মূর্তি ও ভাস্কর্য বিষয়ে
মিশর, ইরান, তুরস্ক সহ বিশ্বের বহু মুসলিম কান্ট্রিতে বিখ্যাত মুসলিম ব্যাক্তিদের ভাষ্কর্য রয়েছে, এই ভাস্কর্যের দ্বারা মহান ব্যক্তিদের সম্মান, মূল্যায়ন ও কৃতিত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। আপনার যুক্তিতে মূর্তি বানানো হারাম হলেও ইসলামে কোথাও নিষেধ আছে বলে আমার মনে হয়না। স্রষ্টা ব্যতীত অন্য কোনো বস্তুকে ইবাদত বা পুজোর উদ্দেশ্যে বানালে কেবল তা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও শিরক হতে পারে।
একজন মুসলিমের জন্য ভাস্কর্য ওমূর্তিকে পূজা বা ইবাদত করা হারাম ও শিরক। আর শিরক হবে তখনই যখন তার স্রষ্টার সাথে অন্য কিছুকে সমান ভাবে তুলনা করা হবে। ভিন্ন ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মের নিয়ম অনুযাই স্রষ্টার সাদৃশ্য হিসেবে মূর্তিকে পূজা করে থাকে, এটা কেবল পূজা করার উদ্দেশ্যেই করে।
ইব্রাহীম নবীও মূর্তি বানাতেন, তিনি একজন নিখুত কারুশিল্পিও ছিলেন, নিখুত ভাবে মানুষের মূর্তি তৈরিতে তিনি পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও বহু সাহাবীরা ইসলাম গ্রহনের পূর্বে মুর্তি পূজা করতেন, এবং কাবার ভিতরে মতান্তরে ৩৬০টি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। মহানবী নিষেধ করার পরেও তারা মূর্তিকে স্রষ্টা বানিয়ে ইবাদত করতে লাগে এক পর্যায়ে মহা নবী (সা:) রেগে গিয়ে মুর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলেন।
মহানবী (সাঃ) মূর্তিপূজাকে হারাম ঘোষনা করছেন এজন্যই যে, তারা স্রষ্টাকে ছেড়ে পাথরের তৈরি প্রাণহীন মূর্তিকে খোদা বানিয়ে পূজা বা ইবাদত করতো।
বিশেষ কিছু কথা:-
যখন ক্যামেরা আবিষ্কার হলো তখন ছবিকে হারাম বলে ফতোয়া দেওয়া হলো, অথচ কয়েক বছর ব্যবধানে এখন মুল্লারা ওয়াজের মঞ্চে ব্যানার ও ফেস্টুনে বড় করে নিজেদের ছবি/চিত্র তুলে ধরেন। ফেসবুক, ইউটিউবের কথা বাদই দিলাম। যুগের সাথে চলতে গিয়ে এবং তাদের স্বার্থের প্রয়োজনে এখন তাদের হারাম ফতোয়াও নিরবে হালাল হয়েগেছে। একসময় মুল্লাদের মুখে শুনতাম টেলিভিশন হারাম আর এখন টেলিভিশনই হচ্ছে তাদের কাছে ধর্ম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম।
আচ্ছা ছবি, ভিডিও, ভাস্কর্য ও মুর্তির মধ্যে পার্থক্য কি আকাশ-পাতাল? দুইটা জিনিসই তো চিত্র প্রদর্শন করে, তাহলে ভাস্কর্য ও মুর্তি চিত্রকে হারাম বলে আর ছবি, ভিডিও চিত্রের বেলায় এখন হারাম মানছে না কেন?
রাসূল সাঃ এর জামানায় ছবি তোলা, ভিডিও করা ও চিত্র অংকন করার কোনো যন্ত্রই আবিস্কারই হয়নি, তাহলে হারামের ফতোয়া কে দিলো? তাহলে কি ১৪০০ বছর পরে এসে কাঠ-মোল্লারা হারাম ও শিরকের ফতোয়া প্রতিষ্ঠা করেছিল? ১৪০০ বছর পড়ে এসে প্রতিষ্টা করেছে ভালো কথা, তাহলে মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে হারাম ও শিরকের ফতোয়া ভুলে গেলো কেন।
আমরা আসলে ধর্মান্ধ। ধর্মান্ধরা সবসময়ই নতুন কিছু পেতে আগ্রহী থাকে আর আমাদের ভ্রষ্ট-মোল্লাগুরুরা সেই কৌশলেই কাজে লাগিয়ে অতি সহজে সফল হয়। এই কথার প্রেক্ষিতে রাসূল সাঃ এর একটা ভবিষ্যত বানীর কথা বা হাদিস মনে পড়ে গেলো, নিম্নে হাদিসটি তুলে ধরা হলোঃ-
“মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে যখন ইসলাম থাকবে না, থাকবে উহার নাম, কুরআন থাকবে না, থাকবে উহার খোসা, স্থানে স্থানে মসজিদ ঘর পাকা হবে কিন্তু হেদায়েতের নাম গন্ধও থাকবে না, সে জামানার আলেমগণ হবে চরিত্রহীন।” (বায়হাকী ও মেশকাত)
“আসমানের নিচে সকল সৃষ্ট জীবের মধ্যে নিকৃষ্টতম জীব হবে আলেম সমাজ। তারা পরস্পর ঝগড়া করবে এবং বিবাদ-বিসম্বাদরে মতানৈক্য প্রচার করে জনগণকে সত্য থেকে দূরে সরায়ে নেবে।” (বায়হাকী ও মেশকাত)
– Nishat Wahid