খারেজিদের পরিচয় এবং মুয়াবিয়া সম্পর্কে আলোচনাঃ

খারেজিদের পরিচয় এবং মুয়াবিয়া সম্পর্কে আলোচনাঃ

খারিজ আরবি শব্দ। আর বাংলা অর্থ বাতিল। রাসূল পাক সঃ এর এক ধরনের মোনাফেক সাহাবী ছিল। যারা মক্কা বিজয়ের পর নিরুপায় হয়ে মুয়াবিয়া এবং তার পিতা- মাতার সাথে ইসলাম গ্রহণ করে। এই খারেজি সম্প্রদায় রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে মুয়াবিয়া পিতা আবু সুফিয়ান এবং আবু জেহেলের নেতৃত্বে ২৭টি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারা প্রতিবারই পরাজয় বরণ করে। অবশেষে মক্কা বিজয়ের পর তারা চিন্তা করল, আমরা তো সারাজীবন ইসলাম ধর্মের বাহিরে থেকে রাসূল পাক সঃ এবং তার পরিবার-পরিজন ও ইসলাম ধর্মের কোন ক্ষতি করতে পারলাম না। এখন দেখি ইসলাম ধর্মের ভিতরে ঢুকে নবী পরিবার ধব্বংস করতে পারি কিনা এবং মুহাম্মদের নাম চিরতরে মুছে ফেলতে পারি কিনা।

এই উদ্দেশ্যে নিয়েই তারা সবাই মুসলমান হয়ে গেল। রাসূল পাক সঃ ওফাতের পর তারা প্রচন্ডভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা সর্বক্ষণ মাওলা আলীর বিরোধিতা করতে লাগল এবং ইসলাম বিদ্বেষী কার্যকলাপ শুরু করল। তারা এমন কোন জগন্য কাজ নাই, যা তারা করল না। আর এদেরকে পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ত মুয়াবিয়া। কারণ এরা একসময় মুয়াবিয়াপিতা আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে রাসূল পাক সঃ এর বিরুদ্ধে ২৭টি যুদ্ধ করেছিল। অবশেষে মাওলা আলী এদেরকে ইসলাম ধর্ম থেকে বাতিল এবং বের করে দেন। এই খারজিরা শুধু মাত্র আবু বকর এবং ওমর ফারুককে মানে। তারা কখনো শেরে খোদা মাওলা আলী কে মানে না। বরং তারা বলে মাওলা আলী খলিফার অযোগ্য।

তাই মাওলা আলীর বিরুদ্ধে তাদের প্রচন্ড ক্ষোভ ছিল। অবশেষে মুয়াবিয়া এদেরকে দলভুক্ত করেন। পরবর্তীতে মাবিয়ার নির্দেশে এই খারেজিরা শেরে খোদা মাওলা আলীকে নামাজরত অবস্থায় নৃশংস ভাবে হত্যা করে এবং মাবিয়া সমগ্র মুসলিম জাহানের অবৈধভাবে খলিফা হয়ে যায়।

যারা বলে শিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল মাওলা আলী এবং মাবিয়ার ভুল বুঝাবুঝির কারণে। মাওলা আলী ছিলেন সমস্ত ভুলের উর্ধে। জীবনে বিন্দুমাত্র ভুল করেন নাই। এমন দলিল কেউ দিতে পারবেন না। কারণ রাসূল পাক সঃ ছিলেন জ্ঞানের শহর এবং মাওলা আলী ছিলেন দরজা। এরা মূলত মাওলা আলীকে কলংকিত করার জন্য বলে দুজনের ভুল বুঝাবুঝির কারনে শিফফিনের যুদ্ধ হয়েছিল। তাই দুজনই সঠিক। এরা মূলত মুয়াবিয়া অপরাধ ঢাকার জন্য মাওলা আলীকে দোষী বানায়।

শিফফিনের যুদ্ধে শত শত বিখ্যাত সাহাবীদেরকে হত্যা করা হয়। তাহলে এই হত্যার দায়ভার কে নিবে। যদি দুজনই সঠিক হয়, তাহলে দুজনকেই হত্যাকারী বলা হবে। দেখেন এরা কত কৌশলে মাওলা আলীকে হত্যাকারী সাব্যস্ত করল।

মুয়াবিয়া মাওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে প্রচন্ড কষ্ট দিয়েছিল। রাসূল পাক সঃ বলেন, যে হযরত আলীকে কষ্ট দেয়, সে স্বয়ং আমাকে কষ্ট দেয়। তাহলে মুয়াবিয়া মাওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে মাওলা আলী এবং রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়েছিল। আর রাসূল পাক সঃ এর মনে কষ্ট দিয়ে কেউ কখনো সাহাবী হতে পারে না। যে মাওলা আলীকে অমান্য করে, সে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ কে অমান্য করার শামিল। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, মুয়াবিয়া মাওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তার মনে কষ্টের বদলে আনন্দ দিয়েছে। এটা শুধু পাগল ছাড়া আর কেউ বলবে না।

সেদিন শিফফিনের যুদ্ধে যদি মাওলা আলী মুয়াবিয়ার নিকট পরাজয় বরণ করত তাহলে নিশ্চয়ই মুয়াবিয়া মাওলা আলীকে হত্যা অথবা বন্দী করত। তখনকার আরব জাহানের এটাই ছিল প্রচলন। কেউ এই কথা বলতে পারবেন না, মাওলা আলী পরাজিত হলে মুয়াবিয়া তাকে সম্মান করে জামাই আদর করে সিংহাসনে বসাত। যদি তাই হতো তাহলে আর যুদ্ধ সংঘটিত হতো না। তাই মাওলা আলী আক্ষেপ করে তার অনুসারীদের জুমার খুৎবায় বলেছিলেন, ” কোন মুমেন ব্যক্তির হৃদয়ে আমার আর মোয়াবিয়ার ভালবাসা একসাথে থাকতে পারে না”।

কতটা অবিশ্বাস, কতটা আস্হাহীন, কতটা সন্দেহ এবং কতটা শক্রুতা পোষণ করলে একজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যায়। মুয়াবিয়া ঠিক সেইরুপ শেরে খোদা মাওলা আলীর সাথে করেছিল। আর মাওলা আলীর সাথে শক্রুতা পোষণ করা মানে স্বয়ং রাসূল পাক সঃ এর সাথে শক্রুতা করা। মুয়াবিয়া কোন সাহসে মাওলা আলীকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ করেছিল। যে মাওলা আলীর বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও অবিশ্বাস করবে, সে কখনো ঈমানদার হতে পারে না। তাইতো রাসূল পাক সঃ যথার্থ বলেছেন, “মুমেন ব্যক্তি হযরত আলীকে ভালবাসবে এবং মোনাফেক ব্যক্তিই হযরত আলীর শক্রুতা পোষণ করবে।” রাসূল পাক সঃ এর এই কথার দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় মাবিয়া কতটা নিকৃষ্ট মোনাফেক ছিল।

মাওলা আলী ছিলেন সমগ্র আরব জাহানের খলিফা। আর মোনাফেক মুয়াবিয়া ছিলেন একজন সামান্য সিরিয়ার দামেস্ক নগরের প্রাদেশিক গর্ভনর। একজন সাধারণ গর্ভনর হয়ে যদি সমগ্র আরব জাহানের খলিফার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়, তখন তাকে বিদ্রোহী হিসাবে ধরা হয়। আর পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বিদ্রোহীদেরকে কাফের ঘোষণা দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরিফে বলছেন, কেউ জ্ঞাতসারে মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে সে চির জাহান্নামী। সেই হিসাবে মোনাফেক মুয়াবিয়া সিফফিনের যুদ্ধে মাওলা আলীর পক্ষে শতশত মুমিন সাহাবীকে হত্যা করেছে। তাই পবিত্র কুরআন শরীফের আলোকে মুয়াবিয়াকে চির জাহান্নামী বলা যায়।

এই শিফফিন যুদ্ধের মাধ্যমেই মুসলিম ঐক্য নষ্ট হয়। এক পক্ষ চলে যায় মাওলা আলীর সাথে এবং অপর পক্ষ চলে যায় মাবিয়ার সাথে। সেই অনৈক্য ধারা এখনো বিরাজমান রয়ে গেছে। এক পক্ষ মাওলা আলীর সাথে রয়ে গেছে এবং অপর পক্ষ মুয়াবিয়া সাথে রয়ে গেছে। মুয়াবিয়া এবং তার বংশধরতা যেহেতু দীর্ঘদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল, তাই মাবিয়ার অনুসারীর সংখ্যা বেশী। আর মাওলা আলীর অনুসারীরা নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার। তাই মুসলিম বিশ্বে মাওলা আলীর সংখ্যা খুবই সীমিত। এখন আপনি বলুন, আপনি কার পক্ষ অবলম্বন করবেন। মাওলা আলীর অনুসারীরা হলো আহলে বায়াত অর্থাৎ অলী আল্লাহর দলে। আর মাবিয়ার অনুসারীরা হলো আহলে বায়াতের বিপক্ষে। যারা বায়াত প্রথা মানে না এবং বিশ্বাস করে না। এদের সাথে আমাদের দ্বন্দ্বটা সেই শিফফিনের যুদ্ধ থেকে শুরু হয়েছে এবং চলমান রয়ে গেছে।

“রাসূল পাক সঃ এর প্রতি নাই যার প্রেম, কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন।”

নিবেদক : অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।

আরো পড়ুন:

আরো পড়ুনঃ
Sufibad24.com | WhatsApp চ্যানেল

Sufibad24.com | Telegram Channel