আল্লাহর দেওয়া আমানত কি এবং আমানত কাকে বলে।

আল্লাহর দেওয়া আমানত কি এবং আমানত কাকে বলে।

(সবার জন্য এই পোস্ট নহে। শুধুমাত্র চিন্তাশীল এবং সাধকের জন্য প্রযোজ্য।)

আসুন জেনে নিই কোরআন ও হাদিসের আলোকে।

মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণের বাসনা পোষণ করে ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেন,

“নিশ্চয়ই আমি ভূ- পৃষ্ঠে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করবো।” (সূরা: আল বাকারা, আয়াত নং ৩০।)

ফেরেশতারা এই প্রস্তাবে আপত্তি জানায়। তথাপি দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আদমের দৈহিক গঠন সম্পন্ন করার পর তার ভিতরে স্বীয় রুহ ফুঁকে দিলেন।

“আমি (আল্লাহ) আমার রুহ থেকে আদমের ভিতরে রুহ ফুঁকে দিলাম।” (সূরা: আল হিজর, আয়াত নং ২৯।)

আল্লাহ তায়ালার রুহ আদমের ভিতরে প্রবিষ্ট হওয়ার ফলে প্রাণহীন আদম সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে পূর্ণাঙ্গ মানবে পরিণত হলেন। ঐ রুহ ধারণ করায় আদম মর্যাদায় ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করলেন। ফেরেশতারা আনুগত্যের নিদর্শন হিসাবে আল্লাহর নির্দেশে আদমকে সেজদা করলো।

আদমের ভিতরে আল্লাহর রুহ থেকে রুহ ফুঁকে দেয়ার অর্থ অনেক ব্যাপক। এ পৃথিবীতে স্হল কোন অবলম্বন ব্যতীত মহান আল্লাহর গুণাবলী প্রকাশ লাভ করা সম্ভব নয়। আদম তথা মানুষের মাধ্যমেই আল্লাহর মহাশক্তি ও গুণাবলি প্রকাশ পায়। এমনকি সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রতভাবে জগৎ পরিচালনাও আল্লাহকে হৃদয়ে ধারণকারী আল্লাহর সৈনিক বা দেশরক্ষক ওলী-আল্লাহগণ দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। যাঁর মাধ্যমে আল্লাহর শক্তি ও গুনসমূহ জগতে বিকশিত হয়, তিনিই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতিনিধি।

মহান আল্লাহ তায়ালার রুহ মানুষের মাঝে বিরাজমান বলেই তিনি পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,

“আমি তোমাদের দিলের (ক্বালবের ৭ম স্তর নাফসীর মাকামে) অবস্থান করি, তোমরা কি দেখনা?” (সূরা: যারিয়াত, আয়াত নং ২১।)

“আর তোমরা যেখানে থাকো, তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথে আছেন।” (সূরা: আল হাদীদ, আয়াত নং ৪।)

মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের কাছে স্বীয় রুহ আমানত হিসেবে ফুঁকে দিয়ে মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদার অধিকারী করেছেন।

“আমি আসমান, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলেন, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করলো এবং তাতে শঙ্কিত হল কিন্তু মানুষ তা বহন করলো; সে কত যালিম, কত অজ্ঞ।” (সূরা: আল আজহাব, আয়াত নং ৭২।)

মহান আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতম সত্তাকে মানুষের মাঝে আমানত স্বরুপ দেওয়া হয়েছে। আমানতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন তাফসীরকারক বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন ঈমান, কেউ বলেছেন কুরআন আবার কেউ বলেছেন শরিয়ত।

বিষয়টি সূক্ষ্ণভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, আমানত বলতে যদি ঈমান ধরা হয়, তাহলে আর কোন কাফের থাকতো না, সবাই ঈমানদার হতো। আবার আমানত বলতে যদি কুরআন শরীফ ধরা হয়, তাহলে আদম আঃ এর নিকট এই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়নি। সুতরাং, এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়। অপরদিকে আমানত বলতে যদি শরিয়তকে ধরা হয়, তাহলে দেখা যায় এক এক নবীর শরিয়ত এক এক রকমের। পূর্ববতী নবীর শরিয়ত পরবর্তী নবীর আগমনে পরিবর্তন হয়ে যায়। সুতরাং, এ ব্যাখ্যাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রকৃতঅর্থে আমানত বলতে আল্লাহর রুহ থেকে যে রুহ আদমের ভিতরে ফুঁকে দেওয়া হয়েছে ইহাই মানব জাতির কাছে আল্লাহর দেওয়া আমানত।

মহান আল্লাহ তায়ালা সমগ্র সৃষ্টিরাজির মাঝে একমাত্র মানুষকে স্বীয় প্রতিনিধি নির্বাচন করে তার নিজের রুহ ফুঁকে দিয়েছেন। অন্য সমস্ত প্রাণীর মাঝে প্রাণ আছে বটে কিন্তু এদের মাঝে রুহ নেই। প্রাণকে নফস বলে। প্রাণের সৃষ্টি হয় পিতার শুক্রকিট থেকে। আর রুহ আলমে আরওয়াহ থেকে আগত। প্রাণীর মাঝে শুধু নফস আছে। কিন্তু কেবল মানুষের মাঝে নফস ও রুহ উভয়ই আছে।

মানুষের মাঝে রুহ আছে বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদা লাভ করে সমগ্র সৃষ্টিরাজির উপর আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। রুহের কারণেই মানুষ আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়ে তাঁর সঙ্গে রঞ্জিত হয়ে ফানাফিল্লাহতে পৌঁছে একাকার হতে পারে। আর মানুষ নিজের ক্বালবকে আরশ বানিয়ে আল্লাহর মহাশক্তি ও গুণাবলি বিকশিত করতে পারে।

রুহ আছে বলেই মানুষের মধ্য হতে আল্লাহ তায়ালা নবী, রাসূল ও অলী-আল্লাহ মনোনীত করছেন। অন্য কোন প্রাণীর মাঝে রুহ নেই বলে তারা সে মর্যাদা লাভ করতে পারে না। রুহই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের মহিমায় উদ্ভাসিত করেছে। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা মানুষের ভিতরে স্বীয় রুহ ফুঁকে দিয়ে সৃষ্টি জগতে নিজের সত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর প্রয়াস চালিয়েছেন। তাইতো হাদীসে কুদছিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন –

“মানুষ আমার রহস্য, আর আমি মানুষের রহস্য।” (সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা নং ১৯।)

গ্রন্থসূত্র: আল্লাহ কোন পথে, পৃষ্ঠা নং ৬৩-৬৬।

নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel