মা ফাতেমাকে নিয়ে বহুল প্রচারিত ১টি মিথ্যা জালহাদিসের জবাব!
আজকে আমি আপনাদেরকে সমাজের বহুল প্রচারিত একটি জাল হাদিসের গল্প বলব। দয়া করে সবাই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
এবারে আমি উক্ত আষাঢ়ের গল্প জাল হাদিসটি বলে নিই।
“জগৎ জননী মা ফাতেমা আঃ যখন পর্দা নিলেন, তখন হযরত আবু বকর রাঃ মা ফাতেমাকে কবরে শুইয়ে দিয়ে কবরের মাটিকে বলল, হে মাটি তুমি কি জান! আজকে তোমার বুকে কাকে রেখে যাচ্ছি? ফাতেমা হলো নবীকন্যা, ইমাম হাসান ও হোসাইনের মা এবং আলীর সহধর্মিণী। তুমি তাঁর সাথে খারাপ ব্যবহার করিও না। তখন মাটি জবান খুলে বলল, আমি নবী কন্যা চিনি না, আমি ইমাম হাসান ও হোসাইন এবং আলীকে চিনি না। আমি শুধু আমল চিনি। যার আমল ভালো সে ভালো থাকবে এবং আর যার আমল খারাপ সে খারাপ থাকবে।”
এই হলো আপনাদের সমাজের কুখ্যাত আলেম সমাজের হাদিস। এবার একটু এই মিথ্যা জাল হাদিস নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে চাই। হযরত রাসূল পাক সঃ কে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হত না। এই মাটি, আকাশ, গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র সূর্য এবং পানি কোন কিছুই সৃষ্টি হত না। মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূল পাক সঃ এর প্রেমের মায়ায় সবকিছু সৃষ্টি করলেন। যাঁর সুপারিশ ছাড়া সৃষ্টি জগতের কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। যাঁকে আল্লাহ হাবীব অর্থাৎ দোস্ত বলে ডাকত। যাঁকে আল্লাহ সৃষ্টি জগতের রহমতের কান্ডারী করে প্রেরণ করছেন। অথচ মাটির কতোবড় সাহস!
রাসূল পাক সঃ এর সৃষ্টি না হলে মাটির সৃষ্টি হত না, অথচ ভাগ্যের মিথ্যার নির্মম পরিহাসে মাটি আমার দয়াল রাসূলকে চিনে না। যাঁর প্রেমে আল্লাহ সারাক্ষণ এশকে মগ্ন, অথচ মাটি তাঁকে চিনে না। মাটি আমার ইমাম হাসান ও হোসাইনকে চিনে না। যাঁরা যুবকদের জান্নাতের সর্দার। আবার মাটি আমার মাওলা আলীকে চিনে না। অথচ সকল সৃষ্টি জগৎ মাওলা আলীর জন্য পাগল। মাটি আমার মহিলাদের জান্নাতের সর্দারনি জগৎ জননী মা ফাতেমাকে চিনে না। তাহলে জান্নাতের সর্দারনি হয়ে লাভ কি?
আচ্ছা ভাই মাটি হিসাব নেওয়ার কে? কে তাকে এমন ক্ষমতা দিল? হিসাব নেওয়ার মালিক তো একমাত্র আল্লাহ। তাহলে মাটি কি দ্বিতীয় কোনো আল্লাহ নাকি? (নাউজুবিল্লাহ)। নচেৎ মাটি কিভাবে আল্লাহর চেয়েও ক্ষমতাবান হয়ে গেল? সে জান্নাতের সর্দারনি মা ফাতেমার আমল দেখার কে?
আমল তো দেখবেন একমাত্র আমার আল্লাহ। বাহ্ কি চমৎকারভাবে এখন মাটিকেও আমরা আল্লাহ বানিয়ে দিচ্ছি। তাহলে মূর্তি এবং সূর্য পূজারীর মধ্যে আমাদের পার্থক্য কোথায় রইল? একটু ভেবে দেখুন তো হৃদয়ের উপলব্ধি থেকে। আপনার সুসম্পন্ন শুদ্ধ বিবেকই এর উত্তর দিয়ে দিবে।
এবার একটু গভীরে প্রবেশ করি। শুধুমাত্র রাসূল পাক সঃ এর মুখের কথা এবং কর্মকেই হাদিস বলা হয়। কোন সাহাবীর কথাকে হাদিস বলা হয় না। তাহলে কিভাবে হযরত আবু বকরের কথা হাদিস হয়ে গেল। কারণ তখন তো রাসূল পাক সঃ অনেক আগেই পর্দা নিয়েছেন। তাহলে এটা কিভাবে হাদিস হলো?
এবার দেখুন সূক্ষ্ণ কৌশলে কিভাবে হযরত আবু বকর রাঃ কে নবী বা রাসূল বানিয়ে দিল। (নাউজুবিল্লাহ)। কথায় বলে না, চোরে চুরি করে গেলেও কিছু আলামত রেখে যায়। কি করে এমন তুঘলকি কান্ড ঘটল, নিশ্চয়ই তা জানতে চান ভাই? হ্যা আমিও সেই কথাটি বলার জন্যই এই পোস্ট লিখেছি।
মোনাফেক মোয়াবিয়া এবং কাফের এজিদ শুধু আমার পাক পান্জাতনকেই হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি। বরং ৮৯ বছর ধরে রাষ্টীয় ক্ষমতায় থেকে পাক পান্জাতনের শানে অপমানজনক এইরকম হাজার হাজার জাল হাদিস তৈরি করে রেখে গেছে মুসলিম সমাজে।
আর শতশত এজিদি মাদ্রাসা তৈরি করে সরকারি অর্থায়নে নিজস্ব শিক্ষক দিয়ে এইসব জাল হাদিস পড়ানো হয়। তারপর সেই ছাত্ররা হয়ে যায় আমাদের সমাজে মুফতি, মোহাদ্দেস, মাওলানা ও হাফেজ।
মোয়াবিয়া ও এজিদ (বাপ ও বেটা) মিলে শুধু পাক পান্জাতনের সদস্যদেরকেই হত্যাই করেনি বরং অতি সুকৌশলে পাক পান্জাতনের প্রতি বিষবৃক্ষ রোপন করে গেছে। কারণ আমরা মুসলিম জাতি, যাতে কখনো পাক পান্জাতনের অনুসারী এবং তাঁদেরকে ভালোবাসতে না পারি, তার পাকাপোক্ত ব্যবস্হা করে গেছে হাজার হাজার জাল হাদিস তৈরি করে। এই জন্য আমরা আজ অলী আল্লাহ বিরোধী হয়ে গেছি। নাটের গুরু মোয়াবিয়া কি চমৎকারভাবে দাবার গুটি চাল দিয়ে গেছে, আমরা তা একবারও ঘূর্ণাক্ষরে বুঝতে পারলাম না।
এইসব জাল হাদিস মাদ্রাসা থেকে পড়ে মোল্লারা ওয়াজে কেঁদে কেঁদে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যাতে আমরা সবাই আবেগ আপ্লূত ও ভীত হয়ে যাই। আর আমরা অবিবেক অন্ধ মুসলিম জাতি একবাক্যে স্বীকার করে নিই। একবারও হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারলাম না। তাই সত্য আজ আমাদের ছেড়ে বহুদূরে এবং মিথ্যার দানা বেঁধেছে মুসলিম সমাজে। একবারও কি ভেবে দেখেছেন আপনি! রাসূল পাক সঃ, মাওলা আলী, মা ফাতেমা এবং ইমাম হাসান ও হোসাইনকে অপমান করে কি লাভ? কেয়ামত পর্যন্ত ইবাদত করলেও কিছু হবে না, যদি পাক পান্জাতনের শানে বিন্দুমাত্র অপমান করেন।
হে মুসলিম জাতি! একবার বিবেকের দ্বার উন্মোচন করুন। নচেৎ অন্ধকার আপনাদের পিছু ছাড়বে না। তাই বলি পাক পান্জাতনকে ভালোবাসতে এবং মুক্তি পেতে আল্লাহর মনোনীত অলী আল্লাহর কাছে চলে যান। তাহলে শুদ্ধচিত্তে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে পারবেন পাক পান্জাতনকে। আর আমরা ধোঁকা হাদিসের ফাঁদে পড়ে নিজের ঈমান নষ্ট করতে চাই না। মোজাম্মেল পাগলা আর চাই না কিছু বলিতে, বুঝে নিয়েন জ্ঞানীরা ইশারা ঈঙ্গিতে। হে মহান মালিক আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসিব কর। কারোর মনে আঘাত দিয়ে থাকলে, অধমকে নিজ গুনে ক্ষমা করবেন। আমিন।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।