তোমাদের মৃত্যুই চির সাম্যবাদ।

তোমাদের মৃত্যুই চির সাম্যবাদ।

কে আস্তিক আর কে নাস্তিক, কে কোন ধর্মের, বা কে কোন গোত্রের, মৃত্যু কখনো’ই এসব দেখার সময় রাখেনা। তোমাদের সর্বশেষ পরিণতি মৃত্যু, একে তোমরা অস্বীকার করার সাহস কোনদিনও পাবেনা৷ তোমরা সবাই উপাসনার মাধ্যমে ঈশ্বরের অনুসন্ধান করে থাকো, আসলে এটি মোটেই সঠিক পথ নয়, মূলত তোমাদের উচিত ছিলো মৃত্যুকে অনুসন্ধান করা৷ যদি তোমরা মৃত্যুকে অনুসন্ধান করতে পারো, তবে তাঁর মাঝে’ই তোমাদের উপাসনা হয়ে যাবে, উপাসনাকে আলাদা ভাবে করার মাঝে কিছু নেই৷ উপাসনার মাধ্যমে কখনো’ই মৃত্যুকে অনুসন্ধান করতে পারবে না, কিন্তু মৃত্যুকে অনুসন্ধান করলে ঈশ্বরের সন্ধান পাবে, কারণ মৃত্যুতে’ই ঈশ্বর।

দেখো, তোমরা প্রত্যেক’ই জগতে এসেছো রণভূমিতে সংগ্রাম করে বিজয়ী হওয়ার জন্য, এবং তোমাদের এ সংগ্রাম চলতে’ই থাকে মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত। কম বেশি সবাই সংগ্রাম করে যাচ্ছে, এবং সংগ্রাম করে যেতে’ই হবে, সংগ্রাম করতে করতে সর্বশেষ অপেক্ষার অবসান ঘটে তোমাদের মৃত্যুর মাধ্যমে। কারণ মৃত্যু এসে তোমাদেরকে রণ মুক্তি দেয়৷ কিন্তু মৃত্যুতে তোমাদের জয় নাকি পরাজয় তা তোমরা জানো না, তথাপি মৃত্যুই তোমাদের সকল সুখ-দুঃখের আপাতত অবসান। তোমাদের দেহের ইন্দ্রিয়সমূহ তোমাদের আত্মাকে টেনে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে নিয়ে যায়, যাহা খুবই অশুভকর ব্যাপার, আর তোমরাও সেই ইন্দ্রিয়ের মধ্যে’ই আনন্দ-সুখের সন্ধান করে যাচ্ছো।

প্রকৃতপক্ষে ইন্দ্রিয়ের দাসত্ব দ্বারা কখনই শুভসুখ বা আনন্দকে লাভ করা যায় না। দেহের ইন্দ্রিয় দাসত্বের উপর নির্ভর করো না এবং দেহের ইন্দ্রিয় দ্বারা সীমাবদ্ধও থেকো না, তোমরা তোমাদের ইন্দ্রিয়কে ব্যবহার করতে চেষ্টা করো, তোমাদের ইন্দ্রিয়সমূহকে তোমরা পরিচালনা করো এবং সে কীভাবে তোমাদেরকে ভক্তি-ভালোবাসা প্রদান করবেন সেই কৌশল অবলম্বন করো৷ মনে রাখবে, দেহ তোমাদের শত্রু নয়, আর দেহের পূর্ণতা পায় ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা, তাই ইন্দ্রিয়সমূহও তোমাদের শত্রু নয়, কারণ দেহ থাকলে’ই তোমরা দৃশ্যমান, এবং দেহের ইন্দ্রিয়’ই তোমাদের দেহকে পূর্ণতা দেয়, আর দেহ না থাকলে তোমাদের এই রণভূমিতে জয় পরাজয়ও থাকেনা।

তোমাদের যা কিছু করার তা এই দেহের মাধ্যমে’ই করতে হবে, তোমরা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেলে তোমাদের আর কিছু করার সুযোগ থাকবে না, এটুকু মনে রেখো মৃত্যু’ই সর্বশেষ অবস্থান এটাকে ফাঁকি দিতে পারবেনা। সময় ও দেহ থাকতে নিজেদের সম্পদ পাকা করো, কারণ দেহ হরণ হওয়ার সময় আসলে আর কিছু’ই করতে পারবে না। দেহের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করো, দেহকে সাজ-সজ্জায় রঙবেরঙের বার্নিশ করে তোমাদের হিসাবের সময় নষ্ট করা থেকে বিরত থাকো। দেহ দ্বারা তোমাদের সম্পদ পাকা করো, একে দিয়ে তোমাদের প্রকৃত তুমি’কে প্রকাশিত করাও, মৃত্যুর পরে আর এই দেহ তোমাদের থাকবেনা এবং দেহেতেও তোমরা থাকার ক্ষমতা পাবেনা।

কারণ তোমাদের দেহ এই জগতের সম্পদ এবং তোমরা মৃত্যুর পরপরই জগৎ তাঁর সম্পদ বুঝে নিবেন, তখন তোমাদের দেহ এ জগতে’ই মিশে যাবে৷ এই দেহটি তোমাদের বাহক, এর দ্বারা তোমরা সাময়িক ভ্রমণ করতে সুযোগ পেয়েছো, এটাকে সঠিক কাজে ব্যাবহার করো৷ তোমাদের ঈশ্বর অনুসন্ধানের জন্য ধর্মীয় উপাসনা করা অবান্তর বলে আমি মনে করছি, ঈশ্বরের অনুসন্ধান করার জন্য তোমরা তোমাদের মৃত্যুকে অনুসন্ধান করো এটা’ই সঠিক পথ, কারণ এই মৃত্যুকে’ই কেন্দ্র করে যত সব ধর্ম মতবাদের আবিষ্কার হয়েছে, তোমরা অমর হলে এসব কিছু’ই পেতেনা, মৃত্যু আছে বলেই এসব এসেছে৷ ঈশ্বর আছে কিবা নেই তাঁর উত্তর তোমরা মৃত্যুকে অনুসন্ধানকালেই পেয়ে যাবে৷ যারা মৃত্যুর ব্যাপারে যানেনা তাঁরা কেহ’ই মূলত ধর্মবোধ রাখেনা, কারণ এই ধর্ম তৈরি’ই হয়েছে মৃত্যুকে অনুসন্ধান করতে গিয়ে।

তোমরা কে কি হবে, জগতে কে কতদিন রাজত্ব করবে তাঁর সঠিক ব্যাখ্যা কেহ দিতে পারবেনা, কিন্তু তোমরা সবাই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরবে এটি একটি নিশ্চিত বিষয়। তোমরা যদি স্বর্গ-জান্নাত নিয়ে আলাপ করো তবে তাও মৃত্যুর বিষয়কে এড়িয়ে গিয়ে করতে পারবেনা, কারণ স্বর্গ নরক প্রাপ্তির আগে তোমাদের সাথে একটি বড় অঘটন ঘটে তা হচ্ছে মৃত্যু, তাই এটাকে নিয়ে’ই আগে ভাবা উচিত। তোমরা শুরুতে’ই ঈশ্বর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে কখনো’ই ঈশ্বর পাবেনা, ঈশ্বর পেতে হলে আগে মৃত্যুর ব্যাপারে অনুসন্ধান করে মৃত্যুকে উপলব্ধি করতে হবে, কারণ মৃত্যুতে’ই ঈশ্বর।

লেখা: বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel