মোয়াবিয়াপন্থী ও আহলেবাইত প্রেমিকের মধ্যে কথোপকথন: পর্ব-০২
আহলেবাইত প্রেমিক: আচ্ছা ভাই! বর্তমান সরকার প্রধান যদি বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করে নরেদ্রমোদী অথবা ডোনাল্ড ট্রাম্প রাখে, তাহলে আপনারা কি বলবেন?
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: নাউজুবিল্লাহ! মুসলিম দেশে হিন্দু এবং খ্রীষ্টানের নাম চলবে না। ওরা তো মুসলমানদের শক্রু। এমন নাম রাখলে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী কাফের হয়ে যাবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। ২৪ ঘন্টার ভিতরে সরকারকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে ছাড়বো। এমন না*স্তিক মার্কা কথা আর ভুল করেও মুখে আনবেন না। তাহলে আপনি ঈমানহারা হয়ে কাফের হয়ে যাবেন।
আহলে বাইত প্রেমিক: আরে ভাই দেশ তো আর ধর্ম না। দেশের নাম পরিবর্তন করলে ধর্মের কি এমন ক্ষতি হবে? দেশ তো স্বাধীন হয়েছে মৌলিক অধিকারের জন্য, শুধু ধর্মের জন্য স্বাধীন হয়নি। বরং আমাদের মুসলিম ভাইদের কাছ থেকে অত্যাচারের শিকার হয়েই বাংলার দামাল ছেলেরা দেশ স্বাধীন করছে।
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: আপনি তো না*স্তিক হয়ে গেছেন। এই জন্য এমন ধর্ম বিরোধী কথাবার্তা বলছেন। মুসলিম দেশে কখনো বিধর্মীর নামে দেশ হতে পারে না। তবে আমাদের নবীর নামে বাংলাদেশের পরিবর্তে মুহাম্মদ নাম রাখলে সাধুবাদ জানাবো। দেখুন অনেক কষ্ট করে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বিধর্মীদের নামে দেশের নাম রাখার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি।
আহলে বাইত প্রেমিক: চমৎকার কথা বলছেন ভাই। কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করেছি অন্য মানুষের নাম রাখার জন্য নয়। আমার সোনার বাংলাদেশের জন্যই দেশ স্বাধীন করেছি। তার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছে এবং দুই লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছে। আচ্ছা ভাই! দয়াল রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবীরা কি কষ্ট করে ইসলাম কায়েম করেনি?
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: আপনার তো মহাশয় ইসলাম ধর্ম সমন্ধে নূন্যতম জ্ঞান নেই। ইসলাম ধর্মের জন্য আমাদের নবী ও সাহাবীরা অনেক অত্যাচার, নির্যাতন এবং আপন দেশ মক্কা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কাফেরদের সাথে ২৩ বছরে ২৭টি যু*দ্ধ করছে। দীর্ঘ ২৩ বছরের কষ্টের ফসল ইসলাম।
আহলে বাইত প্রেমিক: আচ্ছা সুন্নি ভাই! দয়াল রাসূল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে কারা ২৭টি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলো?
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর সম্মানিত পিতা হযরত আবু সুফিয়ান (রাঃ) সহ আবু জেহেল ও আবু লাহাব ২৭টি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলো। দেখুন জলিল কদর সাহাবীদের শানে বিন্দুমাত্র সমালোচনা করবেন না।
আহলে বাইত প্রেমিক: না না ভাই! সাহাবীদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার সাহস আমার নাই । তবে সাহাবীদের আড়ালে মুখোশধারী আহলে বাইত দুশমনদের মুখোশ উন্মোচন করতে চাই। আচ্ছা ভাই, হযরত বিল্লাল (রাঃ)কে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছিলো কে এবং দয়াল রাসূল (সাঃ) এর আপন চাচা হযরত হামজা (রাঃ) এর কলিজা চিবিয়ে কে খেয়েছিলো?
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: ইসলাম গ্রহণের পূর্বে হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর সম্মানিত মাতা হযরত হিন্দা (রাঃ) ওহুদ যুদ্ধের সময় পিতা ও ভাইয়ের প্রতিশোধ নিতে হযরত হামজা (রাঃ) এর কলিজা চিবিয়ে খেয়েছিলো এবং শরীরের মাংস কেটে টুকরো টুকরো করে গলায় মালা পরেছিলো। আর হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর দাদা উমাইয়া বিখ্যাত আশেকে রাসুল হযরত বিল্লাল (রাঃ) কে নির্মমভাবে অত্যাচার করেছিলো। কিন্তু হযরত হিন্দা (রাঃ) পরে তওবা করে ইসলাম গ্রহন করছে, তাই তার বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না। তবে হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর দাদা উমাইয়া একজন মূর্তি পূজারী, কাফের এবং দয়াল রাসূল (সাঃ) এর ঘোরতর বিরোধী ছিলো। সে মৃত্যুর আগে তওবা করে ইসলাম গ্রহণ করেনি, তাই তাকে সুন্নিরা কাফের বলে থাকে। উমাইয়ার বিরুদ্ধে যা খুশি তাই বলুন, আমাদের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। তবে মোয়াবিয়া, আবু সুফিয়ান এবং হিন্দা (রাঃ) এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবেন না। এরা আমার নবীর সাহাবী ছিলো।
আহলে বাইত প্রেমিক: আচ্ছা ভাই, উমাইয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা কে? উমাইয়ার নামানুসারে কে মুসলিম খেলাফত প্রতিষ্ঠা করলো?
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: অবশ্যই হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) উমাইয়া খেলাফতের প্রতিষ্ঠাতা। হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) যখন মুসলিম জাহানের খলিফা হয়, তখন মুসলিম খেলাফতের নাম রাখা হয় উমাইয়া খেলাফত। যেহেতু উমাইয়া ছিলো হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর দাদা, তাই আরবদের ঐতিহ্য অনুযায়ী মোয়াবিয়া (রাঃ) দাদার নামেই উমাইয়া খেলাফত রাখে। এতে দোষের কিছু নাই।
আহলে বাইত প্রেমিক: আচ্ছা ভাই, মোয়াবিয়া তো উমাইয়া খেলাফত না রেখে “মুহাম্মদী” খেলাফত রাখতে পারতো। অথচ একজন মূর্তি পূজারী, কা’ফের এবং দয়াল রাসূল (সাঃ) এর ঘোরতর দুশমনের নামে কিভাবে মুসলিম খেলাফত হতে পারে? অথচ আপনি নিজেই বলছেন, বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন করলে প্রধানমন্ত্রী কাফের হয়ে যাবে এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন। আর আমাকে নাস্তিক বলে গালাগালি করছেন। তারচেয়ে মারাত্মক অপরাধ তো মোয়াবিয়া করেছিলো। মোয়াবিয়া সরাসরি মুসলিম খেলাফতে একজন দয়াল (সাঃ) এর ঘোরতর দুশমন এবং মূর্তি পূজারীর নামে উমাইয়া খেলাফত চালু করেছিলো, যা সূদীর্ঘ ৮৯ বছর বজায় ছিলো। এই জন্য নাস্তিকরা বলে, আমাদের বর্তমান ইসলাম ধর্ম নাকি মূর্তি পূজারীদের ধর্ম। নচেৎ একজন মূর্তি পূজারীর নামে কিভাবে ৮৯ বছর মুসলিম খেলাফত চলতে পারে। এখন আপনি আপনার কথা অনুযায়ী মোয়াবিয়াকে কাফের বলুন এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করুন। দেখি আপনার সৎসাহস কতটুকু আছে।
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: অবশ্যই উমাইয়া খেলাফতের পরিবর্তে দয়াল রাসূল (সাঃ) এর নামে “মুহাম্মদী” খেলাফত রাখলে সুন্দর হতো। তবে এই জন্য হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর কোন পাপ হয় নাই। এটা হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর ইজতেহাদি অর্থাৎ গবেষণাগত ভুল। তাই এর জন্য হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) অবশ্যই একটি সোয়াব পাবে।
আহলে বাইত প্রেমিক: বাহ কি চমৎকার ব্যাখ্যা আপনাদের এবং বিবেক। প্রধানমন্ত্রী ভুল করলে হবে কাফের আর মোয়াবিয়া একই ভুল করলে পাবে সোয়াব এবং জলিল কদর সাহাবীর মর্যাদা। তাহলে ইসলাম ধর্ম কিভাবে মানবতাবাদী ও সত্য ধর্ম হলো এবং আল্লাহই কিভাবে ন্যায় বিচারক হলো? তাহলে আল্লাহ কি ঘুষ খায় নাকি? নাউজুবিল্লাহ। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা এমন নয়। তাহলে আপনি উত্তরটি কোরআন শরীফ মোতাবেক দিয়ে যাবেন।
মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নি: হায়রে শিয়ারা কখনো মানুষ হবে না। এরা সবসময় শুধু জলিল কদর সাহাবী হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) এর ভুল ধরে বেড়ায়। এই জন্যই তো শিয়ারা কাফের এবং জাহান্নামের কুকুর। আপনার সাথে আর কথা বলতে চাই না। তাহলে আমার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আমার জরুরী কাজ আছে, পিছন ফিরে আর ডাকবেন না। ছিঃ ছিঃ আস্তাগফিরুল্লাহ! আর একটু হলে শয়তানের মতো ঈমান নষ্ট করে দিয়েছিলো শিয়া। এই কথাগুলো বলতে বলতে তাড়াতাড়ি করে প্রায় দৌঁড়ে চলে গেল সুন্নি ভাই।
আহলে বাইত প্রেমিক: শুনুন ভাই, আমার কথার উত্তর না দিয়েই চলে যাচ্ছেন কেনো? শাস্ত্রে আছে, নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা। আপনাদের মোয়াবিয়া ভুল করেছিলো বিধায়, ভুল ধরি। এতে আমাদের দোষ কোথায়? আবার আরেকদিন কথা হবে, তখন কিন্তু উত্তরটি দিয়েন দয়া করে।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ! এই হলো আমাদের সমাজের প্রচলিত মোয়াবিয়াপন্থী সুন্নিদের চরম একঘেয়েমি অবস্থা। এরা যখনই যুক্তিতে ধরা খাবে, তখনই একবস্তা পঁচা জাল হাদিস আনবে নচেৎ গালাগালি করে দৌড়ে পালিয়ে যাবে। আসলে প্রকৃত সুন্নি আদর্শ, মুয়াবিয়াপন্থী সুন্নিদের মধ্যে নেই বললেই চলে। মহান মালিক এদেরকে হেদায়েত নসিব করুক।
নিবেদক: অধম পাপী মোজাম্মেল পাগলা।