স্বয়ং রাসূল পাক (সাঃ) মুয়াবিয়াকে মোনাফেক বলছেন।
ইতিহাসের সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক মুয়াবিয়ার বংশ পরিচয় এবং মুয়াবিয়ার ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপঃ
কে এই মুয়াবিয়া?
মুয়াবিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে “খিলাফতের ইতিহাস” নামক গ্রন্হের লেখক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ বলেন, আমির মুয়াবিয়া হযরত রাসূল পাক (সঃ) এর মুখোশধারী সাহাবী ছিলেন। তার পুরো বংশ রাসূল পাক (সাঃ) এর সবচেয়ে বড় দুশমন ছিলেন এবং অবশেষে নিরুপায় হয়ে মক্কা বিজয়ের পর মুসলমানদের চরম ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মাবিয়া এবং তার বংশধরেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
রাসূল পাক সাঃ এর প্রবলতম ঘোর শক্রু কুরাইশ দলপতি নরপিশাচ আবু সুফিয়ান তার পিতা ছিলেন। যিনি রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। রাসূল পাক সাঃ কে হত্যা করতে সর্বক্ষণ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। এমন কোন অপরাধ নাই যে, সে রাসূল পাক সঃ এর সাথে করার চেষ্টা করে নাই। যখন দেখল রাসূল পাক সঃ এর কোন ক্ষতি করতে সক্ষম নয়, তখন দুরভিসন্ধি নিয়ে মক্কা বিজয়ের পর তার সন্তান মাবিয়াকে নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। যাতে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে চরম ক্ষতি করা যায়। এই ধরণের চরম মোনাফেকি উদ্দেশ্য নিয়ে মুসলমানদের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
মুবিয়ার মাতার নাম ছিল হিন্দা। যিনি ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট নারী হিসাবে পরিচিত। এই নরপিশাচ নারী রাসূল পাক সাঃ এর আপন চাচা হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিল এবং হামজা রাঃ এর শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরেছিল। এই সেই নারী যিনি প্রতিটি যুদ্ধে কাফেরদেরকে উৎসাহ প্রদান করত। তার ভাই, পিতা -মাতা এবং বংশধরেরা রাসূল পাক সাঃ এর ঘোরতর শক্রু ছিল।
এই নরপিশাচ হেন্দার ভাই এবং পিতা বদরের যুদ্ধে মারা যায়। আর হেন্দার এই ভাই ও পিতাকে বদর যুদ্ধে হামজা রাঃ হত্যা করে। তাই হেন্দা প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য ওহুদের যুদ্ধে হামজা রাঃ এর কলিজা চিবিয়ে খায় এবং তার শরীর মোবারক টুকরো টুকরো করে কেটে গলায় মালা পরে।
মুয়াবিয়ার দাদা ছিলেন উমাইয়া। এই নরপিশাচ উমাইয়া হযরত বিল্লাহ রাঃ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারনে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে অত্যাচার করেন। আর এই উমাইয়া নামানুসারে মুয়াবিয়া রাসূল পাক সাঃ এর নাম বাদ দিয়ে দাদার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করেন।
আর এই উমাইয়া খিলাফত শাসনামল ছিল দীর্ঘ ৮৯ বছর। আচ্ছা বলুন তো একজন বিধর্মী কাফেরের নামে কি মুসলিম খিলাফত হতে পারে। আমার রাসূল পাক সাঃ কে চরমভাবে হেয়পতিপন্ন এবং অপমান করার জন্য মুয়াবিয়া ও তার নরপিশাচ ছেলে এজিদ এই কাজটি করেছিল। রাসূল পাক সাঃ এর নাম বাদ দিয়ে স্হাপন করল নরপিশাচ উমাইয়ার নাম। যা আজও ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে।
প্রথম দিকে মুয়াবিয়া একজন সামান্য সৈনিক, পরে একজন ক্ষুদ্র সেনাপতি ছিলেন। তারপর ক্ষমতার লোভে মাওলা আলী এর সাথে বিদ্রোহী হয়ে শিফফিনের যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মুয়াবিয়া কৌশল ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অনেক ক্ষমতাবান হন। পরবর্তীতে মাবিয়া খারেজিদের দ্বারা মাওলা আলীকে গুপ্ত হত্যা করে মুসলিম খিলাফতের খলিফা নিযুক্ত হন। আবু সুফিয়ান জীবিত থাকলে দেখতে পারতেন, রাসূল পাক সাঃ এর যে সকল কাজের বিরোধিতা তিনি সর্বদা করতেন, সেই সকল কাজের বিরোধিতা করে মুয়াবিয়া মুসলিম খিলাফতের বাদশাহ হন।
মুয়াবিয়া রাসূল পাক সাঃ এর একজন নামধারী সাহবী হলেও, রাসূল পাক সাঃ এর সঙ্গ তিনি পাননি। কারণ রাসূল পাক সাঃ মক্কা বিজয় করে আবার মদিনায় চলে যায়। আর মুয়াবিয়া মক্কায় থেকে যায়।
হযরত রাসূল পাক (সাঃ) আলী রাঃ সমন্ধে যা বলেনঃ
“যে ব্যক্তি আমার আলীকে গালি দিল, সে যেন আমাকে গালি দিল”। (মেশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৫)।
“হে আল্লাহ! আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ ! যে আলীকে ভালবাসবে তুমি তাকে ভালবাসিও, যে আলীর শক্রু হবে তুমি তার শক্রু হইও”। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৫)।
“মোনাফেক ব্যক্তিই আলীকে ভালবাসবে না এবং মু’মেন ব্যক্তি আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না”। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৪)।
“আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী তার দরজা”। (শরহে ফিকহে আকবার, পৃষ্ঠা নং ১১২)।
“দুনিয়ার ধন-সম্পদের মধ্যে আমার জন্য দুইটি (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) স্বর্গীয় ফুলস্বরুপ”। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা নং ৫৬৯)।
“আমি যার মাওলা, হযরত আলী তার মাওলা”। (বুখারী শরীফ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ২৮০। রাহমানিয়া লাইব্রেরি, ঢাকা।)।
“আমি আর আলী একই নুরের দুই খন্ড। আলী যেদিকে মোড় নেয় সত্য এবং ধর্ম সেইদিকে মোড় নেয়। সত্য আলীর সাথে এবং আলী সত্যের দিকে।” (কানজুল উম্মাল)।
“কোরআন আলীর সাথে এবং আলী কোরআনের সাথে।” (কানজুল উম্মাল)।
“আমি আলী হতে এবং আলী আমা হতে।” (কানজুল উম্মাল)।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন,
“কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার এবং মুয়াবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না”। (মাওলা আলীর স্বরচিত কিতাব, নাহাজ আল বালাঘা)।
সুতরাং মাওলা আলীর সাথে বিরোধিতা করা মানে রাসূল পাক সাঃ এর সাথে বিরোধিতা করা। আর রাসূল পাক সাঃ এর সাথে বিরোধিতা করা মানে স্বয়ং আল্লাহর সাথে বিরোধিতা করা। অথচ দেখা যায় যে, মুয়াবিয়া মাওলা আলীর সাথে চরম বিরোধিতা করেছেন। শিফফিন নামক যুদ্ধ তার জলন্ত প্রমাণ। আসলে মুয়াবিয়া রাসূল পাক সাঃ এর রেখে যাওয়া ধর্মকে ধ্বংস করতে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্যই এই বিরোধিতা করছেন।
মুয়াবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক কর্ণেল অসবর্ন বলেন,
“বিচক্ষণহীন, অবিবেকী ও নির্মম উমাইয়া বংশের প্রথম খলিফা তার নিজ স্বার্থ বজায় রাখার জন্য যেকোন অপরাধমূলক কার্য করতে সংকোচ বোধ করত না। প্রবল প্রতিদ্বন্দীকে অপসারণের জন্য হত্যাই ছিল তার চিরাচরিত রীতি। সে ইমাম হাসানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। হযরত আলীর সহকারী মালিক আল আসতারকে অনুরূপ ভাবে হত্যা করেছিল। তার পুত্র এজিদের উত্তরাধিকারী নিরাপদ করবার জন্য মাবিয়া হযরত আলীর একমাত্র জীবিত পুত্র হোসাইনের সাথে প্রদত্ত ওয়াদা ভঙ্গ করতে দ্বিধা করেন নাই”।
মুয়াবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক মুর বলেন,
“কোরআন ও হাদিসের আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রথম ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সমাধি রচনা করেন মাবিয়া। ধূর্ততা, কপটতা ও অসাধুতার আশ্রয় গ্রহণ করে তিনি ইমাম হাসানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অবমাননা করে মৃত্যুর পূর্বে শুধুমাত্র নিজ অযোগ্য পুত্রকেই মনোনীত করেন নাই, বরং ছলে-বলে ও কৌশলে আরব জাহানের জনসাধারণের আনুগত্য অর্জন করেন”।
মুয়াবিয়া সমন্ধে ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন,
“মুয়াবিয়া ছিলেন ধূর্ত, ধর্ম ভয়হীন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, কৃপণ অথচ নিজ স্বার্থে অস্বাভাবিক উদার এবং যাবতীয় ধর্মীয় কাজে লোক দেখানো নিষ্ঠাবান। কিন্তু তার কোন পরিকল্পনা বা আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণতা সাধনে কোন মানবীয় বা ধর্মীয় রীতিনীতিই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারত না”।
মুয়াবিয়া বিভিন্ন সময়ে মাওলা আলীর প্রতি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। উহুদের যুদ্ধে মুয়াবিয়া মাওলা আলীকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। শিফফিনের যুদ্ধে মুয়াবিয়া প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মাওলা আলীর কাছ থেকে নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রক্ষা পায়। শিফফিনের যুদ্ধ ক্ষেত্রে হঠাৎ মুয়বিয়াকে দেখে মাওলা আলী বলে উঠলেন,
“মুয়াবিয়া তুমি নিজে যুদ্ধের ময়দানে আসছ না কেন? তাহলে ব্যাপারটা সহজেই মিমাংসিত হতে পারে”।
মুয়াবিয়ার সেনাপতি আমর সম্মান রক্ষার জন্য মুয়াবিয়াকে যুদ্ধে মাওলা আলীর মোকাবিলা করবার জন্য উৎসাহিত করলেন। কিন্তু মুয়াবিয়া বললেন,
“হযরত আলীর সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেউ কোনদিন জীবিত থাকে না”।
মুয়াবিয়া প্রায়ই গর্ব করে বলতেন, “আরবীয় রাজাদের মধ্যে আমিই প্রথম রাজা”।
মুসলিম জাহানের ৪র্থ খলিফা মাওলা আলীর শাহাদাৎ বরণের পর তার জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলা ইমাম হাসান খলিফা নির্বাচিত হলেন। রাজনীতি এবং কূটনীতি সম্পর্কে মাওলা ইমাম হাসান এর তেমন কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাছাড়া মাওলা ইমাম হাসান ছিলেন খুবই শান্তশিষ্ট এবং কোমল হৃদয়ের অধিকারী। সিরিয়া ও মিশরের উচ্চবিলাষী শাসক মাবিয়া খিলাফতের এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করলেন।
মাওলা ইমাম হাসানের সেনাপতি কায়েসের নেতৃত্বে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে ১২হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। কায়েস যখন শক্রু পক্ষের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে যুদ্ধরত, তখন মুয়াবিয়া ধূর্ততার আশ্রয় নিলেন। মুয়াবিয়া বীর যোদ্ধা কায়েসের মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দিলেন। ফলে মাওলা ইমাম হাসান এর সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিল। তখন মুয়াবিয়া এবং ইমাম হাসান রাঃ এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মুবিয়ার পরে মাওলা ইমাম হোসাইন মুসলিম খলিফা হবেন। কিন্তু প্রতারক মুয়াবিয়া মাওলা ইমাম হাসান এর সাথে সম্পাদিত চুক্তি ভঙ্গ করে নরপিশাচ এজিদকে খলিফা নিযুক্ত করে এবং তার নামে খেলাফতের স্বীকৃতি আদায়ের জন্য সকল প্রাদেশিক গভর্নরের নিকট ফরমান জারি করে। কিন্তু মুয়াবিয়ার এই ফরমান মক্কা ও মদিনা লোক ব্যতীত, সকল প্রদেশের গভর্নররা এজিদকে খলিফা হিসাবে মেনে নিল।
রাসূল পাক (সাঃ) বলেন, মোনাফেকের চিহ্ন ৩টি।
- ১/ কথায় কথায় মিথ্যা বলে।
- ২/ ওয়াদা ভঙ্গ করে।
- ৩/ আমানতের খিয়ানত করে।
আর এই মোনাফেক কাফেরদের চেয়ে ভয়ংকর। আর মুয়াবিয়া ইমাম হাসান এর সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে, ইতিহাসে সর্বকালের সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক হিসাবে পরিচিত।
উল্লেখ্য যে, মুয়াবিয়া মাওলা আলীর সময়ও খিলাফত নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু পেরে উঠতে না পারলেও একেবারে পিছপা হননি। তিনি মোক্ষম সুযোগ মনে করে অতি শীঘ্রই ইরাক আক্রমন করলেন।
মুয়াবিয়া দীর্ঘ ২০বছর শাসন ক্ষমতায় ছিলেন এবং তার বংশধরেরা দীর্ঘ ৮৯ বছর মুসলিম খলিফা হিসাবে ক্ষমতায় ছিলেন। (৬৬১ – ৭৫০) সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। মুয়াবিয়ার দাদার নাম ছিল উমাইয়া। আর এই উমাইয়ের নামে মুসলিম খিলাফত রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়। হযরত রাসূল পাক সাঃ এর নাম চিরতরে মুছে ফেলা হয়।
এই উমাইয়া ছিল একজন বিধর্মী কাফের এবং রাসূল পাক সাঃ ও ইসলামের একজন বড় দুশমন ছিল। সে বিখ্যাত আশেকে রাসূল হযরত বেলাল রাঃ কে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সাঃ এবং ইসলামের বিরোধিতা করে যে ক্ষতি সাধন করেছে, মুয়াবিয়া ও তার পুত্র এজিদের দ্বারা রাসূল পাক সাঃ এবং ইসলাম ধর্মের তার চেয়েও অনেক বেশী ক্ষতি সাধিত হয়েছে, যা কোনদিন পূরণ হবার নয়।
কারণ উমাইয়া ও তার পুত্র আবু সুফিয়ান রাসূল পাক সাঃ বংশের কাউকে হত্যা করতে পারে নাই। কিন্তু মুয়াবিয়া এবং তার পুত্র এজিদ রাসূল পাক সাঃ এর পরিবারের সকল সদস্য নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়। তারা মাওলা আলীকে নামাজরত অবস্হায়, ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগ করে ও ইমাম হোসাইন এবং সন্তানদের সহ ৭২ জন সবাইকে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে।
মুয়াবিয়া তার পূর্ব পুরুষদের প্রতিশোধ নিতেই বিধর্মী কাফের উমাইয়ার নামে মুসলিম খিলাফত চালু করে এবং এক নতুন ধর্মের প্রবর্তন ঘটান। যা এজিদি ইসলাম নামে পরিচিত এবং এখনো সারা বিশ্বে বিরাজমান।
নরপিশাচ কাফের এজিদ কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইনকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর মদিনা ও মক্কায় আক্রমন করে। এজিদের সৈন্য বাহিনী মদীনার মসজিদসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মদীনাবাসীর উপর চরম নির্যাতন করে এবং শিশুসহ বহু লোককে হত্যা করে।
এরপর এজিদের সৈন্য বাহিনী মক্কায় আক্রমন করে ২মাস শহর অবরোধ করে রাখে। এ সময় তারা পবিত্র কাবাগৃহের গিলাফ অগ্নিসংযোগ করে। এই অবরোধ চলাকালে এজিদের মৃত্যু হলে, এজিদের সৈন্য বাহিনীরা মক্কা ছেড়ে দামেস্ক নগরে চলে যায়।
যারা নরপিশাচ মুয়াবিয়াকে সাহাবী মনে করেন, তাদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন।
- ১/ মুয়াবিয়া কেনো মাওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল?
- ২/ মুয়াবিয়া কেনো ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র ইমাম হাসানের সাথে যুদ্ধ করেছিল?
- ৩/ মুয়াবিয়া কেনো নরপিশাচ কাফের এজিদকে সমগ্র মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিযুক্ত করলো?
- ৪/ মুয়াবিয়া কেনো খারেজিদের দলভুক্ত করল। আর এই খারেজিদের নিয়ে মুয়াবিয়া মাওলা আলীর এবং ইমাম হাসান এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল?
- ৫/ মুয়াবিয়া কেনো শিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলীর পক্ষের শত শত নিরীহ নিষ্পাপ বিখ্যাত সাহাবীদের হত্যা করল? আর এই হত্যার দায়ভার কে নিবে?
- ৬/ মুয়াবিয়া কেনো মাওলা আলীর ওফাতের পর মাওলা ইমাম হাসান কে হটিয়ে নিজে কেন মুসলিম জাহানের খলিফা হলো। মাবিয়া কি মাওলা ইমাম হাসানের চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল?
- ৭/ মাবিয়া কেনো ইমাম হাসানের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে ইমাম হোসাইন এর পরিবর্তে নিজ পুত্র কাফের এজিদকে মুসলিম জাহানের খলিফা নিযুক্ত করল। তাহলে এজিদ কি ইমাম হোসাইনের চেয়ে বেশি যোগ্য ছিল?
- ৮/ মুয়াবিয়া কেন শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইস করণী (রাঃ) কে হত্যা করলো?
- ৯/ মুয়াবিয়া কেনো রাসূল পাক সাঃ এর নাম বাদ দিয়ে, তার দাদা মূর্তি পূজারী উমাইয়ার নামে উমাইয়া মুসলিম খিলাফত চালু করলো?
- ১০/ মুয়াবিয়া জোর করে মুসলিম খলিফা হওয়ার পর জুমার দিন খুৎবায় মাওলা আলীকে গালাগালি করার প্রথা প্রচলিত কেনো করলো?
অথচ রাসূল পাক সঃ বলেছেন, মোনাফেক ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে না। তাহলে আপনারা বলুন, মুয়াবিয়া কি মাওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করল না? নিশ্চয়ই মুয়াবিয়া মাওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করে শক্রুতা পোষণ করেছেন। একমাত্র বদ্ধ উন্মাদ পাগল এবং মুয়াবিয়ার অনুসারী ছাড়া সবাই বলবে মুয়াবিয়া মাওলা আলী রাঃ এর সাথে শক্রুতা করেছেন।
মুয়াবিয়া যদি মাওলা আলীকে ভালবাসতো, তাহলে কখনোই মাওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করতে পারতো না। আর এই জন্যই রাসূল পাক সাঃ বলেছেন, “যে হযরত আলীকে ভালবাসবে না, সে মোনাফেক।”
মূলত, মুয়াবিয়া মাওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করেননি বরং স্বয়ং রাসূল পাক সাঃ এর সাথে যুদ্ধ করেছেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় রাসূল পাক সাঃ মুয়াবিয়াকে মোনাফেক বলেছেন, আমি কিন্তু বলিনি। আমি শুধুমাত্র তুলে ধরেছি। উপরের হাদিসগুলো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে মুয়াবিয়া সর্বনিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল।
কোন কূতর্ক চাই না, শুধু মাত্র সূতর্ক এবং দলিল সহকারে যুক্তি ও প্রমাণ চাই। এই ১০টি প্রশ্নের সঠিক ও সুন্দর উত্তর চাই। যার ইতিহাস জানা আছে সেই শুধু উত্তর দিবেন।
তথ্যসূত্রঃ
- ১/ মোয়াবিয়া ও কারবালা, সৈয়দ গোলামুর রহমান।
- ২/ খিলাফতের ইতিহাস, মুহম্মদ আহসান উল্লাহ।
- ৩/ এজিদি ধর্ম, এ.কে. মনজুরুল হক।
- ৪/ মাওলার অভিষেক, সদর উদ্দিন চিশতি।
- ৫/ সুফি দর্শন, ফকির আব্দুর রশিদ।
- ৬/ ইসলামের ইতিহাস, ডঃ সৈয়দ মাহমুদুল হাসান।
- ৭/ ইসলামের ইতিহাস, কে আলী।
- ৮/ ইমাম হাসান ও হোসাইন (রাঃ), মাওলানা মোঃ মনিরুজ্জামান।
- ৯/ মুহাররাম, বিশ্বওলি শাহসূফি খাজাবাবা ফরিদপুরী (রহঃ)।
- ১০/ HSC এর পাঠ্য বই ইসলামের ইতিহাস বই পড়লে মুয়াবিয়া ও তার পুত্র এজিদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দরবার শরিফ বিশ্বজাকের মঞ্জিল, দেওয়ান রশিদের ঝিটকা দরবার শরিফ, বরিয়াবরী দরবার শরীফ এবং সদর উদ্দিন চিশতির দরবার শরীফের কিতাবগুলো পড়তে পারেন।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।
আরো পড়ুন:
• মাওলা আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া প্রসঙ্গে দলিল ভিত্তিক আলোচনা