টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা কি গুনাহ?
নামাজের সময় পরিধানের কাপড় যদি টাখনুর নিচে থাকে, তাহলে কি নামাজ হবে না? সৌদিআরবের লোকদের পরিধানের কাপড় কি টাখনুর উপরে থাকে?
মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেন-
“দম্ভভরে কিংবা অহঙ্কার প্রকাশের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি কাপড় ঝুলিয়ে (টাখনুর নিচে) পরিধান করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ সেই ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না।” (মুসলিম শরীফ)
বোখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল (সাঃ) বলেন-
“দম্ভভরে কিংবা অহঙ্কার প্রকাশের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ সেই ব্যক্তির দিকে তাকাবেন না। এসময় হযরত আবু বকর বলেন, ইয়া রাসুল (সাঃ) আমারও কাপড় কখনো কখনো ঝুলে থাকে। এ কথা শুনে রাসুল (সাঃ) বললেন, তুমি তো অহঙ্কারের উদ্দেশ্যে এভাবে কাপড় পরিধান কর না।” (বোখারী শরীফ)
উপরে বর্ণিত একই হাদীস মুসলিম শরীফে হযরত আবু বকর -এর অংশটুকু বাদ দিয়ে বর্ণনায় এসেছে। আর বোখারী শরীফে হযরত আবু বকর -এর বর্ণনার অংশটিসহ বর্ণিত হয়েছে।
আমাদের দেশের কিছু সুবিধাবাদী আলেমরা বোখারী শরীফের হাদীসকে সকল হাদীসের কিতাবের হাদীস হতে বেশি গুরুত্ব দিলেও অবিশ্বাস্যভাবে এই হাদীসের ক্ষেত্রে মুসলিম শরীফের হাদীসটিই আলোচনা করেন। কিন্তু বোখারী শরীফে বর্ণিত হাদীসে হযরত আবু বকর -এর অংশটুকু আলোচনা করেন না।
এই হাদীসের চুল ছিঁড়া বিশ্লেষণ করে আলেমসমাজ নির্ধারণ করেছেন যে, শুধু নামাজের সময়ই পরিধানের কাপড় টাখনুর উপরে রাখলেই হবে না, পুরুষরা সবসময়ই টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করবে। আর তা না হলে পুরুষের টাখনুর যে অংশ কাপড়ে ঢাকা থাকবে সেই অংশটি দোযখের আগুনে জ্বলবে। মোল্লা ও মোল্লা টাইপের কিছু নামধারী মুসলমানরা টাখনুর নিচে যাতে কাপড় না যায় এইকারণে পরিধানের প্যান্ট এমনভাবে তৈরি করেন যে, কারো কারো পেন্ট টাখনুর এত উপরে থাকে যে হঠাৎ দেখলে বোঝা মুশকিল হয়ে যায় এটা ফুলপ্যান্ট নাকি কোয়ার্টার প্যান্ট!
আসলে আরবের লোকেরা সেইসময়ে অহঙ্কার প্রকাশ করার জন্য পরিধানের কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করত। আর অহঙ্কারকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ পছন্দ করেন না বলেই রাসুল (সাঃ) অহঙ্কার প্রকাশের জন্য কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। অহঙ্কার প্রকাশের উদ্দেশ্য যদি না হয় তাহলে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করাতে কোন দোষ নেই, হযরত আবু বকর -এর কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করাকে রাসুল (সাঃ) -এর সমর্থন করাই প্রমাণ করে। সম্ভবত এইকারণেই আলেমসমাজ টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান বিষয়ক হাদীসের হযরত আবু বকর -এর অংশটি আলোচনা করেন না।
এরা হযরত আবু বকর -এর অংশটি আলোচনা না করলেও হাদীসটির মূল ভাষ্য হলো অহঙ্কার। অর্থাৎ অহঙ্কার প্রকাশের জন্য কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করা নিষেধ। আর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করলে নামাজ হবে না, টাখনুর যে অংশ কাপড়ে ঢাকা থাকবে সেই অংশটি দোজখের আগুনে জ্বলবে। ইতিমধ্যেই অনেক বৈজ্ঞানিক আবিস্কারও করে ফেলেছেন। যেমন টাখনুর নিচে পুরুষের যে হরমোন থাকে কাপড়ে ঢাকা থাকলে পুরুষের হরমোনের ক্ষতি হয় অর্থাৎ প্রজননের সমস্যা হয় আরো কত কি!
আচ্ছা, নামাজের ফরজের মধ্যে কি টাখনুর উপরে কাপড় পরিধান করার কথা বলা হয়েছে? টাখনুর উপরে কাপড় রাখার মত এতবড় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নামাজের ফরজ হিসাবে বর্ণিত হলো না কেন? নামাজের সময় যদি আমার কাপড় টাখনুর নিচে থাকে তাহলে নামাজ হবে না এমন কথা কি রাসুল (সাঃ) বলেছেন? রাসুল (সাঃ) যদি এমন কথা না বলে থাকেন তাহলে ধর্মের নীতি বানানোর এখতিয়ার এদেরকে কে দিয়েছে?
টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করলে নাকি পুরুষের হরমোনের ক্ষতি হয়ে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাহলে বছরে নয় মাস বরফে ঢাকা অঞ্চলের লোকজন তো প্রায় বারো মাসেই মাথা হতে পায়ের তালু পর্যন্ত কাপড়ে মুড়িয়ে রাখে। সেই হিসাবে বরফ অঞ্চলের পুরুষদের হরমোনের চরম ক্ষতি হয়ে পুরুষত্বহীনতার জন্য তাদের বংশহীন হয়ে যাওয়ার কথা। আসলেই কি তারা প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে বংশহীন হয়ে যায়?
আসলে এইসব মাথামোটা নির্বোধদের অতিউৎসাহী এমন আবেগী মনগড়া কথাবার্তার জন্যই বিরোধীরা ইসলামকে নিয়ে হাসিঠাট্টার সুযোগ পায়।