ঈদে গাদিরে খুম মুসলিম জাতির মুক্তির একমাত্র দিকনির্দেশনা।
পবিত্র ঈদে গাদিরে খুম মুসলিম জাতি মুক্তির একমাত্র পথ। গাদীরে খুম অস্বীকারকারী কখনো মুসলিম হতে পারে না।
পবিত্র ঈদে গাদিরে খুম নিয়ে অনেক দিন ধরে চিন্তা ভাবনা করছি কিছু লেখব। কিন্তু সাহস ও মনোবল দুটোই অধমের নেই। তবুও মাওলা আলীর দয়া নিয়ে একটু লেখার চেষ্টা করছি। হে আমার মহান প্রভু! তুমি অধমের ভুল ক্রটি ক্ষমা কর।
মাওলা আলী ছিলেন রাসূল পাক সঃ এর আপন চাচাতো ভাই এবং জামাতা। জগৎ জননী মহিলাদের জান্নাতের সর্দারনী মা ফাতেমার স্বামী। জান্নাতের যুবকদের সর্দার মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইনের পিতা। মাওলা আলী একমাত্র সেই মহান স্বত্বা, যিনি পবিত্র কাবাগৃহে জন্ম গ্রহণ করে। আর প্রথম চোখ মেলেই রাসূল পাক সঃ এর রুপ দর্শন করে। এর আগে চোখের পাতা খুলেননি।
মাওলা আলী প্রথম খাবার গ্রহণ করে রাসূল পাক সঃ এর মুখের লালা। খায়বার যুদ্ধে মুসলমানগণ যখন নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে, তখন মাওলা আলী কামুস দুর্গের ৮০০ মন লোহার গেইট ভেঙে বাম হাতে নিয়ে ঢালস্বরূপ ব্যবহার করে যুদ্ধ করে এবং ডানহাতে তরবারি নিয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে বীরবিক্রমের সহিত যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে। মুসলমানদের এমন কোন যুদ্ধ নেই, যা মাওলা আলী ব্যতীত জয় লাভ করতে পেরেছে।
গাদীরে খুমে রাসূল পাক (সাঃ) এর ভাষনের সারমর্মঃ
মক্কা বিজয়ের পর রাসূল পাক সঃ পর্দা নেওয়ার ৮১তম দিন আগে বিদায় হজ্ব পালন করে ৯ই জিলহজ্ব। তারপর সোয়ালক্ষ সাহাবী নিয়ে মদিনার উদ্দেশ্য রওনা হয়। কিন্তু মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থান গাদীরে খুমে পৌঁছালে আল্লাহর কাছ থেকে পবিত্র কুরআনের আয়াত নাজিল হয়।
“হে রাসূল! আপনি বলে দিন, আমি রেসালাতের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছু চাই না। একমাত্র আমার নিকটআত্নীয়দের (আহলে বায়াত) সাথে ভালোবাসা পোষণ ছাড়া।” (সূরা: শূরা, আয়াত নং ২৩)।
রাসূল পাক সঃ আল্লাহর কাছ থেকে এই ওহি পাওয়ার সাথে সাথে কাফেলা থামিয়ে দেন। তখন সেখানে উঁচু করে মঞ্চ বানিয়ে রাসূল পাক (সাঃ) মাওলা আলীর হাত উঁচু করে ধরে অমীয় দিকনির্দেশনা বাণী মোবারক প্রদাণ করে।
“আমি যাঁর যাঁর মাওলা আলী তাঁর তাঁর মাওলা। যে আলীকে ভালোবাসে, সে আমাকে ভালোবাসে। আর যে আলীর শক্রতা করে, সে মূলত আমার শক্রতা করে। মুমিন ব্যক্তি আলীর বিদ্বেষ পোষণ করবে না। আর মোনাফেক কখনো আলীকে ভালোবাসবে না। আলীকে ভালোবাসাই ঈমান। আলীর চেহারার দিকে তাকানোই ইবাদত। আলী আমার একমাত্র উত্তরাধিকারী এবং স্থলাভিষিক্ত। আলীর আদেশই আমার আদেশ। আলী সকল মুমিনদের নেতা। আলী আর আমি পরস্পর অভিন্ন। যে আলীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে, সে মূলত আমার কাছ থেকে এবং ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আমি তোমাদের কাছে দুটি অতি মহামূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি, একটি আল্লাহর পবিত্র কুরআন শরীফ এবং আমার আহলে বায়াত। তোমরা যতদিন পর্যন্ত এই দুটি বস্তু আঁকড়ে ধরে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না। আমি আর আলী একই নুরের দুটি খন্ড। সত্য আলীর সাথে এবং আলী সত্যের সাথে। আলী যেদিকে মোড় নেয় সত্য ও ধর্ম সেইদিকে মোড় নেয়। কোরআন আলীর সাথে এবং আলী কোরআনের সাথে। তোমরা আমার আলীকে কষ্ট দিও না, যে আলীকে কষ্ট দেয় সে যেনো আমাকে কষ্ট দেয় এবং তোমরা আলীর নির্দেশ অমান্য করিও না। আলীর নির্দেশ অমান্য করা মানে স্বয়ং আমার নির্দেশ অমান্য করা। আমি আলী হতে এবং আলী আমার হতে। আলী আমার ইহকাল ও পরকালের ভাই। আলীকে আমি তোমাদের পরবর্তী খলিফা মনোনয়ন করে দিলাম।”
এই কথাগুলো বলে, রাসূল পাক (সাঃ) সবার উদ্দেশ্য বলল, তোমরা কি আমার এই আদেশগুলো একবাক্যে মানো? তখন সকল সাহাবী একবাক্যে সমস্বরে চিৎকার দিয়ে বলল, ইয়া রাসূল আল্লাহ ইয়া হাবীব আল্লাহ আপনি যা বললেন, আমরা তা একবাক্যে মেনে নিলাম। আজ থেকে আলী আমাদের মাওলা। সবাই মাওলা আলীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাইল। কিন্তু রাসূল পাক (সাঃ) পর্দা নেওয়ার সাথে সাথে অধিকাংশ সাহাবী গাদীরে খুমের ওয়াদা ভুলে গেল এবং মরণ নেশায় মেতে উঠল। ক্ষমতার লোভ এবং গভীর ষড়যন্ত্র সবাইকে আকৃষ্ট করল।
যার ফলশ্রুতিতে মাওলা আলী প্রথম খলিফা থেকে চার নাম্বার খলিফা হয়ে গেল। যা ছিল মুসলিম জাতির জন্য অতি দুঃখজনক কালো অধ্যায়। যার ফলাফল মুসলিম জাতি আজও দিয়ে যাচ্ছে বিধর্মীদের কাছে। পরবর্তীতে মোনাফেক মোয়াবিয়া সরাসরি মাওলা আলীর সাথে সিফফিন নামক যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবীদের হত্যা করে।
মোয়াবিয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিলো মাওলা আলীকে হত্যা করে ক্ষমতা নেওয়া। মোয়াবিয়া সিফফিনের যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে কোরআনের হাফেজ মুলজিমকে দিয়ে মাওলা আলীকে নামাজরত অবস্থায় হত্যা করায়। পরবর্তীতে মুয়াবিয়া ময়মনা বুড়িকে দিয়ে মাওলা ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করায়। আর মাওলা ইমাম হোসাইনকে হত্যা করার সকল নীল নকশা প্রণয়ন করে যায় মোয়াবিয়া।
তাই মোয়াবিয়া মৃত্যুর আগে কুপুত্র এজিদকে সুকৌশলে পরবর্তী খলিফা করে যান। যার ফলশ্রুতিতে ঘটে কারবালা প্রান্তরের নির্মম করুন ঘটনা। রাসূল পাক (সাঃ) পর্দা নেওয়ার অল্প কিছু বছরের মধ্যে আহলে বায়াতের প্রতিটি সদস্য নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এরচেয়ে বড় আফসোস কি হতে পারে। তবুও এই হত্যাকান্ড ঘটেছিল কিছু নামধারী সাহাবী দ্বারা। এই অমোঘ মহাসত্য ইতিহাসটি আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ তারা রাষ্টীয় ক্ষমতায় ছিলো সর্বোপুরি ৬০০ বছরের অধিক সময় ধরে। যা সম্পূর্ণ মহাসত্য ইতিহাস পাল্টে দিয়ে, নতুন করে রচনা করা হয়েছে ইতিহাস। যা ছিলো মোয়াবিয়া এবং এজিদের বানানো ইতিহাস। তা আজও আমাদের সমাজে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
১৮ই জিলহজ্জ তারিখে গাদীরে খুমে শেরে খোদা হযরত আলীকে মাওলা ঘোষণা করা হয়। তাই সকল আহলে বায়াত প্রেমিক মুমিন মুসলমানদের জন্য এই দিন মহা ঈদ হিসাবে গণ্য হয়। কারণ ঈদ মানে হলো আনন্দ ও উৎসব। তাই আহলে বায়াতের গোলামরা মাওলার অভিষেক দিনটি মহা ঈদ হিসাবে পালন করে থাকে। মোহাম্মদী ইসলাম ধর্মই পরিপূর্ণতা পেয়েছে গাদীরে খুমে। শেরে খোদা হযরত আলীকে যখন মাওলা হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়, তখনই আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফের শেষ আয়াত নাজিল করে কোরআন শরিফের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আজ আমি তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করলাম এবং নিয়ামত প্রদান করলাম। আল্লাহ তায়ালা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন এবং অবশেষে কোরআন শরিফের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
অথচ মুসলিম জাতি আমরা জানিই না ঈদে গাদিরে খুম দিবস কি? যতদিন পর্যন্ত আমরা গাদীরে খুমে ফিরতে না পারবো, ততোদিন পর্যন্ত আমাদের কোন মুক্তি নেই। গাদীরে খুমে রাসূল পাক (সাঃ) এর ঐতিহাসিক বাণী মোবারক যিনি হৃদয়ে ধারণ করে মেনে চলবেন, তিনিই মুমিন মুসলমান। আর গাদীরে খুম অস্বীকারকারী মোনাফেক হিসাবে চিহ্নিত। সে কখনো মুসলমান হতে পারে না।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।