সমাজে তৈরি বিভিন্ন সমস্যার উৎপত্তি ও প্রতিকার।
আমাদের পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মানুষ প্রচুরভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পরেছে। মানুষ তার নিজের জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনা ও উপলব্ধি করতে পারছে না।যার ফলস্বরূপ সমাজে দেখা দিয়েছে ব্যাক্তিত্বের বিপর্যয়। সমাজে দিন দিন বিভিন্ন সমস্যা বেড়েই চলেছে। একটা গোষ্ঠী এই সমস্যা গুলো নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তিত বটে এবং তারা এটার প্রতিকার করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহন করছে কিন্তু এই সমস্যাগুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে ভুল পদক্ষেপ গ্রহন।
আমরা সমাজে দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া সমস্যাগুলোর মোকাবিলা ও প্রতিরোধের জন্য যেই পদক্ষেপগুলো গ্রহন করছি তা পুরোটাই বাহ্যিক পদক্ষেপ। আমরা সমস্যাগুলোকে বাইরে থেকে উপলব্ধি করছি এবং বাইরে থেকে এর মোকাবিলা ও প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমরা মূলে চিন্তা করছি না। এই সমস্যাগুলোর উৎপত্তি বাইরে থেকে হয়নি বরং এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে মানুষের অভ্যন্তরিন বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারনে। তাই আগে আমাদের অভ্যন্তরিন বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা আবশ্যক। ধরুন আপনি বা আমি অভ্যান্তরিন ও বাহ্যিক দুইটা বিষয়ের সমান গুরুত্ব অনুভব করছি এবং সেটার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে ভাবছি। এতে করে আমরা বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছি আমাদের কি করা উচিত বা কি করা উচিত নয় এই ব্যাপারে।
কিন্তু তবু আমাদের সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন ইস্যু আমাদের পৃথিবীতে দেশে সমাজে পরিবারে বা আমাদের নিজেদের ভিতরেই দীর্ঘ স্থায়ী সমস্যা হয়ে থেকে যাচ্ছে। এর কারণ কি? এর কারণ আমরা আমাদের অভ্যন্তরিন বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত কোনো কিছু জানি না, জানার চেষ্টাও করি না এর ফলে আমাদের গ্রহনকৃত পদক্ষেপগুলো বাইরে থেকে খুবই কার্যকর মনে হলেও এটার দীর্ঘস্থায়ী কোনো প্রভাব আমাদের উপর পরছে না। দেখুন মানুষ যতদিন কলার ভিতরকার নরম ও সুমিষ্ট পদার্থের গুরুত্ব অনুভব করে পারে নি ততদিনই সে কলার বাইরের আবরণের গুরুত্বও অনুভব করে নি।
আমাদের পৃথিবী, দেশ, সমাজ, পরিবার বা নিজেদের মধ্যে থাকা সমস্যা গুলো আমরা উপরে ফেলতে পারছি না এর কারণ আমরা নিজেদের অভ্যান্তরিন সমস্যা গুলো নিয়ে চিন্তিত বটে, এটাকে নিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাবতেও পারি আমরা কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তার প্রয়োগ নাই।একজন সমস্যায় জর্জরিত ব্যাক্তি কখনোও আরেকজনের সমস্যার সমাধান করতে পারে না। কিন্তু আমাদের সমাজে তাই হচ্ছে। নিজের অভ্যন্তরে শতশত সমস্যা নিয়ে মানুষ সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারে এক অন্যরকম বিপ্লব ঘটাতে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। নিজের সম্পর্কে অসচেতন ব্যাক্তি কখনো এই বিপ্লব সংগঠিত করতে পারে না।যার বাস্তব উদাহরণ আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থা।
আমরা সবাই চাচ্ছি একটা শান্তিময় তথা মানসিক ভাবে উন্নত একটা সমাজ ব্যাবস্থার এবং এটা নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক ভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছি। কিন্তু দিন দিন ছোট ছোট সমস্যার পাশাপাশি গুম,খুন,ধর্ষন,ছিনতাই,চুরি,ডাকাতি,খাদ্যে ভেজাল,খাদ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির মত বড় বড় সামাজিক বিপর্যয় বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এই সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা চিন্তিত হলেও এর সমাধান করতে পারছি না। এর কারণ এই সমস্যাগুলোকে আমরা বাইরে থেকে উপলব্ধি করছি। কিন্তু এর উৎপত্তি যে ভিতরে এবং ভিতর থেকে এর নির্মূল না করলে এর থেকে মুক্তি সম্ভব নয় এটা আমরা ভাবতে পারছি না।
মানসিক বিকৃতি বা অসৎ চিন্তাভাবনা থেকে উপরোক্ত সমস্যাগুলো তৈরি হয়।যেটা সম্পূর্ণ একটি অভ্যান্তরিন সমস্যা। সুতরাং এটা নিয়ে কাজ না করে বাইরে থেকে এটাকে সাময়িক ভাবে প্রতিহত করা গেলেও পরক্ষণেই এটা আবার ফিরে আসবে। তাই আগে আমাদের ভিতরের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা উচিত। তারপর আমি যখন আমার অবস্থানে নিজেকে কিছুটা উন্নত মনে করব। এটা অহংকার বশত নয় বরং বাস্তবিক অর্থে, তখন আমি আমার অনুভবটুকু আরেকজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারব। তখন আমার জন্য বাইরে ভিতরে দুইটা দিকই সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। নয়ত এর আগে আমরা ফেইসবুকে পোস্ট করতে পারি, রাস্তায় নেমে দুই একটা আন্দোলন করতে পারি বা আমাদের ভাবনা নিয়ে দুই একটা বই লিখতে পারি। মূলে সমস্যা সমস্যাই থেকে যাবে।
কিন্তু যখন আমরা আগে অভ্যান্তরিন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাব তখন আমরা হয়ত এর সমাধান খুঁজে পাব। এর কারণ আমরা যখন একটা প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যাই এবং এর ভিতর দিয়ে গিয়ে একটা উপযুক্ত স্থানে পৌঁছাই তখন আমরা আমাদের রাস্তাকে বিশ্লেষণ করতে পারি। তখন আমরা আরেকজনের কাছে এটা নিয়ে আলোচনা করতে পারি এবং তাকে প্রেশিত করে এই ধাপ গুলোতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করতে পারি। বড় বড় মনিষীগন সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন ও যুদ্ধ করেছেন। এবং তারা সফলও হয়েছেন। এর কারণ তারা একটা প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে গিয়েছ। এখন ওনাদের কাছে অভ্যন্তরির ও বাহ্যিক সকল সমস্যার উৎপত্তি, বিকাশ ও দূরীকরণের মাধ্যম স্পষ্ট ভাবে অবগত।এবারের প্রচেষ্টা ব্যার্থ হওয়ার নয়।তাই ওনারা সফলও হয়েছেন।
আমার মতে আগে নিজের অবস্থানে পরিপক্ব হওয়া বেশি জরুরি। এর আগে সমাজ বা দেশ নিয়ে ভেবে আমি বা আমরা কোনো সমাধানে আসতে পারব না। অভ্যন্তরিন বিষয়গুলো সম্পর্কে কার্যকরী ও বিশ্লেষন মুখী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হলে ধর্ম দর্শনের বিকল্প নেই। একমাত্র ধর্মের আধ্যাত্মিকতার প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে গিয়েই মানুষ তার অভ্যান্তির সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে। এর আগে আমরা আমাদের নিজেদের জীবনে বিভিন্ন ভাবে সফলতা অর্জন করতে পারলেও সুস্থ সুন্দর ও আনন্দময় জীবনের সূচনা কোনোদিন করতে পারব না।আমাদের প্রত্তেকের উচিত আধ্যাত্মিকতার ছায়াতলে এসে নিজের জীবনকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার দক্ষতা অর্জন করা। তবেই একটি সুখী সুন্দর ও উন্নত সমাজব্যবস্থা পৃথিবীকে উপহার দেওয়া সম্ভব।
Author: Emran Hassan Emon