ইবনে আব্বাস (রা:) মুয়াবিয়াকে গাধার সাথে তুলনা করেছেন।
বুখারির একটি হাদিস আছে, যেখানে ইবনে আব্বাস মুয়াবিয়ার এক রাকাত বিতর পড়াকে সঠিক বলেছেন এবং তাকে ফকিহ আখ্যা দিয়েছেন! কিন্তু বাস্তবতা হল ইবনে আব্বাস মুয়াবিয়াকে গাধা বলেছেন! ইমাম তাহাবি বলেছেন, ঐ রেওয়ায়াতে ইবনে আব্বাস মুয়াবিয়াকে যে সমর্থন জানিয়েছেন, তা মূলত ছিল তাকিয়া!
কেউ যদি মুয়াবিয়ার সমর্থনে ইবনে আব্বাসের এই হাদিস উল্লেখ করে, তবে তাকে কী জবাব দেয়া হবে সেটা ইমাম আবু জাফর তাহাবী তার শারহু মাআনিল আসার কিতাবে লিখেছেন। তিনি বলেন,
قِيلَ لَهُ: قَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ فِي فِعْلِ مُعاوِيَةَ هَذا ما يَدُلُّ عَلى إنْكارِهِ إيّاهُ عَلَيْهِ. وذَلِكَ
١٧١٩ – أنَّ أبا غَسّانَ مالِكَ بْنَ يَحْيى الهَمْدانِيَّ حَدَّثَنا قالَ: ثنا عَبْدُ الوَهّابِ بْنُ عَطاءٍ، قالَ: أنا عِمْرانُ بْنُ حُدَيْرٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ أنَّهُ قالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبّاسٍ عِنْدَ مُعاوِيَةَ نَتَحَدَّثُ حَتّى ذَهَبَ هَزِيعٌ مِنَ اللَّيْلِ، فَقامَ مُعاوِيَةُ، فَرَكَعَ رَكْعَةً واحِدَةً، فَقالَ ابْنُ عَبّاسٍ: «مِن أيْنَ تُرى أخَذَها الحِمارُ»
١٧٢٠ – حَدَّثَنا أبُو بَكْرَةَ، قالَ: ثنا عُثْمانُ بْنُ عُمَرَ، قالَ: ثنا عِمْرانُ، فَذَكَرَ بِإسْنادِهِ مِثْلَهُ إلّا أنَّهُ لَمْ يَقُلِ الحِمارُ وقَدْ يَجُوزُ أنْ يَكُونَ قَوْلُ ابْنِ عَبّاسٍ «أصابَ مُعاوِيَةُ» عَلى التَّقِيَّةِ لَهُ، أيْ أصابَ فِي شَيْءٍ آخَرَ لِأنَّهُ كانَ فِي زَمَنِهِ، ولا يَجُوزُ عَلَيْهِ عِنْدَنا أنْ يَكُونَ ما خالَفَ فِعْلَ رَسُولِ اللهِ ﷺ الَّذِي قَدْ عَلِمَهُ عَنْهُ صَوابًا. وقَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ عَبّاسٍ فِي الوِتْرِ أنَّهُ ثَلاثٌ
“তাকে বলা হবে, ইবনে আবাস থেকে এমন বর্ণনা এসেছে যার মাধ্যমে মুয়াবিয়ার কাজের প্রতি তার নিন্দা জানা যায়। তা হল – আবু গাসসান মালিক বিন ইয়াহিয়া হামদানি বলেন, আব্দুল ওয়াহহাব বিন আতা বলেছেন, আমাদের ইমরান বিন হুদাইর ইকরিমা থেকে বলেছেন, “আমি ইবনে আব্বাসের সাথে মুয়াবিয়ার কাছে কথাবার্তা বলছিলাম। রাতের প্রথম প্রহর পেড়িয়ে গেলে মুয়াবিয়া উঠে পড়ে এবং এক রাকাত বিতর পড়ে। ইবনে আব্বাস আমাকে বললেন, “গাধাটা এটা কোত্থেকে শিখেছে বলে মনে হয়?”
এছাড়াও আবু বাকরা আমাদের বলেছেন যে, উসমান বলেছেন, তারপর অনুরূপ সনদ উল্লেখ করেছেন তবে তিনি গাধার কথা উল্লেখ করেন নি।
হতে পারে ইবনে আব্বাস মুয়াবিয়ার ব্যাপারে “সঠিক করেছে” কথাটি তাকিয়া হিসেবে বলেছেন, অর্থাৎ তিনি অন্য কাজের ব্যাপারে বুঝিয়েছেন সঠিক করেছেন, এই কাজে না। মুয়াবিয়ার আমলে হওয়ায় তিনি এমনটি করেছিলেন। কারণ রাসুলের কাজের বিপরীতে কিছু করা হবে এবং ইবনে আব্বাস সেটি জানবেন, তারপরও তিনি তাকে সঠিক বলবেন এটা আমাদের দৃষ্টিতে সম্ভব না। খোদ ইবনে আব্বাস থেকেই বর্ণিত আছে, তিনি ৩ রাকাত বিতর পড়তেন।”
আল্লামা যাহেদ কাওসারী এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন,
وفي لفظ بكار بن قتيبة عن عثمان بن عمر عن عمار عن عكرمة عن ابن عباس (من أين أخذها) فلعل بكار تورع عن النطق بكلمة الحمار . والله أعلم . ووقع الحديث السابق بلفظ (أصاب) فقط في رواية الطحاوي والبيهقي فلو صح عن ابن عباس هذا لحمل على التقية لأنه حاربه تحت راية علي كرم الله وجهه فلا مانع من أن يحسب حسابه في مجالسه العامة دون مجلسه الخاص
“বাক্কার বিন কুতায়বা, উসমান বিন উমার, আম্মার, ইকরিমার সুত্রে ইবনে আব্বাসের যে বর্ণনা এসেছে তাতে গাধা শব্দটি নেই। সম্ভবত বাক্কার এই শব্দ উল্লেখ করতে ভীত ছিলেন। ওয়াল্লাহু আলাম। তাহাবি ও বায়হাকির বর্ণনায় কেবল ‘সঠিক করেছে’ শব্দ আছে। যদি এটা ইবনে আব্বাস সত্যসত্যই বলে থাকেন, তবে একে তাকিয়া হিসেবে ব্যাখ্যা করা হবে। কারণ তিনি আলীর পতাকার নিচে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তাই এমন হওয়া সম্ভব যে, তিনি সকলের জন্য উন্মুক্ত মজলিসে এসব বিবেচনায় নিয়ে কথা বলতেন, কিন্তু ব্যক্তিগত মজলিসে তা বলতেন না।”
সুত্র: আন নুকাতুত তরিফা, যাহেদ কাওসারি, পৃ ১৯৯।
—শেখ সাদী