নিষ্কাম তত্ত্ব – পর্ব ৩
নিষ্কাম তত্ত্ব তৃতীয় পর্বের (শেষ পর্ব):
“লাবারিদিন ওয়ালা কারিমিন” (৫৬:৪৪)। অনুবাদ: না ঠান্ডা, না আনন্দদায়ক।
“ইন্নাহুম কানু কাবলা জালিকা মুতরাফিন” (৫৬:৪৫)। অনুবাদ: নিশ্চয়ই তাহারা আগে ছিল ওই বিলাসী জীবন যাপনকারী।
মন্তব্য: অবশ্যই তারা আগে ছিল ওই বিলাসী জীবনের উপর, এই আয়াতটি বামপন্থীগণের পূর্ববর্তী জীবনের কথা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বর্ননা করেন।পূর্ববর্তী জীবনপ বামপন্থীগণ লোভ-মোহ কামনা বাসনার উপর বিলাসী জীবন যাপন করতেন। এই আয়াতটি দ্বারা আগের জনমের জীবন কাহিনীর ইংগিত করেছেন। অর্থাৎ বামপন্থীগণ নিজেদের নফসের উপর জুলুম করেছেন। তারা আপন নফসের কল্যানে কোনো নিষ্কাম কর্ম করেন নাই। নবী, রসুল ও অলীদের জীবনদর্শন তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশির উপর জীবন যাপন করেছেন। এবং নিজেদের ভোগ বিলাসে মত্তছিল। যার কারণে অর্জিত কর্মফল হিসাবে বর্তমান বামপন্থী দলে এসে জম্ম নিতে হলো। তাই সাধক কবি বলেন “যার যার কর্ম নিজের গড়া, ক্ষুদ্র বিজ্ঞ আছে যারা।” ইহাই কোরানিক দর্শন আপনি মানলেও নফস তার কর্ম ফল ভোগ করবে আবার আপনি না মানলেও নফস তার অর্জিত কর্মফলই ভোগ করবে। কারণ ইহা নফসের অর্জিত তকদীর। ইহাই চীরন্ত সত্য।
বিশ্বাস করুন চাই বিশ্বাস না করুন। কিয়ামত তথা নফসের বিবর্তনবাদ আপনি অস্বীকার করলেও কিয়ামত তথা রূপান্তরবাদ আপনাকে অস্বীকার করবে না। জান্নাত এবং জাহান্নামের সুখ-দুঃখ ভোগ আপনাকে দেহধারণ করেই ভেগ করতে হবে। মাটির গর্ত নামক মেজাজি কবরে আযাব হয় না। জীবন্ত দেহ নামক কবরেই হাকিকি আযাব হয়। মাটির গর্তে নফস তাকে না, মাটির গর্ত নামক কবরে থাকে নফসবিহীন মৃত লাশ। সুখ-দুঃখ নফস ভোগ করে অর্জিত কর্মফলের মাত্রানুসারে। কিন্তু রূহ কিন্তু কর্মফল ভোগ করে না। রূহ রবের আদেশ। রূহ আল্লাহর জাত তথা রূহ আল্লাহ স্বয়ং রবরূপ। শ্রীমদভগবদ গীতায় বলা হয়ে “প্রারদ্ধ কর্ম ভোগ বিনে খন্ডন হয় না”।
তারই সমাধানে বলা হয়েছে- “জ্ঞানাগ্নিতে পুড়িলে প্রাক্তন কর্মের বীজ আর অংকুরোগদম হয় না।”
“ওয়াকানু ইউসিররুনা আলাল হিনসীল আজিম” (৫৬ঃ৪৬)। অনুবাদ: এবং তাহারা লিপ্ত ছিল বড় পাপের উপর।
মন্তব্য: বড় বড় পাপ বলতে আমাদের ধারণা আপন নফসের উপর জুলুম করা। এতিম-মিসকিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া অথবা এতিমের হক মেরে দেওয়া। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন সম্পদ জমা করে রাখা। বার্ধক্য অবস্থায় আপন মাতা পিতা হতে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। আপন স্ত্রী ব্যতীত পর রমনী ফুসলিয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করা। আল্লাহর পাগল, অলীদের প্রতি আড়নয়নে দৃষ্টিপাত করা, এবং তাদের উপর অত্যাচার ও জুলুম করা।এই সব অপকর্মের কারনে “আসপালা সাফীলীনের” অন্তর্ভুক্ত হতে হবে, তথা সর্বনিম্নস্তরে নামিয়ে দেওয়া হবে বামপন্থীগণকে। তারা যদি এই জীবনে ডানপন্থী অথবা অগ্রগামীদের নিকট আনুগত্য না করে, এবং নিজেদের সংশোধন না করে তাহলে পরবর্তী জীবনের প্রভাত রচিত হবে কন্টকময়।
“ওয়াকানু ইয়াকুলুনা আইজা মিতনা ওয়া কুননা তুরাবান ওয়া ইজামান আইননা লামাবউসুনা” (৫৬ঃ৪৭)
অনুবাদ: এবং তাহারা বলিত, যখন আমরা মরিয়া যাইব (তখন) কি এবং আমরা হইব মাটি এবং অস্থি (তখন) কি নিশ্চয়ই আমরা অবশ্যই উত্থিত হইব?
মন্তব্য: কোরানের মূল দর্শনই হলো কিয়ামত দর্শন। যারা কিয়ামত দর্শন বুঝেন আসলেই তারা কোরানের কিছুই বুঝেন না। সমগ্র কোরানের পরতে পরতে জম্মান্তরবাদের আলোচনা সুবিস্তার। এখানেই বস্তুবাদীগণ সন্দেহ করে বসে, এখনেই অস্বীকার করে বসে। ভোগীরা অস্বীকার করলে কি হবে, কিয়ামত তথা মৃত্যু তো তাদের অস্বীকার করবো না?
“আওয়া আবাউনাল আউয়ালুন” (৫৬:৪৮) অনুবাদ: অথবা আগেকার দিনে আমাদের বাপ-দাদারা (কি উত্থিত হইবে)?
“কুল ইননাল আউয়ালিনা ওয়াল আখেরিন” (৫৬:৪৯) অনুবাদ: বলুন, নিশ্চয়ই পূর্ববর্তীগণ এবং পরবর্তীগণ।
মন্তব্য: ডানপন্থীগণ এবং বামপন্থীগণ জন্মচক্রের আবর্তে তথা কিয়ামতের বৃত্তে ঘুরতে থাকবেন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তথা কর্মফল শূন্য না হওয়া পর্যন্ত তথা তকদীর সার্বজনীন না হওয়া পর্যন্ত। একটু খেয়াল করার বিষয় এখানে কিন্তু অগ্রগামিদের কথা আল্লাহ তথা কোরানিক দর্শন বলেন নাই। কারণ অগ্রগামিরা আল্লাহর জাতনূর। তাঁরা আদম সুরত, আদম সুরত আল্লাহর সুরত। আদম আল্লাহর চেহারা। সবকিছুই ফানা হবে তথা কিয়ামত হবে একমাত্র আপন রবের চেহারা ব্যতীত।
তাই আদম মুক্ত। আদম লা শারিক। আদম আল্লাহর সাকার সুরত, প্রতিষ্ঠিত আল কেতাব। সুতরাং অগ্রগামিরা কিয়ামতের বৃত্তের বাহিরে অবস্থান করেন। কারণ কিয়ামত হয় নফসে লাউয়ামাহ এর উপর। কিন্তু রূহের উপর নয়। নফসের উপর কিয়ামত হলে রূহ উদ্ভাসিত হয়। রূহ আল্লাহর রবরূপ। রূহ আল্লাহর জাতী নাম। এই রূহই আমরা রূপ ধারণ করে কেতাব নাজিল, রেজেক বন্টন, হিদায়েত দান, ও রূহ ফুৎকার করে থাকেন।
“লামাজমুউনা ইলা মিকাতি ইয়াওমিম মালুম” (৫৬:৫০)। অনুবাদ: অবশ্যই একত্রিত করা হইবে নিদিষ্ট দিবসের দিকে।
মন্তব্য: সমগোত্রীয়, সমমনা, সমগুনসমপন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে মৈত্রীভাব স্তাপিত হয়। নফস স্বীয় কর্ম দ্বারা উপার্জিত কর্মফল ভোগ করার জন্য সমপর্যায়ের নফসের সাথে একত্রিত হবে হাশর নরশ করতে। ব্যক্তি কিয়ামতের মধ্যে আসা যাওয়া করতে হবে তকদীর সার্বজনীন হওয়ার আগ পর্যন্ত। কারণ নফস কর্মফল নিয়ে জম্মগ্রহণ করে আবার নফস কর্মফল নিয়েই মৃতুবরণ করে। এই আমলনামা শূন্য হওয়ার আগ পর্যন্ত কিয়ামতের বৃত্তে ঘুরতে হবে।
“সুম্মা ইননাকুম আইউহাদ্দাল্লুনাল মুকাজজিবুন” (৫৬:৫১)। অনুবাদ: তার পর নিশ্চয়ই তোমরা, হে পথভ্রষ্ঠরা, মিথ্যাবাদীর দল।
“লা আকিলুনা মিন শাজারিম মিন জাক্কুমিন”(৫৬:৫২) অনুবাদ: অবশ্যই খাইবে গাছ হইতে জাক্কুম হইতে।
“ফামালিউনা মিনহাল বুতুন”( ৫৬:৫৩) অনুবাদ: সুতরাং ভর্তি করিবে উহা হইতে পেটগুলিকে।
“ফাশারিবুনা আলাইহি মিনাল হামিম “(৫৬:৫৪) অনুবাদ: সুতরাং পান করিবে তাহার উপর হামিম হইতে।
“ফাশারিবুনা শুরবাল হিম” (৫৬:৫৫) অনুবাদ: সুতরাং পান করিবে পিপাসার্ত উটগুলির পান করার (মতো)।
“হাজা নুঝুুলুহুম ইয়াওমাদদিন” (৫৬:৫৬) অনুবাদ: ইহা তাহাদের মেহমানের কাবার ইয়াওমাদদিন( কিয়ামতের দিন)।
“নাহনু খালাকনাকুম ফালাওলা তুসাদদিকুম” (৫৬:৫৭) অনুবাদ: আমরা তোমাদের সৃষ্টি করিয়াছি, সুতরাং কেন তোমরা দেখিতেছ না?
“আফারায়াইতুম মাতুমনুম” (৫৬:৫৮) অনুবাদ: সুতরাং তোমরা দেখিয়াছ কি যারা তোমরা বীর্যপাত কর তথা স্খলন কর তথা তোমরা পতন ঘটাও।
“আ আনতুম তাখলুকুনাহু আম নাহনুল খালিকুন” (৫৬:৫৯)। অনুবাদ: তোমরা কি তাহা সৃষ্টি কর, না আমরা সৃষ্টিকারী?
“নাহনু কাদ্দারনা বাইনাকুমুল মাওতা ওয়ামা নাহনু বিমাসবুকিন” (৫৬:৬০) অনুবাদ: আমরা নিদিষ্ট করিয়া দিয়াছি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু এবং আমরা অক্ষম নহি।
“আলা আন নুবাদ্দিলা আমসালাকুম ওয়ানুন শিয়াকুম ফি মা লা তালামুন।”(৫৬:৬১)। অনুবাদ: তোমাদের চেহারা আমরা বদল করিবার উপরে এবং আমরা তোমাদের সৃষ্টি করিব কীসের মধ্যে তোমরা জান না।
মন্তব্য: অতিরিক্ত বীর্যাত করলে অথবা অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চেহারা পরিবর্তন করে দিবেন বলেন হুমকি দিয়েছেন। অর্থাৎ মানব জনম হতে নিচে নামি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সুতরাং বামপন্থীগণ এই ব্যাপারে সাধবান হওয়া ইচিত। নিজের খেয়াল খুশিমত না চলে নবী এবং রসুলদের বিধান মোতাবেক চলা উচিত। তাই সাধক বলেন “যত বার খন্ড হবে তত জাতে জম্ম নিবে।”
রতি ব্যবহারে সংযত না হলে চৌরাশির ফেরে পড়তে হবে।” রতি তথা বীর্য ব্যবহারে সংযত না হলে মানব জনম হারানোর সম্ভাবনার হুমকি অত্র আয়াতে রয়েছে।
“ওয়া লাকাদ আলিমতুমুন নাশায়াতাল উলা ফালাওলা তাজককারুন” (৫৬:৬২)। অনুবাদ: এবং নিশ্চয়ই তোমরা জানিয়াছ প্রথমবার সৃষ্টি (সম্পর্কে), সুতরাং কেন তোমরা ধ্যান করো না? (অনুবাদক: কালান্দার জাহাঙ্গীর)
একজন সাধক কখন নারী সঙ্গ করবে তথা বিয়ে করবে তার সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন চেরাগে জানশরীফ, কালান্দার বাবা জাহাঙ্গীর তারঁ কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা নামক কিতাবে, সুরা বাকার ২২২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় কালান্দার বাবা জাহাঙ্গীর লিখেন “সাধারণ অর্থে ব্যবহারিক জীবনের স্ত্রী-সহবাসের উপর ধরা হয়ে থাকে।
উত্তরটি হলো, আপন উৎকর্ষ সাধনের ভিত্তির উপরে থাকবার নিদের্শসহকারে ব্যবহারিক যৌন আচরণ গ্রহণ কবর। নিসা অর্থ নারী।নারী যত রকম ভোগবিলাসের উপকরণ আছে তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতীক। যত রকম বৈষয়িক মোহ আছে তার মধ্যে চরম মোহটি হলো যৌন লালসা। এই যৌন লোভটি ত্যাগ না করা পর্যন্ত মানুষ মানুসিকভাবে পবিত্র হয় না। যখন মোহমুক্ত থাকে তখন সেই যৌন বিষয়টি হয়ে যায় পবিত্র এবং যারা সাধক তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য। নারীও যখন “আজান” মুক্ত হয় তখনই কেবল তার কাছে যাওয়া যায়। নতুবা দুঃখ- যাতনার মুখামুখি হওয়াটা অনিবার্য। এই জন্য আল্লাহর হুকুম অনুসারে স্ত্রী সহবাস করতে বলা হয়েছে।আল্লাহর দেওয়া অনুশীলনের মাঝে তথা দায়েমি সালাতের মাঝে অবস্থান করে স্ত্রী সহবাসে কোন প্রকার অপরাধ থাকে না। (কোরানুল মজিদ হুবুহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা: ২৮৯ পৃষ্ঠা)।
যারা অলিয়্যাম মুর্শিদের নিকট দীক্ষিত তাঁদের মধ্যে আমরা তিন শ্রেণির অনুসারী দেখতে পাই। যারা মজ্জুব হালাতে থাকে। তাঁরা সর্বদা অখন্ড, ইহা আল্লাহর রহমত ব্যতীত আর মু্রশিদের কৃপা ব্যতীত অসম্ভব।
যেমন: জোলেখার কবল থেকে আল্লাহপাক নবী হযরত ইউসুফ (আ:) কে রক্ষা করেছেন। তারাঁ হলেন অগ্রগামি তথা প্রথম সারির সাধক। দ্বিতীয় শ্রেণির সাধক হলেন সালেহী মজ্জুব, তাঁরা সংসার ধর্মও পালন করেন আপন মুর্শিদের ব্যবস্থা মোতাবেক। তাঁরা হলেন সুফিমন্ডলী ও মুমিনগণ তথা ডানহাতের অধিবাসী। তাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজম্ম ধরে রাখার জন্য যতটুকু স্ত্রী সহবাসের প্রয়োজন ততটুকু করেন মুর্শিদের ব্যবস্থা মোতাবেক। কিন্তু বাকিরা মুর্শিদের নির্দেশ তথা রবের নির্দেশ অমান্য করে, নিজেদের নফসের খেয়াল – খুশিমতো চলে হামিম- হাবিয়া – জাহিম নরক চক্রে আবর্তিত হচ্ছে। গরু- মহিষ বছরে একবার মিলন করে।
আর মানুষ মিলন করে সুযোগ পাইলে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে ফি-রোজ, ফি-হপ্তা যায়।যারা সন্তান উৎপাদন ব্যতীত উদ্দেশ্য ছাড়া যায় তারা কি গরু-মহিষের চেয়ে উৎকৃষ্ট? তবে মহান সাধকদের হিসাব আলাদা বিষয়টা পবিত্রতার উপর নির্ভরশীল।
সাইজি লালন শাহ বলেছেন “মাসে এক বছরে বারো, তার চেয়ে যত কমে পারো।” এই কাম সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত সুফিদার্শনিক মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ:) তাঁর মসনবী শরীফে ফরমান “ঈন হক্কীকত রাশুন আয গোশ দিল। তা বেরুন আয়ে বেকুল্লী আব ওয়াভ গুল।” অনুবাদ: মনের কান দিয়ে এই মূল তত্ত্বটি শোনো। তুমি চমক সৃষ্টিকারী নারীর যৌনাঙ্গ হতে সম্পূর্ণ রূপে মুক্ত হয়ে যাও।
ব্যাখ্যা: এই কালামটি অত্যন্ত রহস্যপূর্ণ একটি কালাম। এই কালামটি মুরিদদের প্রতি উপদেশমূলক কথা রূমী (রহ:) আমাদেরকে কাব্যের ভাষায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তুমি মনের কান দিয়ে ভালোভাবে শুনে নাও। তুমি যদি তোমার অন্তরের আয়নাটি এবং দেহের পঙ্কিলতা হতে মুক্ত হতে চাও তাহলে তুমি যৌনাঙ্গ হতে মুক্ত হয়ে যাও। পৃথিবীতে যত লোভ আছে বা চমক আছে, তার মধ্যে একজন পুরুষের জন্য সবোর্চ্চ লোভটি মনে হয় এই নারীর যৌনাঙ্গটি। যদিও টাকার বা সম্পদের লোভটি হলো একজন পুরুষের কাছে একজন নারীর যৌনাঙ্গ। তাইতে বাংলার এক কবি সুন্দরভাবেই উপস্থাপন করেছেন যে, সরলে চন্দ্র, গরলে চন্দ্র। চন্দ্রতে ফানা, চন্দ্রতে বাকা।
এ যে চন্দ্রেরী খেলা। এই খেলাটি খেলতে পারেন যিনি তিনি একজন কামেল। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য এই খেলাটি মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এটাই সালাত, এটাই যাকাত, আর এটাই সিয়াম। যারা বুঝবার তারা বুঝবেন। আর যারা বুঝেন না তারা অহেতুক তর্কে লিপ্ত হন এবং ধুকে ধকে মৃত্যুর অতল তলে হারিয়ে যান। এবং অনুষ্ঠান ধর্ম নিয়ে জীবনকে অতিবাহিত করেন।
“ফাহম গর দারী জান বারিহ ধীর, বাদ অয়া আয শওক্ব পা দর রিহ না হীদ” অনুবাদ: যদি তুমি জ্ঞানী হও তবে জীবন চলার পথে নারীসঙ্গ হতে দৃঢ় হও। অতঃপর উৎসাহ উদ্দীপনায় আকাশের তারকা রাজির ন্যায় পথ চল।
ব্যাখ্যা:
এই বয়াতটি উপদেশমূলক। তুমি যদি প্রজ্ঞাবান হও তবে অবশ্যই তুমি ললনাদের হতে দূরে অবস্থান করো।কারণ, আল্লাহকে পাওয়ার পথে এই ললনারাই বড় বাধা হয়ে দাড়ান। আবার এই ললনারা যদি সহযোগিতা করে, তাহলে একজন সাধকের পক্ষে সাধনা করে আল্লাহকে পাওয়ার অনেক সহজ হয়। কিন্তু প্রকৃতি নিয়মটাই এমন যে, এরা সে সহযোগিতাটা করে না। বরং আপনাকে পদে পদে বাধা তৈরী করে, আপনাকে এ ব্যাপারে সাবধান হতে বলেছেন। এবং সুদৃঢ়ভাবে এই বাধাটিকে অতিক্রম করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন।
(ব্যাখ্যাকার : চেরাগে রওনক, সৈয়দ শাহ সুফি ময়েজউদ্দিন রশিদ আল জাহাঙ্গীর, এম এ)।
সমাপ্ত:-
নিবেদক: আর এফ রাসেল আহমেদ