সোলায়মান (আঃ) এর সিংহাসন
হজরত সোলায়মান (আঃ) সিংহাসনে আরোহন করেই সলোমন তার সম্ভাব্য বিরোধীতাকারীদের শক্ত হাতে দমন করে। সম্রাজ্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রন নিজ হাতে নিয়ে আসে। মিশরের শাসক ফারাওদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে। ফারাও এর কন্যাকে বিবাহ করে।
সে সময়ে উপাসনা করার জন্য কোন নির্দিষ্ট স্থান বা ঘর ছিল না। কোন সুউচ্চ স্থানে গিয়ে গডের নামে কোন কিছু উৎসর্গ করতে হতো। সিংহাসন লাভের পর সলোমন উৎসর্গ করার জন্য উচ্চ স্থান হিসেবে খ্যাত গিবিয়ন-এ আসে। এখানে এলে গড সপ্নে সলোমনকে দেখা দেন। সলোমনকে তার কাছে কিছু চাইতে বলেন।
সলোমন ধন-সম্পদ, ক্ষমতা, দীর্ঘায়ু কোন কিছুই চাইলো না। চাইলো তেমন জ্ঞান, যা ভাল ও মন্দের পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করে। সলোমনের প্রার্থনায় গড অত্যান্ত খুশি হন। গড তাকে জ্ঞান ও সম্পদ সবকিছুই অকাতরে দান করেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি সোলায়মানকে জ্ঞান দান করেছিলাম (কোন ঘটনা) অনুধাবন করার এবং তাদের প্রত্যেককে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আমি পর্বত ও পক্ষীসমুহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা প্রকাশ/ঘোষনা করতো।…।” (আল-কোরআন ২১:৭৯)
সলোমনের জ্ঞানের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেবার রাণী (সেবা বা সাবা- দক্ষিন আরবের রাজ্য, বর্তমান ইয়েমেনের অন্তর্গত) সলোমনের গুণের কথা শুনে তাকে সচক্ষে দেখতে আসে। যা শুনেছে বাস্তবে সলোমন তার চেয়েও অধিক, এমন ধারণা নিয়ে রাণী ফিরে যায়। সলোমনকে অনেক মূল্যবান উপহার সামগ্রী দিয়ে যায়।
কোরআনে বলা হয়েছে, “… সে (সেবার রাণী) বললো: হে আমার পালনকর্তা! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সোলায়মানের সাথে বিশ্ব-জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পন করলাম।” (আল-কোরআন ২৭:৪৪)
সলোমন মিশর সীমান্ত থেকে ফিলিস্তিন এবং জুতাহ্ ও ইসরাইলের সমগ্র ভূখন্ডের ওপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। তার সময়ে রাজ্যে পান্তি বিরাজ করে।
ডেভিড তার বাজত্বের পুরো সময়টা যুঝে ব্যাস্ত থাকায় গড়ের উপাসনার জন্য ঘর তৈরীর কাজটি সম্পন্ন করে যেতে পারেনি। সলোমন গভের নির্দেশনা অনুযায়ী পিতার ওপর অর্পিত কাজটি সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উপাসনার জন্য নির্দিষ্ট ঘর তৈরীর কাজে হাত দেয়। উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সলোমন সুদূর লেবানন থেকে সমুদ্র পথে কাঠ নিয়ে আসে।
ইসরাইল মিশর ছেড়েছে চার শত আশি বছর। দীর্ঘ সময় পর সলোমনের সময়ে গডের নামে প্রথম উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা পায়। সলোমন এটিকে সোনা দিয়ে ঢেকে দেয়।
এ গৃহই মুসলমানদের প্রথম কেবলা। অতঃপর যখন কা’বা কেবলারূপে নির্ধারিত হয়, তখন এ বিষয়ে কোরআনে কিছু বাণী অবতীর্ণ হয়। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, “যারা অনুধাবনে সক্ষম নয় তারা বলবে: কি বিষয় বিশ্বাসীদেরকে ফিরিয়ে নিল তাদের সেই কেবলা থেকে (যা ছিল জেরুজালেমমুখী) যা তারা পূর্বে অনুসরণ করতো? বল: পূর্ব-পশ্চিম সবই আল্লাহর।…।” (আল-কোরআন ২:১৪২)
সূরা আল-ইমরান এ বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই। সর্বপ্রথম ঘর (উপাসনালয়) যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটিই হচ্ছে এ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত। এক আশীর্বাদপূর্ণ স্থান, মানুষের জন্য পথের দিশারী।” (আল-কোরআন ৩:৯৬)
বস্তুত মূসা নবীর আগমনের ৪৫০ বছর পর হযরত সোলায়মানের সময় জেরুজালেমে এ ঘর (মসজিদুল আকসা) প্রতিষ্ঠিত হয়। অথচ মূসা নবীর আগমনের ৯০০ বছর পূর্বে ইব্রাহীম (আঃ) মক্কায় উপাসনার পবিত্র ঘর (কা’বা) প্রতিষ্ঠা করেন। কেবল্য হওয়ার জন্য এটিই অধিক উপযুক্ত কোরআনে সেটি ব্যাক্ত করা হয়েছে।
সম্পদের দিক থেকে সলোমন সে সময়ের যে কোন শাসকের চেয়ে ছিল অধিক সমৃদ্ধশালী। সলোমন একজন বিখ্যাত শাসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কথিত আছে সলোমন পশু-পাখির ভাষাও বুঝতে পারতো।
যেমন সূরা নামল এ বলা হয়েছে, “যখন তারা পিপীলিকা অধ্যুষিত উপত্যকায় পৌঁছালো, তখন এক পিপীলিকা বললো, হে পিপীলিকার দল। তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সোলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতে তোমাদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে। তার কথা শুনে সোলায়মান মুচকি হাসলো…।” (আল-কোরআন ২৭:১৮-১৯)
ইসরাইলিদের জন্য অন্য কোন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ছিল। কেননা মনে করা হতো যে, এতে ইসরাইলিরা তাদের গড থেকে বিচ্যূত হয়ে অন্যদের গডের ধারণায় বিশ্বাসী হয়ে যেতে পারে। কিন্তু সলোমন অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। ফারাও এর কন্যা থেকে শুরু করে মোয়াবাইটস, অ্যামোনাইটস, ইডোমাইটস, হিট্টি, সিডোনিয়ানস সকলের সঙ্গে সে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। সলোমনের সাত শ’ স্ত্রী ও তিন শ’ রক্ষিতা/উপপত্নী ছিল। সলোমন অন্যদের গডের সংস্পর্শেও এসেছিল। বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রীরা তার হৃদয়কে তাদের গডমুখী করে ফেলেছিল।
সলোমনের পিতা ডেভিড যখন ইডোমাইটসদের নিধন করে, সে সময়ে রাজবংশের ছোট্ট একটি বালক মিশর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। নাম ‘হাদাদ’। হাদাদ ফারাও এর সমর্থন পেয়েছিল। সে ফারাও এর এত সমর্থন পেয়েছিল যে, ফারাও তাকে রাণীর বোনের সঙ্গে বিবাহ দেয়।
হাদাদ ডেভিড ও তার সেনাপতি জোয়াবের মৃত্যু সংবাদ জানতে পারে। সে ফারাওকে তার হারানো রাজ্যের অধিকার ফিরে পাওয়ার ইচ্ছের কথাটি জানায়। সলোমনের রাজত্বকালে হাদাদ তার জন্য এক বিরক্তির কারন হয়ে উঠেছিল।
এছাড়াও জেরোবোম নামক এক যোদ্ধা সলোমনের বিরুদ্ধাচারণ শুরু করেছিল। সলোমন জেরোবোমকে হত্যার চেষ্টা করে। তবে সে মিশর পালিয়ে যায়। সলোমন জেরুজালেম থেকে সম্পূর্ণ ইসরাইল শাসন করে চল্লিশ বছর।
– ফরহাদ ইবনে রেহান