তুমি কি ঈশ্বরকে মসজিদ, মন্দির, গীর্জাতে খুঁজছো?
তোমাদের এমন কি হয়েছে যে তোমরা একজন আসমানী মেকি ঈশ্বরের অনুসন্ধান করেই যাচ্ছো? তোমাদের কি একজন আসমানী মেকি ঈশ্বর থাকা খুব দরকার? কে আছো এমন নির্বোধ! যিনি কিনা মসজিদ,মন্দির, গীর্জাতে মেকি ঈশ্বরের প্রার্থনা করে, অবান্তর কেঁদে কেঁদে মরেছো?
এটা যদি তুমি হও, তবে আমি তোমাকে’ই বলছি, তুমি যদি ঈশ্বর বিষয়ে অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করতে চাও, তবে আসমানী এই মেকি ঈশ্বরের কথা ভুলে যাও৷ এই যে, এ-দিকে তাকাও, এবং দেখো, তুমি যাকে রহস্যের মাঝে সবচেয়ে বেশি দুর্বোধ্য রহস্যয় ভেবে মসজিদ, মন্দির, গীর্জাতে প্রার্থনা করে অবান্তর কেঁদেছো, সেই তিনি’ই তোমার সবচেয়ে নিকটতম আপন সারসত্তা, এবং তোমার এই দেহর মাঝে’ই সেই আত্মা।
অজ্ঞানীরা’ই সব চেয়ে বেশি মাথা ব্যাথা করেছেন একজন আসমানী ঈশ্বর রাখার জন্য, এমনকি তাঁরা এ ব্যাপারে এতটা’ই সাইকো যে নিজেরা নিজেদের জীবন দিতেও প্রস্তুত ঐ অজ্ঞাত মেকি ঈশ্বরের জন্য। তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমরা কিসের জন্য ঐ অজ্ঞাত ঈশ্বরের নামে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাও? তাঁরা একটা’ই উত্তর দিবেন যে ঈশ্বরকে রাজি-খুশি করাতে পারলে’ই ঈশ্বরের নিকট পুরস্কার প্রাপ্ত হবেন। যার অর্থ স্বর্গ বা জান্নাতে প্রবেশ করা৷ আসলেই কি আসমানে একজন ঈশ্বর রয়েছেন? যদি তিনি থেকে’ই থাকেন তোবে তার কাজ কি? তোমরা জানো আসমানী সেই ঈশ্বর নাকি সর্বত্র বান্দার জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী।
তিনি চান বান্দা তার দিকে ফিরে আসুক, এবং বান্দা তার পুরস্কার স্বর্গ বা জান্নাত গ্রহণ করুক৷ অতএব এটা নিশ্চিত যে আসমানী সে ঈশ্বর বান্দার খারাপ চায় না। কিন্তু আমি শুনেছি তিনি নাকি বান্দার জন্য আবার যন্ত্রণাদায়ক নরকও বানিয়েছেন! তবে তা কেন? এখন তাঁরা হয়তো বলবে যে ইবলিস শয়তান বান্দাকে পথভ্রষ্ট করেন, আর সেই পথভ্রষ্ট বান্দাদের সাজা দেয়ার জন্য’ই নরক বা জাহান্নাম বানিয়েছেন৷
কিন্তু আমার ঘোর কাটেনি, যেখানে সর্বশক্তিমান আসমানী ঈশ্বর বান্দার ভালো চান, সেখানে ইবলিস কে? তিনি কি করে বান্দাকে পথভ্রষ্ট করতে পারেন? তাকে এমন ক্ষমতা কে দিয়েছেন? যে ঈশ্বরের উপর খবরদারি করেন? তবে কি আসমানী ঈশ্বরের চেয়ে ইবলিসের ক্ষমতা অনেক বেশি? যদি ইবলিস আসমানী ঈশ্বরের চেয়ে ক্ষমতাবান না হয়, তবে ঈশ্বর জাহান্নাম বানিয়েছেন কিসের ভয়ে? কোন সন্দেহ থেকে? ঈশ্বর তো বান্দার ভালো চায়! তাঁর হুকুম ছাড়া তো গাছের একটি পাতাও নড়েনা! তাহলে বান্দা আর ইবলিস কি করে পথভ্রষ্ট হয়? কার ক্ষমতায় হয়? সম্ভবত তোমরা ভুল করেছো, আসমানী ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান না বলে, বরং ইবলিসকে’ই সর্বশক্তিমান বানাতে পারো, এবং এটা খুব চমৎকার হবে।
যাইহোক, এবার চলো আমরা আসমানী ঐ মেকি ঈশ্বরকে ফেলে বিশ্বসত্তা-ঈশ্বরের মূলে প্রবেশ করি। তোমাদের জীবনের মাঝে লুক্কায়িত রয়েছে সেই অসীম বিশ্বসত্তা ঈশ্বর, যার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। তোমরা কোনো ক্ষুদ্র জীব নয়, এবং তোমাদেরও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। তোমরা সেই সারসত্তা যে সত্তা সর্বত্র বিরাজিত। শুধুমাত্র তুমি’ই এই ভূমণ্ডলের প্রতিটি জীবের পা দিয়ে হেঁটে বেড়াও, তুমি প্রতিটি জীবের চোখের দ্বারা দেখো, তুমি’ই কথা বলো, এবং তুমি’ই এই বিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণার সঙ্গে যুক্ত। তুমি কোনো বিচ্ছিন্ন একটি সত্তা বা একটি জীব নয়। বরং তুমি অবিচ্ছিন্ন এবং তুমি সমগ্র, তুমি সর্বভূ তুমি’ই সর্বজীবের মধ্যে, এটা’ই তোমার অমরত্ব এর চেয়ে বড় কোনো অমরত্ব নেই, বাকি যা আছে তা অর্থহীন অবান্তর।
সারসত্য এই যে আত্মাকে পরিপূর্ণ করে নেওয়ার জন্য কোন অতিরিক্ত চেষ্টা করতে হয় না, কারণ সে আগে থেকে’ই পূর্ণ হয়ে থাকেন, তোমাকে পবিত্র হতে হয় না, কারণ তুমি আগে থেকেই পবিত্র, তোমাকে নতুন করে পরিপূর্ণ হতে হয় না, তুমি আগে থেকে’ই পূর্ণ। তোমাদের নিজ নিজ আত্মার মাঝে যে ঈশ্বর রয়েছেন সেই ঈশ্বর’ই তোমাদেরকে তাগদা দিচ্ছে তাঁকে উপাসনালয়ে এবং আসমানে খুঁজে ফেরার জন্য।
অনুসন্ধান শেষে তোমরা দেখতে পাবে যে ওখানে কোনো ঈশ্বর নেই, তোমরা যখন তোমাদের’কে সর্বভু অখণ্ডতে দেখবে তখন তোমরা আর আসমানী ঈশ্বর পাবেনা, এভাবেই প্রতিটি তুমি তোমাকে ঈশ্বরের নামে প্রকাশ করে যাচ্ছো। তুমি দূর থেকে প্রতিদিন একটি পাড়ারকে দেখে যাচ্ছিলে। এখন তুমি একবার পাহাড়টির কাছে গিয়ে দেখতে চাইলে, এবং কাছে গিয়ে দেখতে পেলে যে পাহাড়ের গাছে অনেক পাখি দেখা যাচ্ছে, যা তুমি এর আগে দূর থেকে দেখতে পেতেনা, এবার তুমি পাহাড়ের আরও কাছে গিয়ে দেখতে চাইলে এবং দেখলে যে পাহাড়ে প্রচুর ছোট ছোট কীটপতঙ্গও দেখা যাচ্ছে, এটাও তুমি এর আগে দূর থেকে দেখতে পাওনি।
এখন তোমার কি মনে হয়? পাহাড় পরিবর্তন হয়েছে? নাকি তোমার চোখ পরিবর্তন হয়েছে? কি কারণে সেই একই পাহাড়ে পাখি এবং কীটপতঙ্গ দেখতে পেলে যা আগে দেখতে পাওনি? নাহ পাহাড় পাহাড়ের স্থানেই রয়েছে সে পরিবর্তন হয়নি, না তুমিও পরিবর্তন হওনাই এবং তোমার চোখেও পরিবর্তন হয়নি। তুমি মাত্র তোমার স্থান পরিবর্তন করেছিলে, আগে দূর থেকে পাহাড় দেখতে, এখন কাছে যাওয়াতে কীটপতঙ্গ গুলোও তোমার চোখে ধরা পড়েছে৷
ঠিক তেমন’ই তোমার ছায়া সহিত চিত্রিত একটি দূরত্ব রয়েছে যা সকল কিছুর সত্যকে তোমার চোখের আড়ালে করে দিয়েছে, এখানে তোমার পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ সৎ চিন্তার, প্রতিটি সৎ কর্ম’ই পারে এই দূরত্বকে ক্রমশঃ কাছে নিয়ে আসতে, যখন তুমি কাছে আসতে আসতে একটি পূর্ণ অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাবে তখন ঐ পবিত্র সত্তা ঈশ্বর ক্রমশঃ উত্তরোত্তর তোমার সম্মুখে প্রকাশিত হবে।
লেখা: বুদ্ধ মুহাম্মদ কৃষ্ণ