে পূর্ণ—তবে তার চারপাশের সমস্ত কিছু তুচ্ছ। অন্যজন জানে না, সে পূর্ণ—এবং তার চারপাশে থাকা প্রতি জিনিসের প্রতি আকর্ষিত হয়ে থাকে। এই কৃত্রিমতার মধ্যে নিজের সীমা টেনে, প্রকৃত সন্তুষ্টি ও পূর্ণতার দিকে যাওয়া সহজ হয়। বাস্তবতাটিকে আমরা সহজেই স্বীকার করতে পারি, যখন আমাদের মানসিক কৃত্রিমতাগুলি সরে যায়, আর মন শান্ত থাকে।

মনোযোগের শক্তি: যেখানে মন থাকে, সেখানে এক একটি নতুন দুনিয়া গড়ে ওঠে। যখন আমি একে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাসনা থেকে মন ফেরিয়ে নেই, তখন জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য দেখতে পাই। মন যখন অস্থির, তখন অসন্তুষ্টি স্বাভাবিক মনে হয়—কিন্তু যখন মন শান্ত, তখন ন্যূনতমেই সন্তুষ্টির অনুভূতি আসে। মন যখন বিশুদ্ধ হয়, তখন কোনো সমস্যা বা বাসনা আর তাকে ছুঁতে পারে না।

সন্তুষ্টির কেন্দ্র: প্রকৃত সন্তুষ্টি কেবল তখনই আসবে, যখন আমরা জানবো যে, যা আমরা চাই, তা কোনো সময়েই আমাদের অজান্তে ছিল না। আমাদের বাহ্যিক প্রয়োজনীয়তা যখন অস্থায়ী হবে, তখন আমরা একমাত্র সত্যকে অনুভব করতে পারব। সন্তুষ্টির অবস্থা হলো একটি অন্তর্গত উপলব্ধি—যেখানে কিছু না চাওয়ার মধ্যে অন্তর্নিহিত এক পূর্ণতা, এক পরিপূর্ণ শান্তি অম্লান হয়ে থাকে।

অথবা, অসন্তুষ্টির মায়া: চাওয়া কখনো থামবে না, যতক্ষণ না আমরা উপলব্ধি করি যে, চাওয়া নিজেই এক ধরনের খোঁজ—যার কোনো শেষ নেই। যতই বেশি চাও, ততই তুমি আরো অনেক দূরে চলে যাবে। এখানে একটি অসীম দৃষ্টিভঙ্গি আছে—যতবার তুমি যা চাও পেয়ে যাবে, ততবার তুমি অনুভব করবে, “এটি তো যথেষ্ট নয়!” সেই অমীমাংসিত চাওয়ার অর্থই হলো, “তুমি কখনো পূর্ণ হতে পারো না।”

—ফরহাদ ইবনে রেহান
২৩/০৩/২০২৫

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel