আধ্যাত্মিক গান বাজনা ও ছেমা মাহফিলের দলিল।
نَحْمَدُهُ وَتُصَلَّى عَلَى رَسُولِهِ الْكَرِيمِ امَّا بَعْدُ ! ابتداء السماع الغناء فَاعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ. قُلْ إِنْ كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ
অর্থঃ-হে রাসুল। (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম) আপনি ঘোষণা করুন-“যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসিতে চাও তবে আমার তাঁবেদারী কর, অর্থাৎ আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ পাক তোমাদিগকে ভালবাসিবেন। “(৩য় পারা, সুরা-আল এমরান, ৪ রুকু, ৩১ আয়াত)
‘এত্তেবা’ আম বা ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং ‘এতাআত’ খাছ বা বিশেষ অর্থ প্রকাশে। আবার ‘এত্তেবা’ বা অনুসরণের জন্যে আদেশের অপেক্ষা করিতে হয় না; এতাআতের জন্যে আদেশের প্রয়োজন হয়। এ আয়াতে কারীমার দ্বারা ইহা স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে, হুজুর রাসুলে কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামার এত্তেবা বা পদাংক অনুসরণ অর্থাৎ গোলামীর বদৌলতে ‘মরদুদ’ও মাশুকে পরিণত হয়, প্রেমাস্পদ বনিয়া যায়। এবং তাহার যাবতীয় গোনাহ-খাতা বা পাপরাশি মার্জনা হইয়া যায়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়-কদুর তরকারী খাওয়া ‘এত্তেবায়ে রাসুল’ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম।
হুজুর পোরনূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম কদুর তরকারী খাইতেন এবং উহা খুব পছন্দ করিতেন। যদি কোন তরকারীতে কদু পাইতেন, তবে পিয়ালার মধ্য হইতে কদুর টুকরাসমূহ আগ্রহ সহকারে তালাস করতঃ হুজুরে পাক খাইতেন। হজরত আনাছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-রাসুলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামার এই কর্ম দেখিয়া কদুর প্রতি ভালবাসা আমারও জন্মিয়া গিয়াছে (মুসলিম শরীফ)। ইমাম নববী (রাঃ) বলেন- প্রত্যেক বস্তু যাহা হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম ভালবাসিতেন উহা ভালবাসা মোস্তাহাব। (মাদারেজুন নবুওয়ত-১ম খন্ড, ৭৭০ পৃঃ)
খলিফা হজরত হারুনুর রশীদের দস্তরখানায় একবার কদুর তরকারী হাজির করা হইলে উপস্থিত একজন বলিলেন যে, ‘রাসুলে পাক ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম কদু খুব পছন্দ করিতেন।’ অপর এক ব্যক্তি বলিল-‘কদু আমার পছন্দ হয় না।’ তৎক্ষণাৎ, হজরত ইমাম আবু ইউছুফ (রাঃ) ঐ ব্যক্তিকে কাফের বলিয়া ফতুয়া প্রদান করতঃ তাহাকে কাতল করিতে তরবারী উত্তোলন করিলেন। তখন ঐ ব্যক্তি তওবা করতঃ মুক্তি পাইল। (শরহে ফেকহে আকবর)।
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক স্বীয় কালামে মজীদে ইরশাদ করিয়াছেন:-
قَدْ فَصَّلَ لَكُمُ مَا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ
অর্থ :- তোমাদের প্রতি যাহা হারাম করা হইয়াছে, অবশ্যই সে সম্বন্ধে বিশদভাবে, সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করা হইয়াছে । (সূরাহ আনয়াম, ১৪ রুকু, ১২০ আয়াত) ।
অতএব, বিপক্ষীয় দলের ১ম দলীল কোরআনে পাকের উল্লিখিত আয়াত দ্বারা কোনক্রমেই আধ্যাত্মিক-সংগীত বা ফকিরী গান-বাজনা হারাম প্রমাণ করা যায় না। তবে এতটুকু বলা যায় যে, কোন গান-বাজনা যদি ইসলামের প্রতিবন্ধকরূপে প্রকাশ পায় তখন উহা ‘লাহওয়াল হাদীছের’ অন্তর্ভূক্ত হইয়া সংগত উপায়েই হারাম প্রমাণিত হয়। যথা :- হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ ইমাম আল গাজ্জালী (রহঃ) ত্বদীয় জগদ্বিখাত কিতাব ‘এহইয়াউল্ উলুম’ কিতাব ২য় খন্ড ২৫১ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন ।
واماخراء لهو الحديث بالدين الستبد الابه ليضل به عن سبيل الله فهو حرام من موم وليس النزاع فيه وليس كل غناء بدلا عن الدين مشترى به ومضلاً عن سبيل الله تعالى وهو المراد في الآيات ولو قرأ القرآن به ليضل به عن سبيل الله كان حراما حكما عن بعض المنافقين انه كان يوم الناس ويقراء الاسورة عبس لما فيها من العقا
مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فهم عمر رضى الله عنه بقتله لما . رای فعله حرامًا لما فعله من الاضلال بالشعر وللغناء اولى بالتحريم
অর্থ :- ইসলামের পরিবর্তে লোকদিগকে পথভ্রষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে অলীক কথা ও কাহিনী খরিদ করা নিন্দনীয় ও হারাম। ইহাতে কাহারও মতভেদ নাই। কিন্তু সর্ব্ব প্রকার গান-বাজনা ইসলামের প্রতিকূলে বিক্রীত হইবার নহে। ইহাই আয়াতের মূল উদ্দেশ্য। পথ ভ্রষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গান-বাদ্য তো দূরের কথা কোরআন শরীফ পাঠ করিলেও হারাম হইবে। বর্ণিত আছে-জনৈক মুনাফিক লোক ইমামতি করিত, এবং সে প্রত্যেক নামাজে ছুরায়ে আবাছা ব্যতীত অন্য কোন ছুরাহ পাঠ করিত না। ঘুরাহ আবাছার মধ্যে আল্লাহ পাক নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামকে ভালবাসার ভিতর দিয়া কিঞ্চিৎ তিরস্কারমিশ্রিত বাণী শ্রবণ করাইয়া ছিলেন।
এই খবর হজরত উমর ফারুক (রাঃ) অবগত হইয়া উক্ত মুনাফিক ইমামের শিরোচ্ছেদ করিয়া দিলেন। কেননা, মুসলমানদিগকে গোমরাহ করিবার উদ্দেশ্যে তাহার উক্ত হারাম কার্য্যটি হজরত ফারুকে আজম (রাঃ) উপলব্ধি করিয়াছিলেন। অতএব, গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে যে গান-বাদ্য অনুষ্ঠিত হইবে তাহা অবশ্যই হারাম হইবে, কিন্তু উক্ত আয়াতের নিদর্শনে হারাম বলিয়া হারাম হইবেনা। যথা-শুকর ও মদ আয়াতের নিদর্শনে বিস্তারিত বর্ণনার মাধ্যমে হারাম হইয়াছে। সুতরাং, উল্লিখিত আয়াতকে গান-বাজনা হারাম বলিবার মানসে দলীলরূপে প্রয়োগ করা সম্পূর্ণরূপে অণুদ্ধ ও ভ্রমাত্মক। যে সমস্ত আয়াত দ্বারা হারাম প্রতীয়মান হইবে ঐ সমস্ত আয়াত আয়াতে কেয়ী (অকাট্য আয়াত) হওয়া আবশ্যক।
কোন বিষয় বা বস্তু হারাম প্রমাণের জন্যে আল্লাহর কালাম অনুযায়ী নিদ্ধারিত নিদর্শন ও আদেশের প্রয়োজন। এতদ্ব্যতীত, উল্লিখিত আয়াতটি হারেছের পুত্র নজর ও মুগিরার পুত্র ওলিদ যাহারা ইসলাম-বিদ্বেষী, মুসলমানদের ঘোর দুষমন ও খাঁটী কাফের ছিল; তাহাদের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হইয়াছে। কাজেই, উহা কোন মুসলমানের প্রতি প্রয়োগ করা নিতান্ত অন্যায় ও মহা পাপের কাজ। কেননা, সৎ উদ্দেশ্য ব্যতীত মন্দ উদ্দেশ্যেও যদি কেহ গান-বাজনা করে তবু সে কাফের হইবে না; বরং কবীরাহ্ গোনাহ্ হইবে। আমাদের হানাফী মজহাব অনুসারে কবীরাহ্ গোনাহকারী কাফের নহে। খারেজী-ওয়াহাবী দলের মতে কাফের, অর্থাৎ ইসলামের গণ্ডি হইতে বহির্ভূত।
পক্ষান্তরে, যে সমস্ত প্রেমিক বান্দা ও আওলিয়াগণ আল্লাহ তায়ালার প্রেমাসক্ত হইয়া তাহারা নূরের তাজাল্লি বর্ধিত করিবার মানসে স্বীয় অস্তিত্ব বিলুপ্ত করতঃ পূর্ণ-জ্যোতিতে বিলীন হওয়ার উদ্দেশ্যে আধ্যাত্মিক গান-বাদ্য করিয়া থাকেন ঐ গান-বাদ্য লাহওয়াল হাদীছের অন্তর্ভূক্ত নহে। (তফছীরে আহমদী ৬০৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)। আওলিয়ায়ে কেরামের শানে কখন ও ‘লাহওয়াল হাদীছ’ প্রয়োগ করা যাইবে না; বরং তাঁহাদের ছেমা বা আধ্যাত্মিক গান-বাদ্য আল্লাহ্ পাকের নিকট তাঁহাদের পদ-মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যে এবং কামালিয়াত বা পূর্ণতা লাভের নিমিত্তই অনুষ্ঠিত ও প্রতিপালিত হইয়া থাকে।
আল্লাহ্ পাক কোরআন মজীদকে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়কারী আনময় কিতাব রূপে আখ্যায়িত করিয়াছেন। আর আয়াতে হুকমিয়া বা নির্দেশাত্মক আয়াত দ্বারা উহা পরিপূর্ণ। কোরআনে পাকে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের সম্পর্কে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইহারা কোরআন শরীফ পরিত্যাগ করতঃ উহার সম্পূর্ণ বিপরীত জিনিষের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং উহাতে লিপ্ত হয়। অতঃপর কাফেরদের বিভিন্ন কু-কর্মের বর্ণনা প্রধান করিয়াছেন। প্রথমতঃ ইহারা হেকমত (জ্ঞান) ছাড়িয়া অলীক বা কাল্পনীক কথা-বার্তায়
লিপ্ত হওয়া অন্যায় কাজ। দ্বিতীয়তঃ যদি ঐ সকল কথা লাবুন অর্থাৎ অবাস্তব ও বেফায়দাজনক হইলে উহা আরও অধিক দোষাবহ।
লাহবুন অর্থাৎ কখন কখন মুখ-রোচক চাটনীর মতন চিত্ত-বিনোদনের উদ্দেশ্যেও করা হয়। যেমন-মোহাদ্দেছ দায়লামী (রাঃ) হজরত আব্বাছ (রাঃ) ও হজরত আনাছ (রাঃ) কর্তৃক রেওয়ায়েতকৃত মারফু হাদীছ বর্ণনা করিয়াছেন। যথা-হজরত নবী করিম ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম ইরশাদ ফরমাইয়াছেন – কখনও কখনও নির্মল আনন্দ দ্বারা তোমাদের অন্তরকে উৎফুল্ল রাখিও (ছহীহ্ মুসলিম শরীফ)।
সেমা সম্বন্ধীয় প্রশ্নও জওয়াব
سوال : اینکه چه می فرمایند علماء، طریقت غرا و فضلائے شریعت بیضا اندر این که تغنی بقرآن و غیر آن از اشعار و قصائد که در اصل معنی آنها فحش و منکر شرعی نبود جائزست یا نه و در قلب کسانیکه از غنار قت حاصل آید سماع ان برائے او شال عبادت است یا نه و رقص و حراكات و اهتزاز و تصفق و امثال ذلک برائے متواجدین صادقین درست یا نه ، بينوا وتوجروا
প্রশ্নঃ- উজ্জ্বল তরীকতের এবং প্রস্ফুটিত শরীয়তের আলেমগন এই বিষয়ে কি বলেন? ক্বারী সুরে কোর আন পাঠ, ইহা ব্যতীত অন্যান্য কছিদা, গজল ও গান মার সত্যকার অর্থে কোন ফাহেশা বা শরীয়তের-বিরুধী কিছুই নই। তা জায়েজ কিনা? গানের দ্বারা মদি কারো কলবে বা অন্তরে নরমী (রিকৃত) হাছেল হয় তার জন্য ইহা এবাদত কি না? সত্য অজদ কারীদের জন্য নৃত্য করা, কেঁপে উঠা, হাত তালী বাজানো ইত্যাদী জায়েজ আছে কিনা? পরিস্কার ভাবে বর্ননা করুন।
الجواب : یعنی بقرآن و غیر آن از اشعار و قصائد که در اصل معنی آنها فحش و منکر شرعی نبود جائز است حضرت خاتم المحدثین مولانا شاہ عبد الحق دھلوی رحمت اللہ علیہ در مدارج النبوة فرموده بدانکه سماع مشار الیه است بقول حق سبحانہ تعالی
জওয়াবঃ- ক্বারী সুরে কোরআন পাঠ, ইহা ব্যতীত অন্যান্য কছিদা, গজল ও গান মার সত্যিকার অর্থে কোন ফাহেশা বা শরীয়তের পরি পন্থী কিছুই নাই তা জায়েজই বটে। শেখ মোহাদ্দেছ মৌলানা শাহ্ আব্দুল হক দেহলভী (র:) মাদারে-জুন নবুয়ত নামক কিতাবে বলেছেন, জেনে রাখ খোদার বানী” “মাহারা” কথা শুনে এবং মাহা ভাল তার অনুসরন করে ” এবং “রসুলের প্রতি মা অবাতীর্ন তা যখন শুনে থাকে তখন তাদের চোখ থেকে অশ্রু বর্ষন হতে থাকে, তারা মে সত্য চিনেছে তার কারনেই ইত্যাদি আয়াতে সেআর প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। আওয়ারেফুল মাআরেফ্ নামক কিতাবে বর্নিত এই সেম’আ সম্বন্ধে কোন দুইজন মোমেন বিরুদ্ধাচরণ করে নাই, এই সেম’আ রহমত আকমন কারী।
তফছীরে আহমদী এবংতফছীরে ফল আজিজের সুরা মোজাম্মেলের অফছীরে ইহা বর্নিত হয়েছে:-
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت كانت عندى جارية تتغنى فدخل رسول الله صلى الله عليه وسلم وهى على حالها ثم دخل عمر فوت عمر فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال عمر ما يضحكك يا رسول الله صلى اله علیہ سلم فحدث حديث الجار قال لا ابر – حتى ما سمع رسول الله قامرها رسول الله عليه وسلم فاسمعته ذكرها في تفسير الاعمل
কুরআন মজিদের ৩০ পারায় ৬২৩৬টি আয়াত, গান হারাম কি হালাল তা কুরআন মজিদের কোথাও উল্লেখ নেই। যারা গানকে হারাম ঘোষনা করে বা নাজায়েজ বলেন তারা সুরা লোকমানের ৬ নম্বর আয়াতটির রেফারেন্স দেন। সেই আয়াতটিতে “লাহুয়াল হাদিস” শব্দটি আছে। তার অর্থ হলো অসার বাক্য, কটুবাক্য, ঠাট্টা তামাসা, বেহুদা কথাবার্তা, অপ্রয়োজনীয় আলাপচারিতা বা অন্তঃসার শূন্যবাক্য, গান যে জায়েজ একশটির বেশী হাদিস দ্বারা প্রমাণ করা যাবে। হাদিস ছাড়াও তাবেঈন তাবে তাবেঈন, আইয়ামে মুশতাহিদীন ও ইমামগণের দ্বারা প্রমাণিত আছে। হযরত ইমাম গাজ্জালী রচিত “ইয়াহিয় উলুমিদ্দিন” হযরত শাহ্ পীর চিশতী রচিত ‘বোরহান আশেকীন ” ও “শরফুর ইনসান”। ছহী বোখারী শরীফ ১ম খন্ড ৪র্থ ভাগ কিতাব বুল ইদায়ীন ১৩০ পৃষ্ঠা। ২য় খন্ডের ৭২৩ পৃষ্ঠা। ছহী মোসলেম শরীফ ১ম খন্ড ২৯১ পৃষ্ঠা। মিশকাত শরীফ মাশারে কুন আনোয়ারের ৯৯১ নম্বর হাদিস খাজানা ও কাফি নামক ফেকাহ কিতাব।
আবু বক্কর খেলাল ও আবদুল আজিজ রচিত কিতাব এবং আবু মোহাম্মদ ইবনে খোররম রচিত “মুফাস সালাত” কিতাব এহইয়াউলুমুদ্দিন, আওয়ারেফুল মারেফ। বোরহানুল আখেকান- কিতাবের ৮৩ পৃষ্ঠায় আল্লামা নাহরীর ইবনে কামাল এ জবাব।হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত কোন এক বিয়ের জলসার স্বয়ং উপস্থিত থেকে দফ বাজিয়ে বিয়ের আন-প্রচার করার জন্য আদেশ দিলেন। তিরমিযি শরীফ ১৩৭ পৃষ্ঠা।
হযরত রাসুল (সাঃ) নিজে বলেছেন বিয়ের আনন্দ হালাল না হারাম দফ বাজিয়ে গানের মাধ্যমে পৃথক করা যায়। দেখুন আহম্মদ, তিরমিযি নেছায়ে ইবনে মাজা। ইমাম আবু হানিফা। ইমাম সাফি বিয়ের আনন্দে দফ বাজানোকে মুসতাহাব বলেছেন। ইমাম মালেম ওয়াজেব বলেছেন
ছহী বোখারী শরীফ ২য় খন্ড ৭২৩ পৃষ্ঠায় বর্ণিত কোনো এক যুদ্ধ শেষ করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঘরে ফিরে আসলেন তখন এক দাসী হুজুরের কাছে আরজ করলেন হে আমার প্রিয় নবীজী। আমি মানত করেছিলাম যে আপনি যুদ্ধ থেকে ফিে আসলে আমি দফ বাজিয়ে গান করবো। নবীজী দাসীকে হুকুম দিলেন। হে দাসী তোমার মানত পূরণ করো। দাসী মিষ্টি সুে দফ বাজিয়ে গান শুরু করলো। সেখানে হাজির হলেন হযরত আবু বক্কর ছিদ্দিক (রঃ) হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত ওসমা (রাঃ) এমন সময় হযরত ওমর ফারুক (রঃ) হাজির হলে দাসী গান বন্ধ করে দফ লুকাইয়া ফেলে, হুজুর পাক (সঃ) হেে বললেন হে ওমর। তোমাকে শয়তান দেখলে ও ভয় পায়। তোমার জালালী চেহারা দেখে মেয়েটিও ভয় পেয়েছে।
তিরমিযি-২য় খন্ডে ২০৯ পৃষ্টায় গান বাজনা মানত জায়েজ এবং তা পূরণ করা ওয়াজেব বলা হয়েছে। একদিন হযর আয়েশা ছিদ্দিক (রাঃ) এর ঘরে নবীজি হাজির ছিলেন। তখন এক বালেগা মেয়ে দফ দিয়ে গান করছিলো, এমন সময় হযর ওমর ফারুক (রঃ) প্রবেশ করার মেয়েটি গান বন্ধ করে পর্দার আড়ালে চলে যায়। রাসুল (সঃ) তখন হাসলেন। এবং হযর ওমর ফারুক (রঃ) নবীজিকে জিজ্ঞাসা করলেন হে নবীজি, আপনি হাসলেন কেন? তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, দাসী মেয়ে আয়েশা ছিদ্দিক (রাঃ) এর ঘরে নবীজি হাজির ছিলেন। তখন এক বালেগা মেয়ে দফ দিয়ে গান করছিলো, এমন সময় হযরত ওমর ফারুক (রঃ) প্রবেশ করার মেয়েটি গান বন্ধ করে পর্দার আড়ালে চলে যায়।
রাসুল (সঃ) তখন হাসলেন। এবং হযরত ওমর ফারুক (রঃ) নবীজিকে জিজ্ঞাসা করলেন হে নবীজি, আপনি হাসলেন কেন? তখন রাসুল (সাঃ) বললেন, দাসী মেয়েটি গান কর ছিলো তোমার ভয়ে পর্দার আড়াল হলো, হযরত ওমর ফারুক (রঃ) বললেন আমি গান না শুনে এখান থেকে যাবো না। তখন আবার গান শুরু হলে হুজুর (সঃ) ও ওমর ফারুক গান শুনে মোহিত হয়ে গেলেন। (তাফসীরে আহমদী ৬০১ পৃষ্ঠা)।
মিজানুল এতেদাল” নামক প্রসিদ্ধ উসুলের হাদিসের প্রথম খন্ডে ৪৮ পৃষ্টায় লিখিত আছে। হযরত ইমাম বোখারী, ইমাম সাফেঈ ইমাম আহমদ হাম্বল, ইমাম সাবা প্রমুখ ইমাম ও মুহাদ্দেস গণের ওস্তাদ, হাদিস শরীফের হাফেজ ও ছাক্কা হযরত ইব্রাহিম ইবনে ছায়াদ উদ নামক বাদ্য যন্ত্রের দ্বারা গান শুণেছেন। মসনাদ ইমাম আহমদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে একদা একজন হাফসী রাসুল (সাঃ) এর সম্মুখে দফ বাজিয়ে নাচতে ছিলেন এবং গাইছিলেন যে রাসুলুন মুহাম্মাদুন আবদুন সোয়েলেহুন এই হাদিস দ্বারা পবিত্র ভাব নিয়ে প্রেমাস্পদের জন্য নৃত্য করা জায়েজ এবং গান বাজনা হালাল হওয়ার পক্ষে অকাট্য দলিল। আমতা নামক কিতাবে গান বাজনাকে অন্তরের একাগ্রতার জন্যে। খোদার ভয়কে বৃদ্ধি করার জন্যে খোদার দর্শন লাভের জন্য বলা হয়েছে। “জাখিরা ফেকাহ” নামক কিতাব রাগ রাগিনী শোনা ও নৃত্য করা এবং দফ বাজনাকে হারাম নয় বলা হয়েছে।
মওলানা আবদুল হক দেহলভী মুহাদ্দেস সাহেবের রচিত কিতাব মোদারেসন্না নবুয়্যত” হতে জানা যায় – চার মাজহারের ইমাম গণ ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম সাফেঈ, ইমাম মালেক, ইমাম হাম্বলী ও তাদের সহচরগণ সামাবা গানকে হালাল বলে প্রমাণ করেছেন।
“এই ইয়া উলুমুদ্দিন” দ্বিতীয় খন্ড ২৪৩ পৃষ্টায় বর্ণিত যার অন্তরকে সামা বা গান আকৃষ্ট করেনা, সে নিশ্চয়ই পতিত স্বভাব, রূহানিয়াত হতে বঞ্চিত ও কুট চরিত্র বিশিষ্ট অনির্মল অন্তর। উঠও পাখি সমূহ হতে নীচ এবং যাবতীয় পশু হতে ঘৃণিত।
– ছৈয়দ হাসনাইন মুত্তাকিন