রাসূল (সা:) এর পবিত্র দেহ মোবারক দাফন কাফন ছাড়া তিন দিন জমিনে পড়ে ছিল তা কি মুসলিম জাহানের সকলেই জানে?
রাসূল (সা:) সর্ব্দ্রষ্টা। তিনি সবই জানতেন। তিনি জগৎ সংসার থেকে বিদায় গ্রহণ কালে কিছু সাহাবীদের বিদ্রোহী মনোভাব বিশেষ ভাবে লক্ষ করিলেন। তাই তিনি কাগজ কলম লইয়া আসিতে বলিলেন, বিশেষ একটি নির্দেশের কথা পূনরুক্তি করিয়া উহা অনুস্বরণের তাগিদ দিয়া যাইবার জন্য। যাহাতে তাঁহার উম্মত আর কখনও বিভ্রান্তির পথে না যায়,শেষ নির্দেশ দানের মধ্যে প্রধান লিখিতব্য বিষয় ছিল আলী (আ:)এর মাওলাইয়াতকে মানিয়া চলিবার নির্দেশ।মাওলাইয়াত মানিয়া লইবার গুরুত্ব এবং উহা মানিয়া লইবার বিশেষ দুই একটি প্রয়োজনীয় তাগিদ দান করাই ছিল রাসূলের শেষ কথা ‘’হাদীসে কেরতাস ‘’এর লিখিতব্য বিষয়।
মাওলাইয়াত বিরোধীগণ ইহা বুঝিতে পারিয়াই উহা লিখিবার পথে বাঁধা সৃষ্টি করিল বল প্রয়োগের দ্বারা, পূর্বেই তাঁহারা দল বাঁধিয়া আসিয়াছিল। দেখাগেল উপস্থিত শিষ্যদের অধিকাংশ রাসূল (সা:) এর মতের বিরুদ্ধবাদী অর্থাৎ: আলী (আ:) এর মাওলাইয়াত মানিয়া চলিবার পক্ষপাতী নহে, তাঁহারা ক্ষমতার লোভে বিদ্রোহী হইয়াগেল। অধিকাংশ উম্মতের ধর্ম্দ্রোহী ভাবটি কুফরী রুপে আত্ব প্রকাশ করে নাই, বরং উহা ছিল মোনাফেকী রুপে। অন্তিম শর্য্যায় রাসূল (সা:)এর উম্মতগণ তাঁহার মুখের উপর তেনার নির্দেশ অমান্য করিল।
অত্যন্ত ভগ্ন হৃদয়ে রাসূল (সা:) পর্দানিশানী হইয়া গেলেন। বিরোধী দল অন্তর বিপ্লব শুরু করিয়া দিল। যাহাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা রাসূলের নিয়োজিত প্রতিনিধি মওলা আলী (আ:) এর হস্তগত না হয়। বিরোধী দল সমস্ত মদীনায় ভিতরে ভিতরে দল পাকাইয়া ফেলিল আলী (আ:) এর বিরুদ্ধে। বিদ্রোহীদের নেতা দ্বারা লোক দেখানোর জন্য নামে মাত্র কেউ কেউ (পাঠক নাম প্রকাশ করিলাম না) তরবারী উন্মুক্ত করিয়া উন্মত্ত পাগলের মত তরবারী ঘুরাইতে ঘুরাইতে বলিতে লাগিলেন, রাসূল ইন্তেকাল করেছেন আমি বিশ্বাষ করিনা।
রাসূল ইন্তেকাল করেছেন একথা যে বলিবে আমি তার গর্দাণ কেটে ফেলিব ইত্যাদি প্রলাপ বলিতে ছিল।আর একজন সাহাবী তিনি রাসূলের পবিত্র দেহ মোবারক দেখে এসে প্রথম ব্যক্তির ঐরুপ মত্ততা দেখিয়া মসজীদের আঙ্গিনায় সকলকে বলিলেন যাহারা মোহাম্মদের পূজা করিত তাঁহারা জানিয়া রাখ সেই মোহাম্মদ মরিয়া গিয়াছেন। আর যাহারা আল্লাহর পূজা কর, তাঁহারা জানিয়া রাখ আল্লাহ চিরন্জীব। আল্লাহ কখনও মরেণ না। তাঁরপর তিনি বলিলেন মোহাম্মদ একজন রাসূল ব্যাতিত অন্য কিছু নহেন। তাঁর পূর্বে বহু নবী ও রাসূল অতিত হইয়া গিয়াছেন। তিনি যদি মরিয়াও যান বা কতল হইয়াও যান তবে কি তোমরা পশ্চাদ পদ হইয়া ফিরিয়া যাইবে।
সেই দিন মদীনায় গোলোযোগ সৃষ্টি হইল। মওলা আলীর বিরোধীগণ মদীনা ত্যাগ করিয়া বনি সাকিবায় চলিয়া গেলেন এবং এক প্রকার নির্বাচন করিয়া প্রথম খলিফা নিয়োগ করিল। যাহা হউক রাসূলের পর্দানিশানীর তৃতীয় দিন অতিবাহিত হইতে চলিল, অথচ তেনার পবিত্র দেহ এখনও জমিনে পড়ে রইল। এদিকে হাশেমী বংশ ও সামান্য কিছু মদীনার আনসারগন রাসূলের বিয়োগে শোক – সন্তপ্ত অবস্থায় অভিভুত হইয়া পরেন, এবং তৃতীয় দিবসে আলী (আ:) এর নেতৃত্বে রাসূলের দাফন কাফন সম্পন্ন্ করা হয়। এদিকে নির্বাচিত খলিফা তাঁহার দলবল নিয়ে ঢোল বাজিয়ে মদীনায় আসলেন। তাঁরা পূর্বেই অবগত ছিলেন যে রাসূলের দাফন কাফন মওলা আলী (আ:) এর নেতৃত্বে সম্পন্ন করা হইয়াছে।
তখন তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, রাসূলের দেহ মোবারক কবর থেকে উঠিয়ে তাঁদের ইচ্ছামত দাফন কাফন করবেন। তাঁহাদের এইরুপ সিদ্ধান্তের কথা মওলা আলী (আ:) জানিতে পারিয়া তাঁহার জুলফিকার তরবারী লইয়া রাসূলের কবরের উপর বসিয়া পড়িলেন,তাঁহাদের এই রুপ কাজের বাঁধা দেওয়ার জন্য। তাঁহারা আলীর নিকটে আসিয়া একে অন্যর মুখ চাহিতে লাগিল, তখন এক সাহাবী নির্বাচিত খলিফাকে লক্ষ করিয়া বলিলেন আপনি আমাদের নির্বাচিত খলিফা, হুকুম করুন আমরা আলীকে আক্রমণ করি।
তখন খলিফা চিন্তা করিয়া বলিলেন আমি রাসূলকে বলতে শুনিয়াছি যে, এমন সময় আসিবে যখন আলী মাটির ঘোড়ায় সওয়ার হইবেন তখন যেই তাঁহার মোকাবেলা করিবে সে কাফের হইয়া মারা যাইবে। আমার মনে হয় ইহা সেই মাটির ঘোড়া। এইরুপ ভেবে তাহারা তাঁহাদের সিদ্ধান্ত ত্যাগ করিল।—পরিশেষে বলতে চাই রাসূলের জন্য কাঁদেনা যার প্রাণ, ইসলামের লেবাস থাকলেই কি হয় সে মুসলমান!
সুত্র: শানে পাক পাঞ্জাতন ও মওলার অভিষেক এবং ইসলামে মতভেদের কারণ রেজা মাহবুব চিশতী ও মহাত্মা শাহ সুফি সদর উদ্দিন চিশতী