ইমাম হাসান (আ.)-এর পবিত্র শাহাদাত বার্ষিকী।
২৮ সফর হযরত সৈয়েদেনা ইমাম হাসান (আলাইহিস সালাম)-এর পবিত্র শাহাদাত বার্ষিকী।
২৮ সফর ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে শোকাবহ দিন। মহানবী (সা.)-এর প্রিয় প্রথম নাতি যাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন, চুমু খেয়েতেন, নিজে ঘোড়া হয়ে নাতীকে সোয়ারি করতেন, তথা আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতেমা (সালামুল্লাহি আলাইহার.)-এর প্রথম সন্তান আজ এই দিনে আল্লাহর দ্বীন হেফাজত রাখার জন্য, উম্মতের নাজাত জন্য কেয়ামত পর্যন্ত হক কে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য মোহাম্মদ (সাঃ) এর অনুসারীদের সুরক্ষীত রাখার জন্য মিথ্যার কাছে সত্যকে জয়ী রাখার জন্য নিজেকে কুরবানী দিয়ে ইসলামের পতাকা ভূলুণ্ঠিত করে গেলেন।
ওহে মুয়াবিয়া তোর বিষের কি ক্ষমতা ইমাম হাসান (আঃ) কে হত্যা করার। ইমাম হাসান (আ.) খলিফা হওয়ার পর মুয়াবিয়া তা মেনে নেয়নি। আলী (আ.)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্রের যে ধারা মুয়াবিয়া চালু করেছিল এই নতুন ইমামের বিরুদ্ধেও সেই একই ধারা অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় ইমাম হাসানও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন ও যুদ্ধের প্রথম দিকে সাফল্যও লাভ করেন। কিন্তু মুয়াবিয়ার নানা চক্রান্তের মুখে একদল সহযোগীর বিশ্বাসঘাতকতা ও জনগণের ধৈর্যহীনতার কারণে ইমাম শেষ পর্যন্ত মুয়াবিয়ার সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হন।
ইমাম বেশ কিছু কঠিন শর্ত দিয়ে সন্ধি-চুক্তি করেন। উল্লেখ্য, বিদ্রোহী মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে উৎসাহিত করার জন্য হযরত ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) খেলাফতের দায়িত্ব নেয়ার পর পরই যোদ্ধাদের বেতন শতকরা ১০০ ভাগ বৃদ্ধি করেছিলেন। ইমাম হাসান (আ.) এও জানতেন যে তিনি রাজনৈতিক ক্ষমতা বা শাসন-ক্ষমতা হাতে না পেলেও মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ইমামই থেকে যাবেন। তাই মুয়াবিয়ার আসল চেহারা জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য তাকে কিছু (নোংরা কাজের সুযোগ) অবকাশ দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছিল।
অন্যদিকে এ সন্ধির ফলে মুসলমানদের রক্তপাত বন্ধ করা সম্ভব হয়েছিল। মুয়াবিয়া ইমাম হাসান (আ.)’র সঙ্গে স্বাক্ষরিত সন্ধি-চুক্তির অপব্যবহার করেছিল যদিও ইমাম সন্ধির শর্তেই এটা উল্লেখ করেছিলেন যে তিনি মুয়াবিয়াকে আমিরুল মু’মিনিন বলবেন না। এরই আলোকে তিনি কখনও মুয়াবিয়ার হাতে বাইয়্যাত হননি এবং মুয়াবিয়ার কোনো নির্দেশই মান্য করতেন না।
মুয়াবিয়া ইমাম হাসানের (আ.) সঙ্গে সন্ধির পর যখন সব কিছুর ওপর নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় তখন সে প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়ে সন্ধির শর্তগুলো লঙ্ঘন করবে বলে জানিয়ে দেয়। মুয়াবিয়া নিজের মৃত্যু আসন্ন এটা উপলব্ধি করতে পেরে ছেলে ইয়াজিদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে থাকে। সে এটাও বুঝতে পেরেছিল যে, ইমাম হাসান (আ.) বেঁচে থাকলে জনগণ সহজেই তার লম্পট ছেলেকে খলিফা হতে দেবে না।
তাই মুয়াবিয়া বেশ কয়েকবার ইমামকে শেষ করে দেয়ার চেষ্টা করে। অবশেষ চক্রান্তের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে ইমামকে শহীদ করে। মুয়াবিয়া অত্যন্ত কূট-কৌশলে ইমামের (আ.) এক স্ত্রীকে বিভ্রান্ত করে তাঁকে দিয়ে বিষ-প্রয়োগের মাধ্যমে ইমামকে শহীদ করতে সক্ষম হয়। পঞ্চাশ হিজরির সফর মাসের ২৮ তারিখে শাহাদতের অমৃত পান করেন ইমাম হাসান (আঃ)।
সালাম হে জান্নাতের সরদার ইমাম হাসান আঃ। ইমাম হাসান আঃ এর শেষ ইচ্ছা ছিল তার প্রিয় নানা জান হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র রওজা মোবারকের সাথেই চিরশায়িত হবেন কিন্তু ইমাম হাসান আলাইহিস সাল্লাম এর দেহ মোবারকর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সাল্লাম এর পবিত্র রওজা মোবারকের নিকট আনা হলে মুয়াবিয়ার নির্দেশ মোতাবেক তার মারওয়ান তার সৈনদের নিয়ে ইমাম হাসান (আঃ) পবিত্র দেহ মোবারক এর উপর তীর নিক্ষেপ করেছিল।
মারওয়ান ও তার দলের লোকজন বলল আমাদের ওসমান যেখানে শয়ন করতে পারেনি সেখানে অন্য কাউকে শয়ন করতে দিব না। ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম দেহ মোবারকরের জানাযার নামাজে সমবেদ লোকজনের উপর বৃষ্টির ধারার মত তীর বর্ষন করতে লাগলো ।
অবশেষে ইমাম হাসান আঃ এর শেষ উপদেশ স্মরণ করে ইমাম হোসাইন আঃ জেহাদ করবেন ভেবেও রণে ক্ষ্যান্ত দিলেন এবং তাঁর দ্বিতীয় অসিয়ত মোতাবেক জান্নাতুল বাকিতে মা ফাতেমা আঃ এর পায়ের কাছে দাফন করা হলো।
লাখো ও সালাম দুরুদ হে ইমাম হাসান (আঃ) যার শেষ ইচ্ছে ছিল নানা জানের পাশে শয়িত হওয়ার কিন্তু তাও নছিব হলো না। আল্লাহুমা সাল্লে আলা মোহাম্মদ ওয় আলে মোহাম্মদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম।
তথ্যসূত্র:
-শারহে নাহজুল বালাগ্বালা;ইবনে আবিল হাদিস, খন্ড ১৬,পৃঃ১৮,১৯।
-তারিখ আল খুলাফা, আল্লামা সুয়িতি,পৃঃ১৯০।