আমি সূফীদের মত বাঁচতে চাই!
যতক্ষন চাহিদা থাকবে, সেটা যে কোনো চাহিদা, তোমার সূফীদের মত বাঁচতে চাওয়া”! এটাও একটা চাহিদা বা তৃষ্ণা। সমস্ত তৃষ্ণা ও চাওয়ার থেকে যে পার হয়ে যায়, তারই একমাত্র সূফীত্ব উপলদ্ধি হয়। চাওয়াই তো তোমাকে বাঁধে, চাওয়াই তো বন্ধন, তোমার হাত কে বেঁধে রেখেছে? তোমার পা কে আটকিয়ে রেখেছে? তুমি কোন কারাগারে বন্ধ আছো? বাসনার-তৃষ্ণা-চাওয়ার-এটা হয়ে যাবো, ওটা হয়ে যাবো, এটা যদি পেতাম-ওটা যদি পেতাম।
আমার প্রিয় আত্না আমি তোমাকে একটা ঘটনার মাধ্যেমে বুঝানোর চেষ্টা করবো। বাদশা সেকেন্দার ভারত আসার পথে এক সূফীর সাথে দেখা করতে গেলেন। সূফী নগ্ন অবস্থায় নদীর কিনারে সকালের রৌদ্র উপভোগ করতে ছিল। সেকেন্দার সূফীর কাছে গিয়ে বললো তুমি নিজেকে সৌভাগ্য মনে করতে পারো। মহান সেকেন্দার তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে । সূফী হেসে বললো যে নিজেকে মহান বলে সে পাগল আর আমি তোমার থেকে চির- দরিদ্র” আজ পর্যন্ত কাউকে পাই নেই।
এই মহান হওয়ার দাওয়া নিজের ভিতরে অহংকারকে ঢেকে রাখা, এই পোশাক এই সৈন্য এগুলো দেখানো রোগ।ভিতরে সম্পূর্ন খালি, যত উপায়-ই তুমি বের করনা কেন “ভরতে, পারবা না। কথা তো সেকেন্দারের বুঝে আসছিল কারণ এত বড় কথা বলার পড়েও সূফী শান্ত। সেকেন্দার লজ্জায় মাথা নত করলো।
সেকেন্দার বললো মানলাম তোমার কথা কিন্তু তোমার কাছেও তো কিছুই নেই তাহলে তোমার কাছে কি আছে? যার কারনে আমাকে চির- দরিদ্র” মনে হচ্ছে? আমার কাছে তো সব কিছু আছে। সূফী বললো সব-কিছু আছে তোমার কাছে তার পরেও তোমার তৃষ্ণা বা চাওয়া রয়ে গেছে এর জন্যই তুমি ভিখারি।
আমার কাছে কিছু নেই তারপরেও তৃষ্ণা ও চাওয়া নেই এর জন্যই আমি সম্রাট। দেখ জীবন হাত থেকেও চলে যাচ্ছে আর সময় নষ্ট করিও না। সেকেন্দার বললো তোমার সাথে দেখা হয়ে খুশি হলাম, আর যদি দ্বিতীয়-বার ইশ্বর আমাকে জম্ম দেয় তাহলে তাকে বলবো আমাকে যেন সেকেন্দার না বানায়, সূফী বানায়। সূফী হেসে বললো তুমি একটা পাগল, এখন কেন আমার মত হয়ে যাও না। আরেক জম্মের কি ভরসা? তোমার মনে থাকে না ভুলে যাও, তখন পরমাত্মা রাজি হয় কি না? আবার জম্ম যদি না হয়? কালকের কোন ভরসা নেই আর তুমি অন্য জম্মের ভরসায় আছো?
যদি আমার কথা তোমার পছন্দ হয় এখনি আসো আমার সাথে বাঁচ আমার মত হয়ে যাও কে তোমাকে আটকাবে? সেকেন্দার হতে গেলে অনেক কঠিন ব্যাপার কিন্তু আমার মত হতে চাইলে এখনি হতে পারো। ফেলে দেও এই পোশাক সৈন্যদের বলে দাও সালাম তোমরা ফিরে যাও। আমার যাত্রা শেষ হয়ে গেছে যেখানে পৌছার কথা ছিল সেখানে পৌছিয়ে গেছি। সেকেন্দার বললো এটা খুব কঠিন ব্যাপার। আজ বা এখন সম্ভাব না, সূফী বললো যদি আজ বা এখন সম্ভাব না হয়, তাহলে সেটা কখনই সম্ভাব নয়। যা আজ হবে তা কালকের জন্য ছেড় না! আর যে কালকের জন্য রেখে দেয় সে তো সব সময়ে জন্য রেখে দিল। বাকী তোমার ইচ্ছা।
সেকেন্দার বললো আপনার সাথে দেখা হয়ে খুশি হলাম, আমি কি আপনার কোন সেবা করতে পারি? তখন সূফী বললো আমি কি চাবো আমার তো কোন চাওয়াই নেই। আর যদি তুমি আমার জন্য কিছু করতেই চাও,
তোমাকে আমি নিরাস করবো না। তুমি একটু সরে দাড়াও কারণ তুমি আমার সামনে দাড়িয়ে আছো আর আমি রৌদ্র নিতে পারছি না। ধন্যবাদ তুমি আমার কথা শুনছো আর সরে দাড়িয়েছো।
সেকেন্দার মনের ভিতর কষ্ট পেয়ে সফর শুরু করলো। যাওয়ার সময় সূফীকে বললো যখন আমার সফর শেষ করে ফিরবো তখন এই জীবনেই তোমার মত জীবন অতি বাহিতো করবো। সূফী বললো এমন সফর থেকে কেউ ফিরে আসে না কারণ বাসনার সফর কারও পুরো হয় না। এক তৃষ্ণা শেষ হবে দশ তৃষ্ণা পেয়ে বসবে তুমি আসতে পারবে না। এমন বাসনার সফর কারো পুরা হয় না কেউ আসতে পারে না সেখান থেকে। যে ব্যক্তি জ্ঞানী সে সফরের মাঝেই বসে পড়ে।
যে অবুঝ সে বলে এই সফর পুরা করবো কিন্তু সে জানে না এমন সফর কখনো কারও পুরা হয় না তার আগেই মৃত্যু এসে পরে। আর ঠিক সেটাই হলো সেকেন্দার আসার পথেই মৃত্যু বরণ করলো ঘরে পৌছাইতে পারলো না। অদ্ভুত এক ঘটনা আর তাহলো সেকেন্দার ও সূফী এক দিনেই মৃত্যু বরণ করেছিল। সেকেন্দার এক ঘন্টা আগে আর সূফী এক ঘন্টা পরে মৃত্যু বরণ করেছিল। সেকেন্দার স্বর্গে যাচ্ছিল হঠাৎ পিছন থেকে কার যেন আসার আওয়াজ আসছিল। পিছনে ঘুরে দেখলো যে সেই সূফী। সূফী হেসে বললো, বলেছিলাম না সফর শেষ হবে না মৃত্যু মাঝখানে এসে পরবে। সেকেন্দার হেসে বললো এ কেমন অদ্ভুত ঘটনা,এক সম্রাটের সাথে এক ফকিরের দেখা হয়ে গেল। সূফী বললো কথা তো তুমি ঠিকই বলেছো এখন দেখার বিষয় সম্রাট কে আর ফকির কে? সম্রাট পিছনে আর ফকির আগে।
ফকির তুমি কারণ তুমি সব হারিয়ে এসেছো আর আমি সব নিয়ে এসেছি। তোমার জীবন ছিল চাওয়ার আর আমার জীবন ছিল আনন্দের। সূফীত্ব উপলদ্ধি করার পরে তোমার মনে হবে “না জীবন কিছু” “না মৃত্যু কিছু” দুটোই হারিয়ে যাবে! যা বেঁচে থাকে সেটা মূল্য অস্তিত্ব, সেখানে “না আছে শুরু” “না আছে শেষ”। তুমি বলছোঃ “আমি সূফীদের মত বাঁচতে চাই” তোমার ভিতরে এই চাওয়াতেই সূফীত্ব উপলদ্ধি হবে না। সূফীত্ব তারই উপলদ্ধি হবে, যে জানতে পারবে, “না আমার জম্ম আছে” “না আমার মৃত্যু আছে”!!
শুধু সাক্ষি হয়ে থাকে আমি জীবনকে ও দেখলাম এবং মৃত্যুকে ও দেখলাম,আমি তো এই দুইটা থেকে ও উপরে। যে ব্যক্তি এই দুটো থেকে অতিক্রম হয়ে যায়, তারাই কেবল সূফীত্ব উপলদ্ধি করতে পারে। এই জীবন তোমাকে কি দিয়েছে-? কি পেয়েছো? শুধু দুঃখ আর কষ্ট ছাড়া কি পেয়েছো এই জীবনে? বাঁচার জন্য এত আগ্রহ কেন- মৃত্যুর জন্য এত ভয় কিসের? মৃত্যু তোমার কাছ থেকে কি কেরে নিয়ে যাবে। যখন জীবন কিছুই দেয়নি তাহলে মৃত্যু কি কেরে নিবে-? সব হারিয়ে যাবে এই জীবনে তার পরেও আমরা ধরে বসে আছি। একটু কষ্ট করে তোমার মনটাকে খুলে -তো-দেখ শুধু ঘাও আর ঘাও, দুঃখ আর দুঃখ।
ফুল তো নেই শুধু কাটা আর কাটা। তারপরেও এই জীবনকে ধরে বসে আছো। কি পেয়েছো এর ভিরের ভিতর? সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে তোমার নৌকা ডুবে যাচ্ছে। কত বার তুমি জীবন পেয়েছো কি করছো? এখনে সবাই হেরে যায়। জিতে তো সেই যে কিনা সব চাওয়া পাওয়ার থেকে মুক্ত হয়ে যায়। জাগো “জাগার” নামই সূফী, জাগো জীবন থেকে, জাগো মৃত্যু থেকে। যে জেগে গেলো সে তো জীবনে পরম ধন পেয়ে গেল।
এই মূল্যমান কথা গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
– ওশো রজনীশ