সৃষ্টিকুলের মঙ্গল সাধন করা’ই প্রকৃত আত্মত্যাগ।
সৃষ্টিকুলের মঙ্গল সাধন করা’ই প্রকৃত আত্মত্যাগ। তোমার আত্মত্যাগের মূল উদ্দেশ্য’ই হওয়া উচিৎ তুমি মানুষ তথা শ্রেষ্ঠ জীব, তোমাকে ঐ পথে চালনা করতে হবে, যে পথে সকল জীবের কল্যাণসাধন হয়৷ চরম আত্মত্যাগের প্রকৃতি’ই ঐ পরম সত্তর প্রকৃতি, তোমার চরম আত্মত্যাগে’ই সেই পরম সত্তর বিচিত্র প্রকাশ, এবং এখানে’ই তুমি এক অখণ্ড ভূ।
প্রকৃত চরম আত্মত্যাগ কি? এবং তা কেমন হওয়া উচিৎ? এই চরম আত্মত্যাগের মূল ভাব হলো, তুমি এক বা ব্যক্তিসত্তাকে অস্বীকার করবে, এবং তুমি জানবে এটি এক ধরণের স্বার্থপরতা, এই স্বার্থপরতা ত্যাগ করে তুমি তখন ‘আমি সত্তাকে আমরা’তে রূপান্তর করবে। তুমি স্বীকার করবে, আমি একা নই বরং আমি একাধিক তথা আমরা, এবং শুধু আমরা নই বরং সবাই এক অখণ্ড। এটা’ই হলো প্রকৃত চরম আত্মত্যাগ।
আমরা’কে ত্যাগ করে শুধুমাত্র আমিতে থাকার মানে’ই ইন্দ্রিয়ের গোলামি করা, আদি সত্য এই যে, ইন্দ্রিয়ের উপভোগে কোন প্রকার সুখ পাওয়া যায় না। প্রকৃত সুখ কেবল আত্মাতে’ই পাওয়া যায়। তোমার উচিৎ আমি’কে আমরা’তে রূপান্তর করে শ্রেষ্ঠ সুখ আত্মার সুখ’কে খুঁজে নেওয়া। আত্মত্যাগে যে কেমন আত্মার সুখ পাওয়া যায়, সেই সুখ কেবল আভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা, এটি আমি তোমাকে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে পারবোনা।
কারণ এটা অনেকটা’ই ঐ যে স্বাদ গ্রহণ করে তাকে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝাতে না পারার মতন বিষয়। এটাকে শুধু অনুভবের মধ্য দিয়ে’ই উপলব্ধি করানো যেতে পারে, এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়৷ এখন যদি তুমি এই অনুভব’কে তোমার মন দিয়ে যেমন ইচ্ছা তেমন করে ব্যাখ্যা করো, তবে মনে রাখবে তুমি’ই তোমার আসল উপলব্ধিকে হারাতে চলেছো।
কারণ তোমরা’ই এই উপলব্ধিকে মন দিয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ধর্মের মাঝে যে কি পরিমাণ আগাছা তৈরি করেছো তা আমরা দেখতে’ই পাচ্ছি৷ যেখানে ধর্মের মূলভাব ছিলো তোমাদের মাঝে শান্তির সূচনা করা, তোমরা দ্বন্দ্বহীন হয়ে থাকা, এবং তোমাদের খাঁটিত্বকে প্রকাশ করতে সক্ষম হওয়া। কিন্তু সেখানে তোমরা তোমাদের কলুষিত মন দিয়ে ধর্মের ব্যাখ্যা করে ধর্মকে’ই ধর্মের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছো৷ এখন সকল ধর্ম’ই অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে ধর্ম’ই ছিলো সকল শান্তির মূল।
লেখা: বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ