ইমাম হোসাইনের পুত্র আলী আকবরের কারবালার করুন ইতিহাস।
ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপিশাচ, কাফের, মোনাফেক এজিদ সৈন্য বাহিনী কর্তৃক ইমাম হোসাইনের আদরের দুলাল কলিজার টুকরা আলী আকবরের কারবালার করুন ইতিহাস।
একে একে কাশেম, আলী আজগর এবং শিবিরের অন্যান্য সঙ্গীগণ এজিদ সৈন্য বাহিনী দ্বারা যখন নির্মম হত্যার শিকার হন, তখন ইমাম হোসাইন এর পুত্র আলী আকবর এসে পিতার কাছে করজোড় মিনতি করে বললেন, পিতা এখনো তোমার আলী আকবর বেঁচে আছে! যদিও আমি কিশোর, তথাপি নরপিশাচ এজিদের সৈন্য বাহিনীকে ভয় করি না। আমি বেঁচে থাকতে আপনি অস্ত্র ধারণ করবেন? বাঁচিবার আশা তো একপ্রকার শেষ হয়েছে; পিপাসায় শিবিরের সকলের প্রানপাখি যাবার উপক্রম হয়েছে। এরূপ অবস্হায় আর কয়দিন বাঁচব? নিশ্চয়ই মরতে হবে। বীর পুরুষের ন্যায় মৃত্যুই উত্তম। কাপুরুষের ন্যায় কাদিয়া মরব না। আমি যে, মহাবীর ইমাম হোসাইনের পুত্র। সেই রক্তধারা আমার শরীরে বইছে।
এই কথা বলে ইমাম হোসাইনের কদম মোবারক চুমু খেয়ে, আলী আকবর ঘোড়া নিয়ে ফোরাত নদীর দিকে ছুটলেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে একেবারে ফোরাতকূল রক্ষণদিগের অস্ত্র বর্ষণ করতে লাগলেন। রক্ষীরা ফোরাতকূল ছেড়ে পালাতে শুরু করল। এজিদ সেনাবাহিনীর মধ্যে মহা হুলস্থূল পড়ে গেল। যারা পালাতে অবসর পেল না তারা সামনে দাড়াল। আলী আকবর মূহুর্তের মধ্যে সকলের দেহ দ্বিখন্ডিত করল। আর অধিকাংশ সৈন্যরা প্রাণভয়ে নদীকূল ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিল।
ফোরাত নদী উদ্ধার, ঠিক সেই সময় আবদুল্লাহ ইবনে জেয়াদ তার হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে ফোরাত নদীর তীরে এসে আলী আকবরকে ঘিরে ফেলল। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। জেয়াদের সৈন্যরা আলী আকবরের তরবারির সামনে শ্রেণীবদ্ধরুপে দাড়াল। এ পর্যন্ত আলী আকবরের শরীরে শক্রু পক্ষেরা কোন অস্ত্র আঘাত করতে পারে নাই; কিন্তু আলী আকবর সাধ্যানুসারে কাফেরদের মাথা নিপাত করেও শেষ করতে পারলেন না। এই সুযোগে যারা জঙ্গলে পালাইয়া ছিল, তারাও জেয়াদের সৈন্যের সাথে যোগ দিয়ে আলী আকবরের বিরুদ্ধে দাড়াল।
আলী আকবর সৈন্যচক্র ভেদ করে দ্রুত গতিতে শিবিরে চলে আসলেন। ইমাম হোসাইনের সামনে এসে বলতে লাগলেন, ফোরাতকূল উদ্ধার হতো কিন্তু কুফা হতে জেয়াদ হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে এজিদের সৈন্য বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে নদীতীর বন্ধ করে দাড়াইছে। যেকোন উপায়ে হোক, আমাকে একপাত্র পানি দেন, আমি এখনই নরপিশাচ কাফের এজিদের সৈন্য বাহিনীকে জাহান্নামে প্রেরণ করে আসি। এই দেখুন আমার তরবারি কাফেরদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আল্লাহর কৃপায় এবং আপনার দোয়ায় আমার শরীরে কেউ এ পর্যন্ত একটিও আঘাত করতে পারে নাই। কিন্তু পিপাসায় প্রাণ যায়।
ইমাম হোসাইন বলল, আলী আকবর! আজ ১০ দিন কেবল চোখের জল ব্যতীত এক বিন্দু জল চোখে নাই। এই চোখের পানিও শুকাইয়া গেছে। পানি কোথায় পাবো বাবা? আলী আকবর বললেন, বাবা আমার প্রাণ যায়, আর বাঁচি না। এই বলে পিপাসায় আলী আকবর মাটিতে শুয়ে পড়লেন।
আলী আকবরের নিকট গিয়ে ইমাম হোসাইন বললেন, আকবর! তুমি আমার এই জিহ্বা আপন মুখের মধ্যে দিয়ে একটু শান্তি লাভ কর। জিহ্বাতে রস আছে, তাতে যদি তোমার পিপাসার কিছু শান্তি হয়, দেখো বাপ! অন্য জলের আশা আর করো না।
আলী আকবর ইমাম হোসাইনের জিহ্বা মুখের মধ্যে রেখে চুষে কিছুক্ষণ পরে বললেন, প্রাণ আমার শীতল হলো। পিপাসা দূর হলো। আল্লাহর নাম নিয়ে আবার চললাম।
এই বলে আলী আকবর পুনরায় ঘোড়ার পিঠে চড়ে সমর ক্ষেত্রে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধ শুরু করল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বহুশক্রু নিপাত করে ফেলল। জেয়াদ, ওমর, সীমার এবং অলীদ পরামর্শ করল যে, আলী আকবর আর কিছুক্ষণ এইরূপ যুদ্ধ করলে আমাদেরকে এক প্রকার শেষ করে ফেলবে। আলী আকবরকে যেকোন উপায়ে হোক, শেষ করতে হবে।
সম্মুখ যুদ্ধে আলী আকবরের নিকটে গিয়ে কেউ জয়লাভ করতে পারবে না। দূর হতে গুপ্তভাবে কয়েকজন বিষাক্ত লোহার তীর নিক্ষেপ করতে থাক। অবশ্যই কারো তীর আকবরের বুকে লাগবে। এই বলে প্রধান প্রধান প্রশিক্ষিত তীরন্দাজরা দূর হতে বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করতে লাগল।
ইমাম আলী আকবর কাফেরদের সমূলে মারিতেছে। এদিকে তীরন্দাজরা বিষাক্ত তীর নিক্ষেপ করতেছে। হঠাৎ করে একটি বিষাক্ত তীর ইমাম আলী আকবরের বুকে লেগে পিছন দিয়ে বের হয়ে গেল। ইমাম আলী আকবর চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন। পিপাসাও অধিকতর বৃদ্ধি পেল। পানির জন্য কাতরস্বরে বারবার পিতাকে ডাকতে লাগলেন। সামনে দেখতে পেলেন যেন, তার পিতা পানিপাত্র হাতে করে বলতেছে, আকবর! শীঘ্রই আসো! আমি তোমার জন্য সুশীতল পবিত্র পানি নিয়ে দাড়িয়ে আছি।
ইমাম আলী আকবর জলপান করতে যাইতেছিল, কিন্তু ততদূর পর্যন্ত যাইতে হল না, জল পিপাসায় মন শান্তি করতে হলো না, জীবনের মত পিপাসা ফুরাইয়া গেলো। ইমাম আলী আকবর ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে গেলো। নরপিশাচ এজিদের সৈন্য বাহিনী দ্বারা আর একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়ে গেল জগত থেকে।
নিবেদকঃ অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।
কারবালা সম্পর্কিত আরো পড়ুন:
→কারবালা ও ইমাম হোসাইন সম্পর্কে সবগুলো পোস্ট
→কারবালার প্রান্তরের সেই করুন ইতিহাস
→ইমাম হোসাইন (আঃ) ও লানিত ইয়াজিদের কারবালার করুন ইতিহাস
→সত্য ইসলাম কারবালার প্রান্তরেই বিলুপ্ত হয়েছে বলা হয় কেনো?
→আব্দুল ওহাব নজদী (ওহাবী)’র ইতিহাস ও পরিচয়