আল্লাহ পাক স্বয়ং মুয়াবিয়ার কর্মকে জাহান্নামী বলছেন।

আল্লাহ পাক স্বয়ং মুয়াবিয়ার কর্মকে জাহান্নামী বলছেন।

সূরা আন নিসা (النّساء), আয়াত: ৯৩

وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُۥ جَهَنَّمُ خَٰلِدًا فِيهَا وَغَضِبَ ٱللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُۥ وَأَعَدَّ لَهُۥ عَذَابًا عَظِيمًا

উচ্চারণঃ ওয়া মাইঁ ইয়াকতুলমু’মিনাম মুতা‘আম্মিদান ফাজাঝাউহূজাহান্নামুখা-লিদান ফীহা-ওয়া গাদিবাল্লা-হু ‘আললইহি ওয়া লা‘আনাহু ওয়া আ‘আদ্দাল্লাহু ‘আযা-বান ‘আজীমা-।

অর্থ: “যে ব্যাক্তি জ্ঞাতসারে মোমিন কে হত্যা করে তাহার পুরষ্কার জাহান্নাম, উহাতে সে স্থায়ী হইয়া থাকিবে এবং তাহার উপরে আল্লাহর গজব ও লানত, এবং তাহার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত করিয়াছেন৷”

এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নেন কোরআন মানবেন নাকি মুয়াবিয়াকে ভালবেসে যাবেন। কারণ মুয়াবিয়া সিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলীর পক্ষের হাজার হাজার বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করেছে। তাছাড়া সে এই যুদ্ধে বিখ্যাত আশেকে রাসূল ওয়াইজ করণী রাঃ কে হত্যা করে। আর তারা সবাই ছিলেন প্রথম শ্রেণীর মুমিন।

কাফের মুয়াবিয়া অনুসারীদের অভিযোগ, যেহেতু মাওলা আলী আর মুয়াবিয়া পরবর্তীতে আপোষ হয়ে গেছে। তাই দুই পক্ষের সাহাবীরা শহীদের মর্যাদা লাভ করছে। দুই পক্ষের লোকজনই মুমিন ছিলো। অথচ আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করছেন, কেউ মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে সে চির জাহান্নামী।

এখানে আল্লাহ তায়ালা কাফের ও মোনাফেকদের উদ্দেশ্য করে বলছে, তারা মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে চির জাহান্নামী। কারণ আল্লাহ তায়ালা ভালো করেই জানেন এক মুমিন ব্যক্তি কখনো অন্য মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারে না। কারণ মুমিন ব্যক্তির দীল হলো আল্লাহর আরশ। মুমিন ব্যক্তি নামাজের ভিতর সেজদা দেওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ হয়।

আমি মুয়াবিয়া অনুসারীদের কথা অনুযায়ী ধরে নিলাম দুই পক্ষের লোকজনই মুমিন। তাহলে আল্লাহ বলেছেন, কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলেই সে চির জাহান্নামী। তাহলে তাদের কথা অনুযায়ী বোঝা যায় দুই পক্ষের লোকজনই চির জাহান্নামী। কারণ আল্লাহর এই পবিত্র কুরআন শরীফের কথা কিভাবে উল্টাবেন। যদি বলেন তারা উভয় পক্ষই জান্নাতী, তাহলে আল্লাহ তায়ালা মিথ্যাবাদী হয়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ )।

কারণ আল্লাহ তায়ালা ন্যায় বিচারক। ন্যায় বিচারের স্বার্থে তার কাছে সকলেই সমান। কে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, ইহুদি, মুসলমান, কাফের, মোনাফেক এগুলো আল্লাহর নিকট বিবেচ্য বিষয় নয়। ন্যায় বিচার করতে হলে তিনি শুধু মানুষের অপরাধগুলো দেখবেন, অন্য কিছু নয়।

যেসব কাফেররা রাসূল পাক সঃ সাথে যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে মুমিন সাহাবীদের হত্যা করেছিলো তারা সবাই চির জাহান্নামী। কারণ তারা মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলো। যখন শেষ বিচার হবে তখন এই সকল কাফেররা যদি আল্লাহকে বলে, হে আল্লাহ তুমি তো ন্যায় বিচারক। আমরা তোমার মুমিন বান্দাকে হত্যা করে চির জাহান্নামী হলাম, ঠিক আছে মেনে নিলাম। কিন্তু যারা সিফফিনের যুদ্ধে শতশত মুমিন আরেক দলের শতশত মুমিনকে হত্যা করলো, তারা কিভাবে আজ জান্নাতী হলো। আল্লাহ তুমি বলো, তুমি কিভাবে এখন ন্যায় বিচারক হলে। আপনারা কি আল্লাহকে এমনটি চান? নিশ্চয়ই আমার আল্লাহ এমন নয়। আল্লাহ তায়ালা সবার ক্ষেত্রে সমান বিচার করবে।

তাহলে মোনাফেক মুয়াবিয়ার অনুসারীদের কথা অনুযায়ী বুঝা যায় যে, মাওলা আলীসহ তার অনুসারীরা এবং মোনাফেক মুয়াবিয়াসহ তার অনুসারীরা সকলেই জাহান্নামী। কারণ তারা দুই দলই মুমিন নয়। (নাউজুবিল্লাহ)। কারণ মাওলা আলী হলেন সকল মুমিন মুসলমানের অভিভাবক। মাওলা আলী হলেন জান্নাতের সর্দারনী মা ফাতেমার স্বামী এবং জান্নাতের সর্দার মাওলা ইমাম হাসান ও হোসাইনের পিতা। তাই তো রাসূল পাক সঃ যতার্থ বলেছেন, “ওহে আলী মোনাফেক তোমাকে কখনো ভালোবাসবে না এবং মুমিন ব্যক্তি কখনো তোমার বিদ্বেষ পোষণ করবে না।”

আরে ভাই যুদ্ধ ক্ষেত্রে কখনো দুই পক্ষ হক থাকতে পারে না। এক পক্ষ হক এবং অপর পক্ষ বাতিল থাকে। হকে হকে কখনো যুদ্ধ হয় না। এটা পৃথিবীর সৃষ্টির ইতিহাসে কোথাও দেখাইতে পাবেন না। এখন সিদ্ধান্ত আপনার কাছে, মাওলা আলী হক নাকি মোনাফেক মুয়াবিয়া হক।

আবার মোনাফেক মুয়াবিয়ার অনুসারীরা বলে থাকে বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী এবং বিখ্যাত ওলী-আল্লাহরা মুয়াবিয়াকে মোনাফেক বলেনি। মুয়াবিয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠাতাকারী উমাইয়া খিলাফত রাষ্টীয় ক্ষমতায় ছিলো ৮৯ বছর এবং ওলী-আল্লাহ বিদ্বেষ পোষণকারী আব্বাসীয় খিলাফত ছিলো ৫০৮ বছর। এই সময়ে বড় পীর আবদুল কাদের জিলানী এবং বিখ্যাত ওলী-আল্লাহগণ জন্মগ্রহণ করেন। তখন মূলত ওলী-আল্লাহ বিদ্বেষী অর্থাৎ ভ্রান্ত এজিদের ইসলামের রাম রাজত্ব চলছিলো। তাই অলী আল্লাহরা শুধু ইলমে তাসাউফ দিয়ে মানুষকে হেদায়েত দিয়ে যাচ্ছিল মানুষকে সঠিক পথে আনার জন্য।

তবুও প্রতিটি ওলী-আল্লাহ অসংখ্য নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হতে হয়। বড় পীর আবদুল কাদের জিলানীকে তৎকালীন বিখ্যাত ৯০০ আলেম ৭০ বার মহাসমাবেশ করে কাফের ফতোয়া দেয়। তাছাড়া মনসুর হিল্লাজকে আনাল হক বলার কারণে তাঁকে রাষ্ট্র শূলে চড়িয়ে হত্যা করে। একবার ভাবুন তখন কিরুপ অরাজকতা চলতে ছিলো। তাই এরুপ বিরুপ প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে না গিয়ে মোয়াবিয়াকে নিয়ে কিছু বলেননি ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে।

তাই তারা শুধু সুফিবাদ অর্থাৎ ইলমে মারেফাত খুবই গোপনে সুকৌশলে প্রচার করে গেছে। আজও সেই ধারাবাহিকভাবে ১৪০০ বছর ধরে তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়ে গেছে। তার জলন্ত উদাহরণ রাসূল পাক সঃ এর পবিত্র দেশ সৌদি আরবে ১৪০০ বছর ধরে এজিদি ইসলাম ব্যবস্হা চলে আসছে। সেখানে ওহাবী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। আজ পর্যন্ত রাসূল পাক সঃ ওফাত হওয়ার পর তাঁর বংশধর অর্থাৎ আহলে বায়ত ওলী আল্লাহগণ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়নি।

তাহলে আপনি সঠিক ইতিহাস এবং সহি হাদিস কিভাবে আশা করেন। পরবর্তীতে সুফিবাদকে কলংকিত করার জন্য কিছু সংখ্যক এজিদের দোসর ওহাবীরা সুকৌশলে সুফিবাদে ঢুকে পড়ে। তারা সূক্ষ্ম কৌশলে বিভিন্ন ওলী আল্লাহর কিতাবে মোনাফেক মুয়াবিয়াকে সাহাবী হিসাবে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তাই তাদের দোসররা বলে, ঐ সমস্ত বিখ্যাত ওলী আল্লাহরা মুয়াবিয়াকে সাহাবী বলে গেছে এবং যারা মুয়াবিয়াকে সাহাবী বলবে তারা কাফের।

আমরা যখন পবিত্র কুরআন শরীফ ও সহি হাদিস দিয়ে প্রমাণ করি মুয়াবিয়া মোনাফেক ও কাফের ছিলো। তখন তারা বলে, তুমি কি বিখ্যাত ওলী আল্লাহর চেয়ে বেশি বুঝ। তাঁরা মুয়াবিয়াকে সাহাবী বলে আর তুমি সামান্য পাপী লোক হয়ে মোয়াবিয়াকে মোনাফেক বল। তোমার এতোবড় সাহস কোথায় থেকে হলো, তুমি চির জাহান্নামী ও শিয়াদের দালাল।

এইসব নকল কিতাবধারী জ্ঞান পাপীদের আর কি বলব। এদের বিবেক বুদ্ধি সবকিছু স্বার্থের কাছে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। এরা স্বার্থের জন্য নিজেদের ঈমান নষ্ট করছে এবং সরলমনা মানুষকে ঈমান হরণ করছে। এরাই ঈমান হরণকারী নব্য দাজ্জাল হিসেবে পরিচিত। এখনো সময় আছে এদের কাছ থেকে ঈমান বাঁচান। নচেৎ যখন আল্লাহর কাছে ধরা খাবেন, তখন শুধু আফসোস করতে হবে।

মোনাফেক মুয়াবিয়া কর্তৃক জাল হাদিসের কাহিনিঃ

মোনাফেক মুয়াবিয়া টাকার বিনিময়ে, খারিজিদের দিয়ে মাওলা আলীকে গুপ্ত হত্যা করিয়ে গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতায় এসে তার দাদা মূর্তি পূজারী উমাইয়ার নামে মুসলিম খিলাফত রাজতন্ত্র কায়েম করে। তা আজও উমাইয়া খিলাফত নামে পরিচিত। মুয়াবিয়া ২০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে তার অনুগত লোকদের দিয়ে নিজের প্রশংসার উপর প্রচুর জাল হাদিস তৈরি করে।

চতুর মুয়াবিয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিজের পাপকর্ম ঢাকার জন্য। কারণ সে জানতো ইতিহাস কখনো ঢেকে রাখা যাবে না। তাই সে জঘন্যতম কালো ইতিহাস মুছে ফেলার জন্য, স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে। যাতে তার অন্ধ অনুসারীরা এইসব জাল হাদিস ও মিথ্যা ইতিহাস দিয়ে সাধারণ মানুষকে তার পক্ষে আনুগত্য স্বীকার করাতে সক্ষম হয়। যুগের কালক্রমে আজও সমাজে সেটাই হয়ে আসছে। এরাই আমার পাক পান্জাতনের মহাদুশমন। এদেরকে চিহ্নিত করার এখন সময়। আর এদের অন্যতম হাতিয়ার হলো, যে মুয়াবিয়াকে কাফের বলবে তাকে সরাসরি শিয়া উপাধি দিয়ে দাও।

পোস্ট দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে আরো অনেক তথ্য দিলাম না।

এবার আপনার বিচার বুদ্ধি দিয়ে বুঝে নিন। মুয়াবিয়া কতোবড় নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিলো। এরপরও যদি কেউ মুয়াবিয়াকে সাহাবী বলে, আপনি ধরে নিবেন সে পবিত্র কুরআন শরীফ অস্বীকারকারী এবং পাক পান্জাতনের চিরশত্রু। এদের সাথে আপনি কোন সম্পর্ক রাখবেন না। তাহলে আপনি কখনো ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারবেন না।

এই পোস্টের ভুল ধরতে হলে আল্লাহ এবং তার পবিত্র কুরআন শরিফ পাল্টাতে হবে। তারপর মোনাফেক মুয়াবিয়াকে সাহাবী প্রমাণ করতে হবে। নচেৎ কিয়ামত পর্যন্ত মুয়াবিয়াকে সাহাবী প্রমাণ করতে পারবেন না।

নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel