হোমপেজ প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য রাজা গৌড়গোবিন্দের শাষণ

রাজা গৌড়গোবিন্দের শাষণ

518
হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর দরগাহ, সিলেট।

রাজা গৌড়গোবিন্দের শাষণ

শ্রীহ‌ট্ট। রাজা গৌড়গোবিন্দের শাষণ। প্রচন্ড প্রতাপ তার। যা বল‌বে তাই সবার জন্য শি‌রোধার্য। রাজা ঘোষণা দি‌লেন, রা‌জ্যের কোথাও গরু কোরবানী দেয়া যা‌বে না। গরু কোরবানী দি‌লে শা‌স্তি পে‌তে হ‌বে। শ্রীহ‌ট্টের সংখ্যালঘু মুসলমান‌দের একজন বুরহান উদ্দীন। হঠাৎ তি‌নি মান্নত ক‌রে বস‌লেন, য‌দি আল্লাহ পুত্র সন্তান দান ক‌রেন ত‌বে গরু কোরবানী কর‌বেন। কিছু‌দিন প‌রে বোরহান উদ্দী‌নের ঘ‌রে আগমণ হ‌লো ফুট‌ফু‌টে পুত্র সন্তানের।

মান্নত পুরা কর‌তে বুরহান উদ্দীন গৌড়গোবিন্দের লোকজ‌নের চো‌খের আড়া‌লে গরু কোরবানী দি‌য়ে দি‌লেন কিন্তু একটা কাক এক টুক‌রো গরুর গোস্ত নি‌য়ে ফেল‌লো গৌড়গোবিন্দের রাজ প্রসা‌দে। রাজার গো‌য়েন্দারা খোঁজ নি‌য়ে জান‌তে পার‌লো, বুরহান উদ্দীন গরু জবাই ক‌রে‌ছে। আর যায় কোথায়, রাজার নি‌র্দে‌শে তার হাত কে‌টে দেয়া হ‌লো।

‌হাত হা‌রি‌য়ে পুত্র সন্তা‌ন জ‌ন্মের সব আনন্দ ম্লান হ‌য়ে গে‌লো। বোরহান উদ্দীন ভগ্ন হৃদ‌য়ে অ‌ভি‌যোগ জানা‌লো বাংলার তৎকালীন শাসক শামস উদ্দীন ফিরোজ শাহের দরবা‌রে। ফি‌রোজ শাহ ঘটনা জান‌তে পে‌রে সময় ক্ষেপণ না ক‌রে ভাগ্নে সিকান্দর গাজীর ‌নেতৃ‌ত্বে গৌড়গোবিন্দকে সাজা দেয়ার জন্য সেনাদল পা‌ঠি‌য়ে দি‌লেন। যু‌দ্ধের ময়দা‌নে রাজা গৌড়গোবিন্দ যাদুবিদ্যার প্র‌য়োগ শুরু ক‌রে দি‌লে মুসলমানরা কুলিয়ে উঠতে না পে‌রে পিছু হ‌টে ফি‌রে এ‌লো।

বাংলার সেনাবা‌হিনীর ব্যর্থতার খবর জান‌তে পে‌রে দি‌ল্লির তৎকালীন শাষক আলাউদ্দিন খিলজী সৈয়দ নাসির উদ্দিন রহ.-‌কে সিপাহসালার ক‌রে বা‌হিনী প্রেরণ ক‌রলেন। এ‌দি‌কে বুরহান উ‌দ্দিন দিল্লীতে নিজামউদ্দিন রহ.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে শ্রীহ‌ট্টের ঘটনা বর্ণনা কর‌লে সেখা‌নে উপ‌স্থিত হযরত শাহজালাল রহ. শ্রীহ‌ট্টে আসার আগ্রহ প্রকাশ ক‌রে দি‌ল্লি থে‌কে রওনা হন। প‌থিম‌ধ্যে হযরত শাহজালাল রহ.-এর সা‌থে সৈয়দ নাসির উদ্দিন রহ.-‌এর সাক্ষাৎ হয় এবং তি‌নি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ ক‌রেন।

পথ চল‌তে চল‌তে হযরত শাহ জালা‌ল রহ.- এর সা‌থে আরও অ‌নে‌কে যুক্ত হন। তাঁরা ব্রহ্মপুত্র ন‌দের পা‌ড়ে উপ‌স্থিত হ‌য়ে দে‌খেন রাজা গৌর‌গো‌বিন্দ সকল নৈযান চলাচল বন্ধ ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। সেসময় শাহ জালাল রহ.-এর নি‌র্দে‌শে সবাই জায়নামা‌জে ক‌রে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং একইভা‌বে পরবর্তী‌তে সুরমা নদী‌ও পার হন।

হযরত শাহ জালাল রহ.-এর কারামত জান‌তে পে‌রে গৌড়গোবিন্দ বুঝ‌তে পে‌রে‌ছি‌লো যে, তাঁর সাম‌নে দাঁড়ি‌য়ে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। তাই নিজ রাজ্য বাঁচা‌নোর শেষ প্রচেষ্টা হি‌সে‌বে সে যাদুর আশ্রয় নি‌লো। একটা লৌহধনুক পা‌ঠি‌য়ে‌ ব‌লে দি‌লো, য‌দি তোমা‌দের কেউ এটার সাহা‌য্যে তীর নি‌ক্ষেপ কর‌তে পা‌রে ত‌বে আমি রাজ্য ছে‌ড়ে চ‌লে যা‌বো।

শাহ জালাল রহ. তাঁর সা‌থী‌দের ম‌ধ্যে এমন একজন‌কে তীর ছুড়‌তে বল‌লেন, যে জীব‌নে কোন‌দিন ফজ‌রের নামায কাজা ক‌রে‌নি। সেসময় কেউই সাম‌নে এ‌লো না। ক্ষীণ দে‌হের অ‌ধিকারী সিপাহসালার সৈয়দ নাসির উদ্দিন রহ. এ‌গি‌য়ে গে‌লেন, “আল্লাহু আকবার” ধ্ব‌নি উচ্চারণ করে সফলভা‌বে তীর নি‌ক্ষেপ কর‌লেন।

পরাজয় মে‌নে নি‌য়ে রাজা গৌরগোবিন্দ রাজ্য ছেড়ে চলে গেল। সে‌দি‌নের প‌রে শ্রীহ‌ট্টের নাম হ‌য়ে গে‌লে “জালালাবাদ” যা এখন সি‌লেট। বছর‌টি ছি‌লো ৭০৩ হিজরী। তার ক‌য়েক বছর প‌রে শাহ জালাল রহ.-এর মু‌র্শিদ সাই‌য়্যেদ আহমদ কবীর রহ. ই‌ন্তেকাল ক‌রেন। দিন‌টি ছি‌লো ২৬ শাওয়াল। তখন থে‌কে প্র‌তি বছর ২৬ শাওয়াল “‌সি‌লেট ‌বিজয়” ও সাই‌য়্যেদ আহমদ কবীর রহ. ই‌ন্তেকাল বা‌র্ষিকী পা‌লিত হ‌য়ে আস‌ছে।

আবু সা‌লেহ / ৩০ জুন, ২০১৯