রাষ্ট্র, ধর্ম ও দাসত্বের ছায়া (প্রথম পর্ব)
মানুষ জন্মগ্রহণ করে স্বাধীনতার সম্ভাবনা নিয়ে। কিন্তু সমাজ তাকে শেখায় শৃঙ্খল পরতে, আর রাষ্ট্র তাকে বলে—এই শৃঙ্খলই তোমার সুরক্ষা। ধর্ম আবার বলে—এই শৃঙ্খলই তোমার মুক্তির পথ। এ যেন এক বিষণ্ন ট্র্যাজেডি—যেখানে মুক্তি শব্দটি ব্যবহার হয় দাসত্বের নিপুণ প্রচ্ছদ হিসেবে। রাষ্ট্র ও ধর্ম—দুটি প্রতিষ্ঠানই সমাজ গঠনের নামে মানুষকে তাদের ইচ্ছেমতো রূপে গড়ে তোলে।
রাষ্ট্র চায় নির্বিকারে শাসন মানা নাগরিক, ধর্ম চায় নিঃশর্তে মাথা নত ভক্ত। দুজনেই চায়—তুমি প্রশ্ন করো না, ভাবো না, কেবল অনুসরণ করো। তাদের জন্য তুমি একজন মানুষ নও, তুমি কেবল একটি ‘যন্ত্র’—যাকে তাদের সুবিধামতো ব্যবহার করা যায়।
আমরা যখন জন্মাই, আমাদের শিখিয়ে দেওয়া হয়—”ধর্ম মানেই শান্তি”, “রাষ্ট্র মানেই নিরাপত্তা”।
কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা যায়—এই শান্তির নামে জন্ম নেয় দাঙ্গা, এই নিরাপত্তার নামে চলে জুলুম।
তারা আমাদের ভেতরের সেই কণ্ঠকে চাপা দেয়, যেটা বলতে চায়—
“আমি মানুষ, আমি প্রশ্ন করবো। আমি মানি না অন্ধ অনুসরণ। আমি শুনি হৃদয়ের ডাক।”
এই অধ্যায়ে আমরা প্রশ্ন করবো:
- রাষ্ট্র কি সত্যিই আমাদের রক্ষা করে, নাকি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে?
ধর্ম কি সত্যিই মুক্তির পথ, নাকি ভক্তির নামে শাসনের নীরব গিলে ফেলা? - আর আমরা… আমরা কি নিজের জীবন বাঁচছি, নাকি শুধু ‘ভূমিকা পালন করছি’ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাট্যপটে?
- যারা শুধুই মেনে নেয়, পালন করে, কিন্তু কখনও জিজ্ঞেস করে না—“এই নিয়ম আমার জন্য না রাষ্ট্রের সুবিধার জন্য?”
ভক্তির নামে ভয়, বিধানের নামে বন্দিত্ব
- ধর্ম যখন বলে—“ভক্ত হও, নত হও, প্রশ্ন করো না”
- আর রাষ্ট্র যখন বলে—“নাগরিক হও, আনুগত্য করো, দ্বিমত করো না”
- তখন একটি জাতি প্রশ্নহীন ভক্তে পরিণত হয়।
- তখন আর মানুষ চিন্তা করে না—মেনে চলে।
- ভালোবাসে না—ভয় পায়।
- জিজ্ঞাসা করে না—নীরব থাকে।আমরা মানুষ—আমাদের মৌলিক পরিচয় চেতনার অধিকারী হওয়া। কিন্তু রাষ্ট্র ও ধর্ম এই চেতনায় ধুলো জমাতে জমাতে আমাদের করে তোলে একধরনের নির্বাক রোবট।
চলবে..
আরো পড়ুন: রাষ্ট্র, ধর্ম ও দাসত্বের ছায়া (দ্বিতীয় পর্ব)
– ফরহাদ ইবনে রেহান
ভক্তি ও বিধানের অন্তঃসার
অধ্যায় ১: রাষ্ট্র, ধর্ম ও দাসত্বের ছায়া (প্রথম পর্ব)