কোরআনে আল্লাহ যাদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
আত্মা বা ক্বালব জিন্দা করার অর্থ হলো সর্বাবস্থায় ক্বালব আল্লাহর স্মরন বা জ্বিকিরে নিমগ্ন থাকা ৷ আত্মার মুখে জ্বিকির না থাকলে সে আত্মাকে মৃত আত্মা বলা হয় ৷
প্রসঙ্গে হযরত আবু মুসা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে ৷ তিনি বলেন, হযরত রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন—
[উচ্চারণ: মাছালুল্লাযী ইয়াযকুরু রাব্বাহূ ওয়াল্লাযী লা ইয়াযকুরু মাছালুল হাইয়্যি ওয়াল মাইয়্যিত৷]
অর্থাৎ: “যে ব্যাক্তি আপন প্রতিপালকের জ্বিকির করে, আর যে ব্যক্তি আপন প্রতিপালকের জ্বিকির করে না, এ উভয় শ্রেণীর উদাহারণ জীবিত ও মৃতের ন্যায়৷”
(বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-১৯৬)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র পবিত্র কুরআনে আল্লাহ স্বয়ং বলেন,
“দুর্ভোগ তাদের জন্য, যাদের ক্বালব কঠোর, যাদের ক্বলব আল্লাহ্ জ্বিকির থেকে গাফেল আছে, তারা প্রকাশ্য গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট” (সূরা-যুমার-৩৯, আয়াত-২২)
যাদের ক্বালব মহান আল্লাহতায়ালার জ্বীকির হতে গাফেল তাদের হুকুম পালন করা যাবে না। এই প্রসংগে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছেঃ
لَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطً
অর্থ্যাৎ: ঐ সকল লোকের হুকুম মানবেনা যার ক্বালব আল্লাহর জ্বিকির হতে গাফেল।” (সূরা: কাহাফ; আয়াত – ২৮)
উপরের আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন! যার ক্বালব আল্লাহ জ্বিকির হতে গাফেল সে প্রকাশ্য গোমরাহ বা বিপদগামী! তাই মহান আল্লাহ পাক নির্দেশ করেছেন, যাদের ক্বালব মহান আল্লাহর জ্বিকির হতে গাফেল তাদের হুকুম পালন করা যাবে না। কেননা, তারা নিজে বিপদগামী আমরা যদি তাদের হুুকুম পালন করি, তাহলে আমারাও বিপদগামী হয়ে যাবো৷
ওহির বাণী আল কুরআনে আল্লাহ পাক আরো এরশাদ করেনঃ
অর্থাৎ: “যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর জিকিরে যাদের ক্বালব প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রেখো আল্লাহর জিকিরেই কেবল ক্বালব প্রশান্তি লাভ লাভ করে৷” (সূরাঃ আর রা’দ-১৩, আয়াত-২৮)
সদা সর্বদা মহান প্রভুর জ্বীকিরের দ্বারা আমাদের রুহ প্রশান্তি লাভ করে।ক্বালবে সর্বদা জ্বীকির জারি থাকলে পাপ কাজ থেকে সহজেই নিবৃত থাকা যায়।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেনঃ
[উচ্চারণ :আল্লাযীনা ইয়াযকুরূনাল্লাহা ক্বিইয়ামাও ওয়া ক্বু’ঊদাও ওয়া’আলা জুনূবিহিম৷]
অর্থাৎ: “তোমরা দাঁড়ানো বা বসা ও শায়িত অবস্থায় (অর্থাৎ সর্বাবস্থায়) আল্লাহর জ্বিকির করো” (সূরাঃ আলে ইমরান-৩,আয়াত-১৯১)
হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সাঃ) ফরমানঃ
“আদম সন্তানের হৃদয়ে শয়তান বাস করে, যখন সে হৃদয়ে জ্বিকির জারি হয় তখন শয়তান তীরের মত ভেগে যায়, যতক্ষন হৃদয়ে জ্বিকির জারি না হয় ততক্ষন শয়তান হৃদয়ে বসে কুমন্ত্রনা দিতে থাকে৷”
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেনঃ
অর্থাৎ: “জেনে রাখো! মানুষের শরীরের মধ্যে এক টুকরা গোশতো আছে, যখন তাহা পবিত্র হয়ে, তখন সারা শরীর পবিত্র হয়। আর তা যখন অপবিত্র থাকে, তখন সারা শরীর অপবিত্র থাকে৷ জেনে রাখো! সে গোশতের টুকরাটি হলো ক্বালব।”
(বুখারী শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৩৯-৪০: হাদিস, ৫০)
প্রখ্যাত তাফসিরকারক আল্লামা মাহমুদ আলুছি বাগদাদি রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত তাফসিরে বলছেন,
যাদের ক্বালব আল্লাহর জ্বিকির হতে গাফেল অর্থাৎ ক্বালব ব্যধিগ্রস্ত তাদের ভয়াভয় পরিনাম সম্বন্ধে মহান আল্লাহপাক আরো বলেনঃ
فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ ٱللَّهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۢ بِمَا كَانُوا۟ يَكْذِبُونَ
উচ্চারণঃ ফী কুলূবিহিম মারাদুন ফাঝা-দাহুমুল্লা-হু মারাদাওূঁ ওয়ালাহুম ‘আযা-বুন আলীমুম বিমা- কা-নূ ইয়াকযিবূন।
অর্থঃ “তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন।” (সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ১০)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ وَعَلَىٰٓ أَبْصَٰرِهِمْ غِشَٰوَةٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
উচ্চারণঃ খাতামাল্লা-হু ‘আলা- কুলূবিহিম ওয়া ‘আলা-ছাম‘ইহিম ওয়া‘আলা আবসা-রিহিম গিশা-ওয়াতুও ওয়ালাহুম ‘আযা-বুন ‘আজীম।
অর্থঃ আল্লাহ তাদের অন্তকরণ এবং তাদের কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা আল বাকারা (البقرة), আয়াত: ৭)
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَآ أُو۟لَٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَٰفِلُونَ
অর্থাৎ: “আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, (বাতেনী চোখ) তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে,(বাতেনী কান) তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল৷” (সূরা আল আরাফ (الأعراف), আয়াত: ১৭৯)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র আল কোরআনে ক্বালবের উপরে এমন ১৩২টি আয়াত নাযিল করেছেন৷ এবং ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
প্রত্যেকটি মানুষের ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করা অর্থাৎ ক্বালব জিন্দা করা ফরজ বা একান্ত কর্তব্য৷ আসুন! আমরা আল্লাহ মহান বন্ধুর এ সুমহান শিক্ষা গ্রহন করে গৌমরাহী থেকে উদ্ধার হয়ে ঈমানে পথে চলি। আমিন।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।