ঈশ্বরের ধারণা ও কুসংস্কারের মুখোমুখি।

ঈশ্বরের ধারণা ও কুসংস্কারের মুখোমুখি।

ঈশ্বর-একটি শব্দ, একটি প্রতীক, একটি ধারণা। তবে কেমন এই ধারণা? কারা তৈরি করেছে এই ঈশ্বরের রূপ, নিয়ম, ভাষা ও অভ্যাস? এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—এই ধারণার উৎস কী মানুষের অভিজ্ঞতা, নাকি কেবল ভয়, অজানা আর কর্তৃত্বের চাহিদা?

ঈশ্বরের ধারণা

ঈশ্বর: কে রচনা করল? পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মই দাবি করে, ঈশ্বরের বাণী মানুষের কাছে এসেছে কোনো অলৌকিক মাধ্যমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই বাণী কে লিখেছে?

তাকে লিখেছে মানুষই।
তাকে ব্যাখ্যা করেছে মানুষই।
তাকে প্রয়োগ করেছে মানুষই।

তবে ঈশ্বর কি কখনো নিজে এসে বলেছেন:-
“এই আমার কথা, এই আমার বিধান”?
না,ঈশ্বর তা নিজে এসে বলেেন নি।

তবে যা লেখা হয়েছে তা ঈশ্বরের নামে লেখা -এই কথাটা বিশ্বাস করানো হয়েছে। ভয়ের মাধ্যমে, পুরস্কার-শাস্তির গল্প দিয়ে, জান্নাত-দোজখের ব্যারিকেডে দাঁড় করিয়ে।

“ঈশ্বর নয়, তৈরি হয়েছে ঈশ্বর ধারণা”
ঈশ্বর হয়তো আছে, হয়তো নেই।
কিন্তু “যে ঈশ্বরকে ভয় দেখিয়ে চেনানো হয়,
সেই ঈশ্বর মানুষের মনগড়া সৃষ্টি।”

  • যে ঈশ্বর নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারীদের অভিশপ্ত করেন—তিনি কি সর্বজনীন হতে পারেন?
  • যে ঈশ্বর মানুষের রক্ত চেয়ে খুশি হন, পশুবলি চান—তিনি কি করুণাময় হতে পারেন?
  • যে ঈশ্বর নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য যুদ্ধ চান—তিনি কি চেতনাপ্রাপ্ত কোনো সত্তা হতে পারেন?

এইসব প্রশ্ন আমাদের দাঁড় করায় “ঈশ্বর নয়, ঈশ্বর-ধারণার স্বরূপ বুঝার মুখোমুখি”।

কুসংস্কার ও ঈশ্বরের নাম

ধর্মের নামে হত্যা, ঈশ্বরের নামে দমন, কিতাবের নামে অবিশ্বাসী নিধন—
এইসব হয়েছে, চলছে, এবং কেউ কেউ বলে—চলতেই থাকবে। কেন? কারণ ঈশ্বরের নামে তৈরি হয়েছে “আবেগীয়, অসংবেদনশীল এক ছাঁচ”। এ ছাঁচে ঈশ্বর বন্দি— তার নাম ব্যবহার করে চলে রাজনীতি, যুদ্ধ, জাতপাত, নারী নিপীড়ন, মুক্তচিন্তার শত্রুতা।

“তবে কি ঈশ্বর নেই?”
এই প্রশ্নের উত্তর:- “বাইরে নেই, ভেতরে আছে।”
তুমি যদি অনুভব করো, তুমি যদি উপলব্ধি করো,
তোমার চেতনায় যদি জ্বলে ওঠে এক নিঃশব্দ আলো—
তবে সেই আলোই ঈশ্বর।

ঈশ্বর ধারণা নয়, অভিজ্ঞতা।

তিনি বইয়ে নন, পাণ্ডিত্যে নন-তিনি আছেন হৃদয়ের গভীর নিরবতায়, প্রেমে, অনুভবের সূক্ষ্মতায়। ঈশ্বরের নামে যা কিছু বলো, সব সত্য নয়। যা সত্য, তা বলার প্রয়োজন হয় না—তা বোঝা যায়, অনুভব করা যায়। তাই ঈশ্বরকে খুঁজতে গিয়ে কুসংস্কারকে ধারণ করা নয়— “বরং চেতনায় জেগে ওঠো, নিজেকে জানো, হৃদয়ে তাকাও।”

– ফরহাদ ইবনে রেহান
বই: (আমি আমার চিন্তা)

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel